হ্যারি পটার ফ্যানফিকশন, ( ১ম পর্ব )

হ্যারি পটার ফ্যানফিকশন, ( ১ম পর্ব )

( ১ম পর্ব )

‘বাবা!’ জেমস সিরিয়াস অবাক কন্ঠস্বর শোনা গেল।

হগওয়ার্টস ডিসেম্বরের ঠান্ডায় শুভ্র হয়ে আছে। সূর্যরশ্মি হালকা তুষারে সৃষ্টি করছে চমৎকার প্রতিফলন।

সামনেই ক্রিস্টমাস। এসময় অ্যালবাসের হাত ধরে হ্যারিকে করিডরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিরিয়াস আশ্চর্য না হয়ে পারল না।

এরপর দৌড়ে জড়িয়ে ধরল বাবাকে। ব্যাপারটা তার স্বভাববিরুদ্ধ তাতে সন্দেহ নেই।

কিন্তু দীর্ঘদিন পরে বাবাকে দেখে বেশ ভাল লাগছে তার। সাধারণত ক্রিস্টমাসের বন্ধে সিরিয়াস,

টেডি আর ভিক্টরির সাথে হগওয়ার্টস এক্সপ্রেসে চেপে বাড়ি ফিরে যায়। বলে নেয়া ভাল টেডি হগওয়ার্টস

থেকে বেরিয়ে পড়লেও ভিক্টরির সাথে লম্বা ভ্রমণটা সে মিস করতে চায় না। যাতায়াত এতটাই নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন যে তাদেরকে

নিতে কারো আসার দরকার পড়ে না। তবে এবার যেহেতু অ্যালবাস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে তাতে তাদের ক্রিস্টমাস যাত্রায় সঙ্গী

একজন বাড়বে এটুকুই আশা করেছিল সে। সত্যি বলতে ট্রেনে অ্যালবাসকে দেখে শুনে রাখার নির্দেশ ছিল এবার সিরিয়াসের উপরই।

কিন্তু বাবা এত ব্যস্ততার মধ্যেও তাদেরকে নিতে এসে যাবে ব্যাপারটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। সম্ভবত ক্রিস্টমাসের জন্যই অরোর

ডিপার্টমেন্ট থেকে স্পেশালভাবে ছুটি নিয়েছে। হ্যারিকে ছুটিতে থাকলেও নানা দিক সামলাতে হয়।

‘বাবা তুমি এখানে?’
‘কেন বাবা এখানে আসতে পারবে না?’ অ্যালবাস গম্ভীর স্বরে বলল। সিরিয়াস তীর্যক দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। অ্যালবাস হাসি চাপতে পারল না।
‘অনেকদিন হগওয়ার্টসে আসা হয় না। তাই আসলাম। তোমরা দুজন কেমন করছ একটু দেখা দরকার, তাই না?’ হাসল হ্যারি।
খুশিতে সবগুলো দাঁত বেরিয়ে পড়ল সিরিয়াসের। ‘একদম ঠিক বাবা।’
তবে সিরিয়াস বুঝতে পারল হ্যারির এবার হগওয়ার্টসে আসার পিছনে অন্য কোন কারন অবশ্যই আছে।
.
ক্রিস্টমাসে বাড়ি যাবার জন্য সবকিছু গোছগাছ করা শেষ। এখন শুধু ট্রেনে চেপে বসাটাই বাকি। তবে স্টেশনে যাবার সময় এখনো আসেনি।

সিরিয়াস অ্যালবাস দুজনই তাই তাদের বাবার পিছু নিল। এত ব্যস্ততার মধ্যেও হ্যারি কেন হগওয়ার্টসে এসেছে তা যদি জানা যায়।

হ্যারি সোজা মাঠ পেরিয়ে হ্যাগ্রিডের কেবিনের দিকে রওনা দিল।নিষিদ্ধ বনের ধারে হ্যাগ্রিডের কেবিন। কেবিনটায় কেমন বয়সের ছাপ পড়ে গেছে।

কিন্তু তারপরও হ্যাগ্রিডের কেবিনটা দেখলেই কেমন সতেজ একটা অনুভূতি হয়। হ্যারি দরজায় নক করল।

ভিতরে শোনা গেল ফ্যাং এর দুর্বল ঘেউ ঘেউ। তারপর ধুপ ধাপ একটা শব্দ এগিয়ে আসল দরজা পর্যন্ত।

দরজা খোলার পর চিরচেনা দাড়িভরা মুখটাকে উঁকি দিতে দেখা গেল। কিন্তু তার মুখভঙ্গী চিরচেনা নয়।

দরজার সামনে দেখা গেল ভেঙে পড়া বিমর্ষ এক হ্যাগ্রিডকে। সিরিয়াস স্বভাববশত চিৎকার করে অভিবাদন জানাল, ‘হ্যাগ্রিড!’

উত্তরে হাসবার চেষ্টা করল হ্যাগ্রিড। এরপর হ্যারিকে দেখে তার মুখের বিমর্ষ ভাব খানিকটা বেড়ে গেল যেন।
‘হ্যাগ্রিড কি হয়েছে?’ উদ্বিগ্নস্বরে জিজ্ঞেস করল হ্যারি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল হ্যাগ্রিড। ‘ভেতরে এস হ্যারি। বাকবিক বোধহয় আর বাঁচবে না।’

***

হ্যাগ্রিডের ঘরের ভিতরটা চমৎকার উষ্ণ। ফায়ারপ্লেসে গনগনে আগুন জ্বলছে। পাশের চুলায় বড়সড় একটা কেতলি বসানো।

সামনেই বড় আকারের দুটো চেয়ার। একটায় বসে হ্যাগ্রিড ফুপিয়ে কাঁদছে। অন্যটায় বসে তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে হ্যারি।

সিরিয়াস আর অ্যালবাস হ্যারির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকাটাকেই ভাল মনে করল। অ্যালবাস সিরিয়াসের কানে ফিসফিস করে বলল,

‘হ্যাগ্রিড কাদলে তাকে একটা কুনো ব্যাঙের মত দেখায়, ঠিক না?’
সিরিয়াস বিরক্তস্বরে বলল, ‘কুনো ব্যাঙ না, কোলা ব্যাঙের মত দেখায়।’ একনজর হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে আবার বলল, ‘চুপ থাক্ এখন।’
এরপর সে এগিয়ে গিয়ে টেবিলে রাখা বড়সড় রুমালটা নিয়ে দিল হ্যাগ্রিডের হাতে। এরপর শান্তভাবে বলল, ‘বাকবিক ভাল হয়ে যাবে হ্যাগ্রিড।

আমরা ওর জন্য প্রার্থনা করব।’
কান্না কিছুটা কমল হ্যাগ্রিডের। সে হাসার চেষ্টা করল। অ্যালবাস এগিয়ে এসে বলল,

‘আমরা ক্রিস্টমাসের ছুটিতে বাকবিককে ভাল করার জাদু শিখে আসব। এরপর দেখবে ওয়ান্ডের মারপ্যাঁচে বাকবিক ভাল হয়ে যাবে।’
হ্যাগ্রিড তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ‘ধন্যবাদ।’ এবার সত্যি সত্যি হাসল হ্যাগ্রিড। কান্নামাখা মুখে হাসিটা খুব অদ্ভূত দেখাল।

বাকবিককে কেবিনের বাইরেই রাখা হয়েছে। আসার সময় সিরিয়াসদের চোখে পড়েনি ব্যাপারটা। এর পিছনে অবশ্য বড় ধরণের কারন রয়েছে।

বাকবিকের উপর ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করা ছিল। এতে সে সাধারণভাবে ছিল অদৃশ্য। হ্যারির কাছে ব্যাপারটায় খটকা লাগল।

‘আচ্ছা হ্যাগ্রিড বাকবিককে ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করেছ কেন? ওর ক্ষতি হবে এতে।’

হ্যাগ্রিডের মুখ আবার অন্ধকার হয়ে গেল। ‘হ্যারি বনের ড্রাগনগুলো ওকে বেশ জ্বালায়। আমি আশেপাশে না থাকলেই ঝগড়া লেগে যায়।’
‘হ্যাগ্রিড! তুমি আবার বনে ড্রাগন ছেড়েছ?’
হ্যাগ্রিড বুঝল বেফাস কথা বলে ফেলেছে সে। তবে হ্যারির কাছে কিছু লুকানোর নেই। ‘আসলে হ্যারি ওটা অন্য কোন ড্রাগন নয়। নর্বার্ট।

বিল রোমানিয়া ছেড়ে কয়েক মাসের জন্য বাইরে গেছে। ভাবলাম এই কিছুদিন ওদেরকে আমার কাছে রাখি।’
হ্যারির ভ্রূ কুচকে গেল। ‘ওদের?’
হ্যাগ্রিড কাচুমাচু হয়ে বলল, ‘নর্বার্টের একজন সঙ্গীর দরকার, ঠিক না? আর বাচ্চারও।’

হ্যারি একটা নিঃশ্বাস ফেলল। ‘তোমার ড্রাগনগুলোর জন্য তুমি বাকবিকের উপর অত্যাচার করলে?’ রেগে গেছে হ্যারি।
‘আসলে আমি শুধু হঠাৎ হঠাৎ ওর উপর চার্মটা প্রয়োগ করেছি। যখন আমার বাইরে যাবার দরকার হয়েছে শুধু তখন।

সে অদৃশ্য থাকলে নিশ্চয়ই নর্বার্ট দুষ্টুমি করবে না।’ এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল,

‘কিন্তু আমি সত্যিই বুঝি নি ব্যাপারটা বাকবিকের উপর এত প্রভাব ফেলবে। বেচারার বয়স হয়ে গেছে। আর এখন আমার দোষে মরতে বসেছে বাকবিক।

আমি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করব হ্যারি?’ হ্যাগ্রিড আবার ভেঙে পড়ল কান্নায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল হ্যারি।

শান্তস্বরে বলল, ‘হ্যাগ্রিড পৃথিবীর কেউ অমর না। ভোল্ডমর্টের মত জাদুকরও মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি। বাকবিক তো একদিন মারা যাবেই।

এতে তোমার কোন দোষ নেই।’

কথাগুলো হ্যাগ্রিডের উপর অবশ্য তেমন প্রভাব ফেলল না।
সিরিয়াস বড়দের আলোচনায় নাক গলায় নি। সে তীক্ষ্ণভাবে বাকবিককে পর্যবেক্ষণ করছে। বাকবিকের দেহের সামনের অংশটা দানবাকৃতির ঈগলের মত।

ঈগলের পালক দেহের পেছন অংশে গিয়ে পরিণত হয়েছে লোমে। তার পেছনটা ঘোড়ার মত।
একদম দুর্বল হয়ে পড়েছে বেচারা। পালকগুলো বেশিরভাগই খসে পড়েছে। খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। সিরিয়াস অনেক শুনেছে বাকবিকের বীরত্বের গল্প।

এমনকি বাকবিক যে তার বাবাকে অনেকবার বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে এ তথ্যও তার অজানা নয়।

ওকে এ অবস্থায় দেখে সিরিয়াস একদমই ভাল অনুভব করছে না। কিছু একটা করার জন্য ভেতরে প্রবল এক তাড়া অনুভব করল সে।

তবে শেষ পর্যন্ত এত ব্যস্ততার মধ্যেও বাবার এখানে আসার কারনটা সম্ভবত বুঝতে পারা গেছে। বাকবিকের সাথে শেষ দেখা করতে? হতে পারে।

কিন্তু সিরিয়াসের মনে হচ্ছে বাকবিকের সাথে শেষ দেখা করার সময় এখনও হয় নি। অন্তত তার উচিৎ হবে না এটাকে বাকবিকের সাথে তাদের শেষ দেখা হবার সু্যোগটা রেখে দেয়া। সে জানে বাকবিককে হারালে হ্যারি বা হ্যাগ্রিড দুজনেই ভেঙে পড়বে। বাকবিক ওদের বন্ধু। খুব পুরোনো আর বিশ্বস্ত বন্ধু।

সিরিয়াস অনুভব করল সামনে তার করার মত বেশ কিছু কাজ আছে।

হগওয়ার্টস ক্যাসেলে ফেরার সময়ও হ্যারির মুখ থেকে বিমর্ষ ভাবটা গেল না। সিরিয়াস সতর্কতার সাথে বাবার মুখের ভাব লক্ষ্য করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।

তার মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। প্রশ্ন জমিয়ে রাখা ঠিক না।
‘আচ্ছা বাবা বাকবিকের কি হয়েছে?’
হ্যারির মুখে গম্ভীর ভাব ফুটে উঠল। ‘এক্সেসিভ মোল্টিং ডিজিজ। গৃহপালিত হিপোগ্রিফের সাধারণ একটা রোগ।

এতে তাদের পালক সব খসে পড়ে আর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে তারা।’
‘কেন হয় এই রোগ?’

হ্যারি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “অতিরিক্ত ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করলে।’
‘এই রোগ দুর করার কোন উপায় নেই?’ অ্যালবাস মাঝখানে বলে উঠল।
একটু চিন্তা করল হ্যারি। এই বিষয়ে তার জ্ঞান খুব বেশি নেই। তবে মোটামুটি জানা আছে।
‘উপায় একটাই আছে। সেটা হচ্ছে ২১ দিনের মত আক্রান্ত হিপোগ্রিফকে বনে ছেড়ে রাখতে হয়।’
সিরিয়াসের মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। ‘তাহলে তো বাকবিককে সহজেই বাঁচানো যাবে। হগওয়ার্টসে অন্তত বনের অভাবটা নেই।’
হ্যারির মুখটা আরও বিমর্ষ হয়ে গেল। ‘বাকবিকের রোগটা একদম শেষ পর্যায়ে। এখন বনে ছেড়ে দিলেও বাঁচার আশা কম।

এছাড়া বনে ড্রাগন ছাড়া আছে। বাকবিককে সেখানে ছেড়ে দিলে ভাল কিছু আশা করা যাবে না।’

সিরিয়াস চুপ করে গেল।তবে তার চিন্তাভাবনা থেমে গেল না। হঠাৎ মুখ তুলে প্রশ্ন করল, ‘বাবা বাকবিকের কি একদমই কোন সুযোগ নেই?

এর কোন প্রতিষেধক কি নেই? কিংবা কোন স্পেল? যার মাধ্যমে বাকবিকের ক্ষত পূরণ হবে?’

থেমে গেল হ্যারি। ভ্রূ কুচকে কিছু একটা ভাবল সে। এরপর বিড়বিড় করে বলল, ‘ইল্যুশনমেন্ট চার্ম।

ডিসইল্যুশনমেন্ট চার্মের উপর ইল্যুশনমেন্ট চার্ম প্রয়োগ করলে এক্সেসিভ মোল্টিং ডিজিজটা সেরে যায়।

তবে সব ওয়ান্ড ইল্যুশনমেন্ট চার্ম ক্যাস্ট করতে পারে না। খুব শক্তিশালী ওয়ান্ড লাগে।’ এরপর হ্যারি বিমর্ষ মুখে একটু হেসে বলল,

‘আর এরকম শক্তিশালী ওয়ান্ড এখন আর একটাও পৃথিবীতে নেই।’
সিরিয়াস ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করা শুরু করে দিল। ক্যাসেলে প্রবেশ করার পর অ্যালবাসের কি একটা মনে পড়তেই গ্রিফিন্ডর

কমন রুমের দিকে ছুটে গেল। হ্যারি এগিয়ে গেল ম্যাকগোনাগলের অফিসের দিকে। হগওয়ার্টসে আসলে প্রতিবারই প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আর প্রফেসর

নেভিলের সাথে সে অন্তত দেখা করে। সিরিয়াস আর হ্যারির সাথে প্রফেসরের রুমে গেল না। বাইরে দাঁড়িয়ে বাবার জন্য

অপেক্ষা করাটাকেই ভাল মনে করল। সত্যি বলতে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে সে কিছুটা ভয় পায়। অবশ্য তার মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে।

চিন্তা করার জন্য তার এই সময়টুকু দরকার ছিল। হ্যারি যখন প্রফেসরের রুম থেকে বেরিয়ে আসল তখনও তার মুখের বিমর্ষ ভাবটা কাটেনি।

সিরিয়াস তার বাবার মুড কখনোই এতটা অফ দেখেনি। তার প্রবল একটা কষ্ট অনুভূত হতে শুরু করল।

সে মনে মনে হাতে নিয়ে ফেলল তার জীবনের সবচেয়ে স্টুপিড প্ল্যানটা।

তবে আগের কাজ আগে। বাবার মুডটা একটু ভাল করার চেষ্টা করা উচিৎ।
‘আচ্ছা বাবা তুমি আমাদের ডিফেন্স এগেইনস্ট ডার্ক আর্ট টিচারকে চেন?’
ব্যাপারটায় কাজ হল। হ্যারি মনোযোগ সিরিয়াসের দিকে ফেরাল। নিঃসন্দেহে টপিকটা হ্যারির পছন্দের।
‘না তো। আমাদের সময় এই পোস্টটা বেশ নড়বড়ে ছিল। সে যাই হোক, তোমাদের টিচারের নাম কি?’
‘প্রফেসর ব্লোফিস। চমৎকার একজন প্রফেসর।’
‘তাই নাকি? বেশ অদ্ভুত নাম। পড়ানোটাও অদ্ভুত না আশা করি।’
‘একদমই না। তবে তিনি মানুষ হিসেবে খুব অদ্ভুত। প্রতিটা দিনই তিনি সেই নিউ ইয়র্ক থেকে অ্যাপারেট করে হগওয়ার্টসে আসেন।

চিন্তা করতে পার বাবা?’

হ্যারির মনোযোগ নিশ্চিতভাবেই সরে গেছে। তাকে অবাক হতে দেখা গেল। মুখের মাংসপেশীতেও ঢিল এসেছে।

অন্তত বাবার দুঃশ্চিন্তা সিরিয়াস কমাতে পেরেছে।
‘নিউ ইয়র্ক থেকে প্রতিদিন অ্যাপারেট করা তো দুঃসাধ্য ব্যাপার। এনার্জি কন্ট্রোল করা তো একপ্রকার অসম্ভব।’
সিরিয়াস হাত নাড়িয়ে বলল, ‘বললাম না উনি খুব অদ্ভুত। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার ছেলের কথা বলেন।

তার ছেলের নাম সম্ভবত পার্সি। পার্সির কাছে কি এক ধরণের ড্রিংক থাকে। প্রফেসর সেগুলোকে বলেন নেকটার আর এম্ব্রোশিয়া।

এগুলো খেলে নাকি অ্যাপারেটের ধকল সব গায়েব হয়ে যায়।’
‘ইন্টারেস্টিং তো। তোমার টিচারের সাথে দেখা করতে হয়। আগে দেখি কেমন শিখিয়েছেন তোমাদেরকে তিনি।’
সিরিয়াস চোখ তুলে তাকাল। ‘ডুয়েল লড়বে বাবা?’

হ্যারি একটু হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। সিরিয়াস মনে মনে বাহবা দিল নিজেকে। কে বলেছে সে কারো মন ভাল করতে পারে না?
ডুয়েলের নিয়মানুযায়ী পিতা পুত্র পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়াল। সেকেন্ড হিসেবে নেয়ার মত কাউকে অবশ্য দরকার নেই এখানে।

তাই সে ঝামেলায় গেল না তারা। করিডরের বাইরে বেশ কিছু স্টুডেন্ট ঘোরাফেরা করছে। তারা হঠাৎ থেমে হ্যারি সিরিয়াসের দিকে কৌতুহলী হয়ে গেল।

হ্যারি-সিরিয়াস দুজনই বের করল নিজেদের ওয়ান্ড। এরপর বো করে দাঁড়াল সোজা হয়ে। পরমুহুর্তে প্রায় একসাথে দুটো শব্দ শোনা গেল।
এক্সপেলিআরমাস’
‘প্রোটেগো’

হ্যারি অবাক হয়ে দেখল সিরিয়াস সফলভাবে শিল্ড চার্ম প্রয়োগ করেছে। অরোর হিসেবে হ্যারি কিংবদন্তিতূল্য।

আজ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে এনকাউন্টারে কখনো তার দুবার স্পেল প্রয়োগ করতে হয় নি। ব্যতিক্রম এই প্রথম।

প্রথম ধাক্কাটা কেটে যাবার পর আবার দুটো শব্দ বাতাসে ভেসে বেড়াল। তবে এবার সিরিয়াসেরটা কিছুটা আগে।
‘এক্সপেলিআরমাস’
‘প্রোটেগো টোটালা-‘

হ্যারি একটু ধাক্কা খেল। আর তার হাত থেকে খসে পড়ল তার জাদুদন্ডটা। মুহুর্ত পরেই সিরিয়াসের হাতে হ্যারির ফিনিক্স কোরের ১১ ইঞ্চি ওয়ান্ডটা দেখা গেল।

চোখ বড় বড় হয়ে গেল হ্যারির। হ্যারি পটার, যে অরোর কখনো ডুয়েলিংয়ে হারেনি, সে তার ছেলের কাছে ডিসআর্মড হয়ে গেল। ব্যাপারটা হয়তো লজ্জার।

কিন্তু গর্বে বুক ভরে উঠল হ্যারির। সে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল সিরিয়াসের দিকে। সিরিয়াস ঠোটে মুচকি হাসি ফুটে উঠল।

এরপর সে এক ঝলক তাকাল চারপাশে। করিডরে তার পিছনে চোখ পড়তেই সে মনে মনে বলে উঠল, “ওহ শিট!”

গাদাখানেক বইপত্র হাতে একটি সুন্দরমত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। রাচেল। সিরিয়াসের সাথে তৃতীয় বর্ষেই পড়ে সে।

সম্ভবত তার সবচেয়ে পুরোনো এবং ভাল বন্ধু। তার বাবা মিনিস্ট্রিতে কাজ করে। চোখে অগ্নিদৃষ্টি তার। এগিয়ে এসে চেচিয়ে বলল সে,

“জেমস! আবার করিডরে ডুয়েল করছ তুমি! স্কুলের একটা নিয়ম যদি মানতে! তোমার জ্বালায় বছর শেষে সব পয়েন্ট হারাব আমরা।”
“ইয়ে আশেপাশে তো কোন প্রফেসর নেই…” বলার চেষ্টা করল সিরিয়াস।

হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল রাচেল। এরপর হ্যারির দিকে তাকিয়ে অভিযোগের ভঙ্গীতে বলল, “আঙ্কেল হ্যারি, করিডরে জাদু নিষিদ্ধ।”
হ্যারি বিব্রত ভঙ্গীতে হাসল। এরপর গম্ভীরতা এনে বলল, “একদম ঠিক। আমার খেয়ালই ছিল না।” এরপর সিরিয়াসের দিকে তাকাল সে,

“সিরিয়াস! আর কোন জাদুমন্ত্র নয়। নিয়মকানুন সব মেনে চলবে। ঠিক আছে?”

দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানাল সিরিয়াস।
রাচেল আহত দৃষ্টিতে তাদের দিকে এক নজর তাকাল। এরপর হতাশভাবে মাথা নেড়ে দৃঢ় পায়ে চলে গেল কমনরুমের দিকে।
হ্যারি ইংগিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল সিরিয়াসের দিকে। সিরিয়াস একটু মাথা চুলকাল শুধু। হ্যারি বলল, ‘জাদু ভালই শিখেছ দেখছি।

(চলবে)

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত