এক অবাধ্য মেয়ের গল্প

এক অবাধ্য মেয়ের গল্প

**….মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে আমার মেয়েটা একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যায়।

সেই ওর প্রথম কান্নার শব্দ শোনার পর থেকে আগলে রেখেছি, আমাকে অচেনা ভাবলেও এতো বছরের পরিচয় তবু আমার কথা একবারো ভাবেনি।

এরপর আর বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। পিছনে অনেকে বলে, কি শিক্ষা দিয়েছে মেয়েকে!!!

আমার মাথা নিচু হয়েছে যায়। ছোটো মেয়েটার স্কুলেও হয়তো এনিয়ে খোটা দেয়। ওর ব্যবহার দেখলে বুঝি।

বউ আগে পাড়ার মহিলার সাথে বেশ খোশগল্প করতো। এখন কেনো জানি যায় না।

বিকেলবেলা যখন আসরের নামায পড়ে আসি মেয়েটার কথা মনে পড়ে। এই সময় ওহ আমাকে নিজে বানিয়ে চা খাওয়াতো।

এতে মন শান্তি তে ভরে যেতো। বহুতবার পাগলি মেয়ে এই ছলে আমার কাছে টাকা চাইতো।

আমি ওর ফাজলামো দেখে মুচকি হেসে যতো পারি টাকা দিতাম। এখন ছোটো মেয়েটা আমায় চা দেয়। কিন্তু বড় মেয়ের মতো হয় না।

এসময় ওকে সবচে বেশি মনে পড়ে। আবার মনে সংশয় জাগে ছোটো মেয়েটাও এমন করবে না তো??

এই ভয়ের মাঝে খবর পাই মেয়েটা ঢাকায় আছে। সবকিছু ছেড়ে ঢাকায় ছুটে যাই। গিয়ে দেখি মেয়েটা বস্তির এক রুমে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে আছে।

কিছুই স্বাভাবিক নয়। পাশের লোকজন বলে, হতভাগিনীর স্বামী রেখে চলে গেছে। আমার মন কাদে একথা শুনে।

এতকিছুর পরেও মেয়েটা সংসার করতে পারলো না। ওকে বাড়ি নিয়ে আসি। কিছুদিন পর খবর পাই ওর পেটে আরো একটি জীবনের বসবাস।

এতে হাসবো কিনা কাঁদবো দ্বিধায় পড়ে যাই। মেয়েটাকে আমাদের রুমে বিছানায় শোয়াই। বউ আর আমি মেঝেতে শুই।

মাঝরাতে মেয়েটা জেগে উঠে চিল্লানি দিয়ে উঠে। এই বুঝি ওর স্বামী ফিরে এলো। কিন্তু আসে না। আট মাস কয়েকদিন পর ওর ছেলে হয়।

ছেলে হওয়ার পরেই ওর মাঝে পরিবর্তন আসে। একেই বুঝি মা বলে। ছেলেটাকে ওহ শক্ত করে জড়িয়ে রাখে।

জিজ্ঞেস করলে বলে, ছেলেটাও যদি তাকে রেখে চলে যায়। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না। বের হয়ে আসি বাড়ি থেকে।

ব্যবসা করতে গিয়ে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটার বিয়ে হয়েছিল। এখন দুটো বাচ্চা কিন্তু বউ না ফেরার দেশে চলে গেছে।

ছেলেটায় নিজেকে থেকে আমার বড় মেয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। আমি খুশিতে কেঁদে উঠি।

কিন্তু মেয়েটার মানসিক অবস্থা ভালো নয় কথাটি জানানো হয়নি। বিয়ের কাছে আসে। আমার নিজেকে ততো অপরাধী মনে হয়।

এক সকালবেলা কিছু না খেয়ে হবু জামাই এর বাড়ি ছুটে যাই। সব খুলে বলি। ভয় কাজ করে সেও যদি মেয়েটাকে রেখে চলে যায়।

এমন সময় জামাই আমার হাত ধরে বলে, এতে তার কিছু আসে যায় না। তার ভালবাসায় নাকি মেয়েটাকে ভালো করে তুলবে।

তখনি আমি প্রমাণ পাই সব্বাই একরকম নয়। আজ পনেরো বছর পর মেয়ের বাড়ি গেলেই দেখি পাক্কা গিন্নীর মতো সব সামলাচ্ছে।

জামাই আমাকে দেখামাত্র সেবায় লেগে পড়ে। নাতী নাতনি আমার চারদিক ঘিরে বসে। ওদের আমি এক গল্প শোনাই।

এক মেয়ের গল্প। গল্প শেষে ওদের যখন জিজ্ঞেস করি, কি বুঝলি তোরা?? তিন জনে বলে বাবামার অবাধ্য হতে নেই।

তাহলে কখনো সুখি হওয়া যায় না। আমি হাসি তাদের কথা শুনে। তারা জানেও না তারা ওদের মায়ের গল্প শুনছে।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত