অনন্ত রাতের ছায়াপথ

অনন্ত রাতের ছায়াপথ

আমার অনুভুতিগুলো কেমন যেন আমাকে আরষ্ট করে রেখেছে।না পারছি এই বাধন ছিন্ন করতে না পারছি কিছু বলতে।আবার এই না পারাটা আমাকে কষ্টের মাঝে

গ্রাস করছে।মাঝে মাঝেই আমি এমন উতলা হয়ে পড়ি।মাথাটায় কেমন যেন শূন্যতা বিরাজ করে।মনে হয় আমি যেন খারাপ লাগার অতলে ডুবে যাচ্ছি।নাহ এই

বিরক্তিময় অবস্হার মধ্যো থেকে বের হতে হবে।ফোনটা হাতে নিলাম।কিন্তু নিঝুমের নাম্বারটাই তো মনে করতে পারছি না কেন।কিন্তু আর ওর নাম্বারটা খোজা লাগলোনা।নিঝুমই ফোন দিয়েছে।
আমি যখনই ওকে ফোন দিতে চাই তখনই ও আমাকে ফোন দেই।বিষয়টা কেমন জানি কাকতালীয়।
ভাবনায় ডুবে থাকতে গিয়ে কখন যে কলটা শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারিনি।পুনরায় রিংটোনের শব্দে আমার ভাবনার ছেদ পড়লো। কিছু অখাদ্য শব্দ শোনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।
-মেকুর কুকুর ছুচো খাবিস খবিস ইন্দুর বান্দর।তুই একটা…………….। ফোনটা একবারে ধরা যায়না??।তুই আসলেই একটা……….
-আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম আর কিছু কি বাকি আছে??
-ও আরও রেগে বলল তোর কি এসব শুনতে খুব ভালো লাগে???
-তোর মুখ থেকে শুনতে তো কিউট ই লাগে।আর তোর ভয়েসের সাথে একদম পারফেক্ট লাগে।।
-হয়ছে হয়ছে। আর তেল দেওন লাগবে না।
-আজ বিকালে কিন্তু তোকে আসতে হবে।
-আজও কি যাবি না কি??
-হ্যা।দেখতে ইচ্ছা করছে অনেক।জাস্ট একটু দেখেই চলে আসবো।
-তোর কি লজ্জা নেই একটু ও।আবারও জাবি তুই।ছি
-এভাবে বলিস না। ভালবাসি তো।।দেখেই চলে আসবো। প্লিজ আই না।তুই ছাড়া আর কে আছে বল
-ওকে ওকে যাবো।এখন খুশি তো।
-হ্যা অনেক।।
.
নিঝুম।কিন্তু শুধু নামটাই।কাজ কর্মে পুরাই তার বিপরীত।কিন্তু অনেক বেশি ইমোশোনাল।
আর এই সুযোগটাই আমি নিই।
.
বিকাল ৫ টা। আমি আর নিঝুম মিরাদের বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে আছি।মিরার রুমের জানালার একটু পাশেই। উকি মারছি ওর রুমে।
-দেখতে পেয়েছেন??
-না রে। কিন্তু তুই আবার আমাকে আপনি করে বলছিস কেন। পাগল হলি না কি???
-পাগল আমি না আপনি হইছেন।একটু পেছনে ফিরে দেখেন!
.
পিছনে ফিরেই একটা শক খাইলাম।এতো মিরা।
-একি তু তু তু মি।।
-হ্যা আমিই।
-কখন এলে।। কেমন আছো।
-এই তো মাত্র এলাম।তা আমার ঘরে উকি মারছেন কেন।চুরি করার ধান্দা আছে না কি??
-একটু ভেটকি মার্কা হাসি নিয়ে বললাম
আছেই তো।তবে তা ঘরে তো পাবো না।সেটা তো তোমার কাছে।
.
মিরা চোখ বড় বড় করে বললো জাস্ট সাট আপ।এক চড়ে আপনার দাত ফেলে দেব।
আমি আবারও দাত বের করে বললাম চড় দিয়ে কারে দাত পড়ে গেছে আমি আজ পর্যন্ত শুনি নাই।
.
আমার কথা শুনে ও আরও রেগে বললো আপনার কি একটুও লজ্জা নেই। কত্ত বার বলেছি আসবেন না এখানে।লজ্জা থাকলে আর আসতেন না।এত নিলজ্জ কেউ হয়।
.
আমি একটু জোর গলাই বললাম হ্যা হয়।যেমন আমি।হ্যা আমার লজ্জা নেই।থাকলে আর আসতাম না।অনেক বার নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু পারিনা।না দেখে থাকতে পারি না।কারন ভালবাসি যে।হ্যা হ্যা হ্যা ভালবাসি তোমাকে।অনেক বেশি ভালবাসি।।
ওকে তোমার যখন এতই প্রবলেম তাহলে আর কখনই তোমার সামনে আসবো না।ভালো থেকো।
.
অনেক কষ্টে কথাগুলো বললাম।আবার আজ না বললেও আর কোন দিন বলা হতো না।।কষ্ট হবে।তবুও পারবো আমি।।এর মধ্যে একটা কথাও বলেনি নিঝুম।আমার হাত ধরে টানতে টানতে মিরার সামনে থেকে নিয়ে আসলো।
.
গোধুলির লগন শেষ হতে চললো।অন্ধকার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।তেমনি আমার মনটাও বেদনার কালো ছায়ায় অন্ধকার হয়ে পড়লো।
..

.
আজ এক সপ্তাহ হতে চললো বাসা থেকে বের হয়নি।লজ্জাবতী যেমন কারো স্পর্শ পেলে নিজেকে গুটিয়ে নেই তেমনি আমিও নিজেকে মিরার থেকে গুটিয়ে নিলাম।

এই কয় দিন ওর সব স্মৃতি আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।।নিঝুম অনেক বার ফোন দিয়েছে।কিন্তু রিসিভ করিনি।কিন্তু আজ সকালে ও যে চলে আসবে তা বুঝে উঠতে পারিনি।শীতনিদ্রায় মগ্ন ছিলাম
।নিন্দ্রার মধ্যে পশ্চাতদেশে একটু ব্যাথা অনুভব করলাম।তারপরই নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করলাম।চোখ খুলে দেখি নিঝুম আমার সামনে একটা রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে
।ওকে দেখেই আমি বললাম তুই কিক মারার আর জাইগা পেলিনা।
-আরো কয়েকটা মারবো।।না হলে আমার রাগ কমবে না।
.
যে ভাবে তাকিয়ে আছে তাতে আমাকে মনে হয় আস্তো খেয়ে ফেলবে।অগ্যত্তা কি আর করা।আরো কয়েকটা কিক পড়লো আমার পশ্চাতদেশে।…
.
আজ এক সপ্তাহ পরে বাইরে আসলাম।নদীর ধারে আমি আর নিঝুম বসে আছি।নদীর বহমান স্রোতের মতো আমাদের জীবনটাও বহমান।

কথা বলতে বলতে এর মধ্যে মিরা আমার পাশে এসে বসলো।আমি মিরার চোখে কোনদিন পানি দেখিনি।কিন্তু আজ ওর চোখে পানি দেখে আমার মনের সমস্ত রাগ যেন

হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম কাদছো কেন?? এখন তো তোমার আরও ভালো থাকার কথা।

হ্যা ভালো তো থাকবোই।কেন থাকবো না।তুমি কখনও কিছু বুঝো নাই আর কখনও বুঝবাও নাহ।আমি সব সময় চাইতাম তুমি আগে আমাকে প্রোপোজ করো।হ্যা

করছো কিন্তু ওই ভাবে কখনই চাইনি।কেন আমি রাগ করতাম তুমি বুঝবানা।বাড়ির পাশে প্রতিদিন ওভাবে ঘুরলে কেউ দেখে ফেললে কি হতো সেটা মাথায় থাকে নাতো

তোমার।তার জন্য রাগ করতাম।রাগ করতাম কেন তুমি আমাকে ভালবাসি বলনা।রাগ করতাম এই কথাটা বলতে এত দিন কেন তুমি সময় নিচ্ছো।কিন্তু তুমি তা কখনই

বুঝবা না।ওকে থাক আর তোমাকে বুঝতেও হবে না।এই নাও আমার বিয়ের কার্ড।যদি সত্যিই আমাকে ভালবেসে থাকো তাহলে ওই বিয়ের দিন আমি কণে সেজে

তোমার অপেক্ষায থাকবো।কি করবে না করবে ভেবে নাও। তোমার হাতে আর ৫ দিন সময় আছে।


.
-এমন ঝামেলার মধ্যে পড়বো ভাবিনি।একদিক ভালবাসা।আর অন্যদিকে তার বিয়ে।আবার তাকে বিয়ের দিনই নিয়ে আসতে হবে।৫ দিনে সব প্লান করা শেষ।এর মধ্যে মিরার সাথে একবারও আর কথা হয়নি।
.
বিয়ের দিন
.

বিয়ের কাজ সব শেষ।মিরা সারা দিন মুখ গোমরা করে ছিল।সম মেয়েরাই বিয়ে শেষে কান্না করে কিন্তু মিরা একটুও কাদেনি।
কারো সাথে কোন কথাও বলেনি
.
রাত ১২ টা এখন।বাসর ঘরে ঘুকবো।বললাম না সব প্লান করা ছিল।মিরাকে সারপ্রাইজ দিবো তার জন্য ওকে কিছু বলিনি। কিছু বঝলেন না তো আপনারা??ওকে ক্লিয়ার করছি।
.
ওই দিনের নদীর পাড়ের ঘটনা সবকিছু এসে আব্বু আম্মুকে খুলে বলি।প্রথমে রাজি হয়নি।পরে কি আর করবে একমাত্র ছেলের সুখের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে গেল।

এরপর গেলাম কন্যার বাড়ি।মানে মিরাদের বাড়ি।ওর বাবা মা তো আরও বেশি রাজি ছিল না।শেষমেশ বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি হলো।আর এর জন্য সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট

নিঝুমের।জীবনের চলার পথ অনেকটা সোজা হয়ে যায় যদি নিঝুমের মতো বন্ধু পাশে থাকে।সবাই রাজি থাকলেও ওদিকে যে বর পক্ষ বসে আছে।তাদেরও তো রাজি

করাতে হবে নাকি।তারপর সবাই মিলে চললাম বর পক্ষের বাড়ি।ওরা মোটেই বুঝতে চাইছিল না।তখন আমি একটু বাংলা সিনেমার ডাংলগ দিলাম।বললাম একটা বিয়ের

জন্য তিনটা জীবন নষ্ট হবে।আর এর জন্য দায়ি থাকবেন আপনারা।রাজু (বরের নাম) সাহেব আপনি বিয়ে করবেন ঠিক আছে কিন্তু পাবেন একটা জিন্দা লাশকে।

কারন তার মন থাকবে আমার কাছে।ধুকে ধুকে দুটো জীবন শেষ হয়ে যাবে আপনার সমনে। এর জন্য আপনি দায়ি থাকবেন।ডাংলগ দিতে দিতে একটু চোখে জল চলে

আসলো। মুছতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম সবার চোখেও জল চলে আসছে।ওদিকে রাজুভাই এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো আর বলোনা ভাই।সত্যিই তোমার ভালবাসা

মহান।ভালবাসার জন্য তুমি এতকিছু করতে পারলে আর আমি এটুকু করতে পারবো না।মিরা তোমারই।
.
সবকিছু গোপন রেখেছিলাম। মিরাকে কিছুই জানাইনি।
বাসর ঘরে ঢ়ুকতে যাবো কেবল একপা ঘরে রেখেছি তখন মিরা বললো প্লিজ আসবেন না ভিতরে।আমি অন্য একজনকে ভালবাসি।
-হ্যা আমিও তোমাকে ভালবাসি
-আমি আপনাকে ভালবাসতে পারবো না।
-ও বউ একটু দেখ আমাকে তারপর না হয় বলিও ভালবাসো কি ভালোবাসো না?
.
মিরা ঘোমটা তুলে আমার দিকে তাকালো।চোখ বড় বড় করে বলল একি তুমি এখানে কেমনে কিভাবে।
-আগে তো ভিতরে আমি না সব বাইরে থেকে বলবো
-বাইরে থেকেই বলো (এবার একটু হাসি ফুটলো ওর মুখে)
-৫ দিন দিছিলা সময় তারমধ্যে সব কিছু মেনেজ করলাম।কত্ত কষ্ট করে বাবা মা শশুর শাশুরি বরপক্ষ সবাইকে মেনেজ করে দেন আজ তুমি আমি এখানে।

-শুধু তোমারই কষ্ট আমার মনে হয় কিছুই হয়নি।আজকের দিনটা যে কিভাবে কাটছে আমার তা তুমি কিভাবে বুঝবে।সারাটা সময় তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।কিন্তু

তোমার কোন খোজ নেই।তাই আমিও প্লান করে রেখেছিলাম।এই দেখ গ্লাসে যে দুধ আছে তাতে বিষ মিশিয়ে রেখেছি।বর আমি সবাই আজ উপরে চলে যেতাম বুঝেছো।
-হায়হায় কও কি।এতকিছু।।
তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে আরেকটু হলে তো উপরে চলে যেতাম।
কিন্তু অবশেষে তো তোমাকে পেলাম। এটাই সবথেকে বড় পাওয়া
-সেটা হচ্ছে না।আমাকে কষ্ট দেবার জন্য তোমাকে আজ সারা রাত বাইরে কাটাতে হবে।
-কি???? যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।
মারা যাবো বউ এই ঠান্ডায়।এই অধম স্বামীর প্রতি একটু দয়া করো।
-নাহ। যা বলেছি তাই।বের হও ঘর থেকে।
.
মিরা আমাকে রেখে দরজা লাগিয়ে দিলো। বাসর রাত বুঝি বাইরে কাটাতে হবে।এই দুনিয়ায় আমিই প্রথম ব্যাক্তি যার বাসর রাত ঘরের বাইরে কাটবে।দরজায় হেলান দিয়ে বসে বসে চাঁদ দেখছি।
.
কিছুক্ষন পর
.
দরজার কাছে কারো পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি। মীরাক্কেলের কাজুর মতো তখন মন গেয়ে উঠল আজ মনে হয় চাঞ আছে।
.
………………………………………..(সমাপ্ত)………………………………..

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত