সিলেটের ভূত

সিলেটের ভূত
আপনারা সিলেট সম্পর্কে জেনে থাকলে বা সিলেটে বাস করলে জেনে থাকবেন যে, সিলেটের গ্রামগুলোতে (এমনকি শহরেও) ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে একদম অন্ধকার। আমি যে রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করি, সেটাও নিস্তব্ধ, নিশ্চুপ! তো গতকাল সন্ধ্যাবেলা আমি ও আমার এক বন্ধু (Arafat Årâfãt Hasan) বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে একটা বাজারে (পুরকায়স্ত বাজার) গিয়েছিলাম। ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ৮:৪৫ পার হয়ে গেলো। আমি খানিকটা ভয়ে জনমানবহীন নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে একা একাই পার হচ্ছিলাম। বাড়ির সবচাইতে কাছের মুদি দোকানটা পাড়ি দিয়ে, বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি। কিন্তু হঠাৎ থমকে দিলো নীলজ্জ্বল দুটি চোঁখ, যা আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ভয় পেয়ে অনেকটা পিছনে সড়ে গেলাম। লাইটের আলো ততদূর যাচ্ছিলো না। চোঁখ দেখেই আমি সিউর হয়ে গিয়েছিলাম, এটা শিয়াল হবে, আবার কুকুরও হতে পারে। সিলেটীরা আবার শিয়ালকে ভয় পায় না, বরং শিয়াল দেখে দেখে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে শিয়ালটা বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো না। কারণ, শিয়াল সাধারণত মানুষ দেখলেই দূরে পালিয়ে যায়। আমি সন্ধেহ করি যে, এটা হয়তো কুকুর হবে। তাই কাছ থেকে একটা বেত সংগ্রহ করে কুকুরটাকে তাড়া করি। কিন্তু, আশ্চর্য! তা বিন্দুমাত্র সড়ে গেলো না। যেকোনো জিনিসই হোক না কেনো, সেটা তো তাড়া খেয়ে সড়ে যাবার কথা ছিলো!
তারপর আমি ভয় পেয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে আমি দোকানটার কাছাকাছি চলে আসলাম। কিন্তু আফসোস! দোকানদার আমার কথা শুনে বিন্দুমাত্র সাহায্য না করে বাড়ি চলে গেলো। আমি হতাশ হয়ে আরো দু’পা সামনে গিয়ে জিনিসটাকে দেখতে গেলাম, ওটা চলে গেছে কিনা। কিন্তু একি!
এটা তো আরো সামনের দিকে এগিয়ে আসলো। যেনো আমাদের মধ্যকার দূরত্বটা ও কমাতে চাইছে না! আমি এবার প্রচণ্ড ভয় পেলাম। এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম যে, কেউ রাস্তা দিয়ে আসছে কিনা। আসলে তার সাথেই চলে যাবো। এতক্ষণ নিশ্চুপ একটা পরিবশে থেকে আমি যেনো ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম।
এদিকে ঐ জন্তুটার আচরণ দেখে আমার মনে হচ্ছে যে, ওটা হয়তো শিয়াল না হয়ে বাড়ল বা অন্য কোনো প্রাণী হবে। আভার একে দেখে ছোট প্রাণী বলেও মনে হচ্ছে না। তাছাড়া, এর দিকে ঠিকমতো তাকাতেও পাচ্ছি না..! কারণ, এটা এতক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, বিন্দুমাত্র চোঁখ সরাচ্ছে না। যা একদম অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এবং এতে করে চরম ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
ভয় এবার চরমে পৌঁছাতে লাগলো। দেখি যে, ঐ অস্বাভাবিক চোঁখ দুটো আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি ভয়ে দোকানটার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালাম। ফোন দিবার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলো না।
আমি ভয়ে কি করবো, তাই নিয়ে ভাবছিলাম। এদিকে আকস্মিকভাবে চোঁখ দুটো আমার কাছাকাছি এসে অস্বাভাবিকভাবে রুপ বদল করে ফেলল। যা দেখলাম.. তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না..!
দেখলাম যে.. ওটা একটা বিড়াল, যার চোঁখ দিয়ে নীলজ্জ্বল চেহারা ভাসছিলো। কিন্তু এটা হতেই পারে না যে.. কারণ, আমি আগে চোঁখ দুটো এর চেয়ে অনেক বড় বড় দেখছিলাম, যা বিড়ালের চোঁখ হতেই পারে না। সেই রাতে আমি ভয় পেয়ে মোবাইলের ফ্লাস জ্বালিয়ে দুয়া-দুরুদ পড়তে পড়তে বাড়ি ফিরে আসলাম। (শেষ)
দ্রষ্টব্য :- এটি ছিলো সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনা এবং আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া।
গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত