রাতের বাস

রাতের বাস

সুস্মিতা – দৌড়া পিউ। দৌড়া। ওইদেখ ওরা চলে এসেছে অনেক – টা।

পিউ – আর পারছিনা রে..বুক ছিঁড়ে যাবে। এবার।

সুস্মিতা – এই তোদের মা – বোন নেই বাড়িতে?

আমাদের মা বোন সব আছে..ডার্লিং। খালি একটু শীতের রাতে গরম করার মতন কেউ নেই – ছেলেটা হাসতে হাসতে বলে উঠলো

সুস্মিতা – জুতো দেখেছিস।

এই সুমন, ভোলা কে আছিস ধর দুটোকে। আজ রাতে হেব্বী মজা হবে মাইরি। এই বলে পিউ ও সুস্মিতা কে তুলে নিয়ে গেছিলো রণজয়ের দলবলের ছেলেরা।

কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচেছে ওরা দুইজন। কিন্তু রণজয় ওদের পিছু ছাড়েনি। ঠিক তখনি পিউ ও সুস্মিতার নজরে পড়লো একটা লরি আসছে। সামনের রাস্তা দিয়ে। লরি চালক বোধহয় দূর থেকেই ওদের বুঝতে পেরেছিলো যে ওখানে কিছু একটা গণ্ডগোল আছেই আছে।

সুস্মিতা পিউ এর হাত ধরে গায়ে যতো জোর আছে সেই জোর নিয়ে দৌড়ালো লরির দিকে।

পিউ – আমি।আর পারছিনা। বাবারে। আমার পেট ব্যথা হয়ে আসছে।

সুস্মিতা – এই তো লরি এসে গেছে অনেক কাছে। ওইদেখ।

দাঁড়ান দাদা, দাঁড়ান। ততক্ষণে অনেক কাছে চলে এসেছিলো রণজয়ের ছেলে পুলেরা। লরি থামলো ওরা উঠে পড়লো। সজোরে লরি চলা শুরু করলো। রণজয় তখন ও দমে যাইনি। বাইক নিয়ে তাড়া করছিলো।

এ কি আপনি এই রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন। এটাতো ব্রিজের রাস্তা।
লরি চালক কিছু বললো না। ওদিকে পেছনে বাইক নিয়ে অনুসরণ করছে রণজয়ের দলবলের ছেলেপুলেরা।

সুস্মিতা ও পিউ বুঝলো যে তাড়া লরিতে নিরাপদের জন্য আশ্রয় পেয়েও তারা নিরাপদ নয়।

লরি চালকের পরের কথা-টা সেই ধারণা কে সম্পুর্ণ ভাবে ভেঙে দিলো..

সামনে দেখো মা।
সুস্মিতা ও পিউ দুইজনেই দেখলো সামনে দিয়ে একটা বাস তাদের লরির দিকে এগিয়ে আসছে।

সুস্মিতা বললো – একি ওটাতো আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে..

লরি চালক – মজা দেখো।

ধীরেধীরে লরি ও বাস একেবারে সামনাসামনি চলে এসেছে। পিজ ও সুস্মিতা এবার চোখ বুঝে ফেললো ভয়ে।

ঠিক তখনি গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে লরি ভেদ করে বাস-টা লরির মধ্যে দিয়ে এপার থেকে ওপারে চলে গেলো। সুস্মিতা ও পিউ দুইজনেই অবাক।

এটা আমরা কি দেখছি।
বাস-টা কোথায় গেলো।

লরি চালক বলে উঠলো – পেছনে তাকায়। জানলা দিয়ে।

ওরা দুইজন- ই আয়না দিয়ে যা দেখলো তা খুব ভয়ানক।

ঠিক একটু আগে যেই বাস – টা তাদের লরি ভেদ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন। সেই বাস-টা দাউদাউ করে জ্বলছে। তবে শুধু বাস জ্বলছিলো সেটা বলা ভুল হবে। বাসের সাথে জ্বলছিলো চারটে বাইক। যে চারটে বাইক এতক্ষণ তাদের লরির পেছনে ছিলো।

লরি চালক বললো – সোমেন এর বাস ওটা। আমি লরি চালায় আর ও চালায় বাস।

দিন-টা ছিলো ১৩ – ই ডিসেম্বর। আমার মেয়ের বিয়ের দিন। ওইদিন আমার সাথে সোমেনের মেয়ে প্রিয়ার ও বিয়ে ছিলো। একি সাথে বিয়েটা একটাই ছাদনাতলায় সেজে উঠেছিলো।

সেইদিন আমরা দুই বন্ধু খুব খুশী ছিলাম। বরপক্ষ আসে। ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন হচ্ছিলো। সব ঠিক ছিলো। আমার মেয়ে ও আমার বন্ধু সোমেনের মেয়ে একসাথেই স্নান করতে যায়। সারাদিনের কাজ সাড়ার পর। ওরা একেবারে নিজের দিদি বোনের মতন মেলামেশা করতো।

কখনো কখনো ওর বউ আমাদের বাড়িতে লাউ চিংড়ি, ধনেপাতার চাটনি ও বিভিন্ন রকমের বড়া, আচার এসব দিয়ে যেতো। আবার কখনো কখনো আমরা দিয়ে আসতাম।

একেবারে পাক্কা পরিবার হয়ে গেছিলাম। যাকগে বিয়ের কথাই আশি। চারিদিকে সানাই বাজছে। বক্সে আধুনিক গানের বাহার। তবে ওইযে বলেছিলাম না ওরা চান করতে যায় একেবারে কাজ সেরে সন্ধ্যার দিকে। অন্যদিন কার মতন ওরা চান করে বাড়ি ফিরে আসছিলো। তবে রাস্তায় কিছু নোংরা ছেলে ঢলাঢলি করছিলো। ওরা কোনো রকমে পাশ কাটিয়ে বাড়ি চলে আসে। কিন্তু ওই ছেলে গুলো শুধরাই নি।

দিনরাত জ্বালাতন করতো। শেষমেশ বাধ্য হয়ে ওরা বাড়িতেই চান করতো। আমরা মুখ বুঝে ছিলাম।

কিন্তু বিয়ের দিন ওরা বিয়ের আসরে এসে যাচ্ছেতাই নোংরামি করে। আমাদের মেয়েদের চান করার যাবতীয় ক্যামেরা বন্দি দৃশ্য বিভিন্ন কটুজনক মন্তব্য বরপক্ষের কাছে তুলে ধরে।

লরি চালক এক গভীর শ্বাস নিয়ে বললো। সোমেন ও তার পরিবার সুইসাইড করে নেয়। বিশাল টাকার দেনা হয়ে গেছিলো ও। তাই এইপথ বেঁছে নেয়। সেইথেকে সোমেনের আত্মা এইখানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিশোধের জন্য। যে বা যারা সোমেনের মেয়ের বিয়েটে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আজ তারা সবাই শেষ।

তোমরা নেমে যাও তোমাদের গন্তব্য এসে গেছে।

সুস্মিতা ও পিউ নেমে যায়। যাওয়ার আগে ওরা দুইজনে কৃতজ্ঞ ও সহানুভূতি জানাতে ভোলেনা।

আচ্ছা সোমেন মরে গেলো। ওর বাস লরির মধ্যে দিয়ে এপারওপার হলো কিভাবে? পিজ বললো।

কথাটা শেষ করতে না করতে ওরা দুইজনে যা দেখলো তা খুব ভয়ংকর। ওরা দুইজন সাথেসাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো।

ওরা দুইজনে স্পষ্ট দেখেছিলো ওই লরিটা একেবারে ব্রিজের শেষপ্রান্তে গিয়ে। নদীতে পড়ে গেলো।

লরির নিয়ন্ত্রণ ও গতিবেগ একেবারে একেবারে স্বাভাবিক ছিলো আর ব্রিজ টার দেওয়াল ভেদ করে নীচে তলিয়ে গেলো লরিটা। কিন্তু ওই ব্রিজের দেওয়াল টার বিন্দুমাত্র কোনো ইট,পাথর, বালি, সিমেন্ট খসেনি। এটা কিভাবে সম্ভব। আর ওই বাস-টা কিভাবে লরির মধ্যে দিয়ে এপারওপার হয়ে গেলো। ব্যাপার-টা আজও অজানা।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত