দ্যা মুন বগ

দ্যা মুন বগ

কোন এক দূরবর্তী আর ভয়ানক জায়গায় ডেনিস ব্যারি গিয়েছে তা আমি জানিনা। আমি সেই রাতে ছিলাম তার সাথে যদিন সে শেষবারের মতন মানুষজনের মধ্যে ছিলো। আর তার চিৎকার শুনেছিলাম যখন “জিনিসটা” তার কাছে এসেছিলো। কিন্তু সকল গ্রামবাসী আর কাউন্টি মেথের পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি। যদিও তারা অনেক দূর পর্যন্ত তাকে এবং তার সঙ্গীদের খুঁজেছে। আমি এখনো ভয়ে কেঁপে উঠি যখন ব্যাঙের ডাক শুনি নির্জন চাঁদের আলোয় ঘেরা কোন জলাভূমির পাশে।

আমি ডেনিস ব্যারির সাথে পরিচিত হয়েছিলাম আমেরিকায় থাকতে। যেখানে সে ধীরে ধীরে প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হয়ে ওঠে। যেদিন সে স্লিপি কিলডারির একটা জলাশয়ের পাশে অবস্থিত ক্যাসেলটা কিনেছিলো সেদিন তাকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। কিলডারি থেকেই ওর বাবা এসেছিলোএবং ওটাই সেই জায়গা যেখানে ডেনিস তার পৈতৃক সম্পত্তি তদারক করতে করতে তার উপার্জিত ধনরাশি উপভোগ করতে চায়। ওর পূর্বপূরুষরা একসময় কিলডারি শাসন করতেন। তখন তারা একটা ক্যাসেল বানান এবং সেখানেই থাকতে শুরু করেন। কিন্তু সে অনেক আগের কথা। তাই যুগের পর যুগ খালি অবস্থায় পড়ে থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিলো ক্যাসেলটা।

আয়ারল্যান্ডে থাকার সময় ব্যারি আমাকে রোজ চিঠি লিখতো। বলতো কিভাবে তার পরিচর্যায় পুরনো ধূসর ক্যাসেলটা টাওয়ারের পর টাওয়ার বসিয়ে সেই প্রাচীন জৌলুস ফিরে পাচ্ছিলো। কিভাবে নতুন করে বানানো দেয়াল বেঁয়ে বেঁয়ে আইভিলতা উঠছিলো উপরের দিকে যেমনভাবে উঠতো বহুযুগ আগে।

তার গ্রামবাসীরা সমুদ্রের ওপার থেকে এসে অতীতের সোনালী দিনগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য তাকে আশীর্বাদ করলো। কিন্তু একসময় সমস্যা শুরু হলো। গ্রামবাসীরা ওর ওপর ক্ষুদ্ধ হলো এবং এমনভাবে গ্রাম থেকে পালালো যেমন করে মানুষ অবধারিত প্রলয় থেকে পালায়। এরপর ব্যারি আমায় চিঠি লিখে ওর ওখানে যেতে বলে। কারণ সে একা হয়ে পড়েছে। তার সাথে কথা বলবার জন্য কেউ নেই। তাছাড়া ওকে দেশের উত্তর প্রান্ত থেকে আনা শ্রমিক আর ভৃত্যদেরকেও তো বাঁচাতে হবে। পাঁকে ভরা নর্দমাটাই সকল সমস্যার মূল। যেদিন আমি ক্যাসেলে এসে পৌঁছুলাম সেদিন বললো ব্যারি। আমি কিলডারিতে এসে পৌঁছেছি সূর্যাস্তের সময়।

যখন আকাশে সূর্যের সোনালী আভা পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সবুজ ভাবটা আরো বাড়িয়ে দেয় আর বাড়িয়ে দেয় জলাশয়ের নীলাভ ভাব। সূর্যের খরদ্বীপ্তিতে সেই দূরের ক্ষুদ্র টিলায় অবস্থিত অদ্ভুত পুরাতন ধ্বংসাবশেষটা পর্যন্ত ঝলমল করে উঠেছিলো। সেই সূর্যাস্ত দেখতে খুবই চমৎকার। কিন্তু যাওয়ার পথে ব্যালিলাফ এর গ্রামবাসীরা আমায় সতর্ক করে দিয়েছিলো এর ব্যপারে আর বলেছিলো কিলডারি অভিশপ্ত হয়ে গেছে। ওরা এমনভাবে বলছিলো যে আমি দূর থেকে ক্যাসেলের আগুন জ্বলতে থাকা চূড়া দেখে একরকম ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। দু একবার কেঁপেও উঠেছি। ব্যারির গাড়ি ষ্টেশনে আসার পর আমাদের দুই বন্ধুর দেখা হলো। কারণ ট্রেন যাবেনা। কিলডারি পর্যন্ত রেলপথ নেই। গ্রামের লোকেরা গাড়ি আর গাড়ির ড্রাইভার দুজনকেই এড়িয়ে গেলেও শুধু মলিনমুখে ফিসফিস করে আমাকে কিছু কথা বললো।

কারণ ওরা আমায় কিলডারিতে যেতে দেখছে। সেই রাতে দুই বন্ধুর পুনর্মিলনীর পর ব্যারি জানালো কেন গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। কারণ একটাই। ব্যারি ক্যাসেলের পাশের ঐ নর্দমাটা নিষ্কাশন করতে চায় । যদিও আমেরিকার প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো কিন্তু আয়ারল্যান্ডের প্রতিও তার টানটা দেখার মতন। তাই সে একটা সুন্দর জায়গার অপচয় হতে দেখে বসে থাকতে পারেনি। যে জমিতে ঘাস কেটে অনেকটা জমি ফাঁকা করা সম্ভব সেটা শুধুশুধু জঞ্জালে ডুবে তাকবে কেন? কিলডারিতে প্রচলিত নানান উপকথা আর কুসংস্কার তাকে থামাতে পারেনি। সে বরং প্রথমে একটু হেসে নিয়েছিলো যখন গ্রামবাসীরা তাকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা অভিশাপ দিতে দিতে চলে যায় ব্যালিলাফে। একদম তল্পিতল্পাসহ। কারণ তারা ডেনিসের কাজের প্রতি দৃঢ় সংকল্প দেখেছে।

ডেনিস ওদের বদলে উত্তর থেকে শ্রমিক নিয়ে এলো । চাকরবাকর ও আনলো গ্রামের চাকরদের বদলে। কিন্তু অচেনা মানুষের ভিড়ে ব্যারি একা হয়ে পড়েছিলো। তাই আমায় ডেকেছে।

যখন আমি শুনলাম ঠিক কোন ভয়ে কিলডারির লোকগুলো পালিয়েছে তখন আমি আমার বন্ধুর ডেনিসের মতই জোরে জোরে হেসেছি। এই ভয়ের পেছনে ছিলো একটা আবছা, বর্বর আর কিম্ভূতকিমাকার চরিত্র। তারা নর্দমা নিয়ে একটা ভ্রান্ত উপকথায় বিশ্বাস করতো। আর যেটা আমি সূর্যাস্তের সময় দেখেছিলাম ঐ ছোট টিলার পুরনো ধ্বংসাবশেষে নাকি করালদর্শন এক রক্ষক আত্মা থাকে।

এখানে প্রচলিত আছে “নাচুনে আলো”র কথা যা চাঁদের আলোয় আবছা অন্ধকারে নাচতো, ঠান্ডা বাতাস যেটা গরমের রাতে বইতো, সাদা প্রেতাত্মা যারা জলের ওপর ভেসে বেড়াতো আর একটা কাল্পনিক শহর যেটা নাকি এই নর্দমার তলায় রয়েছে। কিন্তু সবার মতে সবচেয়ে কাল্পনিক ও ভূতুড়ে ছিলো এই যে ঐ লালচে নর্দমাকে সেঁচে ফেলবে তার ওপর নেমে আসবে ঘোরতর অভিশাপ। ওখানে নাকি একটা রহস্য লুকিয়ে আছে যে রহস্য গ্রামবাসীর মতে কখনোই খোলাসা হওয়া উচিৎ না। রহস্যটা গোপনীয় ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত না পার্থোলানের বাচ্চাদের মধ্যে প্লেগ দেখা দিলো যা কল্পিত এবং ইতিহাসের বাইরের ঘটনা। “ বুক অব ইনভেডারস” এ বলা হয়েছে যে এই গ্রীকদের ছেলেদের সবাইকে কবর দেয়া হয়েছিলো “টালাট” এ। কিন্তু কিলডারির এক বৃদ্ধের মতে একটা মাত্র শহরকে এই প্রকোপ থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছিলো কারণ এটাকে রক্ষা করেছিলেন তাদের রক্ষক “মুন গডেস” অর্থাৎ চন্দ্রদেবী। তাই বৃক্ষে সুশোভিত পাহাড়েই তাদের কবর হয়েছিলো যখন নেমেড সাইথিয়া থেকে চলে যায় তাদের তিরিশটি জাহাজে করে।

এগুলোই ছিলো আইরিশ রুপকথার নিরর্থক কিছু কাহিনী যার জন্য গ্রামবাসীরা পালিয়েছে। যখন আমি এগুলোর কথা শুনলাম তখন ডেনিস কেন ওদের কথা শোনেনি সেটা ভেবে একটুও অবাক হইনি।

ডেনিসের একটা দারুণ শখের বিষয় ছিলো পুরাতত্ত্ব। সে ভাবলো নর্দমা নিষ্কাশিত হলে সে ভেতরটা ভালো করে খুঁজে খুঁজে দেখবে। দূরের ছোট্ট টিলার সাদাটে ধ্বংসাবশেষেও সে মাঝেমধ্যে যেতো। যদিও সেটার বয়স ছিলো অনেক। তাছাড়া অবয়ব আয়ারল্যান্ডের অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের তুলনায় ভিন্ন। ওগুলো ছিলো অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ। যা দেখে তাদের আগের অবস্থা যাচাই করা মুশকিল।

এখন নর্দমা পরিস্কারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। উত্তর থেকে আসা শ্রমিকদল দ্রুত ফালাফালা করে ফেলতে লাগলো সেই নিষিদ্ধ নর্দমার সবুজ শৈবাল,লাল গুল্মলতা আর ছোটছোট নলখাগড়ার জঞ্জাল।

ব্যারি যখন আমাকে সব বলছে ততক্ষণে আমার ঘুম পেয়ে গেছে কারণ ভ্রমণটা খুব শ্রান্তিকর ছিলো আর আমার বন্ধু বেশ রাত পর্যন্ত কথা চালিয়ে যাচ্ছিলো। একটা ভৃত্য আমাকে আমার ঘর দেখিয়ে দিলো। যার অবস্থান ক্যাসেলের একটা টাওয়ারের ওপর। যেখান থেকে পুরো গ্রাম আর নর্দমার কিনারের সমভূমিটা দেখা যায়। ঘরের জানালা দিয়ে সেই ছাদটা দেখতে পাচ্ছি যেখানে যেখান থেকে গ্রামবাসীরা পালিয়েছিলো। এখন ওখানে উত্তর থেকে আনা শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো দেখতে পেলাম যাজকপল্লীর গির্জার পেঁচানো অংশ। আর গভীর নর্দমা থেকে খানিক দূরের ক্ষুদ্র দ্বীপের সেই পুরাতন ধ্বংসাবশেষ। যেখান থেকে সূর্যের সাদা আলোর বিচ্ছুরন দেখেছি সূর্যাস্তের সময় ।যখন আমি ঘুমোতে যাচ্ছিলাম তখন আমার মনে হলো আমি কল্পনায় একটা ক্ষীণ শব্দ শুনতে পেলাম যেটা দূর থেকে ভেসে আসছে। শব্দটা কেমন যেন বুনো আর সুরেলা। সেটা আমায় আন্দোলিত করে গেলো এক অদ্ভুত উত্তেজনায় যা আমার স্বপ্নগুলোকে রাঙিয়ে গেলো।

কিন্তু পরদিন সকালে যখন আমি ঘুম থেকে উঠলাম তখন মনে হলো আমি গতরাতে যা শুনেছি সব আসলে স্বপ্নের ঘোরে শুনেছি। কিন্তু আমি স্বপ্নে যা দেখেছি তা রাতের সব বুনো শব্দকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতই সুন্দর। ব্যারির বলা লোককথাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েই আমার তন্দ্রাগ্রস্থ মন ভেসে বেড়াচ্ছিলো একটা শহর । যেখানে সবুজ উপত্যকা আছে , মার্বেল পাথরের রাস্তা আর মূর্তি রয়েছে। গ্রাম আর মন্দির আছে, আছে খোঁদাই করা লিপি । সবার কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছিলো যে ওটা আসলে গ্রীস।

ব্যারিকে স্বপ্নের কথাটা বলতে গিয়ে দুজনেই হেসে ফেললাম। আমার হাসির শব্দটা তুলনামূলক বেশিই ছিলো। কারণ ব্যারিকে ওর উত্তরাঞ্চলীয় শ্রমিকদের ব্যপারে খানিকটা চিন্তিত দেখা গেলো। এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতন তারা বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে , ধীরেসুস্থে স্তম্ভিতভাবে ঘুম থেকে উঠেছে। আর এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন তারা কোনরকম বিশ্রামই নেয়নি। যদিও তারা আগের রাতে খুব তাড়াতাড়িই ঘুমোতে গিয়েছিলো।

সেদিন সারাদিন আমি সূর্যস্নাত গ্রামটাতে একা একা ঘুরে বেড়ালাম আর মাঝেমধ্যে শ্রমিকদের সাথে কথাবার্তা চালিয়ে গেলাম। কারন ব্যারি ওর নর্দমা পরিস্কার করার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। শ্রমিকদের ততোটা খুশি দেখা গেলোনা যতটা তাদের হওয়া উচিৎ ছিলো। সবাইকে কেন জানি অস্থির লাগছিলো যেন তারা এমন কোন স্বপ্ন দেখেছে যেটা সকালে উঠে আর মনে করতে পারছেনা। আমি আমার দেখা গতরাতের স্বপ্নের কথা তাদের বললাম কিন্তু ওদের মধ্যে তেমন চাঞ্চল্য দেখা গেলোনা। কিন্তু সেই অদ্ভুত শব্দের কথা বলতেই তারা নড়েচড়ে বসলো। তারপর আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকালো তারা। বললো তারাও সেই অদ্ভুত শব্দের কথা মনে করতে পারছে।

সন্ধ্যায় ব্যারি আমার সাথে ডিনার করলো আর জানালো দুইদিনের মধ্যে নর্দমা নিষ্কাশনের কাজটা শুরু হবে। আমি শুনে খুশি হলাম। যদিও আমার লেকটাকে শ্যাওলা,গুল্ম আর ছোট ছোট জল্প্রবাহ থেকে আলাদা করে দেখতে মন চাইছিলোনা। আমার মনে একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। প্রাচীন রহস্যগুলো যেন উপলব্ধি করতে পারছিলাম যা এই নর্দমার তলায় লুকানো আছে। সেই রাতে আমার বাঁশির সুর আর মন্দিরের লিপির স্বপ্নের একটা পরিসমাপ্তি ঘটলো। উপত্যকার ওপর যে শহরটা ছিলো সেখানে দেখলাম এক ভয়াবহ মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। মারা গেছে সবাই। একটা ভয়ানক ধ্বস বৃক্ষশোভিত পাহাড়ি ঢাল থেকে নেমে এসে ঢেকে দিচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলোকে। শুধু ঢাকতে পারেনি পাহাড়চূড়ার আর্তেমিসের মন্দিরটাকে। যেখানে প্রাচীনকালের চন্দ্রদেবী ক্লেইস শুয়ে ছিলো ঠান্ডা আর নিঃশব্দে ঘেরা পরিবেশে। তার মাথায় একটা হাতির দাঁতে তৈরী করা মুকুট।

আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি যে ঘুম থেকে ধড়মড় করে উঠে বসেছি। বেশ কিছুক্ষণ বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো যে আমি ঘুমিয়ে আছি না জেগে উঠেছি। কারণ এখনো একটা তীক্ষ্ণ সুরে বাঁশির শব্দ ভেসে আসছে। কিন্তু যখন আমি মেঝের দিকে তাকাতেই শীতল চন্দ্রকিরণ আর ওপরে জাফরিকাটা জানালা চোখে পড়লো তখন বুঝলাম আমি জেগে আছি আর এখন কিলডারির ক্যাসেলেই রয়েছি। এবার শুনতে পেলাম ঘড়িতে দুইটা বাজার ঢংঢং শব্দ। আমার জেগে থাকার এটাও একটা প্রমান। এতকিছুর পরেও সেই একঘেয়ে বাঁশির সুর ভেসে আসছিলো কানে। বন্য অদ্ভুত হাওয়া কানে এসে লাগায় মনে হলো রোম পুরাণে বর্ণিত ছাগলের শিং আর লেজযুক্ত গ্রাম্যদেবতা “ফণ” দূরের পাহাড়ে শব্দ করে নাচছে। যা আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছিলোনা। তাই অধৈর্য হয়ে আমি লাফিয়ে নামলাম মেঝেতে তারপর পায়চারী করতে লাগলাম। কখন যে হাঁটতে হাঁটতে উত্তরের জানালার দিকে গিয়েছি বলতে পারবোনা । এখান থেকে দেখা যাচ্ছে গ্রাম আর নর্দমার কিনারের সমতলভূমিটা। আমার আর অন্য কোন দিকে তাকাতে ইচ্ছা করছিলোনা।ঘুমোতে চাইছিলাম কিন্তু সেই বিরক্তিকর বাঁশির সুর আমাকে ক্রমাগত নির্যাতন করে যাচ্ছিলো। তাই মনে হলো কিছু একটা করা দরকার। ভেবে উঠতে পারছিলাম না কি করবো।
কিন্তু একি!

চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া প্রশস্ত সমভূমিতে যে দৃশ্য দেখলাম তা কোন মানুষ কখনো ভুলতে পারেনা। নলখাগড়া বাতাসে বাঁশির মতন প্রতিধ্বনি তুলছিলো। সেখান থেকে প্রায় নিঃশব্দে ভেসে উঠলো দুলতে থাকা ভূতুড়ে মূর্তির দল। ঘুরে ঘুরে ফুর্তি করতে করতে নাচতে লাগলো ঠিক যেমন করে সিসিলিয়ানরা নাচতো তাদের ফসলের দেবী ডিমিটারের সামনে সেই প্রাচীনকালে হেমন্তের পূর্নিমা রাতে। বিস্তৃত সমতলভূমি , ঘোলাটে চন্দ্রালোক, ছায়াময় চলন্ত মূর্তির আকৃতি আর তারসাথে উগ্র একঘেয়ে বাঁশির সুর এমন একটা আবেশের সৃষ্টি করলো যে আমার মনে হতে লাগলো আমি যেন পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। কিন্তু এই ভয়ের মধ্যেও লক্ষ্য করলাম ওদের মধ্যে অর্ধেক ক্লান্তিহীন যান্ত্রিক নাচিয়েদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় শ্রমিকরাও আছে যাদের এখন ঘুমিয়ে থাকার কথা । আর বাকি অর্ধেক অদ্ভুত সাদাটে বস্তু অর্ধেক হলো আবছা এই পরিবেশে ভেসে বেড়ানো মলিন চিন্তিত জলপরী যারা সেই ভূতুড়ে নর্দমার জলপ্রবাহ থেকে এসেছে। আমি জানিনা কতক্ষণ ওদিকে তাকিয়ে ছিলাম সেই একাকী অবস্থায় টাওয়ারের চূড়ার জানালা থেকে। যার পর আমি মূর্ছা গেলাম। সকালের প্রখর সূর্যের আলোয় আমার ঘুম ভাঙলো।
প্রথম ধাক্কায় আমার সমস্ত ভয় আর পর্যবেক্ষন ডেনিস ব্যারিকে জানাতে মন চাইলো। কিন্তু জাফরিকাটা জানালা দিয়ে আসা সূর্যের আলো দেখার পর থেকেই আমি নিশ্চিত হলাম যে ঐ ঘটনাগুলোর কোনটাই বাস্তবে ঘটেনি। আমি দৃষ্টিভ্রমের শিকার হয়েছি তাছাড়া ওসব বিশ্বাস করা মতন দুর্বল আমি নই।

তাই ঘটনার ব্যাপারে আমি শ্রমিকদের জিজ্ঞেসে করলাম যারা রাতে দেরীতে ঘুমিয়েছিলো আর গতরাতের কুয়াশাচ্ছন্ন স্বপ্ন আর তীক্ষ্ণ শব্দের কিছুই মনে রাখতে পারেনি। ক্রমে প্রতিধ্বনিত শব্দেরা আমাকে খুব পেরেশান করে ফেলেছিলো। মনে হয় হেমন্তের ঝিঝিপোকা দলের শব্দ আমাকে সেই রাতে উত্যক্ত করেছে। দৃশ্যপটে ভূতুড়ে ভাব জাগিয়ে তুলেছে। সেদিন একসময় আমি ব্যারিকে তার লাইব্রেরীতে দেখলাম একাগ্রভাবে তার পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে যার বাস্তবায়ন হবে কাল। এই প্রথমবারের মত আমি আঁচ করতে পারলাম পালিয়ে যাওয়া গ্রামবাসীদের ভয়। কোন এক অজানা কারণে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। চাচ্ছিলাম প্রাচীন নর্দমার রৌদ্রহীন রহস্যকে বিরক্ত না করতে। মনে আপনা আপনি অঙ্কিত হলো একটা ভয়ানক দৃশ্য যা নর্দমার অপরিমেয় গভীর অন্ধকারে প্রাচীনকাল থেকেই লুকিয়ে আছে। এই রহস্যকে আলোতে আনা একটা অবিচবেচকের লক্ষণ।

আমি মনে মনে এই ক্যাসেল আর গ্রাম থেকে পালানোর অজুহাত খুঁজতে লাগলাম। ব্যারির সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে চলেও গিয়েছিলাম কিন্তু যখন সে হো হো করে হেসে উঠলো তখন থেমে যেতে বাধ্য হলাম। তাই আমি চুপচাপ ছিলাম যখন সূর্য অস্ত গেলো দূরের চকচকে পাহাড়ের ওপাশে আর কিলডারি লালচে আলো নিয়ে কোন এক অশুভ লক্ষণের অপেক্ষা করতে লাগলো।

সে রাতের ঘটনাটা সত্য ছিলো না আমার চোখের ভুল ছিলো সেটা আমি এখনো নিশ্চিত নই। তবে নিশ্চিতভাবে সেটা অতিক্রম করেছিলো আমাদের সাধারণ চোখে দেখা স্বপ্ন আর জগতকে। কোন সাধারণ কায়দাতেই আমি বর্ননা করতে পারবোনা সেদিনের অন্তর্ধান।টাওয়ারের ভূতুড়ে নিস্তব্ধটায় আমি নিভৃতে ভয়ার্ত অবস্থায় অনেকক্ষন পর্যন্ত ঘুমোতে পারলাম না । খুব অন্ধকার বাইরে,যদিও আকাশ পরিষ্কার কিন্তু চাঁদ ছিলো অবসন্ন। আর আলো বেড়েছিলো পরে, মধ্যরাতে।

আমি ভাবলাম ডেনিস ব্যারির এখানে থাকার সময় কি কি ঘটবে এই নর্দমায়। দিনটি ইতিমধ্যে এসে পড়েছে। আমার বিবেকের তাড়নায় মনে হলো এই মূহুর্তে ব্যারির গাড়ি নিয়ে পাগলের মত ব্যালিলাফ থেকে, এই ভয়ানক জায়গা থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু যতক্ষনে আমার ভয় দানা বেঁধে উঠতো তার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর স্বপ্নে দেখলাম উপত্যকায় একটা শহর। ঠান্ডা আর মৃত । একটা উৎকট ছায়ায় ঘেরা। একটা উগ্র বাঁশির আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো কিন্তু চোখ খুলে প্রথমেই সেটা লক্ষ্য করিনি। আমি পূর্বদিকের জানালার দিকে পিঠ দিয়ে শুয়েছিলাম। যেখান থেকে নর্দমাটা দেখা যায়। যেখানে অবসন্ন চাঁদ জেগে উঠবে আর আলো ছড়াবে আমার সামনের দেয়ালে। কিন্তু এখন সেরকম কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।

একটা আলো পড়েছে সামনের দেয়ালে কিন্তু এই আলো চাঁদের আলো নয়। ভয়ানক আর তীব্র ছিলো সেই লালচে উজ্জ্বল আলোকরশ্মি যা জানালার ওপর থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছিলো। পুরো ঘর ভরে উঠেলো গভীর অপার্থিব জৌলুসে। আমি সেই মূহুর্তে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। শুধুমাত্র গল্প উপন্যাসের চরিত্রগুলোই নাটকীয়ভাবে এসবের জন্য প্রস্তুত থাকে। নর্দমার দিক থেকে আসা নতুন আলোর উৎসের দিকে না তাকিয়ে আমি দৃষ্টিকে অবনত করে রেখেছিলাম প্রচন্ড ভয়ে। তারপর কাপড় পরে নিয়ে পালাবার চিন্তা করতে লাগলাম। আমার মনে পড়ে আমি রিভলভার আর হ্যাটটা হাতে নিয়েছিলাম কিন্তু যতক্ষনে সামনে দৃশ্য শেষ হলো আমি না পারলাম গুলি চালাতে না হ্যাট ধরে রাখতে।

কিছু সময় পর সেই লাল প্রভা আমার ভয়কে ছাড়িয়ে গেলো। আমি আঁতকে উঠে পূর্বদিকের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম যখন পাগল করে দেয়া অবিশ্রান্ত বাঁশির আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো ক্যাসেল আর পুরো গ্রামজুড়ে।

নর্দমার ওপর একটা সমুজ্জল আলোর বন্যা বয়ে যাচ্ছিলো। টকটকে লাল অশুভ আলো বর্ষিত হচ্ছিলো দূরের ছোট টিলার অদ্ভুতদর্শন ধ্বংসাবশেষ থেকে। সেই ধ্বংসাবশেষের দৃশ্যের বর্ননা আমি দিতে পারবোনা। আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি। কারণ এখন ওটাকে দেখাচ্ছে প্রাচীনকালের মতই ঐশ্বর্যশালী আর অমর কীর্তীর মতন। চমৎকার সব স্তম্ভে ঘেরা।

সেখানকার দেয়াল থেকে বিচ্ছুরিত আলোকশিখা এমনভাবে আকাশকে ভেদ করে যাচ্ছিলো যেন পর্বতের শিখরে অবস্থিত মন্দিরের চূড়া। বাঁশির আওয়াজ বেড়ে গেলো তারসাথে শুরু হলো ঢাকের শব্দ। আমি প্রবল ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে দেখতে লাগলাম সব। মনে হলো নাচনরত আধো আলো আধো ছায়া কালিগোলা অন্ধকার ভেদ করে সহাস্যে ঠিকরে বেরুচ্ছে আর প্রতিফলিত হচ্ছে আমার বিপরীতে থাকা মার্বেল পাথর থেকে। এর দখল ছিলো বিশাল জায়গাজুড়ে।

একসাথে তার সীমারেখার কথা ভাবাই যায়না। আমি হয়তো অনন্তকাল সেদিকে তাকিয়ে থাকতাম যদি বাঁশির শব্দটা আমার বামদিকে এসে তীক্ষ্ণ না হতো। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ভাবের আবেগে আমি বৃত্তাকার ঘরটা পার করে উত্তরের জানালার দিকে গেলাম। যেখান থেকে আমি গ্রাম আর নর্দমার পাশের সমতল ভূমিটা দেখতে পাচ্ছি। সেখানে আমার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেলো বুনো আতঙ্কে। যেন আগের দৃশ্যটাই ভালো ছিলো। এ আমি কি দেখলাম! পাণ্ডুর প্রকৃতির মুখ থেকে মৃতবৎ লাল আলোয় ভরা সমতল্ভূমি থেকে একটা বিচিত্র স্বত্বার মিছিল বেরিয়ে আসছে । এমন দৃশ্য কেউ কারো দুঃস্বপ্নেও দেখেনি।

বাতাসে কিছুটা ভেসে ভেসে কিছুটা দুলতে দুলতে সাদা কাপড় পরিহিত নর্দমার প্রেতাত্মা ধীর ধীরে অপসারিত হচ্ছে। স্তব্ধ জলে আর ক্ষুদ্র টিলায় তাদের উদ্ভট গঠনশৈলী দেখে মনে হচ্ছে প্রাচীন কোন জাঁকজমকপূর্ন অনুষ্ঠানে নাচছে তারা। তাদের ঢেউয়ের মতন তালে মেলানো হাত দুলছে সেই ঘৃণ্য বাঁশির সুরে। ভয়ঙ্কর সুরের তালে ভিড়ের মধ্যে টলতে থাকা শ্রমিকদের দেখা গেলো অন্ধ, বিকারবিহীন কুকুরের মত ভুলভাল তালে নাচছে। দেখে মনে হয় ওরা যেন সব অনুকরন করছে কদাকার অপ্রতিরোধ্য কোন অপদেবতার ইচ্ছায়। ঠিক নর্দমার পাশের জলপরীদের মতন। তাদের গতিপথে কোন পরিবর্তন এলোনা। ওদিকে ওদের একদল ক্যাসেল থেকে পথভ্রষ্টের মতন এলোপাথাড়ি ছুট লাগালো কোন একটা দরজা পার হয়ে। তারপর ক্যাসেলের সামনের চত্বর পার হয়েই দৃষ্টিহীনদের মত সোজা গিয়ে যোগ দিলো সমতলে যারা ভুলভাল নাচছিলো তাদের সাথে।যদিও তারা আমার থেকে অনেক দূরে তবুও আমি বুঝতে পারলাম যে তারা আর কেউ নয় উত্তরাঞ্চলীয় শ্রমিকের দল। কারণ তাদের মধ্যে কুৎসিত ও বদখৎ রাধুনীকে চিনতে পেরেছিলাম আমি। যার কিম্ভূতকিমাকার চেহারা এখন অবর্ননীয়ভাবে বিষাদগ্রস্ত লাগছিলো।

বাঁশি ভয়ানকভাবে বেজে যাচ্ছে। আমি আবার ঢাকের গুমগুম আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি সেই ছোট্ট টিলার ধ্বংসাবশেষ থেকে। তারপর ধীরে ধীরে খুব সুন্দরভাবে জলপরীগুলো নর্দমার জলের কাছে পৌছালো।

তারপর একজন একজন করে গলে গলে পড়ে মিশে যেতে লাগলো প্রাচীন নর্দমায়। ইতিমধ্যে তাদের অনুসরণকারী দল তাদের গতির দিকে লক্ষ্য না করে জল ছিটিয়ে ঢুকে পড়লো একটা ছোট ঘূর্নায়মান বুদবুদ ছাড়তে থাকা ভয়ঙ্কর পাঁকের ভেতর। টকটকে লাল আলোয় আমি এখান থেকে সবটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিনা। তবে এটা আন্দাজ করলাম যে ওদের মধ্যে শেষ পথভ্রষ্ট হতভাগ্য ছিলো সেই মোটা রাধুনী। সেও ডুবে চলে গেলো দৃষ্টির বাইরে অন্ধকারাচ্ছন্ন পুকুরে। বাঁশির সুর আর ঢাকের তাল থেমে গেলো সাথে সাথেই। আর চোখ ঝলসানো লাল আলোকরশ্মি যা ধ্বংসাবশেষ থেকে আসছিলো আচমকা হারিয়ে গেলো নির্জন আর অশুভ নিয়তির এই গ্রাম থেকে। গ্রামকে জনশূন্য করে হারিয়ে গেলো নতুভাবে ওঠা চাঁদের আলোর ওপারে।

আমার অবস্থা হয়েছিলো অনেকটা বিশৃঙ্খলায় ভরা । জানিনা পাগল হয়ে গেছি না সুস্থ আছি। হাটছি না ঘুমুচ্ছি। আমি একটা করুণ অসহায় অবস্থায় পড়ে আছি। আমি বিশ্বাস করি আমি প্রার্থনা করেছি আর্তেমিস, ল্যাটোনা, ডিমিটার, পারসেফোন আর প্লুটোনের কাছে। আমি শুধু মনে করতে পারলাম একটা প্রথমশ্রেনীর যুবকের কথা যা বাড়িয়ে তুললো আমার গভীর কুসংস্কারকে। আমার মনে হলো আমি সাক্ষী হয়ে রইলাম সমস্ত গ্রামবাসীর মৃত্যুর। আমি জানতাম আমি একাই থেকে গেছি ডেনিস ব্যারির সাথে যার ধৃষ্টতা একটা ভয়ানক নিয়তির সম্মুখীন করেছে সবাইকে। যখন আমি তার কথা ভাবলাম একটা নতুন ভয় আতঙ্কিত করে কাঁপিয়ে দিলো আমায়। আর আমি প্রকম্পিতভাবে পড়ে গেলাম মেঝেতে। অজ্ঞান নয় অসহায়ভাবে।

তারপর অনুভব করলাম ঠান্ডা দমকা বাতাস যা পূর্বদিকের জানালা দিয়ে হু হু করে আসছিলো। তক্ষুনি একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনলাম ক্যাসেলের ভেতর, আমার কাছ থেকে একটূ দূরে। সেই তীক্ষ্ণ চিৎকার একসময় এমনভাবে বিস্তার লাভ করলো যে তা লিখে বোঝানো মুশকিল।

যা মনে পড়লে আমি এখনো প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি শুধু এতটুকু জানি চিৎকারটা এসেছিলো আমার এক বন্ধুর গলা থেকে। কোন এক সময় এই জঘন্য পরিবেশে ঠান্ডা বাতাস আর চিৎকারের শব্দে আমি সচকিত হয়ে উঠলাম। তারপর পাগলের মতন কালিগোলা অন্ধকার ঘরগুলোর করিডোর আর ক্যাসেলের সামনের চত্বর পার করলাম সেই বীভৎস রাতে। ওরা আমায় সকালে খুঁজে পেলো বুদ্ধিবৃত্তিশুন্য অবস্থায় ব্যালিলাফের কাছে। কিন্তু যা আমাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিলো তা এমন কোন বিভীষীকা ছিলোনা যেটা আমি সে রাতে দেখেছি। আমি বিড়বিড় করে কিসব যেন বলছিলাম বলছিলাম যখন ধীরে ধীরে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছিলাম। দুটো অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিলো আমার পালানোর সময়। যে ঘটনাগুলোর কোন উদ্দেশ্য বা তাৎপর্য্য নেই। যদিও সেটা আমার মনকে হানা দেয় অবিরাম যখন আমি একা চাঁদের আলোয় জলাভূমির আশেপাশে থাকি।

আমি যখন অভিশপ্ত ক্যাসেল থেকে পালাচ্ছিলাম তখন নর্দমার কিনারে একটা নতুন শব্দ শুনতে পেলাম। সাধারণ একটা শব্দ কিন্তু কিলডারিতে এর আগে শুনিনি। স্থির জল প্রানীবিবর্জিত অবস্থায় ছিলো। এখন দলে দলে প্রচুর কর্দমাক্ত ব্যাঙ দেখা দিতে লাগলো । তারা তীক্ষ্ণভাবে ডাকতে লাগলো। যেন তাদের আকারের চাইতেও জোরালো তাদের শব্দ। তাদের ঝলমল করতে থাকা স্ফিত দেহ সবুজ দেখাচ্ছিলো চন্দ্রালোকে। তাদের দেখে মনে হলো তারা চাঁদের আলোর ফোয়ারার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি খুবই মোটা এবং কুৎসিত ব্যাঙের দৃষ্টির দিকে তাকালাম এবং দ্বিতীয়বারের মতন এমন কিছু দেখলাম যা আমার বুদ্ধিকে ভ্রষ্ট করে দিলো। আমার দৃষ্টিসীমা সরাসরি সেই আশ্চর্য্য পুরাতন টিলার ধ্বংসাবশেষ থেকে সোজা চলে গেলো ক্ষীয়মান চাঁদের দিকে।

চাঁদের দুর্বল কম্পিত প্রভার কোন ছায়া পড়েনি নর্দমার জলে। উর্ধগামী ফ্যাকাশে পথে আমার জ্বরাগ্রস্ত কল্পনাশক্তি একটা পাতলা ছায়া দেখতে পেলো যেটা ধীরে ধীরে মোচড়াচ্ছে। একটা অস্পষ্ট মোচড়ানো ছায়া এমনভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে যেন কোন অদৃশ্য অপদেবতা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। উত্তেজিত আমি দেখলাম সেই ভয়াবহ ছায়ামূর্তির বিকট প্রতিচ্ছায়া একটা ঘৃণ্য অবিশ্বাস্য ব্যাঙ্গচিত্রের মতন দেখতে। ওটা আসলে একটা অবিশ্বাস্য স্বত্বার প্রতিকৃতি এককালে যার নাম ছিলো ডেনিস ব্যারি।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত