ব্লাক স্যাডো

ব্লাক স্যাডো

মেঘলা আকাশ।মাঝেমধ্যে চাঁদ উকি দিচ্ছে।ভাললাগছে দেখতে প্রকৃতির এই খেলা।অবশ্য মুহূর্তটা আরো বেশি মনোরম করে তুলেছে ঝিরঝির বাতাস। উপভোগ করার মতন এক আবহাওয়া। যদিও সুমিত এমন আবহাওয়া খুব কম মিস দেয়। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক।তারপর ঘটলো অঘটন। ক্যাম্পের ওপর প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর লাল রশ্মি এসে পড়ছে।দূর আকাশে আবছা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।ভাগ্যক্রমে মেঘের কারণে অস্পষ্ট। ব্যাপারটা আকিলের চোখ এড়াতে পারেনি।ফলস্বরূপ আকিল ছাদে এসে তাড়াহুড়ো করে সুমিতকে বললো;

– কিছু বুঝতে পারলি?
– দেখলাম মাত্র।
– কি হতে পারে এটা?
– ডিভাইস।
– সেটা তো জানি।কিন্তু কোন ধারণের ডিভাইস?
– স্কয়ার লেজার ক্যামেরা।
– মানে?
– এই ডিভাইসের মাধ্যমে আমাদের ক্যাম্পে কোথায় কি আছে,কি কি চলতেছে সব দেখা যাচ্ছে।
– বাহ্।তাহলে আবার এ্যাটাক হবে?
– নাহ্।এ্যাটাক করবো।
– কাদের কাজ?কোথা থেকে করছে?কিছু জানিস?
– জেনে নিবো।
– কিভাবে?
– হ্যাক করে।
– মাম্মা পাগলামি করিস না।এইটা হ্যাক করবি কেমনে?
– পুরোটা নেটওয়ার্ক সিস্টেমের আওতায়।বাকিটা বলতে হবে?
– তুই লোকেশন দেখ আমি টিম রেডি করি।
– ওকে।লেটস্ গো।

অতঃপর দুজন ছাদ থেকে নেমে কাজে লেগে পড়লো।ভাগ্যক্রমে,রফি এতকিছুর বিন্দুমাত্র জানেনা। জানবে বা কি করে?বউয়ের কড়া নির্দেশ।প্রেগন্যান্সির এই নয় মাস তাঁর পাশে থেকে যত্ন নিতে হবে। সন্ধ্যার পর বের হওয়া,মোবাইল ফোন ইউজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সকাল ৭টা-দুপুর ২টা পর্যন্ত শুধু অফিস করতে পারবে। শালিকের কিচিমিচি ডাকে রফি’র ঘুম ভেঙে গেলো। নিধীও নড়েচড়ে উঠছে। রফি নিধীর নড়াচড়া দেখে কপালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।হাতের স্পর্শে নিধী পুরোপুরি সজাগ হয়ে যায়।তবে চোখ খুলছে না।স্বামীর হাতে এমন আদর পেতে ভালোই লাগছে। রফি’রো খুব একটা খারাপ লাগছে।মায়াবতীর মায়ায় সে যে সম্পূর্ণ আবদ্ধ।
তারপর হাত বোলানোর একপর্যায়ে গিয়ে রফি থেমে যায়।

– এই থামলে কেন?[মিষ্টি করে]
– ঘুম ভেঙে গেছে?
– হ্যা।
– আর একটু ঘুমাও?
– উঁহু।
– এখন উঠবা তাহলে?
– না।তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে আদর করবা।আমি চোখ বুজে শুয়ে থাকবো।
– হা হা হা,আচ্ছা।

এই বলে,রফি নিধী’কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো।তারপর কখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,কখনো বা আবার কপালে হাতে কানে নাকে গালে ছোট্ট করে পাপ্পি দিচ্ছে। নিধী নিশ্চুপ। আদরের সাগরে তলিয়ে আছে সে। মনে একটা ভাবনা,ইশ এভাবে যদি সারাজীবন চলতো। কিন্তু কি বা করার?কিছু ভাবনা বাস্তবতার কাছে বড্ড অসহায়। এরপর শুরু আতংক। বাহিরে তুমুল গুলির আওয়াজ।কিন্তু রফি তাতে কোনো রিয়েক্ট করছে না।নিধী ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে।

– এই।
– হুম।
– ভয় লাগছে।
– কেন?
– গুলাগুলি হচ্ছে।
– তো?
– আমাদের যদি কিছু বলে।
– আমি আছি না?
– তুমি কি করবা?
– সবগুলারে গুলি করে মারবো।
– সামান্য কাউকে চড় মারার সাহস পায় না,সে আবার গুলি করে মারবে।হুহ্।
– হা হা হা,জাস্ট কুল বেবি।তুমি ভয় পেলে বাবুও কিন্তু ভয় পাবে।
– হুম,এই আমার সাথে একদম মিশে থাকোতো।

রফি নিধীর অবস্থা দেখে,কম্বল বিছিয়ে তার নিচে অবস্থা করে নিধী’কে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো। নিধী তখন ফিসফিস করে বললো “একটা কথা বলি?” রফি সম্মতি জানিয়ে বললো “বলো।”

“জানো আমি কখন নিজেকে সবচেয়ে বেশি সেফ মনে করি?”
“কখন?”
“যখন তুমি নিজের বুকে জড়িয়ে নাও।”

ক্যাম্পে স্তব্ধতা ছেয়ে গেছে।গার্ড গেট ম্যান কেউ নেই।
রফি প্রবেশ করে পুরো হতভম্ব।ব্যাপারট বুঝতে কুল রুমে রাখা টেলিফোন দ্বারা রাফসানের নম্বরে কল করলো;

– কোথায় তোরা?
– মিশনে যাচ্ছি।
– কিসের মিশন?
– ব্রিগিং গ্যাংয়ে এ্যাটাক করতে।
– ক্যাম্প এভাবে ফাঁকা রেখে বের হয়েছিস কেন?
– সমস্যা নেই।অটো একশন মুড অন করা।তাছাড়া স্নাইপার টিম আছে চারটা।
– ওদের হঠাৎ এ্যাটাক করতে মন চাইলো কেন?
– স্কয়ার লেজার ক্যামেরা দিয়ে ফলো করছিলো আমাদের।

– ওয়েট..ওয়েট।এখনই ফিরে আয়।ফাঁদে পা দিয়ে মরার শখ।ওরা ইচ্ছা করে করছে এরকম।সব ক্যাম্পের মতন ওদের ক্যাম্প না।ওরা ক্যাম্প মিড পয়েন্টে রেখে চারিপাশে আন্ডারগ্রাউন্ড হাউজ করে সেখানে থাকে।একবার ফাঁদ বরাবর দাঁড়ালে বুঝতে পারবিনা কে কোথা থেকে গুলি করছে।

– ওহ্ মাই গড।কিন্তু ওরা যে নজর দিলো আমাদের ওপর?
– ক্যাম্পে ফিরে আয়।প্লান আছে মাথায়।
– ওকে বস্।

কল কেটে রফি কম্পিউটারে বসলো। নেটে রিসার্চ করতে লাগলো ব্রিগিং গ্যাং সম্পর্কে। তারপর রিসার্চ শেষে এটা দাঁড়ালো “নদীর মাঝে গড়ে ওঠা বিশাল চরে ব্রিগিং গ্যাংয়ের অবস্থান।যার লিডার রাকিব নামে এক ছেলে।ওদের মূল ব্যবসা নদীর বালু বিক্রি।তাছাড়া দেশে নেশা দ্রব্য ৩০% ওরা সেল করে।

পুরো চর জুড়ে ওদের ঘাটি।যেখানে প্রবেশ করে ফিরে আসা অসম্ভব প্রায়।টেকনোলজি দিক থেকে কম নয়।বাহির দেশে যোগাযোগের জন্য নিজেস্ব টাওয়ার রয়েছে।তাছাড়া নদী পথে চলাচলের জন্য পানির নিচ দিয়ে পথ বানিয়েছে।চরের চারপাশে হাজার হাজার মাইন বোম সেট করা।সব মিলিয়ে ভয়ংকর অবস্থা।” রফি এবার চিন্তায় পড়ে গেলো।এতো গ্যাং থাকতে তাঁর পেছনে কেন? তাছাড়া রাকিব নামটা চেনা চেনা লাগছে।কোথাও একটা শুনেছে। অন্ধকার রুম। রুমে চারটা চেয়ার পাতা।যেখানে সুমিত,রাফসান,আকিল ও জাহিদ বসে আছে।প্রজেক্টরের সামনে রফি দাঁড়িয়ে। দেয়ালে ব্রিগিং গ্যাংয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে।রফি প্রথমে চারজনকে ছবিটা খুব মন দিয়ে দেখে মাথায় সেভ করে নিতে বললো।  সবাই পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে ভালভাবে ছবিটা দেখে জানালো “ডান।” রফি এবার সুমিতকে দাঁড়াতে বললো। সুমিত দাঁড়িয়ে বললো;

– জ্বি বস্।
– ওদের মেন অস্ত্র হচ্ছে নেটওয়ার্কিং সিস্টেম।তাই তোকে বিশ মিনিটের জন্য সেটা হ্যাক করতে হবে।তারপর তা এমন ভাবে প্রকাশ ঘটাবি যেন মনেহয়,সবকিছু ঠিকমত চলছে।
– ওকে।
– সাথে হেল্প লাগবে কারো?
– নাহ্।
– আচ্ছা।বস তাহলে। সুমিত বসে গেলো। রফি এবার রাফসানকে দাঁড়াতে বললো;
– রাফসান।
– জ্বি বস্।
– তুই তোর স্নাইপার টিম নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করবি।এপারে যত টার্গেট আছে সব যেন একসাথে ক্লিয়ার হয়ে যায় আর হুম,শুট করার ২মিনিটে ডেড বডি গায়েব হয়ে যাবে।প্রয়োজনে এর জন্য আলাদা লোক রাখবি।
– ওকে বস্।
– ওকে।আর তোর কাজ শেষ হওয়া মাত্র সুমিতের কাছে সিগনাল যাবে।
– ওকে।
– নেক্সট সিগনাল পাওয়ার আগ পর্যন্ত এপার থেকে ওপারে টার্গে লক থাকে যেন।
– ডান বস্।

রফি আবারো প্রজেক্টরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর জাহিদের দিকে তাকাতে জাহিদ দাঁড়িয়ে গেলো;
– রাফসান কাজ কম্পিলিট করলে সুমিত তোকে সিগনাল পাঠাবে।তুই সিগনাল পাওয়ামাত্র পানি পথ ধরে এগোবি।পথের ম্যাপ পরে তোকে দেওয়া হবে।আর হুম,কোনো থামাথামি চলবে না।সামনে যে আসবে তাকে শুট।

– ওকে।বাট বস্ আমি তো সাতার জানিনা।
– সাতার জানতে হবে না।যাতায়াতের জন্য ওরা পানির নিচে খুব সুন্দর রাস্তা তৈরী করছে।ম্যাপ হাতে পেলে বুঝতে পারবি।
– ওকে বস্। জাহিদ বসে গেলো। আকিল বুঝতে পারছে এবার তাঁর পালা।তাই সে পরক্ষনে দাঁড়িয়ে গেলো।
– আকিল।
– জ্বি বস্।
– স্যাডো শুট তো অনেক করছিস।
– হুম।
– এবার একটু টাফ হবে কিন্তু।
– জাস্ট অর্ডার বস্।
– অর্ডার দিবো।তবে ওখানে স্যাডো হওয়ার জায়গা পাবি কি না ভাবছি।
– আমার টিমের ওপর ভরসা রাখতে পারে।
– ওকে।দেখি কি হয়।তোর টিম জাহিদের টিমকে স্যাডো শুট প্রটেকশন দিবে।
– ডান।

রফি এবার হাসি মুখে প্লান কম্পিলিট করে সিফাত বলে ডাক দিলো। সিফাত নাম শুনে সবাই হতভম্ব। বাংলা বুকে সিফাত নামে এক কিলার আছে।যে মিঃ বোম নামে পরিচিত।এই সিফাত সেই সিফাত নয়তো? ছেলেটা সামনে আসতে সবার ধারণা সত্যি প্রমাণ হলো।এবার ভাবার বিষয়,সিফাত হঠাৎ ব্লাক স্যাডোতে কেন?

– তোরা চিনিস একে।
– হুম।
– গুড,তাহলে ওর প্রতিভা সম্পর্কে না বললাম।সরাসরি কাজের কথায় আসি।জাহিদ ও আকিল মিশনের পাশাপাশি সিফাতের প্রটেকশন হবে।ওর বডিতে যেন একটা আঘাত না লাগে।সিফাত তুই ওদের পেছন পেছন ক্যাম্পে প্রবেশ করবি।তারপর ম্যাপে মার্ক করা যত পয়েন্ট আছে সবগুলাতে একটা করে গ্রেনেড মারবি।সবশেষে পুরো এলাকা জুড়ে বোম সেট করে ব্যাক চলে আসবি।

সুমিত ল্যাপটপ সামনে বসে আছে। রোদের তীব্র তাপে জ্বলে যাওয়া অবস্থা।এদিকে হ্যাক করা প্রচুর কঠিন লাগছে।টপ সিকিউরিটি প্রটেকশন দেওয়া। তবে সফওয়্যার যখন সুমিত বানায় তখন সিকিউরিটি কি? হ্যাকিং মিশন প্রায় ডান। ঠিক সেই মুহূর্তে রাফসান জানালো স্নাইপার মিশন কম্পিলিট।নেক্সট টার্গেট লকড।সুমিত সাথে সাথে জাহিদকে সিগনাল পাঠালো। সিগনাল পেয়ে জাহিদ ছুটে চলেছে। প্রথমে শিরি।শিরি দিয়ে নামতে হবে।কিন্তু সামনে দুজন দাঁড়িয়ে।সাথে সাথে শুট। এরপর পানির নিচে ওপারে যাওয়ার জন্য এলুমিনিয়াম দ্বারা গঠিত পাইপের ন্যায় লম্বা রাস্তা।ভেতর জুড়ে আবছা আলো।যার মধ্যদিয়ে শত কিলার ঘুরাঘুরি করছে।জাহিদের টিম সেগুলো এক পলক দেখে পিস্তল লোড করে নিলো।তারপর ধাইধাই আওয়াজ। টানা ১০ মিনিট চললো সেই গুলাগুলি। অপরদিকে সুমিতের হ্যাকিং মিশন ডান। হ্যাক শেষে সিফাতকে মেসেজ পাঠালো। “সময় ২০ মিনিট।ক্যাম্পের মেইন পয়েন্ট উড়িয়ে বোম সেট করে টিম সহ ফিরে আসতে হবে।ব্যাকআপ স্নাইপার টিম থাকছে।”

মেসেজ পেয়ে সিফাত ছুটে চললো।প্রথমে ম্যাপে মার্ক করা স্থানে বোম মারতে হবে।কিন্তু পরে সে হতবাক।
ম্যাপে মার্ক করা অনুযায়ী স্থানে কিছু নেই।পুরোটা শুনশান।কিন্তু বসে্র অর্ডার।তাই সিফাত বোম একটা মেরে বসলো।ভাগ্যক্রমে সাথে সাথে পাশ থেকে গুলির আওয়াজ। সিফাত এবার বুঝতে পারলো আসল ব্যাপার কি?শুনশান স্থানে মাটির নিচে ওদের ঘাটি।দ্বিতীয় ভুল খুব কম মানুষ করে। সিফাত ওই সমীকরণের ছেলে। সে ধুপধাপ বোম মেরে প্রতি প্রলটে তা সেট করে ফেললো। তারপর পালা ফিরবার। কিন্তু ফেরার পথে জাহিদ এবং আকিল,এই দুই টিম মিলে দারুণ সারপ্রাইজ তৈরি করছে। আসলে তারা নিজেও জানেনা সারপ্রাইজটা কিভাবে হাতে চলে এলো। ভাগ্যক্রমে সময় কম।তাই কেউ সারপ্রাইজ নিয়ে না ভেবে সেটা প্যাকেট করে নিয়ে ফিরে এলো।ফিরে আসার কয়েক মিনিট বাদে,বুম..বুম…বুম….বুম। টাইম বোমের বিষ্ফরণে ক্যাম্প সহ পুরো ঘাটি উড়ে গেছে।ধূলিসাৎ হয়ে গেছে ব্রিগিং গ্যাংয়ের আড্ডা।

প্রিয়, গুছিয়ে লিখতে জানিনা।তবু আজ কি ভেবে যেন বসে গেলাম।মনের মাঝে কথাগুলো যে বড্ড আঁকিবুঁকি করছে।যন্ত্রণা!খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ভেতর জুড়ে। জানো,২ মাস ১৩ দিন পর আবার তোমায় দেখলাম।সাথে অবশ্য তোমার সে ছিলো।তাই এগিয়ে গিয়ে কথা বলার সাহস হয়ে ওঠেনি। তুমি কি চাচ্ছিলে আমি গিয়ে কথা বলি? হয়তো না।মুখে আতংকের ছাপ এর একমাত্র প্রমাণ।ভয়ে কিভাবে কাঁপছিলে।আমি তো হেসে কুপোকাত। যে মেয়ে বাঘের মতন ছেলেকে সবসময় বেড়াল করে রেখেছে সে কিভাবে অল্পতে আঁতকে ওঠে? এই এটা সময়ের বিবর্তন!নাকি অন্যকিছু? যাইহোক!তোমাকে দোষারোপ করবো না। নতুন সংসার খুব ভালো চলছে তাইনা?ভুড়ি ওয়ালা বড়লোক জামাই অনেক আদর করে? বরাবর বলতে,টাকা নয় তুমি আমাকে চাও।আফসোস,সময় মুখের কথার মূল্য বুঝিয়ে দিলো।

এখন,বড্ড অসহায় লাগে নিজেকে।মেরে ফেলার ইচ্ছে করে প্রতিক্ষণে। পারিনা!তবু কিচ্ছু করতে পারিনা আমি।সমাজের নিয়ম দুহাত বেঁধে রেখেছে। তাই বিধাতার কাছে মিনতি,খুব শিঘ্রই যেন এই নিয়ম থেকে মুক্তি দেয়। ইতি তোমার আগের সে। চিঠিটা একবার পড়ে রেখে দিলো রফি।মীমকে লেখা এটা তাঁর শেষ চিঠি।কখনো দেওয়া হয়নি। কোন একজন ঠিক বলেছে,প্রথম ভালবাসা ভোলা যায় না। রফি মীমকে ভালবাসতো।আর মীম ভালবাসতো টাকাকে। রফি’র কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় মীমের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়। তখন মীমহীন একলা রফি বেপরোয়া ভাবে অপেক্ষা করতে থাকে মৃত্যুর জন্য।কিন্তু মৃত্যু দেখা দেয়নি।বরংচ পাঠিয়ে দিয়েছে টাকা নামক ভয়ংকর বস্তুকে। সেই থেকে কালো ছায়ার রাস্তায় পা রাখা। এর মাধ্যে আবার নিধী এসে হাজির। রফি নিধীর দেখা পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চিঠি লুকিয়ে ফেললো।

– এই কি লুকালে?
– ক..ক..কিছুনা।
– মিথ্যা বলবা না।
– ওই আর কি,হিহি।
– আবাল মার্কা হাসি দিবা না।
– তোমার জন্য গিফট।সারপ্রাইজ দিবো পরে।
– এখন সারপ্রাইজ দেও।
– উঁহু।বললাম তো পরে।
– এখন বলছি আমি।
– রাগ করো কেন?
– তো করবোটা কি?সারাদিন বাইরে বাইরে থাকো।কখন কার সাথে কি করে বেড়াও কিছু জানি আমি!
– কার সাথে কি করে বেড়াবো?
– হুহ্!প্রেম করলে বা কে জানবে?
– ওপ্স!
– ওপ্স মানে?
– ঘরে এত সুন্দরী লক্ষী বউ থাকতে কেউ বাইরে যায়?আমি নিশ্চিত কোনো ভালো কাজ করেছিলাম যার জন্য তোমাকে পেয়েছি।
– পাম দিতে হবে না।ডাক্তারের কাছে যাবো চলো।
– কেন?
– বাবু কোন পজিশনে কেমন আছে জানতে হবে না?
– ওহ্!হুম চলো।

ডাক্তারের জন্য অনেক্ষণ যাবৎ রফি নিধী বসে আছে।যদিও বসে থাকতে এক আলাদা ভাললাগা কাজ করছে।
দুজনের মনে উৎসাহ।জানার ইচ্ছা গ্রাস করেছে ভেতর জুড়ে। সবকিছু ঠিকঠাক। কিন্তু বেঘাত ঘটিয়ে কল করলো সুমিত;

– বস্।
– হুম।
– জাহিদ আকিল তো কাজ একটা করে ফেলছে।
– কি কাজ?
– ফোনে বলা যাবে না।
– কেন?
– সারপ্রাইজ।ক্যাম্পে আসেন।
– তোর ভাবীকে নিয়ে হাসপাতালে আসছি?
– হাসপাতালে মানে?ভাবীর কি হইছে?
– কিছু হয়নি।তবে হবে।
– বুঝায়ে বলেন।
– নাহ্,এটা তোদের জন্য সারপ্রাইজ হিসাবে জমা থাক।
– আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে ভাবীর কাজ শেষ করে ক্যাম্পে আসেন।
– ওকে।
– রাখছি তাহলে বস্।
– আচ্ছা রাখ। কল কেটে গেলো। রফি ফোন পকেটে রেখে নিধীর দিকে তাকাতে দেখে বালিকা ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।

– তোমার আবার কি হলো?
– কার সাথে কথা বললা?
– সুমিত।
– ওহ্।কি বললো?
– ঘুরতে যাবো কি না।
– তুমি কি বললা?
– শুনছো তো কি বলছি।এখন এগুলা বাদ দেও।বলো ছেলে চাও নাকি মেয়ে।
– চাওয়ার কি আছে?আমি বুঝতে পারছি মেয়ে হবে?
– কিভাবে?
– বুঝবা না।
– বলো।
– এমনি মেয়ে হবে।আমি চাই তাই।
– কিন্তু আমি তো ছেলে চাই।
– তোমার চাওয়া দিয়ে কি হবে?
– ছেলে হবে।
– মেয়ে হবে।
– ছেলে।
– না মেয়ে।

ব্যস শুরু হয়ে গেলো তুমুল ঝগড়া।হাসপাতালে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কি যুগ চলে এলো? স্বামী বলে ছেলে হবে। স্ত্রী বলে মেয়ে। পুরো ক্যাম্প জুড়ে কালো অন্ধকার ছেয়ে গেছে।বিন্দু আলো পর্যন্ত নেই।রফি ফোনে আলো জ্বেলে সামনে এগোতে লাগলো। ভাগ্যক্রমে কারো সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।মনে প্রশ্নের ছল।আচমকা কি হলো? ব্যাপারটা বুঝতে রফি চেঁচিয়ে ডাক দিলো “রাফসান ঠিক সাথে সাথে সব আলো জ্বলে উঠলো। আলোয় দেখা গেলো সারিবদ্ধ হয়ে সবাই দাঁড়িয়ে। মাঝে রাকিব হাঁটু গেরে বসে।মাথায় সুমিত আকিল রাফসান জাহিদ পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে। এরপর মুহূর্তে সবাই হাত তালি দিয়ে বলতে লাগলো,হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে টু ইউ বস্।

– রাকিব?(রফি)
– সারপ্রাইজ।(জাহিদ)
– কিভাবে কি?(রফি)
– আসার সময় পেয়ে গেছিলাম।তাই ধরে বেঁধে নিয়ে আসছি।(জাহিদ)
– ওহ্ মাই গড।জিজ্ঞাসা করছিস কিছু?(রফি)
– না,কি জিজ্ঞাসা করবো?হামলা করা দরকার করছে।এতো কারণ জানতে ভাললাগেনা।(জাহিদ)
– তাহলে এখন?(রফি)
– ওরে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মৃত্যু দিবো।(রাফসান)
– কিভাবে?(রফি)
– সুমিত জানে।(রাফসান)
– শোনেন বস্,প্রথমে ওর চার হাত পায়ে আমরা চারজন গুলি করবো।এরপর যিশু খ্রিষ্টের মতন ছাদে ঝুলিয়ে রাখবো কথা বলতে না পারার জন্য জিভ কেটে রাখছি।তাই ক্ষমা চাইতে চিল্লাতেও পারবে না।(সুমিত)
– কি নিঠুর।(রফি)
– আপনি অর্ডার দেন তো এখন।(সুমিত)
– অর্ডার না দিলে ওরে ছেড়ে দিবি?(রফি)

বলতে যতটা দেরি।সাথে সাথে সুমিত রাফসান জাহিদ আকিল পিস্তল বের করে শুট করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রেম আলু-পটলের চেয়েও সস্তা হয়ে গেছে।টাকা বা চেহারা একটা থাকলে হয়।দুজনে প্রেমে হাবুডুবু খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত