রক্ত কিংবা বেনারসি!

রক্ত কিংবা বেনারসি!

চেয়েছি ভালোবেসে অবাক করতে তোমাকে। ভীষণ অবাক। পারিনি কখনো। তাই তোমার বাবার জানালার কাচ ভেঙেছি। তোমাকে যেদিন স্কুল পথে দেখিনি সেদিন পাড়ার জমির মিয়ার দোকানে আগুন দিয়েছি দাউ দাউ। একদিন আমার উদ্দেশ্যে তোমার ছুড়ে দেওয়া ঘৃণা বহনকারী তোমার বান্ধবীকে কষে একটা চড়ও দিয়েছি। বলেছি, শালি যাহ।

শালিটা গালি না ধরে শালি মানে শ্যালিকা হলে ল্যাঠা চুকে যায়। শালা, হলো না ছাই। হয় না কিছুই। তাই যা হয় না, তা করতে হয় জোর করে, এমন ভাবনায় পেয়ে বসেছিল আমাকে।

তোমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে ক্রমান্বয়ে ভাঙনের ডাক শুনছিলাম আমি আমার আমির। এসব বলি না কাউকে। বললেই তা দুর্বলতা ভাবে সবাই। সুযোগ নেয়। দুর্বলতাকে অস্বীকার করাই বখাটের ধর্ম। বললেই যে সেই ধর্মে হবে রোল নম্বর অগণন।

জন্মেছিলাম তোমার/তোমাদের মতো মানুষের আদলে। যখন বুঝ ছিল না, তখন মানুষই ছিলাম। বুঝ হওয়ার পরে বোধকে বিকিয়ে হয়ে উঠলাম অমানুষ! তুমি–তোমরা কিংবা তোমাদের সমাজ সে দায় নেবে না। সে আমি জানি।

শুধু সব দায় আমার মায়ের। তাই আমার বাবার দুইবেলা মাইর খায় সে। পোলারে বখাটে বানাইছোস এই অপরাধে। হ্যাঁ, আমার মায়ের প্রশ্রয় ছিল। মা আমার বোনের পাত শূন্য রাখত, আমাকে দিত মাছের দুই খণ্ড। এমন অসম সমতা পেয়ে পেয়েই বদঅভ্যাস হয়েছে আমার। তাই তোমাকেও চেয়ে বসি একদিন অসম জেনেও। জয় করা আর জোর করা দুটো বিষয়ের সংজ্ঞা ভুলে যাই আমি। গুলিয়ে ফেলি। এক করে ফেলি। শেষমেশ একি জয় করা ছিল, নাকি জেদের মাদকতা ছিল অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়া এই আমার, সেও অনির্ণীত। ঝাপসা আমার কাছে।

এসবে অবাক হতে না সে জানি। কিন্তু এসব ছাড়া আমি আর কিছুই জানতাম না। অবাক করতে চেয়েছি তো, অসভ্য বলে সভ্য মেয়ের চশমা চোখে মাড়িয়ে গেছ আমার স্কুল ফাঁকি দেওয়া প্রতিটা নষ্ট বিকেল।

কী অবলীলায় অবহেলা করেছ সব। চাইলেই তুমি সব পার, পার না শুধু আমাকে বুঝতে। চিরকাল শুধু একটা বখাটেকেই দেখলে তার ভেতরের প্রেমিকটাকে দেখলে না। বুঝলে না আমি যতটুকু বখাটে ছিলাম তারও অধিক প্রেমিক ছিলাম।

শোনো নীড়া! বোঝা না বোঝায় আর আমি নেই। এবার আমি খুনি হব, খুন করব তোমাকে। রক্তাক্ত দেহে নিথর তুমি অবাক হয়ে বলবে—ভালোবাসলে খুন করতে না! আমি বলব, তোমাকে দণ্ড দিলাম। আমাকে প্রেমহীনতার হেতুতে রাখা অগণন সুবোধ বিকেলকে খুনের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তুমি। আমি আইন মানি না। হ্যাঁ, আমার আদালতেই হবে সে বিচার। কেননা স্বয়ং অপরাধী যে সমাজে পার পেয়ে যায়, সে সমাজে প্রমাণহীন প্রশ্রয়কারীর শাস্তি চাওয়া মানে তো অলীক আদালতে মামলা ঠোকা।

তোমার অন্যায় হলো, তোমার চোখে একদিন আমি প্রশ্রয় দেখেছিলাম। আলতো হেসে আমাকে বলেছিলে, পাগল একটা!

মানে আমাকেও জিইয়ে রাখা। সুন্দরী মেয়েরা অদৃশ্য এক সেতু নীতিতে চলে। সে সেতুতে তাঁরা তাঁকে পছন্দ করা পাড়া মহল্লার সমস্ত ছেলেকে ঝুলিয়ে রাখে। না আনে এপারে, না টানে ওপারে। এই ঝুলে থাকা নীতিতে কেউ হয় ছ্যাঁচড়া, কেউবা বখাটে, কেউবা স্বেচ্ছায় পড়ে গিয়ে মিশে অন্য স্রোতে। কেউবা চিঠির ডানপাশে অন্য প্রাপকের নামে দিয়ে অন্য কারও প্রেরক হয়। সুন্দরী মেয়েরা এতে পৈশাচিক এক গোপন আনন্দ পায়। এই আনন্দের কথা কেউ জানতে পারে না। শুধু জানতে পারে তাদের অকারণে ওড়না ঠিক করা সময়। জানে বান্ধবীকে প্রেমিকের সংখ্যা বলতে যাওয়া অতিরঞ্জিত হাসিরা।

শোনো নীড়া! এসব কথার কোনো একফাঁকে খুন হয়ে যাবে তুমি। রক্তাক্ত দেহে নিস্পন্দ হয়ে তোমার জীবন যখন আমার নষ্ট বিকেল ছুঁয়ে অস্ত যাবে তখনই তুমি বুঝবে তোমার গায়ে ওসব রক্ত নয়, লাল বেনারসি!

আহ কি হচ্ছে এসব। গা-ছমছমে মন, আর ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে নীড়া ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে নীড়া। স্বপ্ন দেখছিল। দুপুরের ভাতঘুম স্বপ্ন মিথ্যে হয়। কিন্তু এই স্বপ্নগুলোই যে গতকালকে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনার আংশিক পুনরাবৃত্তি। সত্য ঘটনাগুলো কীসের প্রয়োজনে ফিরে আসছে বারবার। নীড়ার একদম ভালো লাগছে না। অস্থির লাগছে। নীড়ার নিজেকে খুনি মনে হচ্ছে কেন? নীড়া তো খুনি নয়, কোনো ভাবেই নয়। নীড়া বারবার মুখ ধুতে থাকে। যেন ওই মুখেই সব পাপ। এদিকে বিকেল নিকটবর্তী হচ্ছে সন্ধ্যার। নীড়ার তো আজ অবাধ গতির মুক্তির দিন। কিন্তু আজ কোন বন্দিত্বে পড়ল সে। ওটা কি খুন ছিল নাকি আত্মহত্যা? বখাটে রাজু কেন মরে গেল!

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত