বন্ধ ঘর রহস্য

বন্ধ ঘর রহস্য

দাঁড়িয়ে আছি স্কুলের বারান্দায়।
হঠাত যে দৃশ্য দেখলাম তাতে দিনটা
মাটি & যা ভাবছি যদি তাই হয়, জিবনটা নরক হতে
সময় লাগবে না।
যা দেখলাম তা মুটামুটি এরকম, একটা ছেলে।
কাধে স্কুল ব্যাগ।অবশ্য স্কুলের ইউনিফর্ম পরা।
চোখে চশমা,।
আগে হয়েই জানতাম ওটার -৬ &-৭.২৫ পাওয়ার।
উচ্চতা ৫.৪” মাঝারি গঠন।
নাম রাজিস ইসলাম অরন্য।
সংক্ষেপে, রিও।
আর মুর্দা কথা হল ওটা আমার আদরের একমাত্র
ভাগিনা।
ওযে একটা বাশের খনি সেটা আমি
হাড়ে হাড়ে লাস্ট কয়েক বছরে বুঝেছি।
বাদরটা যদি এই স্কুলে ভর্তি হয়
আমার লাইফ শেষ করার ওর মত একপিচই এনাফ।
কারন?
আস্তে আস্তে জানবো।
কাছে এসেই বললঃআরে বাপের শালা। কেমন আছো?
_বাপের শালা বলে গালি দেওয়ার কি আছে?
মামা বললেই হত।
_সরি মামা।একটু মজা করলাম।
_এখানে কেন?
_নিউ এডমিশন। মা বলল তোর ইফতি মামা
পড়ে এখানে।তাই রাজি হয়ে গেলাম।
ঠিক করিনি মামা?
_হ্যা।
মনে মনে বললামঃবাশ দেওয়ার জন্য মনি আপু আমাকেই খুজে পেল।
_কি বিড়বিড় করছ মামা?
_না কিছু না। চল ক্লাসে যায়।
_ওকে।মামা চল।
এই হল আমার এক মাত্র খালাতো বোনের একমাত্র ছেলে রিও।
যদিও রিও মানে শান্ত নদী বাট এটা যে কত বড়
শান্ত একটু থাকেন বুঝতে পারবেন।
এর আগে ৪/৫ স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে।
শুধু মাত্র ওর অভার শান্ত হওয়ার জন্য।
নির্ঘাত এই স্কুল থেকেও নিজে
TC খাবে আর সাথে আমাকেও খাওয়াবে।
কি করা ভাগিনা বলে কথা।
©©©©©©œœ©©©©©©
চশমা পরলে সবাইকে কিউট লাগে।
কিন্তু রিও বেশি মনে হয়।
শুরুতেই মেয়ে গুলা ড্যাব ড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকত।
আমার অবশ্য হিংসা হত।
সব শেষে এমন কাহিনি শুরু হলো
আমি পুরা শেষ।
রিওর মামা বলে, আমাকে সব মেয়েরা
মামা বলে ডাকা শুরু করল।
কোথায় কেউকে ফ্লাট করব তা নয়।
সবাই আমাকে মামা বলে।
আরে! আমাকে মামা না বলে
রিওকে ভাগিনা বললেতো হয়।
মেয়ে গুলার আক্কেল দেখে আমি
পুরা টাস্কি।
রিওকে নিয়েই সব কয়টা যেন দিবা
স্বপন দেখা শুরু করেছে।
তবে প্রথমে রিওকে হিংসা হলেও এখন ভাল লাগে।
কারন, আমার ক্রাসকে আমি কিছু বলতে
পারিনি। কিন্তু ও আসার পরদিনই আমার ক্রাস কে
আমার সামনে মামি ডেকে বসল।
সেই থেকে আমার আর আমার ওনার
ইটিস_পিটিস ভালই চলছে।
@####@
রিও পড়া বাদ দিয়ে সারা হ্মন ইন্টারনেট নিয়ে
পরে থাকে।
কিছু বললেই ও বলে, ক্লাস 4 প্রযন্ত ফেল মেরে উঠেছি ৫ এ gpa 5. class 6&7 ফেলুদা। jsc golden….. class 9&10 ফেলুদা হলেও আমার
আফসোস নেই।
ssc তে গোল্ডেন হলে আমার বাপ_মা খুশি।
এত পড়ে লাভ কি?
_মানে?
_সবাই সার্টিফিকেট চাই।ট্যালেন্ট নয়।
আমার বাপও তাই।
এ কারনে,আমি আমার ট্যালেন্ট চাই।তাই সেটাই আর্ন করছি।
_মানে?
_যেদিন সুযোগ আসবে, দেখাব।
ততদিন দেরি যে করতেই হবে, ইবু মামা।
_মাথার উপর দিয়ে গেল।
পাগলে কিনা কই আর
ছাগলে কি না খায়?
ওহ।আমি ইবু নয় ইফতি। ইফতি রহমান।
সবাই ইবু বলে ডাকে।
সেটাও এই গাধার কল্যানে।

১ম টার্ম এক্সামে সব গুলা মিলে লেটার মার্স পেল রিও।
মানে ১১ বিষয়ে মোট ৮৯।
এই বুঝি ওকে স্কুল হতে বের করে দিবে।
কিন্তু কিসের কি?
রিওর কোন চিন্তায় নাই।
শুধু বলল, মামা এত চিন্তা করলে
তুমি কিন্তু ফেল মারবে। নিজের
পড়া লেখায় মন দেও।
——-সারা দিন ল্যাপটপ আর গুগল।
এটা নিয়েই পড়ে থাকে রিও।
আমিও কিছু বলি না এখন।
পাগল ঘাটিয়ে কি লাভ।
____””আজ স্কুলে ঘটল এক নতুন ঘটনা।
কে বা কারা শয়তানি করে
মেয়েদের বেঞ্চে
চুইন গ্যামের আঠা লাগিয়ে রেখে ছিল।
মেয়েরা বসার পর,,যতসব কাহিনি শুরু হল।
সোজা স্যারের কাছে নালিশ।
ফলে আমরা সবাই ক্লাসের ভিতর গৃহ বন্দি।
স্যার বেত নিয়ে হাজির।
বেদন মার খেতে হবে সবাইকে।
কি জালা?
কিছু না করেও বেতানি খেতে হবে।
এর হতে নির্মম আর
কি হতে পারে।
স্যার আবশ্য সাইফকে সন্দেহ করেছে।
কারন ক্লাসের সব চেয়ে দুষ্টু সে।
কিন্তু সাইফের সোজা জবাব
সে কিছুই জানেনা।
কিন্তু কে শোনে তার কথা।
ক্যানটিনের মামা বলেছে,,, সাইফ টিফিন পিরওডে সেন্টার ফ্রেশ কিনেছিল ৫পিচ।
তাই সাইফকে বেতানো হবে।
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
অন্তত মার খেতে হবে না আমার।
সবাই কে অবাক করে দিয়ে রিও বললঃ স্যার আমার একটা প্রশ্ন আছে.!
রেগে কটমট করে স্যার বললেনঃ কি বল?
_স্যার আপনার বাড়িতে
ফ্রুটস কাটার ছুরি আছে?
রেগেই স্যার বললেনঃহ্যা।
_স্যার ওটা দিয়ে খুন হলেই কি প্রমান হয় আপনি খুনি।
_না।(স্যার)
_কেন স্যার?
_অন্য কেউ সেটা চুরি করে নিয়ে করতে পারে। আর আমাকে কেউ খুন করতে দেখেনি তাই প্রামান নেই? সো আমি খুন নয়।
ফালতু প্রশ্ন।
_স্যার,, সাইফ চুইন গ্যাম লাগিয়েছে এটা কি কেউ দেখেছে?
_আজ শুধু মাত্র সাইফই ওটা ক্যানটিন থেকে কিনেছে?
_স্যার। ছুরিটা আপনিই কিনেছিলেন।
অবাক হয়ে দেখলাম,স্যার সাইফের হাত ছেড়ে দিল।
রিও বললঃআপনি যদি চান আমি হেল্প করতে পারি।
এই অপরাধী কে ধরার জন্য।
_কি ভাবে?
রিও আস্তে আস্তে বেঞ্চের কাছে গেল & কিছু গ্যাম হাতে নিল।
কিছু হ্মন তার দিকে তাকিয়ে
থাকল।
একসময় নাকের কাছে নিল।
আমরা ক্লাসের সবায় বসে বসে
তামাশা দেখছি।
সাথে স্যারও আছেন
একসময় রিও বললঃ স্যার! এট যিনি করেছেন তার পুর্ব পরিকল্পনা ছিল। অনেক প্লান নিয়ে এটা করেছেন।যিনি এটা চিবিয়েছেন তিনি ঠিক মত দাত ব্রাশ করেন না।
এটা সেন্টার ফ্রেসের গ্যাম নয়।
অর্থাৎ সাইফ এটা করেনি।
আর যিনি এটা চিবিয়েছেন তিনি স্মোকার।
গোল্ডলিফ সিগারেট আর এই বাবুল গ্যাম তিনি এক সাথে পান করতেছিলেন।
এবার দেখুন এমন কে আছে।
রিওর কথা গুলা শেষ হতেই
আমরা সাবাই তমালের দিকে তাকালাম।
ধপ করে মনে পড়ে গেল।
গত মাসে মেয়েদের জন্য
তমালের সারা ক্লাস
কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।
কিন্তু রিও জানল কি করে?
রিওতো সেদিন ক্লাসেই ছিল না।
কেউ কি ওকে কথাটা বলেছে?
হঠাত তমালের চিৎকার শুনে ঘুরে দেখি স্যার ওকে রাম কেলানি দিচ্ছে।
আর তমাল চিৎকার করে বলছে, স্যার আর করব না, আর করব না।
আমার মত ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে
এতকিছু বুঝল কি করে রিও।
একটু পরে সাবাই চুপ।
ক্লাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে
রিওকে প্রশ্ন করাই রিও বললঃমামা,,সবই একটু বুদ্ধি খাটালে তুমিও পারতে।
_কেমনে?
_প্রথমত, গ্যাম গুলা আচ্ছা মত পিষা ছিল।
মানে অনেক হ্মন ধরে পিষা হয়েছে।
অনেক না পিষলে আঠা সহজে লাগে না।
তিতা একটা ফ্লেবার আসছিল।
সেন্টার ফ্রুট দিয়ে মিষ্টি ফ্লেবার আসে।
তিতা হয় বাবুল গ্যাম।
আর সিগারেটের গন্ধ আসছিল।
মানে সে এটা খেয়েছে আর স্মোক করেছে।
আমি বললামঃ দাত ব্রাশ করেনা সেটা?
_আরে গাধার বাচ্চা গাধা।মানুষের গালের গন্ধ একটা পিচ্চি ও বুঝতে পারে। সেটা পাওয়া যায় ব্রাশ না করলে!!”!”
_এটাত একদোম সোজা?
_হ্যা সলভ করার পর সোজা মনে হয়।
কিন্তু সলভ করার আগে?
_হুম তাইত।গোল্ডলিফ সিগারেট সেটা কেমনে বুঝলি?
_সার্লক হোমস, ছায় দেখে বলে দিতে পারতেন সেটা কোন সিগারেট আর এত বছর পর
এই মর্ডান যুগে আমরা গন্ধ শুকে কেন পারব না, মামা।
_হুম।
চল বাসায়।
!!
পরদিন স্কুলে এসে খবর টা শুনে এক দোড়ে রিওর কাছে গেলাম।
হাপাতে হাপাতে বললামঃরিও আমি শেষ?
_কেন মামা?
_তোর ইরা
_কি? ইন্মরা ইরার বিয়ে?
_আরে না।আজ সকালে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে?
_কেন? ( একট অবাক হয়ে রিও বলল)
_কাজিন কে খুনের দ্বায়ে।
_তাই না কি?
_হুম। তুই একটা কিছু কর।
_আমি কি উকিল? ভাল উকিল ধর। জামিন পেয়ে যাবে।
_আরে। ইরা খুন করতে পারে না।আমি বিশ্বাস করিনা।
_আবেগ দিয়ে সব কিছুর বিচার করতে হয়না মামা।
আগে চল জানি বিষয়টা।
তারপর দেখা যাবে খুন করেছে কি না।
_আরে ওর মত ইনোসেন্ট মেয়ে খুন করতে পারে না।
_মামা, আমি জানি ইরা খুব ইনোসেন্ট।
কিন্তু ঘটনা দেখে, না শুনে কোন মন্তব্য করাটা বোকামি।
চল যায়।
_ওকে,,,চল।
আজ আর ক্লাস করা হল না।
এখন যাব সোজা থানায়।
কি আছে কপালে আল্লাহ জানে।

থানায় যেতে যেতে রিও
আমার কাছ থেকে
ইরার বাড়ির ফোন নাম্বার নিল।
কি কথা হল সেটা জানি না।
ঘন্টা খানেক বাদে থানায় পৌছালাম।
পুলিশ সদস্যরা আমাদের দিকে একটু
কেমন কেমন করে দেখছিল।
কারন গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম।
একটু বাদেই ওসি সাহেবের দেখা করার
অনুমিত পেলাম।
গিয়ে কি বলব? এমন প্রশ্নের জবাবে
রিও বলেছিল,ঃসেটা আমি দেখব।
তাই হয়ত আর রিওকে কোন প্রশ্ন করিনি।
তাছাড়া আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল।
তাই বসে ছিলাম।
রুমে ঢুকেই রিও ওসি সাহেব কে সালাম দিয়ে
বললঃআমি রিও।
আমার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললঃআমার মামা। ইফতি।
_কি ভাবে হেল্প করতে পারি তোমাদের?
_আসলে স্যার আমরা এসেছিলাম সকালে যে মেয়েটিকে গ্রেফতার
করেছেন তার ব্যাপারে।
_মানে?
_আমরা কি ইরার সাথে কথা বলতে পারব?
_না।
ভাবলাম আশার গুড়ে বালি। হয়ত দেখা করতে দেবে না। কি আর করা ফিরে যেতে হবে।
এবার রিও বললঃএকটা কল দিয়া যাবে?
_কাকে কল দিবেন? (ওসি)
রিও এবার নিজের পরিচয় দিল।
রিওর কথা শুনে হেসে বললঃতুমি রিও।
আগে বলবে না। তোমায় সেই ছোট বেলায়
দেখেছি।
কত বড় হয়ে গেছ! বলেই ওসি, কনস্টেবল কে ডেকে
ইরাকে বাহিরে নিয়ে আসার কথা বললেন।
আর রিওর দিকে তাকিয়ে বললেনঃ পরিচিত?
রিও বললঃ ক্লাসমেট।
_ওহ।চা, কফি কোনটা চলবে?
_আপাতত কোনটাই না।
ইরাকে নিয়ে কনস্টেবল রুমে এল।
ইরাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচুর কান্না কাটি করেছে
মেয়েটা। মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।
রিও শান্তনা দিয়ে বললঃইরা বস।
এত চিন্তা কিসের? আমি আছি না।
তুমি খুন না করলে তোমার শাস্তি
কেউ দিতে পারবে না।
ইরা হয়ত ভরশা পেল রিওর কথায়।তাই রিওর
পাশের চেয়ারে বসল।
ওসির রুমে আমরা চার জন। আমি, রিও,ইরা আর ওসি সাহেব।
রিওর পরিচয় পাওয়ার পর ওসি সাহেব
কেন জানি বেশি কথা বলছেন না।
আর আমি এখানে এসে কথায় বলিনি।
নিরবতা ভেংগে রিও বললঃকি হয়েছিল সেটা
বল ইরা।দেখ, কিছু লোকাবে না।
_অনেকটা কেঁদে কেঁদে ইরা যা বলল তা মোটামুটি এরকমঃ_রিমি মানে ওর কাজিন যে খুন হয়েছে।তার মা_বাবা গতকাল বেড়াতে গিয়েছিল।
বাসায় রিমি ছাড়া আর কেউ ছিল না।
তাই রিমির সাথে ইরাকেও থাকতে বলে যায় রিমির বাবা।
এর আগেও অনেক বার তারা থেকেছে একসাথে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইরা নিজের বাসায়
চলে আসে।
রিমিই তাকে গেট খুলে বাহির করে দিয়ে যায়।
তারপর সে আর কিছু জানে না।
স্কুলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন ওসি এসে বলে
ইরাকে খুন করা হয়েছে। আর তাকে ওসি সাহেব ধরে নিয়ে আসে।
কথাটা শুনে আমার পুরোটাই বিশ্বাস হল।
জানিনা ওসি বা রিও করল নি না!!
ইরাকে কিছু শান্তনা দিয়ে আমরা বের হয়ে এলাম।
রাস্তায় এসে রিওকে বললামঃআমার কিন্তু ইরার সব কথা বিশ্বাস হয়েছে।তোর কি মনে হয়?
_জানি না রে মামা। আসলে বেশির ভাগ মানুষের একটা দোষ থাকে, সেটা হল কোন কথা শুনার আগেই ঠিক করে নেয় বক্তা সত্য আথবা মিথ্যা বলছে।
সে কারনেই মাঝে মাঝে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যা কে সত্য ভেবে ভুল করে।
আসলে আমাদের উচিত প্রথম কথাগুলা
শোনা তারপর বিচার, বিশ্লেষণ করে একটা ডিসিশনে আসা।
কিন্তু সব সময় আমরা করি তার উলটা।
কথাটা শুনে আমার খুব রাগ হল।
অনেক কষ্টে রাগ চেপে বললামঃতাহলে কি ইরা খুন করেছে?
হ্যা না কিছুই না বলে, কানে ইয়ার ফোন গুজে দিল রিও।
আমারও মুড খারাপ ছিল কিছুই বলিনি।
সি এন জি তে আসতে আমাদের সময় লাগল ২৫মিঃ।
অবশ্য রাস্তায় জ্যাম ছিল না।
বাসায় গিয়ে রিও স্বাভাবিক।
কিন্তু আমি স্বাভাবিক হতে পারছিনা দেখে রিও বললঃ খুন করা এত সোজা নয়রে ইফতি।
খুনের জন্য বড় বড় কারন লাগে। অল্প কারন নিয়ে কেউ মানুষ খুন করে না।
ভাল লাগল ওর কথা শুনে। এত হ্মনে ভরশা পেলাম।
_আচ্ছা। ৩টায় রেডি থেক। ওসি সাহেব আসবে। আমরা ইরাদের বাসায় যাব। তা ছাড়া রিমির লাশ দাফন হবে সন্ধায়।
লাশ দেখা উচিত, বললঃরিও
আমি অবশ্য খ্যাক করে উঠে বললামঃলাশ কোন দেখার জিনিস হল?
_ভয় পেলে কি চলে মামা জন্ম নিলে মরতেই হবে।তুমি না দেখলে দেখ না। বাট আমার না দেখলে যে নয়।
ইস রে। রিও কি করে বুঝল আমি মরা মানুষ দেখতে ভয় পায়? ওর মাথায় আল্লাহ যে কি দিয়েছে।আল্লাহই ভাল জানে।
বিকাল চারটা নাগাদ ইরাদের বাসায় পোঁছে গেলাম।
দুইতলা একটা বাড়ি। ইটের পাচিল দেওয়া। বাড়ি & পাচিলের মাঝে বেশ কিছু ফাকা যায়গা আছে।সেখানে ফুল আর অনেক ঔষধি গাছ।
দারওয়ান কে পরিচয় দিয়ে ভিতরে গিয়ে কলিং বেল টিপতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দিলেন।
শাড়িপরিহিতা,ফর্সা, দেখতে ভদ্র,তবে বেশ চিন্তিত,বয়স ৩৫_৪০ এর মাঝা মাঝি।ইরার কার্বন কপি। বুঝলাম ইনি ইরার মা।
রিও সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকল।আমার কাজ হল রিওকে ফলো করা।
মহিলা ঘটনার ব্যাপারে যা বলল তা ইরার কথার পুনরাবৃত্তি।
হুড়মুড়িয়ে একজন ভদ্র লোক রুমে ঢুকলেন। কালো প্যান্টের উপর সাদা সার্ট। অর্ধেক টা ইন করা এবং টাইয়ের অর্ধেক খোলা।
মানে ব্যস্ততার জন্য ড্রেস খুলতে খুলতে রুমে ঢুকেছেন।
গায়ের রঙ চাপা, উচ্চতা ৬ ফুট।
বুঝতে বাকি রইলা ইনি ইরার বাবা কারন সন্তানের বিপদে একমাত্র বাবাই এতটা বিচলিত হতে পারেন।
ভদ্রলোক আমাদের দিকে কোন খেয়াল না করেই স্ত্রি কে বললেনঃ কত বার বলেছি ওই
ফ্যামিলির সাথে না মিশতে।
কে শোনে কার কথা। যেমন মেয়ে তেমন তার মা।এখন বুঝ ঠেলা।
নিজের মেয়েকে নিজেরা মেরে আমার মেয়ের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছে।
মানুষ যে এত নিচে নামতে পারে সার্থের জন্য
এরা আমার ভাই না হলে জানতাম না।
জানোয়ার একটা।
কথা শেষ করতে পারলেন না তিনি।
আমাদের দিকে চোখ পড়তেই চুপ হয়ে গেলেন এবং ভিতরে চলে গেলেন।
ড্রয়িংরুম থেকে ইরার মাকে সালাম দিয়ে আমরা বের হয়ে এলাম।
কিছু বুঝলাম না আমি।রিও হয়ত কিছু বুঝেছে। না হলে কেন বলবেঃজানো মামা!বাংলাদেশের প্রতিটা পরিবারের মাঝেই ভাইয়ে ভাইয়ে দন্দ থাকে।
কারটা প্রকাশ পায় কারটা পায় না।
কিন্তু পান হতে চুন খসলেই ফোস করে ওঠে এই রাগ।
রিওর কাছে এলাকাটা নতুন।
তাই আমিই রিওকে রিমিদের বাসায় নিয়ে গেলাম।
রিমি অবশ্য আমার ২ বছরের সিনিয়ার।
ইরার সাথে রিলেশনের সুবাদে রিমিকে চিনেছি।
ইরা রিমিকে আপু বললেও
দুজনে সম্পর্ক বান্ধবির মত।
রিমিদের বাসা ইরাদের বাসার ফটোকপি বললে ভুল হবে না।
ইরার দাদা তার দুই ছেলের জন্য বাড়ি দুইটা বানিয়েছিলেন।
গেটে যেতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
সাথে প্রচুর মানুষের ভিড়ও ছিল।
দুই জন পুলিশ দেখলাম চেয়ারে বসে আছে।
কাছে গিয়ে রিও বললঃওসি সাহেব এসেছেন?
উত্তরে জন্য অপেহ্মা করতে হল না।
একটা গাড়ি তখনই গেটের কাছে থামল।
গাড়ি থেকে ওসি সাহেব নেমে এলেন।
রিওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি
দিয়ে বললেনঃকখন এসেছ?
_মাত্র। বললঃরিও
_চল।ভিতরে যায়।ঘরটা একবার চেক করে আসি। আমার অবশ্য চেক করা শেষ।
তোমার বাবা কল দিল তাই আসলাম।
ও হ্যা। সকালে যে ছবি আর ভিডিও করা হয়েছিল সব তোমার মেইল এ সেন্ড করা হয়েছে।
_জি পেয়েছি স্যার।
রুমে ঢুকার আগেই একটা গেট
যেখানে একটা পুরাতন তালা ঝুলছে রাতে এখানে হয়ত তালা দেওয়া থাকে।
গেটের সোজা একটা রুম বায়ে
ডাইনিং স্পেস।তারপর আর একটা রুম।ডানে একটা রুম।
সেখানে বেশ বড় তালা ঝুলছে।
দরজা কাঠের খুব শক্ত কাঠ বলেই মনে হল।
ওসি পকেটে হাত দিয়ে কিছু কিছু খুঁজছিলেন।
বুঝলাম চাবি।
রিও ঘটনা দেখে রাগে কিটমিট করে বললঃশুধু মাত্র এই কারনে বাবার সাথে আমার
ঝগড়া হয়।
আপনারা একটা কাজও গুরুত্ব দিয়ে করেন না। চাবিটা আপনার বুক পকেটে। প্যান্টের পকেটে খুজে কি লাভ।
এবার ওসি সাহেব দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। সাথে আমরাও।
তেমন বড় নয় রুমটা।রুমে একটা ডাবল বেড।সাথে মেশানো একটা টেবিল।
তার ওপর পাশে একটা চেয়ার।
মাথার উপর একটা সিলিং পাখা।
দরজার সোজা অপর পাশে উপরে একটা ১০০ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে। তার নিচে ড্রেসিং টেবিল। সেখানে কয়েক রকমের জিনিস।
মেদেয়ের মেকাপ করতে অনেক জিনিস লাগে জানতা
কিন্তু এত? আজ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না।
ড্রেসিং টেবিলের নিচে তাকাতে যা দেখলাম
তা দেখে রিতি মত ভয় পেয়ে গেলাম।রক্ত আর রক্ত।জমাট বেধে আছে।
রক্তের উতস খুজতে গিয়ে চোখ গেল ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতে।সেখানে কাচ ভাঙা।
আর সেখান দিয়ে কাচ বেয়ে গড়িয়ে পড়েছে রক্ত।
কি ভয়ংকর সে দৃশ্য।
কল্পনা করতে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।
রিওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর কোন ফিলিংস নেয়।
কেমন যেন ঠান্ডা মাথায় সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে লাগল।
ওসি সাহেব বললেনঃ লাশের মাথা এই ভাঙা কাচের ভিতর
ঢুকানো ছিল। গলার অর্ধেকটা কেটে গিয়েছিল।
তারপর ওসি সাহেব কি বললেন জানিনা।আমি শুধু ভাবছি,খুনি কত জোরে আঘার করে ছিল রিমিকে।যে এত মোটা কাচ ভেংগে মাথাসহ গলা ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল।
রিও তার ব্যাগ থেকে আতশি কাচ আর কি কি যেন বের করল।
কিন্তু আমার এ দৃশ্য কল্পনা করাতেই মাথা ঘোরা শুরু করল।রিওকে বলে বাইরে চলে আসলাম।
ভিকটিমের ঘর এবং সাথে অন্য ঘর
গুলা দেখে ওসি এবং রিও বের হল।
এসেই আমায় বললঃবুঝলে মামা।ইনভেস্টিগেশন। এত
তাড়াহুড়া করলে কি হয়।
_আমার মাথায় সমস্যা হচ্ছিল। নিতে পারছিলাম এত চাপ, তাই চলে এসেছি।বললাম আমি
_ওকে ওসি সাব। আসি তাহলে,বলেই রিও আমাকে ইশারা করে বুঝিয়ে দিল।
আমাদের কাজ শেষ।
চলে আসলাম আমরা।
বাসায় ফিরে দেখলাম রিওর মা এসেছে।
কিরে আপু কেমন আছিস বলতেই রিওর মা বললঃরিওকে এখানে পাঠিয়েছিলাম পড়া লেখা করতে। গোয়েন্দাগিরি করতে নয়।
রিও বললঃওহ। আম্মা! কে বলল আমি গোয়েন্দাগিরি করছি।
_ওসি সাদেক তোমার বাবাকে কল দিয়েছিল। সেই বলল। তাছাড়া আমি জানি তোমার মাথায় এগুলা ঘুরে সব সময়।
_ওকে আম্মা। করলাম না এসব।
_না! অর্ধেক রাস্তায় থেমে পড়ার দরকার নেয়।চালিয়ে যাও।নেক্সট টাইম আর কোন কেচ নিয়ে মাথা ঘামাবে না।
আর তোমার বাবা যেন এগুলা জানতে না পারে।ওকে।
_ঠিক আছে আম্মা।
তারপর দুই মা_ছেলে মিলে এক ঘন্টা
কি সব আলোচনা করল এবং সব শেষে আমাকে নিয়ে বাহিরে বের হল দুজন।
পথে এসে জানতে পারলাম।রিওর মায়ের কোন এক বান্ধবির মেয়ের জন্ম দিনের পার্টিতে যাচ্ছি আমরা।
আমার অবশ্য রাগ হচ্ছিল।
ইরার জন্য খুব চিন্তাও হচ্ছিল।
কি যে করছে মেয়েটা।
রিও কেন জানি আমার আমার মুখ দেখে
সব বুঝে যায়।
এটাও বুঝে গেল তাই বললঃ মামা আপসেট হওয়ার কিছু নেয়।
ইরার কিছু হবে না।
আমাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য হয়ত বলল কথাটা। কিন্তু আমার
মন মানছে না।
গোন্তব্যে ১ ঘন্টার ভিতর পোঁছালাম।
রিওর মা সবার সাথে রিওকে আর আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।
দেখলাম যে মেয়েটা জন্মদিন সেটা মেয়ে
বললে ভুল হবে।
পরি বলায় ঠিক। অবশ্য এযুগে আটা ময়দাও নাকি মেয়েরা লাগায় সরি ওরা আবার ওটাকে মেকাপ বলে।
সবার সাথে পরিচিত হয়ে আমি আর রিও বসে আছি।
রিওর মা অবশ্য কোথায় গেল সেটা জানিনা।
হটাত মেয়েটা(যার জন্ম দিন)এসে দাড়াল
আমাদের সামনে।
রিও বললঃকেমন আছ যুথি? শুভ জন্ম দিন।
_ ধন্যবাদ।ভাল। তোমার দেখা পাওয়া যায় না?
_আরে আছি একটু ব্যস্ত। তারপর?
কিছু না বলে মেয়েটা রিওর হাত ধরল।
আমি ভাবছি কি মেয়েরে বাপ।।
কিন্তু ভাবনা শেষ হওয়ার আগে দেখলাম।
রিওর ফুলহাতা সার্টের হাতের বোতাম খুলে ফেলল মেয়েটি।
তারপর সে হাতাটা টেনে উঠাতেই যা দেখলাম
আমি পুরা বোকা বনে গেলাম।
রিওর হাতের কজির বেশ কিছুটা উপরে
কিছু কাটা দাগ।কিছু এসিডে পোড়া দাগ।আর কিছু যায়গায় সুজ দিয়ে ছিদ্র করা।
ভাবলাম প্রেম ঘটিত ব্যাপার না কি?
কিন্তু না। রিও তেমন নয়।
মেয়েটা বললঃএই তোমার ব্যস্ততা?
আর কত রিও?
মুচকি হেসে রিও বললঃ আমার পরিহ্মা শেষ। আর কাটা বা পোড়ানো লাগবে না।
_ফলাফল নিশ্চয় জিরো?
_সফল। এখন এই এসিডে রক্ত ছাড়লেই
সাথে সাথে ব্লাড গ্রুপ,সহ সব কিছু আমি বলে দিতে পারব।
ইভেন কত দিনের আগে রক্ত সেটাও বলা সম্ভব।
_পাগল একটা বলেই মেয়েটি চলে গেল।
আর আমি ভাবছি, আমার ভাগিনাকে নিয়ে,
নিজের শরীর কেউ এভাবে পুড়ায়ে পারে।
এক ধ্যানে বসে আছি প্রায় আধা ঘন্টা হবে।
খেয়াল করলাম পাশে রিও নেয়।
খুজতে গিয়ে দেখলাম। পাশে একটেবিলে রিও বসা।তার সামনে বসা একটা মেয়ে
বয়স ১৪/১৫। উচ্চতা ৫.৪” হালকা পাতলা গঠন।জিন্স আর সাদা সার্ট পরা।
চোখে বেশ বড় চশমা।
মুখগোল, নাক কিছুটা বোচা,চুলের কার্ট চায়না মেয়েদের মত। বসে ল্যাপটপ টিপছে। রিও তার সামনে বসা সেটার দিকে তার কোন খেয়াল নেয়।
আর রিও চুপ চাপ বসে এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
কাছে গিয়ে বললামঃভাগিনা কি কর?
_কথা বলো না মামা। চার্জ নিচ্ছি।
কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না।
আবার বললাম ঃতুই শেষ ভাগিনা।
_শেষ নারে মামা আমার লাইফ
শুরু হল।একেই গত দেড় বছর ধরে খুজছি।
_মানে? ওটা দেখতে মানুষ হলেও আসলে আমার কাছে ওকে মানুষ মনে হয় না।
_মানে? ভুত টুত নয়ত?
_আরে ফাজলামি রাখো।
_তো কি এটা?
_ক্রাইম গুগল।
_মানে?
_ওর মাথায় পৃথিবীর সব ক্রিমিনালদের নাম, ঠিকানা । ওদের কাজের ধরন। এখন কে কি করছে সব আছে।
_মানে?
_গুগলে সার্স দিয়ে ক্রাইম সম্পর্কে জানতে তোমার টাইম লাগবে।কিন্তু ও অনাসয়ে বলতে পারবে সব।
তাই ওর নাম দিয়েছিলাম ক্রাইম গুগল।
_জানলি কি করে।
_সেটা এক রহস্য।পরে বলব।
_কথা বলছিস না কেন ওর সাথে?
_নিজের ইচ্ছা না হলে ও কারো সাথে কথা বলে না।
তুমি যাও দেখি কথা বলে কি না।
আমি একটু দূরে বসে আছি কি কথা হয় শুনব তাই।
১০ মিনিট পর মেয়েটা ল্যাপটপ অফ করে দিয়ে বললঃহ্যা রিও, আপনার এসিডের কি খবর?
পাশ থেকে আমি অবাক হলেও
দেখলাম রিও অবাক হল না।
বললঃ সফল।
_অবাক হননি কি করে জানলাম?
অবশ্য যে কোন পরিবেশে নিজেকে
আপনি স্বাভাবিক রাখতে পারেন।
এজন্য কথা বললাম আপনার সাথে।
অনেক সময় নস্ট করেছি আপনার।কি করছিলাম জানেন?
_রিওর সম্পর্কে গুগল করতে ছিলেন।বলল রিও
_আসলে নিজের তথ্য এভাবে ছড়ানো উচিত না।
_ওটা লক করা ছিল। যুথি যখন আমার নাম বলল আর আমার হাত দেখল
তখন আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
আমাকে প্রথম আপনার ক্রিমিনাল মনে হচ্ছিল।
তাই যখন কি_গুল প্রেস করছিলেন তখনি বুঝলাম আমার নামে লিখেছেন। কারন আমার নামের অহ্মর গুলা উপরের সারিতে।
আপনার আংগুল গুলা উপর হতে নিচে নামেনি।
তাই বাম হাত যুথি ধরে লেও ডান হাত মোবাইল ছিল।
আর আমার তথ্য লক বা আনলক করতে সময় লাগে ১২ সেকেন্ড।
মেয়েটা এবার মিষ্টি একটা হাসি দিল।
এই হাসি না দিলে আমি হয়ত এই মেয়েকে রোবট অথবা এলিয়েন ভেবে নিতাম।
হেসে মেয়ে বললঃআমি আন্তিকা।
ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে রিও বললঃআপনার সাথে আমি কি ফ্রেন্ডশিপ করতে পারি।
মেয়েটা আল্লাদে গদ গদ হয়ে নিজের সেল নাম্বার টাও দিয়ে দিল।
ওকে বেচে থাকলে দেখা হবে বলে রিও উঠে এল।
মেয়েটাও অন্য দিকে হাটতে শুরু করল।
এলিয়েন গুলার স্বভাব এলিয়েনের মত হওয়া উচিত।
আমি হলে রাত ভর মেয়েটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম।
কিন্তু ভাগিনা আমার।দুই কথা বলেই নিজেই চলে আসল।
মেয়েটার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে আর কিছু টাইম রিওর সাথে কথা
বলতে চেয়েছিল।
কিন্তু ভাগিনা এরকমই।,
পার্ট শেষ হলে মনি আপু মানে রিওর মায়ের কাছে গেলাম।
তার কথায় বুঝলাম আমাদের যেতে
আরও ঘন্টা খানেক সময় লাগবে।
এদিকে রিওর কোন মাথা ব্যাথা নেয়।
মোবাইল টিপছে।
বললামঃ কি কর ভাগিনা?
_ভিডিও দেখি; দেখবা?
রিওর পাশে গিয়ে ভিডিওটা দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করল।
ভিডিওটা অনেকটা অস্পস্ট।
আলোর অভাব ছিল রুমে।
ফ্লাস লাইটে তেমন স্পস্ট হচ্ছিল না।
এটা রিমির ঘরের ভিডিও যেটা সকালে ওসি সাহেব রিওকে মেইল করেছে।
দেখলামঃলাল একটা ড্রেস পরা রিমি। আয়নার গ্লাসের ভিতর মাথাটা ঢুকানো।
রক্তে ভেজা পুরা শরির।
আমি আর দেখলাম না।
রিও বললঃমামা এদের ফেসবুক আই ডি টা বলতে পারবা?
_হ্যা।
_ওদের প্রফাইলে যাও।
আমি তাই করলাম।
খানিক সময় রিমি আর ইরার আইডি তে
কি যেন দেখল রিও।
আমার চোখে পড়ার মত কিছু মনে হল না।
শুধু গত কাল রিমির আইডিতে আপলোড দেওয়া একটা ছবি ছাড়া।
ইরা আর রিমির এক সাথে
তোলা ছবিটা।
হ্যা লাল ড্রেসটাই পরা রিমির।
মাত্র ভিডিওতে যে ড্রেসটা পরা দেখেছি সেটায়।
রিও বললঃ রিমির বয়ফ্রেন্ডের নাম, ঠিকানা বলতে পারিস?
_কি বলিস ভাগিনা?রিমি রিলেশন ছিল আমি জানিনা।
তুই কি করে জানলি?
_শুধু কি রিলেশনরে মামা? খুনের রাতে ছেলেটা রিমি বাসায় এসেছিল অথবা ছিল।
_কি বলিস? কে বলল?
_রিমির আপলোড দেওয়া পিকটা তাই বলছে।
_মানে?
_মামা।তুমি শুধু ছবিটা দেখেছ।
বাট কল্পনা করতো।একটা রুমে তুমি আর আমি আছি।আমরা ছবি তুলব একসাথে।এখন দুজন মিলে হয়ত বড় জোর সেল্ফি নিতে পারব।
কিন্তু ৬/৭ ফুট দূর থেকে ছবি নিব কেমনে?
_কারো হেল্প ছাড়া সম্ভব না।
_তা হলে? রিমি ওই ছবিটা নিল কি ভাবে?
_হ্যা।তাইতো ভাগিনা। ছবিটা দূর থেকে তোলা।নিশ্চয় অন্য কেউ তুলেছে।
আমার মাথায় আসেনি কেন আগে বিষয়টা। আমি আবার বললামঃতুই কিকরে সিওর ওটা রিমির বয়ফ্রেন্ড?
_এত রাতে ঘরে বয়ফ্রেন্ড ছাড়া কি তোর ভাগিনাকে ডাকবে ছাগল? বলল রিও
_আমাকে ডাকতে পারত?
কথাটা বলে একটু অবাক হলাম।
রিও বললঃহ্যা।ইরার বয়ফ্রেন্ড হতে পারত।বাট রিমির মুখে যে পরিমান মেকাপ তাতে মনে হয়না ওটা ইরার কেউ
ছিল।
এমনিতে মেয়েরা একটু অলস হয়। এত কষ্ট করে ইরার বয় ফ্রেন্ডএর জন্য রিমি নিশ্চয়
সাজুগুজু কুরবে না।
বলেই হাসতে লাগল রিও।
হটাত করে হাসি বন্ধ করে গম্ভীর হয়ে গেল রিও।
আমি বললামঃকি হল ভাগিনা? মুড অফ হয়ে গেল কেন?
_কিন্তু ইরা বিষয়টা লুকালো কেন?
আমারও তাই মনে হল।তবে ইরা কেন সে কথা লুকিয়ে গেল।কি আছে এর ভিতর?
ইরাকে এখনো প্রযন্ত দোষি মনে হয় নি।
কিন্তু এখন কেন জানি ইরাকে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে আমার।
খুব খারাপও লাগছে।
বেশি সময় বসতে পারলাম না।
একটা ১০/১২ বয়সের ছেলে এসে আমাদের বললঃযুথি আপু আপনাদের ছাদে যেতে বলেছে এখনি।।
রিও আমাকে ইশারতে বুঝিয়ে দিল আমাদের ছাদে যেতে হবে।
কথাটা আমার ভাল লাগল না।কারন খোড়া পা নিয়ে ক্রেস দিয়ে হাটি গত তিন বছর।
এখন ছাদে ওটা আর হিমালয়ে ওটা একই কথা।
রিওর হেল্প নিয়ে ছাদে গিয়ে দেখি সেখানে একটা সোডিয়াম বাতি জ্বলছে।
একটা টেবিল রাখা।
চার টা চেয়ার।
সামনাসামনি হয়ে যুথি আর গুগোল ক্রাইম আন্তিকা বসে আছে।
টেবিলে সামনে গিয়ে রিও আমাকে বসিয়ে দিল একটা চেয়ারে কারন উপরে উঠতে গিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
আমার সামনের চেয়ারে রিও বসল।
রিমি চারটা বেয়ারের বোতল টেবিলে রেখে বললঃচলে তোমাদের?
আমার অবশ্য হাসি পেল। অনেক হাসি শামলিয়ে রাখলাম।
আর মনে মনে বললামঃ ওটা আমাদের কাছে নশ্যি ব্যাপার।
এর থেকে র্বান্ডি অথবা হুইক্সি হলে আমদের ভাল হয়।
রিও বললঃমামার চলে।আমার পোষায় না।
I need more than it.
কথাটা শুনে যুথি নিচে চলে গেল।
এবার আন্তিকা বললঃএকদিন খেলে কিছু হবে না রিও ভাইয়া।
এদিকে আমি খাওয়া শুরু করেছি।
কথা শুনে খুক খুক কাশি দিলাম আমি।
রিও বললঃখেতে পারি শর্ত আছে?
_ওকে বলুন।কি শর্ত?
_মনির এবং জামান নামে এখন বাংলাদেশে
এমন কোন ক্রিমিনাল আছে নাকি যারা এই শহরে থাকে?
আমি পুরা অবাক।রিমি আর ইরার বাপের নাম এই দুই জন।
মনির
ইরার বাপ আর জামান রিমির বাপ।
ভাগিনা কি পাগল হয়েগেছে?
কিছু সময় আন্তিকা চোখ বন্ধ করে রাখল।
তার পর বললঃমনির নামে কেউ নেয়।জামান মোটামুটি
আগে রাজনিতি করত।
তারপর ঠিকাদারি করত।
সরকারে প্রচুর টাকাকড়ি মেরেছে।
অনেক উপরের তালার মানুষের সাথে ওর উঠা বসা।
তাই কয়েক বার পুলিশ কাস্টে গেলেও জামিন পেয়ে গেছে।
আর কিছু?
_না। ধন্যবাদ।
_কথা দিয়েছ মনে আছে?
কথাটা শেষ করার আগেই
যুথি প্রবেশ করল।তার হাতে
হুসক্সির বোতল।
রিও বললঃকোথায় পেলি?
_আরে বলিস না।
বারার বন্ধুরা এসেছে। তারা নিয়_মিত খায়।অনেক কষ্ট করে করিম ভাইকে (রান্নার লোক) দিয়ে আনিয়েছি বাবার ওখান থেকে।
বোতল খুলে রিও খেতে খেতে বললঃতোমাদের চললে নিতে পার।
আমার ওটা চলে না।আমি বিয়ার প্রজন্ত যেতে পারি তার বেশি নয়।
দেখলাম আন্তিকা অবাক হয়ে চেয়ে আছে রিওর দিকে।
এতহ্মন ভেবেছে রিও বিয়ার খায় না আর এখন সেই রিও মদ গিলছে,এটা প্রথম আমিও ঠিক মত নিতে পারিনি।
এখন অবশ্য কিছুই মনে হয়না।
তবে হ্যা রিও কখনো লিমিট ক্রস করে না অর্থাৎ মাতাল হয় না।
ওদের সাথে আর কিছু কথা হল।বুঝলাম আন্তিকা, যুথির কাজিন।
থাকে ইতালিতে।
একমাসের জন্য এসেছে।
আবার চলে যাবে।
রাত দেড়টা নাগাদ আমরা আমাদের বাসায় ফিরে আসলাম।
ঘুম থেকে উঠতে প্রায় নয়টা বেজে গেল।
রিওর রুমে গিয়ে দেখলাম রিও নেই।
রিওর আম্মা বললঃঘন্টা খানেক আগে
বের হয়েছে।
যত দূর বুঝলাম তদন্তের কাজে বের হয়েছে।
আমি আমার মত রেডি হয়ে স্কুলে
চলে গেলাম।
১১ টার সময় আমার একটা এস এম এস
আসল।
দেখলাম রিও পাঠিয়েছে।
লেখা ছিল সাড়ে এগারো টায় আমি স্কুলের
সামনে দিয়ে যাব। ইচ্ছা হলে আমার সাথে
যেতে পার।
পড়া শেষ করেই ব্যাগ গুছিয়ে
রাস্তায় এসে দাড়ালাম।
কারন আমি জানি রিও রাস্তা দিয়ে যাবে, যদি
আমাকে রাস্তায় পায় তবে সাথে নিবে।
নতবা বাইক স্লো করবে না দাঁড়ানো সেটা দুরের কথা।
সময়মত রিও চলে আসল।
আমি কিছু না বলে বাইকে চাপলাম।
যেতে যেতে জানলাম সকালে রিও থানায় গিয়েছিল।
ইরার সাথে কথা বলতে।
তারপর ইরাদের বাসায় সেখান
থেকে সোজা এখানে।
এখন কোথায় যাচ্ছি এমন প্রশ্নের
জাবাবে রিও বললঃগেলেই দেখতে পাবি।
বাইক থামল মহাখালীর অদুরে এক প্রাইভেট ইউনিভারসিটির সামনে।
গেটে গার্ডকে কি বলল রিও জানি না।
আমাদের নাম ঠিকানা টুকে নিয়ে গার্ড আমাদের ভিতরে যাবার
অনুমিত দিলেন।
সোজা চার তলায় গেলাম।
একজনকে রিও বললঃভাইয়া ১ম বর্ষের ক্লাসটা কোন দিকে?জেনে নিয়ে চলে গেলাম।
না, ক্লাস হচ্ছে না।
কিছু ছেলে বসে আছে।
দরজার কাছে গিয়ে রিও একটু জোরে বললঃআশা একটু বাহিরে আসবেন?
একটা মেয়ে উঠে এল।
বেশ ভদ্র মনে হল মেয়েকে।
এসেই বললঃ কে আপনি?
_আমি রিও।অনেক ইম্পরট্যান্ট কথা আছে।
সময় হবে?
_ওকে।
বলেই মেয়েটা আমাদের ক্যান্টিনে নিয়ে আসল।
তারপর বললঃকি বলবেন বলেন?
_রিমিকে চিনেন?
_কেন বলুন তো?
_রিমি খুন হয়েছে।
চমকে গেল আশা। হয়ত কথাটা শুনার মত অমানুষিকতা তার ছিল না।
বললঃকি বলেন? কখন?
_৮তারিখ সকালে।
_আমি কি করতে পারি?
_অনেক কিছুই করতে পারেন।আপাতত রিমি বিএফ এর সেল নাম্বার আর তার ডিটেলস
দিলেই চলবে।
আধা ঘন্টা বাদেই আমরা বাহিরে চলে আসলাম।
আশার দেওয়া ঠিকানা মত
চলে গেলালাম চলে গেলাম রিমির বয়ফ্রেন্ড রাতুলের আড্ডা খানায়।
শাপলা চত্বর থেকে বায়ে মোড় নিয়ে
নটরডেম কলেজের পাশে।
গিয়ে পেয়েও গেলাম রাতুলকে।
জুয়া আর মেয়ে মানুষ নিয়ে এদের আড্ডা।
ভিতরে ডুকতেই সিকিউরিটি ম্যান আমাদের খাস কামরাতে নিয়ে গেল।
আমি না চিনলেও রিও চিনে রাতুল কে।
ফেসবুকের কল্যানে রাতুলের ছবি দেখে নিয়েছিল রিও।
কথা না বাড়িয়ে রিওর সোজা প্রশ্ন ঃমিঃরাতুল।রিমি কে চিনেন?
_কোন রিমি?
_চিনলেন না?
_না।
_যার সাথে গত ৮ তারিখ রাতে আপনার রুমডেটিং ছিল।
_সরি কি বলছেন আপনি? আপনি কোথাও ভুল করছেন?
_পুলিশ খবর দিতে হবে না কি
আমার প্রশ্নের জবাব দিবেন?
রাতুল একটু ভয় পেল হয়ত। বললঃ কি জানতে চান?
_রিমি খুন হয়েছে জানেন?
_জি জানি।
_কেন গিয়েছিলেন ওই রাতে রিমিদের বাসায়।
_আসলে ওই রাতে ওদের বাসায় কেউছিলনা।
তাই রিমিই যেতে বলেছিল।
বিশ্বাস করুন। আমি রাত দুইটার দিকে চলে আসি।
আর সকালে জানতে পারি
রিমি খুন হয়েছে।
আমি খুন করিনি রিমিকে।
_পরে আর যোগাযোগ করেন নি কেন?
_আসলে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাই হয়ত করিনি।
তাছাড়া ইরা ছিল রুমে।
ইরাও খুন করতে পারে।
_কেন করবে ইরা এমন?
_সে জানিনা।
_আপনি কি জানেন ইরা এখন পুলিশ কাস্টে?
_জি হ্যা।
_আচ্ছা রাতুল সাহেব।ইরাকে কি আপনি আগে থেকে চিনতেন?
_না। ওই রাতে পরিচয়।আগে
নাম শুনেছি মাত্র।
_কেন খুন করলেন?
_আজব। আমি কেন খুন করতে যাব?
_সেটা আপনিই ভাল জানেন.।
_দেখুন ভাই। আমি খুন করিনি।
আপনি অযাথা আমাকে হ্যারেজমেন্ট করছেন।
_সেটা সময় বলে দিবে।আর হ্যা! রেডি থাকবেন।দুএক দিনের মাঝেই জেল হাজতে
দেখা হবে।
_মানে?
_সন্ধার সময় রিমির পোস্টমট্যাম রিপোর্ট এসে পড়বে।
তখন পুলিশের টনক নড়বে।
আপনি রেহায় পাবেন বলে মনে হয় না।
_তা হলে আপনি কে? পুলিশ নন আপনি?
_আমার মত বাচ্চাকে আপনার পুলিশ মনে হল কেন রাতুল সাহেব। খুব ডিপ্রেশন মনে হচ্ছে আপনাকে।
আমি রিও।ইরার বন্ধু।
আমি এসেছিলাম কোন ভাবে ইরাকে বাচানো যায় কি না সেটা দেখতে।বাট ইরাতো ডুবেছে, সাথে আপনার রেহায় হবে বলে মনে হয় না।
যাইহোক বেস্ট অব লাক।

রাতুলকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি আর রিও বের হয়ে আসলাম।
ফার্মগেটের কাছে এসে বাইক থামাল রিও।
বললঃফার্মভিউ মার্কেটের দোতালায় ভাল কফি পাওয়া
যায়।চল খেয়ে আসি ইফতি মামা।
_চল ভাগিনা বলে এগোতে লাগলাম।
কফি খেতে খেতে রিওকে বললামঃ আচ্ছা ভাগিনা।আশা আর রাতুলের পরিচয় পেলে কি করে?
_আচ্ছা। মামা,তা হলে পুরা কাহিনি বলি শোনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম,তুমি উঠনি।
কি করা একাই বের হলাম।
প্রথম গেলাম থানায়। সেখানে গিয়ে ইরার কাছ থেকে
রিমির কাছের বান্ধবির ডিটেইস নিলাম।
কার একজনের হদিস পেলেই সব গুলাকে
পাওয়া যাবে।তাছাড়া ইরা যেহেতু চায় না রিমির সাথে
যে ছেলেটা দেখা করতে এসে ছিল সেটা বলতে। যেহেতু অন্য ভাবে কাজ হাসিল করলাম।
থানা থেকে সোজা ইরাদের বাসায়।
ইরার বাবা ঘটনাবহ আবার বর্ণনা করলেন।
তার ভাষ্যমতে, ইরা বাসায় আসের পরে আট টায় কাজের মেয়েটা আসে।
ডাকা ডাকি করে সাড়া না পেয়ে সে বাড়ি ফিরে যায়।
নটার দিকে রিমির বাবা মা বাসায় আসেন।
তারা রুমে ঢুকে এটা দেখে
পুলিশে কবর দেন।
আমি বললামঃ এটাত পুরাণ ঘটনা। নতুন কোন তথ্য থাকলে বল।
_নতুন? আমি কি নতুন গল্প বানাবো?
_সেটা বলিনি। তবে কি মনে হয় তোর। কে খুনটা করতে পারে?
_ইরা,,,রাতুল, রিমির বাবা_মা।
_রিমির বাবা_মা কেন?
_পুলিশের ভাষ্যমতে রিমি বাবা_মা বাসায় আসেন ন’টায়।
তারা এসে প্রথম রিমিকে ডাকেন।
ভেবেছেন মেয়ে ক্লাসে চলে গেছে।
তাই নিজেদের কাছে থাকা অন্য
চাবি দিয়ে প্রথম বারান্দার গেটের লক খুলেন।
তারপর রিমির রুমে গিয়ে দেখতে পান এই ঘটনা।
তারপর পুলিশে খবর দেন।
_হুম।ভাগিনা। চাবিতো শুধু রিমি আর ওর বাপ মায়ের কাছে আছে।
রুম যেহেতু লক করা ছিল।
তার মানে রাতুল ইরা খুনি নয়।
_না।মামা!সেটা বলব কি ভাবে?
কারন রিমি তার বিএফ কে ডুব্লিকেট চাবি বানিয়ে দিতেই
পারে।
আর ইরা চাবি এনে লক খুলে
আবার জাইগা মতে চাবি রেখে
দিয়ে তারপর বের হয়ে বারান্দার লক লাগিয়ে চলে আসতে পার।
_মানে?
_সব অনুমান মামা। পুরা ঘটনা জানতে হলে রিমিদের বাসায় যেতে হবে।
_চল যায়।
_না।পুলিশ রিপোর্ট আসলে তার পর যাব। এখন গিয়ে লাভ নেয়

কফি খাওয়া শেষ। উঠব ভাবছি।
এমন সময় দেখলাম আমাদে সামনে এক ভদ্রলোক আসলেন।
উচ্চতা ৫.৯”।পরনে সাদা সার্টের সাথে কাল জিন্স। চুল সামান্য পাকা।
মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।বয়স ৩৮/৪০। সাথে পিচ্চি একটা মেয়ে যার হাত ধরে রেখেছেন। মেয়েটার বয়স ১০/১২।
ইনি হলেম মিস্টার মাসুম। রিওর বাবা।
হাসতে হাসতে আমাদের কাছে এগিয়ে
এলেন।পাশে বসেই বললেনঃ ভাবছ কি করে জানলাম তোমরা এখানে?
আমি অবশ্য অবাকই হলাম।
কিন্তু রিওর সোজা সাপটা জবাবঃআমার বাইকটা নিচে রাখা আছে।সেটা দেখে যদি পুলিশ কমিশনার না বুঝতে পারে
রিও এখানে আছে তাহলে তার অবসর নিয়ে নেওয়া উচিৎ।
_তোর মত আমি গোয়েন্দাগিরি করে বেড়ায় না সব জায়গায়। বলল রিওর বাবা
_আচ্ছা! পাবলিক প্লেসেও শুরু করলা?
_ওকে! তোর খবর কি?
_হুম। ভাল।
_তোর কেসের খবর কি?
_ভাল। দুই একদিনেই সলভ হয়ে যাবে।
_ওকে।ওটা শেষ করে স্টাডিতে মন দাও।
_ওকে বাবা।
দেখলাম কথা গুলার মাঝে মেয়েটা মিষ্টি মিষ্টি হাসি দিচ্ছে। আমি কোতুহল দমাতে না পেরে রিওর বাবাকে বললামঃ কি খবর দুলা_ভাই? বুড়া বয়সেও ক্রাস খেতে শুরু করলেন না কি?
তিনি হাসতে হাসতে জবাব দিলেনঃহ্যা।আগে খেতাম নিজের জন্য।এখন খাচ্ছি ছেলের জন্য।
_মানে? কে এই মেয়ে?
_আমার বউ মা। কথাটা বলেই মৃদু হাসলেন মাসুম সাহেব। আর মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল।
আমি রিওর দিকে কোতুহলের দৃস্টি দিতেই রিও বললঃবাবার বউ মা।তাতে আমার দিকে এমন করে তাকানোর কি আছে ইফতি মামা।
আমি বললামঃতুই বাপের একমাত্র ছেলে কি না, তাই।
_হুম।বুড়া হলে মানুষের বুদ্ধি লোপ পায়।
বলেই রিও আমার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে আসল।
আসার সময় ওর বাবা অবশ্য বলেছিলঃ৩টায় বাসায় থেক কথা আছে।
বাইক স্টাট দিয়ে আমরা চলে আসলাম থানায়।
ওসি আমাদের দেখেই বললঃস্যার এসেছিলেন, কথা হয়েছে?
বুঝলাম রিওর বাপের কথা বলছে।
রিও মাথা নেড়ে হ্যা সুচক ভাব করে
বললঃ কি দরকার ছিল বাবাকে এগুলা বলার।
আপনি আপনার মত কাজ করেন আর আমি আমার মত করি। আর হ্যা পোস্টমর্টেম রিপোর্টস এসেছে?
একটা ফাইল ধরিয়ে দিয়ে ওসি বললেনঃতুমি আসবে জানতাম, তাই ফটোকপি করিয়ে রেখেছি।
_রাতুলকে গ্রেফতারের কি করলেন?বলল রিও।
দেখিলাম হঠাত চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম ওসি সাহেব। নিজেকে
কন্ট্রোল করে বললেনঃ লোক পাঠিয়েছি।তুমি জানলে কি করে?
_আমি দেখা করে আসলাম। আর আমি গোয়েন্দা, পুলিশ নয়।
_স্যার মানে তোমার বাবার মুখে তোমার
অনেক গল্প শুনেছি,মাঝে মাঝে বিশ্বাস হত না। কিন্তু এখন মনে হয় স্যার কমই বলেছেন।
_ওকে। স্যার আসি তাহলে।
_ওকে।
চলে আসলাম সোজা বাসায়। দেখলাম মনি আপু আর দুলাভাই বসে আছে।
সাথে মেয়েটাও।
রিও কিছু না বলে সোজা ওয়াস রুমে গেল।বুঝলাম সাওয়ার নিচ্ছে।
আমি ওদের পাশে বসে গল্প করার এক পয্যায় ফাইলটা দুলাভায়ের হাতে দিলাম।
কারন আমি জানি এ রিপোর্ট এর কিছুই আমি বুঝব না।
দুলাভাই রিপোর্ট পড়ে যা বললেন
আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম।
কথাটা হল, মারার আগে মেয়েকে ধর্ষন করা হয়েছে।
আর মেয়েটার মুখে হাতে গায়ে ইরার ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া গেছে।
পরহ্মনে মনে পড়ল রিও বলেছিল ঃ কোনটা সেক্স আর কোনটা ধর্ষন সেটা বোঝা কি ব্যাপার।
যাইহোক মাথা ঠান্ডা হল।
কিন্তু ইরার ফিংগার প্রিন্ট?
কত ভাল বাসতাম ইরাকে আর সেই ইরা হয়ত রাতুলের সাথে মিলে রিমিকে মেরে দিল।
ভাবতেই চোখে পানি এসে গেল।
কিন্তু রিওর বাবার সাথে গল্প করতে করতে ভুলে গেলাম সব।
রিও অবশ্য যেতে চায়নি।তার পরও মাসুম সাহেবের জন্য যেতে হল।
তার বন্ধুর বাসায়।
মানে যে মেয়েটাকে মাসুম সাহেব ছেলের বউ বলেছিল তাদের বাসায়।
আমি হলাম রিওর বডি গার্ডের মত।রিও যেখানে ইফতিও সেখানে।
রিতি মত সেখানে গিয়ে অবাক হলাম,মিস্টার মনির সেখানে।
বুঝলাম নিশ্চয় মেয়ের জন্য বড় মাপের উকিলের কাছে বাবা আসবেন সেটাই স্বাভাবিক।
রিও তাদের কথার মাঝে কিছু
বলল না তবে মনির সাহেব চলে যেতেই রিও তার বাবা কে
বললঃবুঝলে বাবা।ইরার বাপ,,
_কোন ইরা।? (মাসুম)
_রিমির খুনের আসামি।
_আমায় কেন বলছিস?
_তোমাকে চিনতে পারিনি। তোমার কাছেও আসবে।
_কেন?
_দেখলে না মেয়েকে বাচাতে অর্ধ কোটি টাকা দিতে চেয়েছে তোমার উকিল বন্ধুকে।
_আমায় কেন বলছিস?
_তোমায় বলছি এজন্য এই বাড়ির জামাতা তোমার ছেলে
হত না। তাই
_মানে?
_সোজা।এরা জানে ইরা খুনি তারপরও ইরাকে বাচানোর জন্য টাকা নিয়ে এরা কেচ লড়বে।
_এটা উকিলদের ব্যবসা।এতে সমস্যা কোথায়?
_আসলে বাবা,সবাই যদি ব্যবসাদার হয়ে যাই। তা হলে দেশে আইনের শাসন মুছে যাবে।
_ফালতু প্যাচাল রাখ। বলেই রিওর বাপ আমাকে আর রিওকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
বুঝলাম সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য রিও ছটফট করছে।
নানা অজুহাত দিয়ে আমরা বের হয়ে আসলাম।
এদিকে কল দিয়ে জানতে পারলাম রাতুল ধরা পড়েছে।
আমার মনের অবাস্থা ভাল না।
রিও বুঝতে পারল।
পথে কিছু না বলে সোজা বাসায় চলে আসল।
আসার পথে কিছু সিগারেট নিল রিও।
এমনিতে ওবেশী সিগারেট খায় না।
কিন্তু আজ এক প্যাকেট ক্রয় করায় বুঝলাম রিও খুব টেনশনে আছে।
আমিও কিছু না বলে রুমে ঢুকে নিরব হয়ে বসে রইলাম।
রিও রুমে ঢুকেই ল্যাপটপ অন করল।
তারপর সেটা নিয়ে কি সব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল।
আর একটার পর একটা বেনসনের ফিল্টার ফেলতে লাগল।
কিছু সময় পর পর উঠে হাটতে লাগল।
কখনো মাথায় হাত দিয়ে, কখনো মুখে হাত দিয়ে।
কখনো আরাম চেয়েরে বসে
দোল খেতে খেতে আবার ল্যাপটপ কাছে গেল।
এভাবে গেল টানা ২ ঘন্টা।
হঠাত লাফিয়ে উঠে আমার
ফোনটা আমার হাত হতে নিয়ে
কাকে যেন কল দিল।
কি কথা হল পুরাটা জানি না।
শুধু এপাশ থেকে রিওর কথা শুনলাম।
সেটা মুটামুটি এমন ছিলঃ
_,,,,,,
_রিও বলছি
_রুমের লাইট কে লাগিয়ে ছিল?
_,,,,,,,,
_আপনার কোন কাজই ঠিক মত করতে পারেন না।
_,,,,,,,,,,,,,,
_চাবি লাগবে। সাথে আপনাকে ও।
_,,,,,,,,
_ওকে
_,,,,,,,,,
_জি আচ্ছ।বাই
রিওর মুখ দিয়ে প্রথম আহ মুলক শব্দ বের হল। তার পর মুখে হাসি ফুটিয়ে বললঃনো টেনশন ইবু। যেটা ভাবছি
যদি ভুল না হয়।তা হলে কালই তোমার গার্লফ্রেন কে পেয়ে যাবে।আর যদি না হয়।
তাহলে ইরার আশা ছেড়ে দাও।ওকে ফাসির দড়ি গলায় পরে ঝুলতে হবে।আর বেচারি
রাতুলের জন্য কষ্ট হয়,বিনা দোষে ছেলেটার কারা বরন করতে হবে।
এতহ্মন চুপ ছিলাম।ইরা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করায় আমার
রক্ত গরম হয়ে গেল।তাই বললামঃরাতুলের দোষ নেই মানে?
_মানুষ কি এত গাধা এখনো আছে যে সোনার ডিম দেওয়া হাসটার গলা কাটবে?
ওর কথার মাথা মুন্ডু কিছু বুঝলাম না।
কখন যে আমার চোখের কোনে জল এসে গেছে জানি না। হ্যা,,,হয়ত এই জল ইরার জন্য। হয়ত না।

আমি আর রিও দাঁড়িয়ে আছি।
পাশে জর্জ সাহেব।
ইরাকে আনা হল আমাদের সামনে।
ইরার চোখে রাগ কিম্বা অভিমান নেয়।
ইরা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললঃভাল থেক ইফতি।
তার পর জল্লাদ এসে তার মুখে কাল কাপড় পরিয়ে দিল।
আমি চিৎকার দয়ে বললামঃ না, ইরা খুন করেনি।
ইরা খুন করতে পারেনা।
পাশ থেকে রিও আমায় ঠেলা দিয়ে বললঃ কিরে ঘুমের ঘোরে চিৎকার করে বললে কি হবে, ইবু মামা?
চল সকাল নটা বাজে। রিমিদের বাসায় যেতে হবে।
দেখি ইরাকে বাচানো যায় কি না।
ওহ মাই গড।তা হলে এতহ্মন স্বপ্ন দেখছিলাম।
যাব বাবা ওটা স্বপ্ন ছিল।
কথা মত রেডি হয়ে রিওর সাথে রিমিদের বাসায় পোছাতে ১০টা বেজে গেল।
১০মিনিট রিমির বাবা_মায়ের সাথে কথা হল।
তাদের কথা মত বুঝলাম, আর যাই হোক ইরা রিমি কে খুন করতে পারেনা এটা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
কিন্তু তাদের মেয়েকে কে খুন করল? তাদের এই প্রশ্নের জবাব রিও দিতে পারল না।
ওসি এসে গেলেন এর মাঝে। পুলিশ আসছে দেখে বাড়িতে বেশ অনেক মানুষ জড় হয়ে গেল।
প্রায় ২০ জনের একটা দল আমরা ভিকটিমের রুমে গেলাম।
রিমির বাবা_মা আর ইরার বাবা মা ও ছিল।
রুমে এত মানুষ থাকার পরও
কোন শব্দ নেয়।
স্বশানের নিরাবতা রুমে।
সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আর রিও এটা ওটা দেখছে।
তারপর নিচু হয়ে বেডের নিচে দেখল।
মনে হয় ও কিছু খুজছিল।
মুখের হাসি দেখে বুঝলাম।রিও সেটা পেয়ে গেছে।
এবার রিও বিখ্যাত লেকচারারদের মত ভান করে
ওসি সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বললঃ জানেন ওসি সাহেব। খুনিকে পেয়ে গেছি। কিন্তু আফসোস একটাই আমরা তার কিছুই করতে পারব না।
আসলে আপনি আসার আগে যদি আমি আসতে
পারতাম তাহলে
এই ঘোলা জ্বলে মাছ শিকার করতে হত না।
আর মানুষকে এত হ্যারেজমেণ্ট করতে হত না।
এবার রিও রিমির বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে
বললঃদেখুন যা হবার হয়ে গেছে।
এখনতো মেয়ে ফিরে আসবে না।
আপনার মেয়ের একটু বোকামির জন্য তাকে
মরতে হয়েছে।
আমার আর তর সয়ছিল না। আবার কিছু বলতেও
পারছিলাম না।
ওসি সাহেব বললেনঃ কোথায় খুনি বের করুন।আমি ওকে ফাসিতে ঝুলাব।
_সেটা ঠিক আছে। পারলে ঝুলাবেন। তার আগে বলুনতো,যদি বলি ইরা খুন করেনি। তা হলে আপনি আমায় কোন প্রশ্নটা আগে করবেন?
ওসি বললঃরিমির মুখে, হাতে, পায়ে ইরার ফিংগার প্রিন্ট আসল কি করে?
রিও ড্রেসিংটেবিল দেখিয়ে বললঃওই দেখুন মেকাপ বক্স।রিমি রাতে মেকাপ করেছিল।লাশ দেখে তা নিশ্চয় বুঝেছিলেন?
শান্ত গলায় ওসি হ্যা বললেন। তারপর রিও বললঃইরা রিমিকে মেকাপ করিয়ে দিয়েছিল।সো ইরার ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া অস্বভাবিক কিছুনা।
_ওকে। বুঝলাম। রাতুল তাহলে খুনি?
চমকে গেল রিমির বাবা মা।তাদের মুখ দেখে বোঝাগেল তারা হয়ত মেয়ের রিলেশন এর ব্যাপারে জানত।
রিও ওসিকে উদ্দেশ্য করে বললঃ এযুগে ছেলেমেয়ের কাছে এটা কোন ব্যাপার না।
তাছাড়া এটা ফাস্ট টাইম নয় রিমির।যদি
রিপোর্ট ভাল করে পড়া থাকে বুঝতে পারছেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওসি বললেনঃতাতে খুনের রহস্য মিটছে না।
_আমি কি করব? খুনি ধরা পুলিশের কাজ।আমি আসছি আমার বান্ধবি ইরাকে বাচাতে।
এখন আমার কাজ শেষ। চলে গেলাম।
ওসি সাহেব তাড়াহুড়ো করে বললেনঃপ্রশ্ন কিন্তু একটা থেকেই গেল?
_কি প্রশ্ন? বলল রিও
_ইরা কেন রাতুলের আসার বিষয়টা লোকাল?
_কে চায় বোনের কু_কর্মের কথা প্রকাশ করতে? ইরাও চাইনি।কারন তারা একই পরিবারের মেয়ে।
এতে করে তার উপরও মানুষ আংগুল তুলত।
ওসি পুরাই ভেবা চেকা খেয়ে গেলেন।
কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
তাই বললেনঃদেখ বাপ।এই গোলক ধাধার মাঝে আমায় ফেলে দিও না।
যখন পুরাকেস সলভ করেছ তখন বাকি টুকু করে যাও প্লিজ। রিও বললঃ
করতে পারি,তার আগে যদি আপনি আমায়
বলেন এই রুমে আপনি নতু একটা জিনিস এনেছিলেন।সেটা কি বলতে পারেন?
খানিক চুপ থেকে ওসি বললেনঃমনে পড়ছে না।
এবার রিও হাত দিয়ে উপরে ইশার করলেন।
ওসি অনেকটা চিতকারের মত করে বললেনঃওহ!হ্যা!
রুমে অন্ধকার ছিল। তাই বাল্ব লাগিয়েছিলাম।
খানিক সময় রিওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওসি বললেনঃতুমি বুঝলে কি করে?
রিও বললঃসব রুমেই এনার্জি বাল্ব আর মেয়ের পড়ার রুমে নিশ্চয় কেউ ১০০w বাল্ব জালাবে না?
_চমতকার(বেরিয়ে এল ওসির মুখ দিয়ে)
এবার রিও একজন কনস্টেবল কে ইশারা করে বেডে থেকে ভাংগা এনার্জি বের করিয়ে আনলেন।
অন্য কনস্টেবল বলল সে না কি প্রথম দিনই ওটা
পেয়েছিল। ভাংগা বলে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন।
রিও কনস্টেবল এর মুখের দিকে তাকিয়ে
মৃদু হাসলেন। মনে মনে হয়ত গাধা বলে গালিও দিলেন।
রিও এবার ড্রেসিং টেবিলটা বাহিরে নিয়ে যেতে বলল।
তাই করা হল।
আমরা ১৯ জন মানুষ কি হতে যাচ্ছে এটা ভেবে
ঘেমে নেয়ে একাকার।
ওদিকে রিও আছে শান্ত মেজাজে।
আমার ইচ্ছা করছে রিওর মুখে দুইটা চটকানা মারতে।
হাজার হলেও ভাগিনা।
মারা যাবেনা।
রিও আমাকে মোবাইলের ফ্লাস অন করতে বলল।
কথা মত তাই করলাম।
এবার রুমের লাইটা অফ করে দিল রিও।
একটু বাদেই রিও ওসিকে বলল বাল্ব টা খুলুন প্লিজ।
দেখলাম মন্ত্র মুগ্ধর মত ওসি বাল্ব টা খুলে
আনলেন।
এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললঃইবু মামা বাল্বটা আবার লাগাও।
তামাশা দেখে রাগে আমার গা জ্বলছিল।
কি আর করা, কিছু না বলে
বাল্বটা লাগিয়ে দিলাম।
এবার রিও লাইট অন করল।
আবার অফ করে রিমির বাবাকে দিয়ে
বাল্বটা খুলালো।
এবার ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললঃপ্লিজ
এবার আপনি লাগিয়ে দিন।
এবার ওসি রাগে গজ গজ করতে করতে
বাল্বটা লাগাতে গেল।
তখনি রিও সুইচটা অন করে দিল এদিকে
আমরা সবাই কিছু বলার আগেই ধপ করে একটা
শব্দ হল।
বাল্ব পড়ে চুর্ন হয়ে গেল।
আর ওসি ছুটে গিয়ে পড়ল পাশের দেয়ালে।
যেখানে ড্রেসিংটেবিল রাখা ছিল।
আমরা হাসব না কি করব। কিছু বুঝলাম।
কোন রকম ওসি সাহেব কে ধরে বাহিরে আনলাম।
মাথায় কিছুটা পানি দেওয়ার পর হুস হল তার।

ওসি উঠেই বললঃরিও এমন মজা না করলেও পারতে। এটা কোন ধরনের………….
দেখলাম ওসি কথা শেষ করলেন না।
চুপ করে বসে রইলেন।
কিছু সময় পর বলল ওসি সাহেবঃরিও, তাহলে কি
আট তারিখ সকালে এটায় ঘটে ছিল????
রিও হেসে বললঃহ্যা।
উপস্থিত আমরা সবাই অবাক তার মানে
রিমিকে কেউ খুন করে নি?
বিদ্যুৎ দুর্ঘটনা।।।।।
নিজের অজান্তেই মুখদিয়ে আমার বের হয়ে এলঃরিমি সুইচ অন করে কেন বাল্ব লাগাতে যাবে?
রিও বললঃসেটা রিমি জানে।
_তুমি কিভাবে সিওর যে সুইচ অন করাই ছিল?( আমি)
_সেটা পুলিশের তোলা ছবি আর ভিডিও বলছে।আমি শুধু দেখেছি।
বাড়িতে দেখতে দখতে মানুষের ভিড় জমে গেল।
এক ফাকে ওসি সাহেব কে বলে
আমারা কেটে পরলাম।
কারন রিওকে চিনে ফেললে সমস্যা।এর পর কারও
টয়লেটের বদনা চুরি গেলেও
রিওকে ডাকা শুরু করবে।
তার থেকে কেউ ভাগিনাকে না জানুক এটায় ভাল।

বাইক স্টাট দিয়ে বাসায় না এসে গেলাম সিলিকন সিটি।
দেখলাম সেখানে আন্তিকা বসে আছে।নদি পার হয়ে যাবার সময় একহাজার গাল দিয়েছি রিওকে।
আন্তিকা তার পুর্বের স্টাইলেই আছে। ল্যাপটপ খুলে ঘাসের উপর বসে আছে।
আশেপাশে কত মানুষ কত কি
করছে তার দিকে আন্তিকার খেয়াল নাই।
আমরা যেতেই আমাদের ও বসতে বলল।কিন্তু রিও বলল সে হাটবে।আন্তিকাও রাজি হয়ে গেল।
আমি বললাম ঃক্রেস নিয়ে বালুর ভিতর দিয়ে হাটা আমার সম্ভব না।
তোমরা যাও।পাশের একটা চায়ের দোকান দেখিয়ে বললাম, আমি চা খেতে যাচ্ছি।
আসলে কাবাবাএ হাড্ডি হতে চাইনি।
কিন্তু এটা নিশ্চত আর যাইহোক রিওকে দিয়ে ওটা হবে না যেটা মেয়ে চায়ছে।
সন্ধায় বাসায় এসে দেখলাম,রিওর বাবা_মা,ওসি, ইরাসহ ওর বাবা_মা রিওদের বাসায়।
রিও খুব ভাল হলে বদ অভ্যাস আছে ওর।সেটা হল আমাকে পচানো।
বাসায় ঢুকার আগেই চিৎকার করে বলতে লাগলঃআম্মা ও আম্মা।(রিওর মা বাহিরে এল)
জানো আম্মা।মামির কেসটা সলভ করে আসলাম।
রিওর মা বললঃমামি মানে?
_ইফতি মামার ইন্মরা ইরা।
_অহ। তাই মামু_ভাগিনা এত খুশি? এস ভিতরে। গেস্ট এসেছে।ভিতরে গিয়ে
বুঝলাম বাশ হয়েগেছে।সবাই রিওর কথা শুনে ফেলেছে।
রিও ভিতরে গিয়ে বসল।
কিছু হ্মন বাদে ওসি সাহেব বললেনঃরিও তোমার যদি আপত্তি না থাকে আমাদের কি বলবা কি করে তোমার মাথায় এল এটা খুন নয় দুর্ঘটনা।
প্রথমে একটু হাসল, বুঝলাম ও বলতে চাইছে না।
আমি চেপে ধরলাম বলতেই হবে।
এবার রিও বললঃকারো গায়ে লাগলে আমি দায়ি নই। (বুঝলাম আমি আর ইরা ফেসে গেছি)
যখন কেসটা নিয়ে কাজ শুরু করি তখন ভেবেছিলাম খুন তাই হয়ত আশা,রাতুল, এদের প্রযন্ত চলে গেছিলাম।বাট খুন করার জন্য যে মোটিভ লাগে তার কিছু পেলাম না।
,,রিও কথা বলতেছিল বাট অসস্তি ফিল করছিল।
দেখলাম মাসুম সাহেব আর মনি আপু উঠে অন্য রুমে চলে গেল।
যাবার সময় অবশ্য ইরার বাবা মা কে সাথে নয়ে গেল।
এবার রিওর শস্তি পেল। আবার বলা শুরু করল।
প্রথমে রাতুল কে সন্দেহ হয়েছিল।
কিন্তু যখন পোস্টমর্টেম রির্পোট হাতে পেলাম তখন সন্দেহ দূর হল। কারন আমি ভেবেছিলাম রিমি হয়ত রাতুল কে বিয়ের চাপ দিচ্ছিল তাই রাতুল খুন করেছে।কিন্তু না রিমি পিগনেন্ট ছিল না। তার মানে রাতুলের নিজের গার্লফ্রেন্ডকে খুন করার
দরকার ছিল না।তা ছাড়া রাতুল সম্পর্কে খোজ নিয়ে যা জানতে পারি তা হল রাতুল রিমিকে পিওর লাভ করত।
তাই রাতুলকে বাদ দিয়ে ইরার কথা চিন্তা করি। ইরা রিমিকে কেন খুন করবে,,তার জন্য একটু কারন দরকার ছিল বাট সেটা পেলাম না।
বাদ গেল ইরা।
রিমির মা_বাপ? কিন্তু একমাত্র মেয়ে কে কেন খুন করবে তারা।
আসলে সন্দেহের তালিকায় যারা ছিল।তারা কেন খুন করবে। এমন প্রশ্নের জবাব নিজেই পাচ্ছিলাম না।
তাই মনে হল আমি ভুল রাস্তায় হাটছি।
হঠাত মনে পড়ল গেটে তালা দেওয়া ছিল আর চাবি ছিল রিমির রুমে টেবিলের উপর।
বিষয়টা একটু কোতুহল জন্মাল আমার।
বাসায় এসে পুলিশের দেওয়া ভিডিও দেখা শুরু করলাম।
আসলে ভিডিও ম্যানকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারন সে ভিডিওটা বাড়ির বাহির থেকে শুরু করেছিল।ক্যামেরাম্যান যখন বারান্দার গেটের
ভিডিও করেন তখন দেখলাম, বারান্দার
গেটে একটা তালা ঝুলছে।যেটা চাইনিচ তালা।
এটা চাবি দিয়ে বন্ধ করতে হয়।
মানে তালা লক করা ছাড়া চাবি
খোলা যায় না।
তখন আমার ধারনা আরো দৃঢ় হল,যে আমি ভুল পথে হেটে সময় নষ্ট করেছি।
ঘরের ভিডিওটা অনেকটা অস্পষ্ট ছিল।কারন ফ্লাস দিয়ে ভিডিও করাছিল। ফ্লাসটা তেমন ভাল ছিল না।
যখন পুরা ঘরের ভিডিও প্রায় শেষ
তখন ভিডিওম্যান ঘরের উপরের দিকটা
ক্যামেরা নিলেন। মাত্র ২ সেকেন্ড একটা জিনিস দেখে আমার মাথা ঘুরে গেল।
বিদ্যুৎ সকেটে তিনটা সুইচ।তার দুইটা অন করা। একটা অফ করা।
কিন্তু কেন? রুমে ফ্যানের শব্দ নেই।নেই বাল্বের আলো।
বারান্দার লাইট ঠিকই জলছে।
ঘরে লাইট কেন নেই?
দেখলামঃ সকেটের উপরের হোল্ডার
পুরা ফাকা সেখানে কোন বাল্ব নেই।কিন্তু প্রথমে আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম তখন ঠিকই লাইট জলছিল।১০০wএর
যদিও অন্য রুমে এনার্জি বাল্বছিল কিন্তু এ রুমে কেন ছিল না।এটা প্রথম দিনেই মাথায় এসেছিল।
বাট অতটা গুরুত্ব দেয় নি।কারন
থাকতেই পারে যে কোন কারন।
কিন্তু যখন ভিডিওতে দেখলাম রুমে বাল্ব ছিল না এবং সুইচ অন করা
তখন মনে মনে একটা সমাধান করেই নিলাম।
যেহেতু ভিডিওতে ফান বন্ধ তার মানে
অফ সুইচটা ফ্যানের। আর অন দুইটার একটা ফ্লাকের অন্য টা বাল্বের।
যদি তাই হয় খুনি আমার হাতের মুঠোয়।
আর যদি তা না হয়,,আমাকে অন্য পথ দেখতে হবে।
এত কিছুর আগে দরকার ছিল রিমির রুমে যাওয়া।
তাই আপনাকে কল দিয়েছিলাম, ওসি সাহেব।
আর তার পরতো আপনি সবই জানেন।
আমি এবার বলে উঠলাম ঃএতো পানির মত সোজা কেস।
_ইফতি মামা! সলভ করার পর সব কেসই
তোমার কাছে পানি মনে হয়।
এতই যদি পার, তা হলে রাতে কেন চিতকার করে বললতেছিলে,,ইরা খুন করে নি,ওকে ফাসি দিয়েন না।বলল রিও
কথাটা যদি আমি একা থাকতে বলত তা হলে কোন ব্যপার ছিল না। বাট ইরার সামনেই বলল।
পেজটিজ পুরা শেষ।
এদিকে ইরা আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
আমি আর সেখানে থাকতে পারলাম না।
মনি আপুর রুমে চলে এলাম।
যাক বাবা! ভাগিনা,অপমান করুক আর যাই করুক আমার কলিজার টুকরাটারে নিশ্চিত ফাসির হাত থেকে বাচিয়েছি এটাই যথেষ্ট।

………………………………………..(সমাপ্ত )…………………………………

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত