ভৌতিক ইঁদারা

ভৌতিক ইঁদারা

গল্পাটা কাকতালীয়।

এইগল্পটা অনেক-টা ভুতের বইতে পাওয়া গল্পের মতন। পড়তে থাকুন সম্পুর্ণ ভিন্ন লাগবে।

তুই আজও ওই সমীরের বাগানে গেছিলি। কতবার না বারণ করেছি তোকে যাবিনা। এই নিয়ে কত বকাবকি করলো মা সেদিন আমাকে। আগেও অনেক বকা খেয়েছি আমি। কিন্তু ওই বাগানে যেতে বারণ করে কেন আমি বুঝিনা।

মায়ের মুখে গল্প শুনেছিলাম সমীরের দাদু নাকি জমিদার ছিলেন। তার দাদু।স্বাদ করে এই বাগান টা বানিয়ে ছিলেন। সমীরের দাদু গত হয়েছেন অনেক দিন আগে। ওই বাগানে কয়েকটা আমগাছ,একটা ছোটো পুকুর,একটা পাতকুয়ো, কয়েকটা পেয়ারা গাছ। এছাড়া আরও কিছু গাছ ছিলো।

বনতুলসী, নিমগাছ। কত রঙ বেরঙের পাখি আসতো। আমি মাঝেমধ্যে গুল্টি নিয়ে যেতাম। কিন্তু একটাও পাখি মারতে পারতাম না। তাছাড়া ওই বাগানের সব থেকে আকর্ষনীয় বস্তু ছিলো ওই কুয়োটা। দিনের বেলায় ওইখানে যেতে গেলে গা ছমছমে করে।

ওই কুয়ো বা ইঁদারা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি লোকের মুখে। আমার বাড়ির লোক যদিও আমাকে এই কথাটা বলেনি।

আমি অন্যলোক মুখে শুনেছিলাম। সমীরের দাদুর তিনখানা বিয়ে। প্রথম দুইপক্ষের বিয়ের পর একজন তিনবার কন্যা সন্তান জন্মদিয়ে ছিলো। অন্যজনের খবর-টা আমার সঠিক জানা নেই।

তবে কথিত আছে যে একসময় থেকে ওই দুইখানা বউ আর তিনখানা কন্যা সন্তান কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। গ্রামবাসীর অনুমান ওই ইঁদারার মধ্যে আগের দুইপক্ষের বউ সহ তিনখানা কন্যা সন্তানকে ফেলে দেন জমিদার। তবে এই ঘটনা সঠিক কিনা তা নিয়ে গ্রাম বাসীর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে গ্রাম বাসীর মধ্যে।

এইসব ঘটনাতো আর আমার মা আমাকে বলতে পাড়েন না। তাই আমার মা ওই বাগানে যেতে না করে।

আর আমি ছোটো থেকে এইগ্রামেই বড়ো হয়ে উঠেছি। তাই একটু হলেও বুঝি প্রব্লেম টা ওই বাগান টাকে কেন্দ্র করেনা। প্রব্লেম টা হলো ওই ইঁদারা কে নিয়ে।

শোনা যায়, নাকি ওই জমিদারের বউ গুলো নিখোঁজ হওয়ার আগে একটা অভিশাপ দিয়ে গেছিলো। যে এই বংশের কোনো এক পুত্র সন্তান কে তারা তাদের সাথে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি যে আগেই বললাম সেই ছোটোবেলা থেকে আমি এই গ্রামে আছি এখনো আমার চোখে এইরকম ঘটনা চোখে পড়েনি।

ওইযে ইঁদারা ইঁদারা করছি এতক্ষণ ধরে তার ব্যাপারে একটু বলি। পুরো ইঁদারা টা একেবারে সেই প্রাচীন আমলের নকশা করা। বহুদিন ব্যাবহার হয়েনি। কারণ ওই ইঁদারা-টার মুখ বন্ধ।

যাইহোক সেইদিন মা বিশাল বকাবকি করেছিলো আমাকে। রাতে বাবা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আমাকে বকার সুযোগ টা হাতছাড়া করেন-নি।

তবে আমি বিশাল ডানপিটে ছিলাম। বকুনি গুলো এক কান দিয়ে শুনলাম আর এককান দিয়ে বের করে দিলাম। কিন্তু হাজার হোক। বাবা-মা বকা দিলেনা মন ও খারাপ হয়ে যায়।

যাইহোক আমি তিনদিন ওই বাগানে যাইনি। কিন্তু চারদিনের বেলায় আমার বিশাল আম খেতে ইচ্ছে করছিলো। আমার পকেটে সবসময় একটা কাগজে বিটনুন মোড়ানো থাকে। কারণ আমাদের বাড়ির দিকে অনেক আম গাছ আছে। তাই গাছ থেকে আম পাড়া মাত্র মাটিতে এক আছাড় দিয়ে আম ফাটিয়ে..সেই ফাটানো আম বিটনুন দিয়ে খেতাম।

তবে আর যাই বলিনা কেন সমীরের বাগানের আমগুলোর মজাই আলাদা।

দিনটা ছিলো শনিবার। দুপুর তিনটের সময় আমি চুপিচুপি ওই বাগানে যাই। আমগাছে উঠি। বেশ কয়েকটা আম খাই। আমগাছ টার উপরের ডালে একটা আম আছে কিন্তু ওই আম- টা আমার নাগালের বাইরে। কিছুতেই পারতে পাচ্ছিলাম না।
তাই নীচের ডাল থেকে
প্রায় ৪-৫ টা আম পেরে খাই।

এমন সময় আমার কানে একটা হাল্কা গোঙানির আওয়াজ আসে।

আমি চারিদিক দেখলাম সব স্তব্ধ। কিন্তু ওই ইঁদারার দিকে চোখ পড়তেই আমার চক্ষুচড়ক গাছ হয়ে গেলো।আমি দেখলাম ওই ইঁদারার ঢাকনা-টা ভেতর থেকে নড়ছে।

মানে কিছু একটা বাইরে বেড়াতে চাইছে। আমি ভুত-প্রেত এসবে বরাবর অবিশ্বাসী ছিলাম। তাই এগিয়ে গেলাম। ইঁদারার মুখটা তালা দিয়ে আটকানো। একটা শিকল দিয়ে বাঁধা। তালা দেওয়া দেখে যেই আমি পেছন ফিরবো। তখন আমার কানে একটা আওয়াজ এলো।

যাস..না বাবা। তালা-টা খুলে দে। সেই অনেকদিন ধরে বন্দী আছি। তুই তালাটা খোল বিনিময়ে যা চাস। সেটাই পাবি।

আমি বললাম যা চাই তাই পাবো। তাহলে ওই উঁচু ডালের আমটা পেরে দাও। আমার কথাটা বলার সাথে সাথে আমটা মাটিতে পড়ে যায়।

আমি খুশীতে চিৎকার দিয়ে উঠি। ইঁদারার পাশে একটা ইট ছিলো। ওই ইট নিয়ে চার-পাঁচটা বাড়ি দিয়ে ইঁদারা শিকলের তালাটা ভেঙে ফেলি। তারপর ঢাকনা-টা খুলে দিই।

কিন্তু ভেতরে কাউকে দেখতে পাইনা।এরপর ব্যাপার – টা সুবিধার না ভেবে আমি বাড়ি চলে যাই। একসপ্তাহ খানেক সব কিছু ঠিক ছিলো।

তারপর শুরু হয় ভুতের উপদ্রব। আমার বাড়ির তিন – চারটে বাড়ির পর সমীরের বাড়ি। সমীরের বাড়িতে বেশ কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে।

ওইতো গেলো সোমবারের কথা সমীরের মা। সেদিন কাপড় মেলেছিলো ছাদে। সন্ধ্যে বেলার দিকে যখন ছাদে কাপড় তুলতে যায়। তখন এক বিকট চেহারার মহিলা কে হাসতে দেখে সেইখানেই সমীরের মা অজ্ঞান হয়ে যায়।

সমীরের এক দিদি নাম তার রিতা। সে একদিন রাতের বেলা টিউশন থেকে ফিরে কলে মুখ হাত-পা ধুঁয়ে যখন ঘরে ঢুকবে তখন তার চোখ পড়লো তার বাড়ির তেঁতুল গাছের উপড়। সেই গাছে একটা বউ বসে পা দোলাচ্ছিলো। আর রিতার দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিরি একটা চিৎকার করে বিটকেল হাসি দিলো।

রিতাদি চিৎকার দিয়ে ঘরে চলে যায়। এরপর তিনদিন জ্বরে ভোগে। এরপর থেকে সমীরের বাড়ি থেকে আরও আশ্চর্য জনক ঘটনা ঘটে। রাতে ঘুমানোর সময় বাচ্ছা কাঁন্না করার আওয়াজ পেত সমীর রা। দিনের বেলায় রান্নাঘর থেকে আস্ত মাছ চুরি হয়ে যেত।

এইসব ঘটনা গুলো তো লেগেই ছিলো। কিন্তু সেদিন যা ঘটলো তা ছিলো আরও মারাত্মক।

মঙ্গল বার। রাত দশটা বাজে। আর গ্রামের দিক। তখন খুব কম জায়গা তেই কারেন্ট ছিলো। তো সেইদিন দুপুরে এতো ঘুমিয়ে ছিলাম যে রাতে আর ঘুম পাচ্ছিলো না।

আমি ছাদের উপর এপাশ থেকে ওপাশ করতে লাগছিলাম। হঠাৎ দেখলাম দূর থেকে সমীর দের বাড়ির সদর দরজা কেউ যেন খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো। দুই মিনিট পর যে বা যিনি বেড়িয়ে ছিলেন তিনি যখন আমাদের বাড়ি পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। চাঁদের আলোয় দেখলাম ওটা সমীর।

আমি ছাদের উপর থেকে ওকে ডাক দিলাম। কিন্তু ও কোনো উত্তর দিলোনা আমার ডাকে। যেন ওকে কেউ সম্মোহন করে নিয়েছে।

একবার ভাবলাম আমি ওর পেছনে যাই। কিন্তু ছাদে এতো সুন্দর বাতাস বইছিলো যে আমার যেতে ইচ্ছে করলোনা।

আমি ছাদ থেকে দেখলাম সমীর বাগানের দিকে এগিয়ে গেলো। এরপর আমিও ঘরে চলে যাই। একসময় ঘুমিয়ে পরি।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙে এক শোক সংবাদে। আমি শুনলাম আমার মায়ের মুখে গতকাল রাতে সমীর মারাগেছে।

ওর রক্তাক্ত দেহ ওই ইঁদারার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাটা চিরজীবন আমার একটা দুঃস্বপ্নের মতন। আমার এখনো আপসোস হয়।
ইস..যদি সেই রাতে আমি সমীরের পেছন পেছন যেতাম। তাহলে ওকে হয়তো প্রাণে বাঁচাতে পারতাম।

………………………………………..( সমাপ্ত )…………………………………..

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত