রহস্যময় ভ্যান চালক

রহস্যময় ভ্যান চালক

আমি আর আমার বন্ধু অয়ন এক ছুটিতে একটা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। গ্রামটা ছিলো মেহরবপুর গ্রাম। ঐখানে অয়নের আপু আর দুলাভাই থাকতো।

তো আমাদের কলেজ বেশ কিছুদিনের জন্য ছুটি পরে যায়। আমরা কি করবো কিছু ভেবে পাই না। অবশেষে অয়নই বললো চল গ্রাম থেকে ঘুরে আসি।

আমিও গ্রাম অনেক ভালোবাসি তাই রাজি হয়ে গেলাম। তো সেদিন ব্যাগ রেডি করে আমি আর অয়ন রওনা দিলাম মেহরবপুরের উদ্দেশ্যে। প্রথমে আমরা

বাসে করে যাবো। বাস থেকে নেমে ভ্যানে করে মেহরাবপুর গ্রামে যেতে হয়। তো আমরা বাসে উঠে গেলাম। প্রায় ৬ ঘন্টা বাসে থাকার পর আমরা প্রায়

মেহরাবপুরের কাছে এসে গিয়েছিলাম। ঠিক সেই সময়েই হঠাত বাসটা নষ্ট হয়ে যায়। আমরাতো সেই বিপদে পরে গেলাম। রাত ৮ টার মতো বাজে। আর

আমরা প্রায় গ্রামাঞ্চলে ডুকে পরে ছিলাম, আর গ্রামে রাত ৮টা মানেই অনেক। চারিদিক নিজন। অনেক দূরে একটা চায়ের দোকান দেখা যায়। চায়ের

দোকানেও লোকসংখ্যা নেই বললেই চলে। আমি অয়নকে বললাম এখান থেকে মেহরাবপুরতো বেশি দুরে না, গাড়ি ঠিক করতে কম করে আরো ২ ঘন্টা

লাগবে আমরা কোন একটা ভ্যান ঠিক করে চলে যাই। বাসের কন্টাক্টারকে এই কথা বলাতে সে আমাদের বললো সামনের পথ নাকি অনেক ভয়ংকর। তাও

আমার রাত্রি বেলা। আর এতো রাত্রে কোন ভ্যানও পাবো না। আমাদের না জাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করলেন। আমি এতোটা পাত্তা দিলাম না ওর কথায়।

অয়নও আমার সাথে যেতেই রাজি হয়েছিলো। তো আমরা একটা ভ্যানের খোজে পায়ে হেটেই রওনা দিলাম। তবে গ্রামের পথতো কাঁদামাটি দিয়ে ভরা।

দুজনের বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। রাস্তার দুধারে আমাবস্যার অন্ধকার। কোন পাখিরো সারাশব্দ নেই। আমরা প্রায় ক্লান্ত হয়েই একটু দাড়িয়ে জিরিয়ে নেই।

কিছুক্ষন পর যেনো আমাদের চোখকে অবাক করে দিয়ে একটা ভ্যান এসে হাজির। অয়নই ভ্যানটাকে দার করিয়ে ভ্যান চালকের সাথে কথা বলে:
-চাচা, মেহরবপুরে যাবেন?
-এতো রাত্রে ঐদিকে যাবেন কেন?
-আসলে আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি। আমাদের একটু পৌছে দিয়ে আসলে বেশ উপকার হতো।
-আচ্ছা যামু। আমার বাড়িও মেহরবপুরের দিকেই। মেহরবপুরের আগে যে কেশবপুর আছে ঐটা আমাদের গ্রাম।
.
তারপর আমরা আর অপেক্ষা না করে ভাড়া ঠিক করে মেহরাবপুরের দিকে অগ্রসর হলাম। পথে চলতে চলতে ভ্যানওয়ালা চাচার নাম জানতে পারি,

করিম মোল্লা। বেশ অনেকটা পথ আমি আর অয়ন গল্প করতে করতেই পারি দেই। যদিও অন্ধকার ছিলো তবু এই নিজনতার মাঝে এক অন্য আনন্দ

খুজে পাই। দেখতে মেহরবপুরের কাছেই চলে আসলাম। ভ্যানওয়ালা চাচার গ্রাম কেশবপুরে। চাচা কেশবপুরের একটা মসজিদের পাশে ভ্যানটা রাখে এবং

আমাদের বলে চলো নামাজটা পড়েই আসি। আমরা আর কিছু বলতে পারলাম না। ওযু করে নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করলাম। বেশ অদ্ভুত দেখতে

মসজিদটা। কিছু মুসল্লীরা বসে বসে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে। আমরা নামাজ পড়া শুরু করি। আমার আর অয়নের নামাজ একই সাথে শেষ হয়।

নামাজ শেষে দেখি মসজিদ একেবারে ফাকা। শুধু আমি আর অয়ন। সেই লোকগুলো বা করিম মোল্লা কাউকেই খুজে পেলাম না। মসজিদ থেকে বের হয়ে

দেখি কোন ভ্যান গাড়িও নেই। করিম মোল্লা আমাদের এখানে ফেলে রেখে কোথায় চলেগেলো, এতোটা পথের টাকাওতো নিলোনা। হঠাত তার উদাও হওয়া

দেখে আমরা দুজনেই বেশ অবাক। ভোর পযন্ত মসজিদেই ছিলাম তারপর মেহরবপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমরা। প্রায় আধাঘন্টা হেটে কেশবপুর

পেরিয়ে মেহরবপুরে পৌছালাম। পৌছে একটা রিক্সায় করে সোজা অয়নের দুলাভাইয়ের বাসায় পৌছালাম। আমাদের দেখে বেশ খুশী হয়েছিলেন তারা।

তারপর অয়ন আর আমি তাদের সমস্ত ঘটনা খুলে বলি। কেশবপুর গ্রাম, মসজিদ আর করিম মোল্লার কথা শুনে তারা আতকে উঠেন। তারা আমাদের যা

বললেন কেশবপুর গ্রামের সকলে নাকি এক মহামারী কলেরায় মারা গেছেন। আর করিম মোল্লা ও নাকি তার পরিবার সহ মারা গিয়েছেন। আর ঐ এলাকায়

এখন কোন মসজিদই নেই। আমি আর অয়নতো যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। আমরা ঘর থেকে বের হয়ে আবার কেশবপুর গ্রামের দিকে রওনা দেই এবং

সেখানে গিয়ে যাহ দেখলাম। অয়নের আপু-দূলাভাই এর কথাই ঠিক সেখানো আদো কোন মসজিদই নেই।আর এলাকার চারিপাশ নিজন কোন মানূষের

চিহ্নও নেই। তবে ঐ করিম মোল্লা, ভ্যান , মসজিদ এইগুলো কি ছিলো!

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত