অশরীরীর ডাইরি

অশরীরীর ডাইরি

জুম্মার নামাজ শেষে সকলে বের হচ্ছে।সুন্দর এক পবিত্র পরিবেশ।মুসল্লিরা বের হচ্ছেন।কারো সাথে তাদের সন্তানেরা।ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে পবিত্র হাসি।যেনো নূরের ঝলক বের হচ্ছে।আজ আবহাওয়া টাও এই পবিত্র সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রশান্তির হাওয়া ছেড়েছে।আমিও জুম্মার নামাজ শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলাম।আমার বাসাটা অবশ্য মসজিদের পাশেই।বাসায় ঢুকেই দেখি আম্মা আমার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছেন।ঘরে

আমার প্রিয় খাবারের ঘ্রানে মো মো করছে।আমি ঢুকেই মাদুরে বসে গেলাম।আম্মার সাথে অনেকদিন পর বসে খাওয়া হচ্ছিল।আমি সাধারনত শহরের বাইরেই থাকি।কাল রাতেই এসেছি।তাই আজ আম্মা আমার প্রিয় খাবার রেঁধেছেন।খাওয়া শেষ করে শরীর এলিয়ে দিলাম বিছানায়।এত সুন্দর আবহাওয়া থাকা সত্বেও কাল রাতের ভ্রমন ক্লান্তি শরীর থেকে দূর হয়ে যায়নি।বিছানায় শুতেই ঘুমের অতল সাগরে হারিয়ে গেলাম।একে তো অনেক দিন পর নিজের বাসায় ঘুম।দ্বিতীয়ত আমি কারখানায় চাকরি করে দুপুরে ঘুমের সুযোগ পাইনা।এক ঘন্টা মতো ঘুম হতেই চিৎকার শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।বুঝতেই পারলাম আমার আম্মার চিৎকার।

আমি একলাফে ঘুম থেকে উঠে বাইরে চলে গেলাম।বাইরেগিয়ে আমার চক্ষু ছানাবড়া। বাইরে আমার আম্মার লাশ পরে আছে।আর কিছু মুখ ঢাকা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।আমি দেখেই বুঝে গেলাম এরা জঙ্গি।এদের হাতে কিছুক্ষন আগেই আমার আম্মা খুন হয়েছে।আমি পাশে পড়ে থাকা লাঠিটা উঠিয়ে নিয়েই আম্মার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে

দৌড়ে গেলাম।তখনি গুলির আওয়াজ ।আমি বুঝলাম আমিও আম্মার কাছে চলে যাচ্ছি।খুব আরাম লাগছিল।কিন্তু আমার চিন্তাকে ভুল প্রমান করে গুলিটা আমার বাম পায়ে আঘাত করলো।আমি তৎক্ষনাত বসে পড়লাম। তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছিল আমার পায়ে।কিন্তু আমি আবারো উঠে আম্মার হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইলাম।তখনই মাথার পেছনে তীব্র আঘাত অনুভব করলাম।চোখের সামনের সব ঝাপসা হয়ে গেল।।ধীরে ধীরে সব অন্ধকার হয়ে গেল।আমি ইব্রাহিম অন্ধকারের মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছি।

কতক্ষন অচেতন ছিলাম জানিনা।চোখ খুলতেই নিজেকে একটা অন্ধকার রুমে আবিস্কার করলাম।নাহ রুমটা অন্ধকার নয়।ধীরে ধীরে আলো বোঝা যাচ্ছে।হাতে ব্যাথা অনুভব করছিলাম।হাত সামনে আনতে যাবো তখনই বুঝতে পারলাম যে আমার হাত দুটোই দেয়ালের সাথে বাধা।ঘরটাতে আমি একা ছিলাম না।আরো ৫ জনকে দেখতে পেলাম আমার সাথে।এই পাচ জনই আমার পরিচিত।আমার এলাকাতেই বাসা।বুঝলাম আমার সাথেই এদের তুলে

আনা হয়েছে।এদের মাঝে আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধু আবুল কাশেমও উপস্থিত ছিল।কিন্তু সে তখনও অচেতন অবস্থায় ছিল।আমাদের এখানে কেনো তুলে আনা হয়েছে তা জানা নেই।এখানে সবাই আমরা সবার পরিচিত।কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারনে আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলছিলাম না।তখনই দরজায় খুলে গেল। কালো মুখোশ পড়া তিনজন লোক সেই ঘরে ঢুকেই আব্দুর রহমানকে তুলে নিয়ে যেতে লাগলো।আব্দুর রহমান তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জিজ্ঞাসা করতেই একজন মুখোশধারী বন্দুকের বাট দিয়ে আব্দুর রহমানের পায়ে আঘাত করলো।আঘাতটা জোরেই ছিল।কারণ, আমি স্পষ্ট আব্দুর রহমানের পায়ের হাড্ডি ভাঙার শব্দ শুনতে পেয়েছি।আব্দুর

রহমানকে নিয়ে বের হয়ে যেতেই ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।আমরা বুঝে গেলাম এরা জঙ্গি সংগঠন আল জিহাদিন।আমাদের দেশের সবচাইতে বড় জঙ্গি সংগঠন।এদের নেতার নাম খলিলুল্লাহ। আমার জানা মতে খলিলুল্লাহ প্রথমে অন্য একটা সংগঠনে ছিল।পরে সেখান থেকে এক অংশ নিয়ে সে আল জিহাদিন প্রতিষ্ঠা করে। আব্দুর রহমানকে নিয়ে যাওয়ার পাচ মিনিটের মধ্যেই মুখোশধারীরা ফিরে এল।এবার তারা সবাইকে নিয়ে যেতে এসেছে তা বোঝা গেল।কারন আমাদের বাধন খুলে দেওয়া হচ্ছিল।

আবুল কাশেম তখনও অচেতনই ছিল।তাকে ফেলে আমাদের বাকি তিন জনকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো।বের হতেই দেখি খোলা মরুভুমিতে বেশ কয়েকজন লোক, যাদের চোখগুলো বাধা ছিল এবং তারা এক লাইনে দাড়ানো।বাইরে আসতেই এক লোক আমাদেরও চোখ বেধে সেই লাইনে দাড়া করিয়ে দিল।এরপর বেশ কয়েকজন লোক আমাদের দিকে রাইফেল তাক করে গুলি বর্ষন শুরু করে।আমি চিৎকার শুনে বুঝতে পারছিলাম আমার ডান পাশ দিয়ে গুলি বর্ষন শুরু হয়েছে।আমি লাইনের সর্ববামে দাঁড়ানো ছিলাম বিধায় গুলি আমার পর্যন্ত আসতে দেরী

হচ্ছিল।একসময় আমিও আমার ডান পায়ে গুলি অনুভব করলাম।আমি তখনই নিচে শুয়ে পড়লাম।এরপর আমার চোখ খুলে দেওয়া হলো।তারা ভেবেছে আমি মৃত।কিন্তু আমি তখনও জীবিত ছিলাম আর এটা তাদের একজন বুঝতে পারলো।আমি এটা বুঝলাম আমার সাথের সবাই মৃত।মুখোশধারিদের একজন আমার কাছে এসেই চুলের মুষ্ঠি ধরে আমার মাথাটা উপরে তুলতেই বাকিরা আমার কাছে চলে এলো।আমি দেখতে পেলাম সবাই আমার দিকে ক্যামেরা ধরে আছে।

তখন কেনো যেনো আমার গত বছর কুরবানির ঈদের কথা মনে পড়ে গেল।আমিও তখন এভাবেই সেই উটের জবাই হওয়া উটের দিকে ক্যামেরা ধরে রেখেছিলাম।আমার মনে হতে লাগলো সেই উটের বদ দোয়া লেগেছে আমার।যাই হোক আমি ঘৃনা ভরে একদলা থুথু সেই মুখোশধারীর মুখে ছুড়ে মারলাম।এ দেখে বাকি জঙ্গিরা যে আমার চুল ধরেছিল তাকে উপহাস করতে লাগলো এ বলে যে সে নাকি আমার মতো বন্দির চেয়েও দুর্বল।আমি তকে

দেখে বুঝলাম সে এই উপহাসটাকে কৌতুক হিসেবে নেয় নি।সে তৎক্ষণাৎ একটা ছোট ছুরি বের করলো পকেট থেকে আর আমার ঘাড়ের কাছে ধরলো।এরপর ধীরে ধীরে আমার গলা কাটতে লাগলো।আমার প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছিল।আমি চিৎকার করতে যাবো তখন দেখলাম আমার আম্মা আমায় ডাকছেন।আমি তখন পৃথিবীর সবচাইতে শান্তি পাচ্ছিলাম।তখন সে যন্ত্রনা যেন পানি হয়ে গেল।আর আস্তে আস্তে আজরাইল (আঃ) আমার জান কবজ করে আমাকে আমার আম্মার কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিলেন।

ডাইরিটা পড়া শেষ করলো সিফাত আব্দুল্লাহ।জঙ্গি সংগঠন আল-জিহাদিনের হাতে বন্দি সে।কারাগারের এক কোনায় এই ডাইরিটা পড়েছিল।ডাইরীটা কোনো এক বন্দির ছিল।কিন্তু মৃত্যুর এ ঘটনা সে লিখলো কি করে?তখন সে ডাইরির কোনার শব্দটা খেয়াল করলো যেখানে লেখা “অশরীরির ডাইরি।”এ ঘরের সকল বন্দিই ডাইরিটা পড়েছে।সবশেষে সিফাত পড়লো।সিফাত নাইজেরিয়ায় এসেছি পর্যটক হিসেবে।সে বাংলাদেশ নামক এক দেশীর গোপালগঞ্জের বাসিন্দা।এখন সেই ছেলে বেলার কথা,সে গ্রামের কথা খুব মনে পড়ছে।কিন্তু গ্রামের কথা আর চিন্তা করতে সময় পেল না।কারন সেই মুখোশধারি এসে তাকে ও সকলকে নিয়ে গেল সেই ভয়ঙ্কর মরুভুমি পানে…..

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত