সর্বহারা

সর্বহারা

অত্রাই, রানীনগর (নওগাঁ) থানাটির নাম শুনে থাকবেন । ২০০৫ সালের ঘটনা, সর্বহারা নামের দলটিপ্রতি নিয়ত মানুষ খুন করত । তাদের মাঝে এক জন শাখাওয়াত। শাখাওয়াতকে ১১ ই জানুয়ারি ০৫ সন্ধা ৮ সময় গলা কেটে খুন করে।রাত ১২টারদিকে তার লাশটি মর্গে পৌছে। লাশটি ফেরত আনার জন্য গাড়ি খোজার জন্য বাহিরহলে, গাড়ি মিলানো এক সময় অসম্ভব হয়ে হয়ে পড়ে। অবশেষে এক জন ডোম বলেন, আনিস রহমান একটি লোকক

বলে চেষ্টা করতে।আনিস রহমা কে যখন পাওয়া গেল সময় রাত ১২:৩০ কিছু কম বেশি হবে। এখানে বলাদরকার আনিছ রহমানের বয়স ৫০ বছর। সে ভটভুটি চালক। আর সে শুধু এ ধরনের লাশকেবহন করত এবং মোটা অংকের টাকা নিত। কিন্তু শাখাওয়াতকে বহন করায়ে তারজীবনে অভিশপ্ত অধ্যায় হবে, তা আনিছ রহমানের জানা ছিলনা।

আনিছরহমানকে শাখাওয়াতের লাশটি উঠিয়ে দেয়া হল। তালায় (বাঁশের তৈরি বিছানা)দিয়ে মুড়ে দিয়ে। গাড়িটি যখন ছাড়ার জন্য আনিছ রহমানকে বলা হলো, রাত তখনপ্রায় ২টা। ইঞ্জিনটি যখন চালু করতে গেল, অনেক টাইট হয়ে আছে ইঞ্জিনেরচাঁকা। আনিছ তো চালু করতেই পাড়লেন না। যারা লাশটি নিতে এসে ছিলেন তাদেরমধ্যে দু তিন জনও পাড়লেন না। তারপর আনিছ হঠাত্ দেখলেন চাঁকার সাথে হাতটিআটকে আছে সে জন্য চালু হচ্ছে না। তো হাতটি তালায় খুলে ভিতরে দিয়ে , গোলকরে তালায়টি বেঁধে দেয়া হল। তারপর মেশিনটি চালু করে যাত্রা শুরু করলেনরাত ২.৩০ দিকে। যে লোকটি শুধু লাশ বহন করেন, সে যে খুব সাহসী হবেন তা বলারঅবকাশ রাখেনা। কেউ নেই গাড়িতে।লাশকে নিতে যারা গিয়ে ছিলেন, ভয়ে কেউগাড়ির সঙ্গে আসেননি। মর্গে থেকে গাড়িটি রাস্তায় চলা শুরু করলো। শহরেরমধ্য রাস্তা, মানুষ শূন্য আর কুয়াশায় রাস্তার লাইট গুলো ও মৃদু দেখাচ্ছে।

যে নদীটি নওগাঁ শহরকে দুই ভাগ করেছে, সে নদীর উপরে ব্রিজের মাঝা মাঝিযায়গায় আসতে আনিছ গাড়িতে ঝাকুনি উনভব করলেন। গাড়ি থামালেন মৃদু আলোপিছন ফিরে দেখলেন, লাশের বাঁধন গুলো খুলে গেছে। উঠে এসে শক্ত করে বাধলেনলাশটিকে। আবার পথ চলা শুরু করলেন। ব্রিজটি পাড় না হতেই আবারও সেঝাকুনি। আবারও পিছন ফিরে দেখলেন, নাহ! সব ঠিক আছে। পথ চলা শুরু করলেন, সান্তাহার – রানীনগর যে রাস্তা আছে সে পথটি ধরে। বাতাশ বইছে, শীতের প্রকোপওবেশ, মাঝে মাঝে কুয়াশা যেন একদম ঘিরে ফেলছে ৫ মিটার এরও কম দূষ্টিসীমানা।

খুব ধিরে গাড়ি নিয়ে আসতে বাধ্য আনিছ। গাড়িটি সান্তাহারের ছাইলোআসতেই প্রচন্ড ঝাকুনি, ঝড়ের মত বাতাস, আর কুয়াশায় নিজের হাতটি দেখতেপাচ্ছেনা আনিস। সাহসী মানুষ তারপরও ভয় পেয়ে গেলেন। শুরু করলেন যে টুকুদোয়া জানা তা পড়তে। গাড়িটি থামিয়ে,গাড়ি থেকে না নেমে বসে থাকলেন। এবার অনুভব করলেন গাড়ির উপর অনেক ভারি কিছুর অস্তিতের। পিছনে না ফিরেদোয়া কালিমা পড়ছেন, ১০ মিনিট পড় আস্তে আস্তে বাতাসের গতিবেগ কমে গেল, কুয়াশাও কেটে গেল। পিছনে না ফিরেই ভটভুটি চালাতে শুরু করলেন। কিন্তুগাড়িটা যেতে চায় না, যেন ২০/২৫ মন ওজনের কিছু টানছে গাড়িটাকে। এক সময়ভারি বস্তুটি মনে হয় উধাও হল। গাড়িটি স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করল।

রক্তদয় বিলের পাশ দিয়ে চলছে ভটভুটি, মিনিট ১৫ পরে “হাল হালিয়া”স্টেশনের কাছে পৌছতেই, ইঞ্জিনটি বন্ধ হবার উপক্রম। কি হল দেখার জন্যইঞ্জিনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, ঐ হাতটিই ইঞ্জিনের চাঁকার ঐ যায়গায় আটকেআছে। আনিছ এতো ভয় পেল যে, শীতেও তার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠল। হাত পা থরথর করেকাপছে, ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম। মনে সাহস নেবার চেষ্টা করেছে। মনেমনে ভাবে, অনেক লাশ তো এই গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছে, তা হলে! ভয় কি? সাহসকরে যখন পিছনে ফিরলঃ দেখল একটি আলো অথচ কালচে, বিলের মধ্য চলেগেল, যখন আলোটি যাচ্ছিল তখন পানিতে শব্দ হচ্ছিল,স্পষ্ট শুনতে পেল আনিছ।

তারপর লাশের দিকে চোখ যেতেই আবারও আৎকে উঠল আনিছ! তিনটা বাঁধনই খোলা, আরবুকের মাঝে রক্তে ভেজা। কিন্তু এ রক্ত একেবার তাঁজা। ৭/৫ না ভেবে শুধুএইটুকু ভাবলো, এখানে থাকলে মূত্যু তার হবেই। দৌড় দিয়ে যাবার রাস্তাও নেই।সাহস নিয়ে হাতটি ভিতরে দিয়ে, আরও শক্ত করে বাঁধলেন। শুরু করলেন গাড়িচালানো। গাড়ি এসে পৌছল রানীনগরে। দেখলেন কিছু মানুষ ঘুমচ্ছে। গাড়ি থামিয়েবসে রইলেন ৩০মিনিটের মত।

এর মাঝে প্রস্রাব করেন রেল লাইনের পাশে।আনিছের মনে হল আর একটু পরেই ফজরের আজান হবে। তাই আবারও ভটভুটি চালু করেযাত্রা শুরু করলেন। রানীনগর পর, বৃটিশ আমলের করা একটি ব্রিজ হাতিশুরারব্রিজ নামে পরিচিত। এই ব্রিজটি রক্তদয়ের বিলের শেষ সিমানা।

গাড়ি যখনসেখানে পৌছলো, ব্রিজের কাছে আসতেই ছাইলোতে পরিবেশটি হয়েছিল ঠিকসে রকমই হল। এবারও চারদিক এতো কুয়াশা যে, ভটভুটির লাইট জ্বলছে কিনা বোঝারযায় না। হঠাত্ পিঠে কারো স্পর্শ অনুভব করলো আনিছ, সমস্ত শিরা উপশিরা চোখকান সব কিছু দিয়ে গরম বাতাস বাহির হতে শুরু করলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছেননা, আস্তে আস্তে স্পর্শটি আনিছের বুকের দিকে আসছে, হাতদিয়ে ধরে দেখল সেইহাত। হাতটি তার গলার দিকে এগুচ্ছে, শত চেষ্টা করেও থামাতে পারছেনা ।গাড়িটিও একবার থেমে গেল।

হাতটি আটকাতে পাড়ছেনা। এবার পিছন ফির দেখল, লাশটি বসে থেকে তাকে ধরেছে, দু চোখে কিছু নেই, রক্ত গরাচ্ছে । বুকটাওফাঁকা। লাশের বসে থাকা দেখেই, আনিছের প্রান বাহির হবার উপক্রম, দম বন্ধহয়ে আসছে, শেষ চেষ্টায় দু হাতদিয়ে হাতটি ঝাকি মারন আনিস। হাতটি সরে গেল, সঙ্গে সঙ্গে পিঠে এতো জোরা থাপ্পর মারল, আনিছ বাবা মা বলে চিত্কা র করতেলাগল। এরপর আরও এক থাপ্পর মারল গাড়িতে। আনিছ অজ্ঞান। যখন জ্ঞান ফিরল ১৩ দিন অতিবাহীত হয়ে গেছে।

রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে। বুকে পিঠে ব্যানডেস, আরও কিছু দিন পর বাড়িফিরে আসলেন আনিছ রহমান। আমি সহ অনেকে অনেক লোক তাকে দেখায় জন্য ভীরকরেছিল। আনিছ রহমানে পিঠে একথাবা মাংস নেই, আর তার বুকে এবং তার পার্শেআগুন পুড়ে গেলে যে রকম হয় সে সব ক্ষত। এ কথা গুলো ছিল আনিছ রহমানের । সে আর কোন দিন গাড়িতে লাশ বহন করেন নি।

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত