টুয়েলফথ নাইট

টুয়েলফথ নাইট

দুই জমজ ভাই-বোন ভায়োলা আর সেবাস্টিয়ান বাস করত গ্রিসের মেসালিনা শহরে। এত সুন্দর তারা দেখতে যে একবার নজর পড়লে আর চোখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। দুজনের মধ্যে এত মিল যে পোশাক পরার পর মাঝে মাঝে চেনা যায় না কে ভায়োলা আর কে সেবাস্টিয়ান। দুজনে খুব ছোটোবেলায় হারিয়েছে তাদের বাবা-মাকে। এমন কোনও আপনজন নেই বাড়িতে যে ওদের স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেবে। তাই ওরা নিজেরাই নিজেদেরকে ভালোবাসে। এক মুহূর্ত একে অন্যকে দেখতে না পেলে ছটফট করে ওঠে তারা।

ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে উঠতে লাগল। তারা। যৌবনে পা দিয়ে একদিন তারা চেপে বসােল এক যাত্রীবাহী জাহাজে–গন্তব্যস্থল ইলিরিয়া। স্বাভাবিকভাবে কেটে গেল পুরো দু-দিন দু-রাত। তৃতীয় দিন ইলিরিয়ার উপকূলে এসে পৌঁছাল তাদের জাহাজ। সন্ধের পর আকাশের এক কোণে দেখা গেল একটুকরো ঘন কালো মেঘ। থমথমে হয়ে গেল অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন আর মাঝি-মাল্লাদের মুখ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে কালো মেঘ দৈত্যের মতো ফুলে-ফোঁপে উঠে ছেয়ে ফেলল। সারা আকাশ –মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি। মনে হল ঝড়ের দাপটে উড়ে যাবে গোটা জাহাজটা। অনেক কষ্টে মাঝি-মাল্লাদের সাহায্যে জাহাজটা নিয়ন্ত্রণে রাখলেন ক্যাপ্টেন। এবার সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠল ঝড়-বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে। পাহাড়ের মতো উচু উঁচু ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল জাহাজের উপর। প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙে গেল জাহাজের মাস্তুল, ছিড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল পোল। মাঝি-মাল্লা আর যাত্রীদের নিয়ে অসহায়ভাবে জাহাজটা দুলতে লাগল ঢেউয়ের মাথায় ইলিরিয়ার তীরবতী হবার পর জাহাজটিকে আর বাঁচীন সম্ভব হল না। ক্যাপ্টেনের পক্ষে। ডুবে গেল জাহাজটা। অধিকাংশ মাঝি-মাল্লা আর যাত্রীরা জাহাজের সাথেই তলিয়ে গেল সমুদ্রের অতলে। ক্যাপ্টেন আর সামান্য কজন মাঝি-মাল্লার সাথে ছোটো একটা নৌকায় উঠে কোনও মতে প্ৰাণ বাঁচোল ভায়োলা। তীরে উঠেই তার মনে প্রশ্ন জাগল ভাই সেবাস্টিয়ান বেঁচে আছে কিনা।

সে জিজ্ঞেস করল ক্যাপ্টেনকে, আমার ভাই সেবাসিন্টয়ান কি বেঁচে আছে?

তাকে আশ্বস্ত করে ক্যাপ্টেন বললেন, সম্ভবত সে বেঁচে গেছে। জাহাজ ডুবির সময় লক্ষ করেছিলাম। সে একটা মাস্তুলের সাথে নিজেকে বেঁধে নিয়েছে। মনে হয়, সমুদ্রের ঢেউই তাকে তীরে এনে ফেলেছে। আশা করি, ঈশ্বরের কৃপায় সে ভালোই আছে।

ক্যাপ্টেনের কাছে জানতে চাইল ভায়োলা, আপনি কি এ জায়গাটা চেনেন?

সেটা এখান থেকে তিন ঘণ্টার পথ। ক্যাপ্টেনের কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করল ভায়োলা।

এবার ভাবনা এল ভায়োলার মনে; সাথে তো টাকা-কড়ি মোটেও নেই। এই বিদেশ-বিভূইয়ে কোথায় বা যাবে সে আর কেই বা তাকে সাহায্য করবে! একমাত্র ভাই-ই ছিল তার আশা-ভরসা। সে আদপে বেঁচে আছে কিনা আর বেঁচে থাকলেও সে কোথায় আছে তা জানে না! ভায়োলা। কাজেই নিজের ব্যবস্থা যে নিজেকেই করতে হবে তা স্পষ্ট বুঝতে পারল সে। দেশে ফিরে যাবার ব্যবস্থাও করতে হবে তাকেই। কিন্তু এই অজানা জায়গায় কে দেবে তাকে চাকরি? কী করে অর্থে পার্জন করবে। সে? তদুপরি সে একজন যুবতি মেয়ে। কাজের ধান্দায় রাস্তার বেরুলে অন্যরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।

সে ক্যাপ্টেনের কাছে জানতে চাইল, কে এই দেশের শাসক?

ক্যাপ্টেন উত্তর দিলেন, ডিউক অর্সিনো।

ভায়োলা জানতে চাইল, তিনি কী ধরনের লোক?

ক্যাপ্টেন বলল, সৎ বলতে আমরা যা বুঝি, ডিউক সে ধরনের খাটি সৎ লোক। বয়সে যুবক হলেও এখনও পর্যন্ত বিয়ে হয়নি। তিনি ভালোবাসেন অলিভিয়া নামে একজন ভদ্রমহিলাকে। কাছেই বাড়ি ভদ্রমহিলার। তিনি ডিউককে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তাকে বিয়ে করতে আদৌ ইচ্ছক নন তিনি। কিন্তু তাতেও দমে যাননি ডিউক। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন অলিভিয়া ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে রাজি নন তিনি।

ক্যাপ্টেনের কাছে জানতে চাইল ভায়োলা, অলিভিয়া কে?

ক্যাপ্টেন বললেন, সে এক সম্রাস্ত বংশীয় কাউন্টের মেয়ে। প্রায় একবছর হল মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবার। এরপর তার অভিভাবক হন তার দাদা। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে তার দাদাও মারা গেলেন। ভাইয়ের এই মৃত্যুতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছেন তিনি। নিজেও বাইরে বের হন না। আর কেউ এলে তার সাথে দেখাও করেন না।

অলিভিয়াকে চাক্ষুষ না দেখলেও তার বড়ো ভাইয়ের অকালমৃত্যুর কথা শুনে তার প্রতি সমবেদনা জাগলো ভায়োলার মনে। সাথে সাথে তার মনে এল ছোটো ভাই সেবাস্টিয়ানের কথা। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, লেডি অলিভিয়ার অবস্থা দেখছি আমারই মতো। উনি হারিয়েছেন তার দাদাকে আর আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার ছোটো ভাইকে, জাহাজ ডুবির ফলে যে নিখোঁজ হয়েছে।

সায় দিয়ে ক্যাপ্টেন বললেন, সে দিক দিয়ে বিচার করলে তোমাদের দু-জনের অবস্থা প্ৰায় সমান।

ভায়োলা জানতে চাইল, আপনার কাছেই শুনলাম লেডি অলিভিয়া নাকি অগাধ ধন-সম্পত্তির মালিক। উনিই পারেন আমায় চাকরি দিতে। আপনি যদি একটু চেষ্টা করেন তাহলে হয়তো হয়ে যেতে পারে আমার একটা চাকরি।

সে না হয়। আমি চেষ্টা করব, তবে আশা কম–বললেন ক্যাপ্টেন।

ক্যাপ্টনকে মিনতি জানিয়ে ভায়োলা বলল, কিন্তু টাকা রোজগারের ব্যবস্থা আমায় যে ভাবেই হোক করতে হবে। লেডি অলিভিয়া না রাজি হলে আপনিই বরঞ্চ অনুরোধ করে দেখুন ডিউক অর্সিনোকে।

ভায়োলার কাকুতি-মিনতি শুনে ক্যাপ্টেন রাজি হয়ে গেলেন তার চাকরির জন্য ডিউককে অনুরোধ করতে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্যদিকে–ডিউক কি রাজি হবেন ভায়োলার মত এক সুন্দরী যুবতিকে চাকরি দিতে? ব্যাপারটা আঁচ করে ভায়োলা নিজেই সমাধান করল সমস্যার, ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে একপ্রস্থ পোশাক চেয়ে নিয়ে নিজের গায়ে চাপাল সে, তারপর আরশির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে লাগল সে। নিজেকে দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন সে নিজে নয়, যমজ ভাই সেবাস্টিয়ানের চেহারাটাই ফুটে উঠেছে আরশিতে। এমনকি ক্যাপ্টেনও অবাক হয়ে গেলেন তাকে ওই পোশাকে দেখে। ক্যাপ্টেন বারবার বলতে লাগলেন যুবতি বলে মনেই হচ্ছে না ভায়েলাকে দেখে। ওই পোশাক পরা অবস্থায় তিনি তাকে ডিউকের কাছে নিয়ে বললেন, এ ছেলেটি আমার খুবই পরিচিত। দারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছে। এ বেচারা। আপনার তো নানারকম কাজ-কর্মের জন্য লোকের প্রয়োজন। দয়া করে, যদি একে একটা কাজ দেন, তাহলে খুবই উপকার হয় বেচারার।

ক্যাপ্টেনের কথায় সহমত হয়ে বললেন ডিউক, ঠিকই বলেছেন আপনি। নানারকম কাজের জন্য লোকের দরকার হয় আমার। এরপর ভায়োলার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বললেন ডিউক, কী নাম তোমার?

চটপট জবাব দিল ভায়োলা, আজ্ঞে হুজুর, সিজারিও।

ডিউক জানতে চাইলেন, তা তুমি মনোযোগ দিয়ে কাজ-কর্ম করবে তো?

ভায়োলা উত্তর দিল, ক্যাপ্টেনের সামনে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি হুজুর আমার কাজে কোনও ত্রুটি পাবেন না আপনি।

ডিউক হেসে বললেন, বেশ! আমি তোমাকে খাস সহচরের পদে বহাল করলাম। কাজটা খুব কঠিন নয়। সব সময় আমার আশে-পাশে থাকবে, ফাই-ফরমাশ খাটবে। আর কোনও কাজে পাঠালে ভালোভাবে সে কাজটা করে আসবে। কী! পারবে তো?

ভায়োলা বলল, আমায় একবার সুযোগ দিন আপনাকে সেবা করার! আশা করি সেজন্য হতাশ হতে হবে না। আপনাকে। আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।

ডিউকের কাছে ভায়েলাকে কাজে লাগাতে পেরে স্বস্তি অনুভব করলেন ক্যাপ্টেন। ডিউকের কাছে বিদায় নিয়ে নিজের কাজে চলে গেলেন তিনি।

সিজারিওবেশী ভায়োলা আপ্ৰাণ চেষ্টা করছে ডিউককে খুশি করার। সব সময় সে ডিউকের আশে পাশে থাকে, একঘেয়েমি দূর করতে মাঝে মাঝে সে ডিউককে গান শোনায় আর ডিউকের মনখারাপ হলে সে মজার মজার কথা বলে তাকে আনন্দ দেবার চেষ্টা করে। এরই ফাকে ফাকে সেডিউকের কাছ থেকে শুনতে পায় লেডি অলিভিয়াকে তিনি কত ভালোবাসেন, হৃদয়ের গভীরে তিনি আরাধ্যদেবী রূপে বসিয়ে রেখেছেন তাকে। এত গভীরভাবে লেডি অলিভিয়াকে ভালোবাসা সত্ত্বেও তিনি যে ডিউককে মোটেও পাত্তা দেন না, এ কথা শুনে খুবই দুঃখ পায় ভায়োলা।

ডিউকের নিকটে থেকে কাজ করতে এক সময় তার প্রেমে পড়ে গেল ভায়োলা। কিন্তু তার ভালোবাসাকে সে লুকিয়ে রেখে দিল তার হৃদয়ের গভীরে, তার কোনও আঁচই পেলেন না ডিউক।

এর কয়েকদিন বাদে ডিউক একটা শিলমোহর করা খাম ভায়োলার হাতে দিয়ে বললেন, তুমি এখনই লেডি অলিভিয়ার কাছে গিয়ে এটা তাকে দেবে। আর বলবে আমি কত গভীরভাবে ভালোবাসি তাকে। তুমি তাকে এও বলবে তিনি আমার প্রতি নির্দয় হলেও আমৃত্যু আমি ভালোবেসে যাব তাকে। তোমার বয়স কম আর আমার চেয়েও দেখতে সুন্দর। তাই এ-কাজটা তোমাকে দিয়েই ভালোভাবে হবে।

এ কথা শুনে খুবই মন খারাপ হয়ে গেল ভায়োলার। ডিউককে ভালোবাসা সত্ত্বেও সে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। তাকে। উপরন্তু ডিউকের চিঠি নিয়ে যার কাছে যেতে হবে তিনি মোটেও পাত্তা দেন না তাকে। শুধু চিঠি দেওয়াই নয়, তাকে নিজমুখে বলতে হবে ডিউক তাকে কত ভালোবাসেন, বিয়ে করতে চান তাকে।

লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদের একতলায় থাকেন তার দূর সম্পর্কের খুল্লতাত স্যার টোরিব বেলচ্‌ আর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্যার অ্যান্ড্রু আগচিক। এরা উভয়েই পাঁড় মাতাল–এদের কেউ বিয়ে করেননি। স্যার টোবি মনে করেন অলিভিয়ার খুল্লতাত হবার দরুন এই প্রাসাদে থাকার অধিকার আছে তার। অবশ্য এ ব্যাপারে অন্য স্বার্থ রয়েছে। খুল্লতাত হবার দরুন তিনি মাঝে মাঝে নাক গলান ভাইঝির বিয়ের ব্যাপারে। কিন্তু অলিভিয়া সেটা মোটেও পছন্দ করেন না। স্যার টোবির ইচ্ছা যে ভাইঝি। বিয়ে করুক তার এক গ্রাসের ইয়ার স্যার অ্যাভু অগচিককে। বন্ধুর সাথে বিয়ে হলে তার কর্তৃত্বও বেড়ে যাবে, বন্ধুর মাধ্যমে ভাইঝির সম্পত্তির উপরও তার অধিকার বাড়বে–মনে মনে এসব স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু খুল্লতাতের মতলব যে সুবিধার নয়, সেটা ঠিকই আঁচ করেছেন অলিভিয়া। তাই তিনি দয়া করে তাকে আর বন্ধু স্যার অ্যাভু অগচিককে থাকতে দিয়েছেন প্রাসাদের একতলায় একটি ঘরে। তবে আগে থেকেই তিনি রক্ষীদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন তারা যেন একতলা ছেড়ে উপরে উঠতে না পারে। লেডি অলিভিয়া যেমন তাদের পাত্তা দেন না, তেমনি কেউ তার সাথে দেখা করতে এলে দু-বন্ধু তাকে ধমকে-ধামকে, এমন কি মার-ধর করে তাড়িয়ে দেয়। বাইরের কেউ যে অলিভিয়াকে বিয়ে করলে তাদের মৌরসীপাট্টা থাকবে না, এজন্য তারা কাজ করেন। লেডি অলিভিয়ার সাথে দেখা করার জন্য ডিউকের লোক যে প্রতিদিন প্রাসাদে আসে, সে কথাও জানে ওই দুই বদ্ধ মাতাল। তবে তারা এটা জেনে নিশ্চিত যে লেডি অলিভিয়া ডিউককে বিয়ে করতে রাজি নন।

সিজারিও-বেশী ভায়োলা এসে হাজির হল লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদে। তাকে দেখেই এগিয়ে এল অলিভিয়ার চাকর ম্যালভোলিও ডিউক যে তার নিজস্ব লোক মারফত অলিভিয়াকে প্ৰেমপত্ৰ পাঠান সে কথা জানে সে। তাই ভায়েলাকে দেখেই ধমকে উঠল সে, যাও! যাও! এখন দেখা হবে না লেডি অলিভিয়ার সাথে।

তার এরূপ অভদ্র আচরণে ক্ষুন্ন হয়ে ভায়োলা জানতে চাইল, কোন দেখা হবে না তার সাথে?

ম্যালভোলিও জবাব দিলে, দেখা হবে না। কারণ তিনি অসুস্থ।

আরে! অসুস্থ বলেই তো তার সাথে করতে এসেছি–বলল ভায়োলা।

কী করে আর দেখা হবে! উনি তো এখন ঘুমোচ্ছেন–ম্যালভোলিও বলল।

একটুও দমে না গিয়ে ভায়োলা বলল, ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করছি যতক্ষণ না উনি ঘুম থেকে ওঠেন।

এবার রেগে গিয়ে বলল ম্যালভোলিও, এতো মহা ঝামেলার ব্যাপার হল দেখছি! যতই আমি বলছি উনি অসুস্থ, ততই আপনি জোর করছেন তার সাথে দেখা করার জন্য।

এ কথা শুনে ভায়োলাও একগুয়ের মতো বলল, ঠিক আছে, উনি সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করছি। বাধা পেয়ে তারও জেদ বেড়ে গেছে যে ভাবেই হোক সে দেখা করবে: লেডি অলিভিয়ার সাথে। কারণ ডিউক স্বয়ং তাকে পাঠিয়েছেন লেডি অলিভিয়ার সাথে দেখা করতে। তাছাড়া সে দেখতে চায় লেডি অলিভিয়ার মধ্যে এমন কী আছে যার দরুন ডিউক তাকে এত ভালোবাসেন।

এমন নাছোড়বান্দা লোক দেখে বাধ্য হয়ে ম্যালভোলিও গেল তার কর্ত্রীকে খবর দিতে। যাবার আগে সে বলে গেল, কর্ত্রী অনুমতি দিলে আপনাকে আমি নিয়ে যাব তার কাছে। ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।

ম্যালভোলিও বলল তার কর্ত্রীকে, ডিউকের চিঠি নিয়ে একজন লোক এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। আমি বসিয়ে রেখেছি!

ধমক দিয়ে লেডি অলিভিয়া বললেন তাকে, তবে আর কী? কেউ দেখা করতে এলেই বসিয়ে রাখবে তাকে। তোমাকে তো আগেই বলেছি। ডিউকের কোনও লোকের সাথে দেখা করব না আমি। এরপর একটু গলা চড়িয়ে বললেন, যাও, এখনই প্রাসাদ থেকে দূর করে দাও লোকটাকে। ম্যালভোলিও বলল, আমি তো বারবার তাকে বলছি চলে যাবার জন্য। কিন্তু সে আমার কথায় কান দিচ্ছে না। বলছে আপনার সাথে দেখা না করে সে যাবে না।

খুব অবাক হয়ে বলল অলিভিয়া, বা! বেশ মজার ব্যাপার তো! এমন নাছোড়বান্দা লোক তো দেখিনি! লোকটাকে কেমন দেখতে?

দেখে-শুনে তো মনে হয় খুবই সুন্দর, বলল ম্যালভোলিও, তবে ওকে লোক না বলে ছেলে বললেই মানানসই হয়। আপনি জানতে চাইলেন বলেই বলছি খুবই সুন্দর ছেলেটি।

ডিউকের দূতের বয়স আর চেহারার বর্ণনা ম্যালভোলিওর মুখে শুনে অলিভিয়ার খুবই আগ্রহ হল ছেলেটিকে দেখার। পাতলা একটা রেশমি ওড়নায় নিজের মুখ ঢেকে তিনি বললেন ম্যালভোলিওকে, বেশ তো! ডিউকের দূত যখন বলেছে আমার সাথে দেখা না করে যাবে না, তখন তাকে সোজা নিয়ে এস আমার কাছে। যে হুকুম বলে অলিভিয়াকে সেলাম ঠুকে চলে গেল ম্যালভোলিও। কিছুক্ষণ বাদে সিজারিওবেশী ভায়োলাকে এনে সে হাজির করুল লেডি অলিভিয়ার সামনে।

নারীর মন দেবতারাই জানেন না মানুষ তো কোন ছাড়া। ডিউক যা এতদিনেও করতে পারেননি, ভায়োলাকে মাত্র একবার দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। ভায়োলা অনুরোধ করতে মুখের ঢাকনা সরিয়ে নিলেন তিনি। অলিভিয়ার মন ভোলাতে যে কথা তাকে বলতে শিখিয়েছিলেন ডিউক, তোতাপাখির মতো হুবহু সেগুলি আউড়ে গেল ভায়োলা। কিন্তু সে সবে কান দিলেন না। লেডি অলিভিয়া। তিনি একদৃষ্টি চেয়ে রইলেন ভায়োলার সুন্দর মুখের দিকে। এমন সুন্দর চেহারার যুবক আগে কখনও দেখেননি তিনি। কিছুক্ষণ বাদে লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে তিনি বললেন, দেখ, তোমার মনিবের কোনও কথাই আমি শুনতে চাই না তোমার মুখ থেকে। তবে তোমার জন্য সব সময় খোলা রইল। আমার দরজা। তোমার প্রয়োজনে যখন খুশি তুমি আসতে পার এখানে।

ভায়োলা বলল, আপনি যে উদারতা দেখালেন তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনাকে। কিন্তু শুধু শুধু এখানে এসে আর কী হবে— বলে সে বিদায় চাইল লেডি অলিভিয়ার কাছে। তবে এত তাড়াতাড়ি তাকে বিদায় দিতে ইচ্ছে করছিল না লেডি অলিভিয়ার। তাকে আরও কিছুক্ষণ আটকে রাখার উদ্দেশ্যে তিনি জানতে চাইলেন তার বংশ-পরিচয়।

উজ্জ্বল আমার বংশের ইতিহাস। তাছাড়া আমি একজন ভদ্রলোক তো বটেই। উপহারস্বরূপ লেডি অলিভিয়া তাকে কিছু টাকা দিতে চাইলে সে অস্বীকার করল তা নিতে। সে বলল, আপনি শুধু আমার প্রভুর দিকে একটু কৃপাদৃষ্টি দিন, তাহলেই সন্তুষ্ট হব আমি–এই বলে লেডি অলিভিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এল সে। ভায়োলা বেরিয়ে যেতেই তার জন্য মন খারাপ হয়ে গেল লেডি অলিভিয়ার। তিনি তাকে আবার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তিনি হাতের আঙুল থেকে একটি দামি আংটি খুলে নিয়ে ম্যালভোলিওকে দিয়ে বললেন, তুমি এখনই ছুটে গিয়ে ডিউক অর্সিনোর দূতকে ধর। তাকে বলবে ডিউক তার মাধ্যমে যে আংটিটা আমায় পাঠিয়েছেন সেটা আমি ফেরত পাঠালাম। সেই সাথে আরও বলবে কাল যদি তিনি সময় করে এখানে আসেন, তাহলে আমি তাকে বুঝিয়ে বলব কেন আমার পক্ষে ডিউককে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তুমি আমার হয়ে তাকে অনুরোধ করবে। কাল যেন তিনি অবশ্যই এখানে আসেন।

লেডি অলিভিয়ার কাছ থেকে আংটিটা নিয়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এল ম্যালভোলিও। তাড়াতাড়ি হেঁটে কিছুদূর গিয়ে সে ধরে ফেলল ভায়োলাকে। মনিবানীর নির্দেশমতো তাকে সবকিছু বলে হিরের আংটিটাি গুজে দিল তার হাতে। সব কিছু শোনার পর অবাক হয়ে ভায়োলা বলল, কই! আমি তো কোনও আংটি নিয়ে আসিনি?

ম্যালভোলিও বলল, আমার কর্ত্রী তো আর মিছে কথা বলেননি। তিনি বলেছেন বলেই তো আমি এতদূর ছুটে এসেছি আপনার কাছে। কিন্তু ভায়োলা অস্বীকার করল সে আংটি নিতে।

তখন ম্যালভোলিও বলল, আপনি এটা ফেরত না নিলে রাস্তায় ফেলে যাব। ফল হবে। আজে-বাজে যে কেউ কুড়িয়ে নেবে–বলেই আংটিটি রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেল সে। অনন্যেপায় হয়ে আংটিটা তুলে নিতে হল ভায়েলাকে। লেডি অলিভিয়ার মতো ভায়োলাও এক যুবতি মেয়ে। তার বুঝতে বাকি রইল না। উনি তার প্রেমে পড়ে গেছেন। শেষমেশ ব্যাপারটা যে এরূপ দাঁড়াবে, তা সে কল্পনাও করতে পারেনি। তার ভয় হল এসব জানতে পেরে ডিউক যদি তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেন তাহলে কী হবে!

ভায়োলা না চাইলেও মনিবের আদেশে তাকে পুনরায় যেতে হল লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদে। কিন্তু এবার ভেতরে যেতে সে কোনও বাধা পেল না। কারণ লেডি অলিভিয়া আগেই তার প্রাসাদের রক্ষী ও চাকর-বকিরদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন যে গতকাল যে সুন্দর যুবকটি ডিউকের দূত হয়ে এসেছিল, সে এলে যেন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার কাছে।

ডিউক যে পুনরায় তাকে প্রেম নিবেদন করেছেন এ কথা ভায়োলার মুখে শুনে বেজায় রেগে বললেন অলিভিয়া, আমি তো আগেই বলেছি ডিউকের ও সব ঘ্যানঘেনে প্রেমের কথা শুনতে মোটেও রাজি নই আমি। পরীক্ষণেই শাস্ত হয়ে বললেন, অবশ্য ডিউক ছাড়া অন্য কেউ যদি আমায় বিয়ে করতে ইচ্ছক হয়, তাহলে অনায়াসে তার কথা বলতে পার আমাকো — বলেই এমনভাবে চাইলেন ভায়োলার দিকে যে সে বেচারি লজ্জা পেয়ে গেল। সে কেশ বুঝতে পারল পুরুষবেশী তাকেই বিয়ে করতে চাইছেন লেডি অলিভিয়া। লজ্জায় সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। লেডি অলিভিয়া তাকে বললেন, তুমি কি ডিউককে ভয় পোচ্ছ? তাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। এ কথা লুকিয়ে রেখে আর কোনও লাভ নেই। যদি তুমি আমায় বিয়ে করতে রাজি হও, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, তুমিও ক্ষমতাবান হবে ডিউকের মতো।

এ কথা শুনে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না ভায়োলা। সে প্রাসাদ থেকে বাইরে যাবার জন্য পা বড়াল। যেতে যেতে শুনতে পেল লেডি অলিভিয়া বলছেন তাকে, আমি তোমায় প্ৰাণাধিক ভালোবাসি সিজারিও। তুমি আবার এস। তোমার অপেক্ষায় রইলাম আমি।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে যাবার মুখেই ঝামেলায় পড়ে গেল ভায়োলা। এক তলার দুই বাসিন্দাদের একজন স্যার অ্যাভু অগচিক জানতে পেরে গেছেন যে ডিউকের দূত সিজারিও ছোকরাকে ভালোকেসে ফেলেছে লেডি অলিভিয়া। ব্যাপারটা যথেষ্ট ভয়ের কারণ।–লেডি অলিভিয়া সিজারিওকে বিয়ে করলে প্রাসাদ ছেড়ে চলে যেতে হবে তাদের দু-বন্ধুকে। অলিভিয়ার দূর সম্পর্কিত খুল্লতাত স্যার টোবির সাথে আলোচনা করে স্যার অ্যাভু ঠিক করেছে যে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের মাধ্যমে সে হত্যা করবে সিজারিওকে। মূলত তার এক গেলাসের ইয়ার স্যার টোবির প্ররোচনায় সে এক নির্দিষ্ট দিনে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিল সিজারিওকে। দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে স্যার অ্যাভু যে সিজারিওকে চিঠি পাঠিয়েছে। এ কথা জেনে মনে মনে হাসল স্যার টোবিও। কারণ সে তো জানে তার বন্ধু কত ভীরু। ওদিকে ভায়োলা অর্থাৎ সিজারিও যে একজন দক্ষ তলোয়ারবাজ সে কথা জানিয়ে বন্ধুকে ভয় পাইয়ে দিল স্যার টোবি।

ওই দিনই সকালে অ্যান্টনিও নামক একজন কাপ্টেনের জাহাজে করে ইলিরিয়ায় পৌঁছেছে ভায়োলার ভাই সেবাস্টিয়ান। জাহাজ ডুবির পর ওই ক্যাপ্টেন তাকে প্ৰাণে বঁচিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন তার নিজের জাহাজে। নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে জাহাজ এসে পৌঁছেছে। এখানকার বন্দরে। এখান থেকে খুবই নিকটে ডিউক আর্সিনোর প্রাসাদ।

সেবাস্টিয়ান বললে, আসুন, জাহাজ থেকে নেমে একবার বন্দরটা ঘুরে দেখা যাক। সেই সাথে ডিউকের প্রাসাদটাও দেখা হয়ে যাবে।

ক্যাপ্টেন অ্যান্টেনিও বললেন, তুমি যেতে চাও যাবে। কিন্তু আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সেবাস্টিয়ান এর কারণ জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন বললেন, কারণ কিছুদিন আগে আমারই হাতে গুরুতর আহত হয়েছে ডিউকের ভাইপো। ডিউকের রক্ষীরা আমায় দেখতে পেলে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেবে। কাজেই একাই যেতে হবে তোমাকে।

ক্যাপ্টেনের অসুবিধার কথা শুনে সেবাস্টিয়ান স্থির করল সে একাই যাবে বন্দর দেখতে। জাহাজ থেকে নেমে যাবার আগে সেবাস্টিয়ানকে সাবধান করে বললেন ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও, মনে রেখা এটা বিদেশ-বিভূই। কাজেই খুব সাবধানে চলা-ফেরা করবে— বলে একটা টাকা ভর্তি থলে তার হাতে দিয়ে বললেন, এটা সাথে রােখ। এই অচেনা জায়গায় ঘুরে-ফিরে বেড়াতে হলেও অর্থের প্রয়োজন। নিজের মনে করেই এই টাকা থেকে তুমি প্রয়োজনীয় খরচ-খরচা করবে।

কী হবে এত টাকা দিয়ে? জানতে চাইল সেবাস্টিয়ান।

ক্যাপ্টেন বললেন, টাকাগুলো সঙ্গে রাখ। খিদে পেলেও তো খাবার কিনতে পয়সা লাগবে। কিছু বেশি টাকা সাথে রাখা ভালো। ক্যাপ্টেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাহাজ থেকে পথে নামল সেবাস্টিয়ান।

ওদিকে নির্দিষ্ট দিনেই সিজারিও-বেশী ভায়োলার সাথে তলোয়ার বাজিতে নামলেন স্যার অ্যাণ্ডু। প্রচণ্ড উত্তেজনায় কঁপিছে পাঁড় মাতাল স্যার অ্যাণ্ডুর হাত–অন্যদিকে তলোয়ার ধরা সিজারিওর ডান হাত কাঁপছে ভয়ে। হয়তো ভয়ংকর একটা কিছু হয়ে যাবার ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারত সিজারিও। ঠিক সে সময় দেবদূতের মতো সেখানে এসে হাজির হল এক অচেনা ভদ্রলোক। স্যার অ্যাভুকে উদ্দেশ্য করে সে চেঁচিয়ে বলে উঠল, থামুন আপনি। আমার সাথে লড়বেন। এর বদলে আমি লড়ব, আপনার সাথে।

ভায়োলা তো জানে না যে এই লোকটিই ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও। সেবাস্টিয়ানের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে ধরা পড়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি নিজে বেরিয়েছেন তার খোঁজে। ভায়োলাকে সেবাস্টিয়ান ভেবে ভুল করেছেন তিনি। তাকে সাহায্য করতে আসার দরুন অপরিচিত ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানাল সিজারিও। ঠিক তখনই একদল রক্ষী এসে হাজির সেখানে। অ্যান্টনিওকে চিনতে পেরে রক্ষীদের দলপতি প্ৰেপ্তার করলেন তাকে।

সিজারিওর দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন বললেন, বন্ধু সেবাস্টিয়ান! তোমায় বাঁচাতে এসে আমি নিজেই পড়ে গেলাম বিপদে। যাকগে সে কথা। যে টাকার থলিটা তোমায় দিয়েছিলাম সেটা এবার আমায় দেও! জানি না। কদিন গারদে আমায় আটক থাকতে হবে। ওখানে তো টাকার দরকার হবে আমার।

অচেনা অজানা এক ব্যক্তির মুখে সেবাস্টিয়ানের নাম শুনে ভায়োলা বুঝতে পারল তার ভাই সেবাস্টিয়ান এখনও বেঁচে আছে আর এই লোকটি তাকে জানে। সে ভায়োলাকেই সেবাস্টিয়ান বলে ধরে নিয়েছে। যাই হোক, ভাইয়ের বেঁচে থাকার কথা শুনে স্বস্তি পেল ভায়োলা। কিন্তু টাকার থলির ব্যাপারটা বোধগম্য হল না। তার কাছে। রক্ষীদের হাতে বন্দি লোকটিকে সে বলল, আমি আপনার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ—কারণ বিপদের সময় আপনি এগিয়ে এসেছেন আমায় বঁচাতে। কিন্তু আপনার টাকার থলির ব্যাপারটা সত্যিই আমি জানি না। তবে আমার কাছে খুবই সামান্য টাকা আছে। প্রয়োজন হলে আপনি তা নিতে পারেন–এই বলে নিজের টাকার থলিটা এগিয়ে দিল তার সামনে।

চেঁচিয়ে বলে উঠলেন ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও, ছিঃ সেবাস্টিয়ান! আমার জানা ছিল না তুমি এত নীচ, বেইমান! জাহাজ ডুবির পর আমি তোমায় প্রাণ বঁচিয়ে আশ্রয় দিয়েছিলাম নিজের কাছে। আর এভাবে তুমি প্রতিদান দিলে তার? অস্বীকার করলে আমাদের বন্ধুত্বকে? আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন, কিন্তু তার আগেই রক্ষীরা টানতে টানতে টেনে নিয়ে গেল তাকে। এখানে থাকলে পাছে স্যার অ্যাণ্ডু তার উপর চড়াও হয়, এই ভয়ে ভায়োলা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ডিউকের প্রাসাদের দিকে।

স্যার অ্যাণ্ডু, স্যার টোবি, দু-জনের কেউই টের পাননি ভায়োলার চলে যাওয়া। কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ সেখানে এসে হাজির সেবাস্টিয়ান–উভয়েই তাকে ধরে নিল সিজারিও বলে। স্যার টোবি ইঙ্গিত করতেই তলোয়ার উচিয়ে তার দিকে ছুটে এল স্যার অ্যাভূ-সেবাস্টিয়ানের কোমরেও বুলিছিল তলোয়ার। শয়তানের মতো দেখতে বদখত চেহারার একটা লোক তার দিকে তলোয়ার হাতে তেড়ে আসছে দেখে সেবাস্টিয়ানও বের করল তার তলোয়ার, মোক্ষম একটা আঘাত হািনল স্যার অ্যাভুর মুখে। বন্ধুকে আহত হতে দেখে স্যার টোবিও ছুটে এল তলোয়ার হাতে–সেও জখম হল সেবাস্টিয়ানের তলোয়ারের আঘাতে।

কাছেই ছিল লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদ। খবর পেয়ে তিনি নিজে এলেন সেখানে। আহত স্যার টোবি ও স্যার অ্যাভূ-দু-জনকেই ধমকে-ধামকে তাড়িয়ে দিলেন। রক্ষীদের আদেশ দিলেন তারা যেন উভয়ের কাউকে প্রাসাদে প্রবেশ করতে না দেয়। এবার সিজারিও ভেবে তিনি সেবাস্টিয়ানকে আহ্বান জানালেন প্ৰসাদের ভেতরে আসার। লেডি অলিভিয়ার মতো এক অপরূপ সুন্দরী মহিলার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারল না সেবাস্টিয়ান। তার মতো একজন সাধারণ মানুষের প্রতি মহিলার অপরিসীম দয়া দেখে মনে মনে খুবই অবাক হল সেবাস্টিয়ান। সে লক্ষ করল। মহিলা তার সাথে এমনভাবে কথা বলছেন যেন সে তার পূর্বপরিচিত। সে আরও লক্ষ করল। মহিলা শুধু কথাই বলছেন না। –কথার মাঝে রয়েছে প্ৰেম নিবেদনের সুর। তবে কি মহিলা পাগল? শুরুতে এ প্রশ্নটা জেগেছিল তার মনে। কিন্তু যখন সে দেখল তিনি স্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা বলছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন কাজের লোকদের– তখন সে বুঝতে পারল উনি পাগল নন, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তখন সেও এমন আচরণ করতে লাগল। যাতে লেডি অলিভিয়ার মনে হল সত্যিই এবার নম্র হয়েছে সিজারিওর মন–সে সাড়া দিচ্ছে তার প্রেমের ডাকে। এ সব দেখে খুবই খুশি হলেন লেডি অলিভিয়া। পাছে সিজারিও বেহাত না হয়ে যায়, এই ভয়ে তিনি তখনই তার সাথে বাগদান পর্বটা সেরে রাখতে চাইলেন। সেও রাজি হয়ে গেল তার প্রস্তাবে। আর দেরি না করে লেডি অলিভিয়া তাকে সোজা নিয়ে গেল গির্জায় — সেখানে পাদ্রির সামনে সম্পন্ন হল বিয়ের বাগদান পর্বটা। এবার ভাবী স্বামীকে নিয়ে লেডি অলিভিয়া প্রাসাদে ফিরে এলেন। খাওয়া-দাওয়া সেরে গল্প-গুজব করে কেটে গেল কিছুটা সময়। এ সময় হঠাৎ ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিওর কথা। তিনি বলেছিলেন সরাইখানায় অপেক্ষা করবেন তার জন্য। এতক্ষণ নিশ্চয়ই তিনি সেখানে বসে চিন্তা করছেন তার পথ চেয়ে। সরাইখানায় যাবার জন্য সে বিদায় নিয়ে এল লেডি অলিভিয়ার কাছ থেকে। যেতে যেতে সে ভাবতে লাগল তার মতো একজন সাধারণ মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অজানা-অচেনা রূপবতী এক ধনী মহিলা তার সাথে বিয়ের বাগদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন–প্রিয় বন্ধু ক্যাপ্টেনকে নিজ মুখে এ সব কথা বলে সে অবশ্যই তার সাহায্য চাইবে।

প্রাসাদে পৌঁছে ডিউককে অভিবাদন জানিয়ে বলল ভায়োলা, আমায় মাফ করবেন মাননীয় ডিউক। আমার শত চেষ্টা সত্ত্বেও লেডি অলিভিয়া কিছুতেই রাজি হননি। আপনার কথা শুনতে।

এ কথা শুনে বললেন ডিউক, আর তোমায় যেতে হবে না সিজারিও। এবার আমি নিজেই যাব তার সাথে কথা বলতে।

সিজারিও-বেশী ভায়োলা আর কয়েকজন রক্ষীকে সাথে নিয়ে লেডি অলিভিয়ার সাথে দেখা করতে চললেন ডিউক অর্সিনো। প্রাসাদের সামনে তার সাথে দেখা হল রক্ষীদের হাতে বন্ধু অ্যান্টনিওর সাথে। অ্যান্টনিওকে দেখিয়ে ভায়োলা বলল, কিছুক্ষণ আগে এই ভদ্রলোকই আমায় রক্ষা করেছেন দ্বন্দ্বযুদ্ধের হাত থেকে।

অবাক হয়ে ডিউক বললেন, দ্বন্দ্বযুদ্ধ? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমি?

তখন ভায়োলা তাকে খুলে বলল সব কথা। শেষমেশ বলল ধরা পড়ার পর উনি একটা টাকার থলে চেয়েছিলেন তার কাছে। কিন্তু ও ব্যাপারে কিছুই জানে না সে।

এবার ক্যাপ্টেন বললেন, ছিঃ ছিঃ এমন অধঃপতন হয়েছে তোমার। এখনও না বোঝার ভান করছ?–বলেই ইশারায় ভায়োলাকে দেখিয়ে ডিউককে বললেন, মাননীয় ডিউক, জাহাজ ডুবির পর আমি ওকে জল থেকে তুলে নিয়ে এসেছিলাম আমার জাহাজে। আশ্রিত হিসেবে কয়েকমাস আমার জাহাজে কাটিয়েছে। ও। আমার জাহাজ আজই এসে পৌঁছেছে ইলিরিয়ার বন্দরে। শহর দেখতে যাবার সময় আমি ওর হাতে তুলে দিয়েছিলাম এক থলে স্বর্ণমুদ্রা। ওর ফিরতে দেরি দেখে ধরা পড়ার ঝকি সত্ত্বেও আমি নেমে এসেছি। ডাঙায়। কিছুদূর যাবার পর দেখতে পেলাম ও দ্বন্দ্বযুদ্ধ করছে এক আধাবুড়ো মাতালের সাথে। ভয় আর উত্তেজনায় তলোয়ার সুন্ধু ওর হাতটা থর থর করে কঁপিছে। তলোয়ারটা হয়তে ওর হাত থেকে পড়েই যেত যদি না আমি এগিয়ে এসে ওর হয়ে লড়াই করতে নামতাম। এমন কপাল আমার! ঠিক সে সময় আপনার রক্ষীরা এসে গ্রেপ্তার করলে আমাকে। আর এখন কিনা ও বলছে চেনেই না। আমাকে। আগে কখনও দেখেনি আমায়। তাই টাকার থলেও নেই তার কাছে। হুজুর! আমার প্রার্থনা এই বেইমানির বিচার আপনি নিজেই করুন।

ক্যাপ্টেনকে বললেন ডিউক, তুমি বলছি আজই তোমার জাহাজ ভিড়েছে ইলিরিয়া বন্দরে? কিন্তু যার বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগ, সে তো অনেকদিন ধরে কাজ করছে আমার কাছে। তাই তোমার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য বলে মেনে নিতে পারছি না। আমি–বলেই রক্ষীদলের নেতাকে ডেকে প্রশ্ন করলেন, কী অপরাধে একে ধরেছ তোমরা?

রক্ষীদলের নেতা বললেন, হুজুর! এরই সাথে লড়তে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন আপনার ভাইপো। সেই অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইনি।

ভায়োলাকে দেখিয়ে ডিউক বললেন ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিওকে, তুমি বলছি তোমার জাহাজে ওকে আশ্রয় দিয়েছিলে। আরও বলছি তোমার জাহাজ আজই ভিড়েছে ইলিরিয়া বন্দরে। কিন্তু ও তো তারও আগে থেকে রয়েছে। আজ সকালে ওকে টাকার থলি দেবার যে কথা বলছি, সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কথা শেষ করে ডিউক রক্ষীদের আদেশ দিলেন, এখন ওকে নিয়ে যাও। ওর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আছে তা পরে বিবেচনা করব আমি।

ডিউকের কথা শেষ হতে না হতেই নিজের প্রাসাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন লেডি অলিভিয়া! আশেপাশের সবকিছু ফেলে ডিউক হাঁ করে চেয়ে রইলেন তার দিকে। তাকে ঐভাবে তাকাতে দেখে শুধু বিরক্তিই নয়, তার প্রতি প্ৰচণ্ড অসন্তুষ্ট হলেন লেডি অলিভিয়া। ডিউকের সাথে তার দূত সিজারিও এসেছেন এটা যেন তখনই নজরে এল লেডি অলিভিয়ার। ডিউককে ধর্তব্যের মধ্যে না এনে সরাসরি প্ৰেমালাপ শুরু করলেন সিজারিওর সাথে। সিজারিওকে যে লেডি অলিভিয়া ভালোবাসেন সেটা বুঝতে পেরে মনে মনে খুবই রেগে গেলেন ডিউক। সিজারিওকে ডেকে তিনি বললেন, এবার চল এখান থেকে। মানিবের সাথে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছে সিজারিও ঠিক সেসময় মিনতিভরা স্বরে সিলভিয়া বললেন তাকে, তুমি চলে যেও না সিজারিও, প্রাসাদে এস। অনেক কথা আছে তোমার সাথে।

সিজারিও বলে উঠলেন, নাঃ আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। মনিবের সাথেই যেতে হবে আমাকে। আমি ওকে প্ৰাণাধিক ভালোবাসি। কোনও নারীকে এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা সম্ভব নয়।

জোর গলায় বলে উঠলেন লেডি অলিভিয়া, সিজারিও! তুমি আমার স্বামী। আমার কথা রাখ। এভাবে চলে যেও না তুমি।

অবাক হয়ে বললেন ডিউক, তুমি লেডি অলিভিয়ার স্বামী?

সিজারিও উত্তর দিল, নাঃ মহামান্য ডিউক, আমি ওর স্বামী নই, আর অন্য কোনও নারীর স্বামী হতেও চাই না আমি।

লেডি সিলভিয়া বললেন, ও যে আমার স্বামী তার প্রমাণ আমি এখনই দিচ্ছি! এরপর তিনি ডেকে আনলেন সেই পাদ্রিকে1.সিজারিওকে দেখিয়ে বললেন পাদ্রিকে, আচ্ছ ফাদার, আজ সকালে কি আপনার সামনে এই যুবক সিজারিওর সাথে আমার বিয়ের বাগদান অনুষ্ঠান হয়নি?

ভালো করে সিজারিওর মুখটা দেখে নিয়ে পাদ্রি বললেন, এর সাথেই তো প্ৰায় দু-ঘণ্টা আগে তোমার বাগদান হয়েছে। বাগদান তো আমার সামনেই হল। এমন সুন্দর মুখ কি এত সহজে ভোলা যায়!

পাদ্রির কথা শুনে ডিউক নিশ্চিন্ত হলেন সে সিজারিওই লেডি অলিভিয়ার স্বামী। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে তাকে এভাবে টপকে গিয়ে সিজারিও বিয়ে করবে। লেডি অলিভিয়াকে। ডিউক একবার ভাবলেন তাকে প্ৰাণদণ্ড দেবেন। পরীক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সিজারিওকে বললেন, তুমি আমার সাথে যা করেছ তা স্রেফ বিশ্বাসঘাতকতা। যাই হোক, তুমি আর আমার সামনে এস না।

ডিউকের হুকুম শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ল সিজারিও। যাই হোক এই বিদেশ-বিভূইয়ে তার থাকা-খাওয়ার একটা হিল্পে হয়েছিল, সাথে সাথে রোজগারও হচ্ছিল তার। এবার সে সব চলে গেল। ওদিকে সিজারিও তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে দেখে মনে মনে খুবই দুঃখ পেলেন। লেডি অলিভিয়া। এরই মাঝে এসে হাজির দুই পাঁড় মাতাল স্যার টোবি আর স্যার অ্যাণ্ডু। তাদের ক্ষতস্থান থেকে দরদরি করে পড়ছে রক্ত।

সিজারিওকে দেখিয়ে তারা বলল, এই তো সেই লোক যে কিছুক্ষণ আগে জখম করেছে। আমাদের।

বিরক্তি সহকারে বললেন ডিউক, কী যা তা বলছি তোমরা! ওতো সকাল থেকেই আমার সাথে রয়েছে। তাহলে কীভাবে ও জখম করল তোমাদের?

এক সাথে বলে উঠল। স্যার টোবি আর স্যার অ্যান্ড, মহামান্য ডিউক! আমরা কেউ মিথ্যে বা বাড়িয়ে বলছি না। কিছুক্ষণ আগে ও সত্যিই আমাদের জখম করেছে।

এবার ধান্দে পড়ে গেলেন ডিউক। তাদের কথার ধরনে এমন কিছু ছিল যাতে মনে হয় না। তারা মিথ্যে কথা বলছে। আসল ব্যাপার তাহলে কী?

এই ধাঁধার মধ্যে পড়ে গিয়ে ডিউক বুঝতে পারলেন না। এবার তিনি কী করবেন। ঠিক সে সময় সমস্যার সমাধান করতে এসে হাজির ভায়োলার ভাই সেবাস্টিয়ান। দ্বন্দ্বযুদ্ধে জখম করার জন্য প্রথমেই সে ক্ষমা চাইল স্যার টোবি আর স্যার অ্যাণ্ডুর কাছে।

এবার অবাক হয়ে লেডি অলিভিয়া দেখলেন তার সামনে দাঁড়িয়ে দুজন স্বামী। তাদের উচ্চতা, গায়ের রং, এমনকি পোশাক পর্যন্ত হুবহু এক। কে যে আসল স্বামী তা বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি।

ডিউক দেখতে পেলেন নবাগত যুবকটি দেখতে হুবহু তার পাশ্বচর সিজারিওর মতো। লেডি অলিভিয়া এবং ডিউকের মতো একই সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলে বন্দি ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও [ নবাগত ছেলেটি দেখতে সেবাস্টিয়ানের মতো অথচ সেবাস্টিয়ান দাঁড়িয়ে রয়েছে ডিউকের পাশে। তাহলে এ কে? কিন্তু ভায়োলা ভুল করেনি নবাগত যুবকটিকে চিনতে। সে ছুটে এসে যুবকটির গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমিও আমায় চিনতে পারছি না সেবাস্টিয়ান? আমি তোমার বোন ভায়োলা।

তারপর সে সবাইকে জানাল সে পুরুষ নয়, পুরুষের ছদ্মবেশে এক যুবতি নারী, নাম ভায়োলা। তার দূত সিজারিও যে আসলে একজন নারী, সে কথা খুব আশ্চর্য হলেন ডিউক। আসলে ডিউক কিন্তু মনে মনে খুবই ভালোবেসে ফেলেছেন ভায়োলাকে। যখন তিনি দেখলেন সেবাস্টিয়ানের সাথে লেডি অলিভিয়ার বাগদান হয়ে গেছে, তখন আর তার পিছনে ছুটে কোনও লাভ নেই। তার চেয়ে ভায়োলার মতো একজন নারীরত্নকে বিয়ে করে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া শ্রেয়।

ভায়োলার দিকে তাকিয়ে ডিউক বললেন, ভায়োলা! তুমি কি আমায় ভালোবাস?

ডিউকের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেল ভায়োলা। সে কিছু না বলে চুপ করে রইল।

ডিউক আবার জিজ্ঞেস করলেন তাকে, ভালোয়া! তুমি আমায় বিয়ে করতে রাজি আছ?

লজ্জায় আর যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না ভায়োলা। কোনও মতে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল সে।

এবার জাঁকজমকের সাথে একই দিনে হয়ে গেল দুটি বিয়ে। এই বিয়ের আনন্দ-উৎসব উপলক্ষে ডিউক মুক্তি দিলেন ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিওকে।

গল্পের বিষয়:
অনুবাদ
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত