ক্ষতিপূরণ

ক্ষতিপূরণ

“যদি কহেন তো কামটা হামি করতে পারি।” পচু আনোয়ার সাহেবের দিকে এগিয়ে এল।

“তুই? না না, তোকে দিয়ে হবে না! তুই উঁচুর কাজ কোনোদিন করেছিস নাকি? রজব, ইলিয়াসরা এ কাজে পটু!”

গতকাল ঈদ থাকায় আজ স্বাভাবিক ভাবেই সাকিব, রজব, মামুদ, ইলিয়াসরা কাজে আসেনি। রিলায়েন্স কোম্পানির টাওয়ার বসানোর কাজ চলছে। সব কাজ প্রায় হয়েই গেছে। এখন একেবারে টাওয়ারের উঁচু অংশের কাজ বাকি। উঁচু অংশের কাজ সাধারণত সাকিব, রজবরাই করে থাকে। সবাইকে তো আর উঁচুর কাজ দেওয়া যায় না। মাথা ঘোরে, হাত পা কাঁপে, চোখে অন্ধকার দেখে বিপত্তি ঘটায়।

“হাঁ, করহি নাই, তোবে কাম কইর‍্যাহ কইর‍্যাহই পটু হয় বাবু! হামাকে আজ সুযোক টো দিহাই দ্যাখেন, আমি ঠিক পেরহে লিব।” হাত জোর করে বলল পচু।

“না, না। অনভিজ্ঞ লোককে দিয়ে এসব রিস্ক নিতে পারবো না।”

“সারাজনম খালি নিচু তলার কামহি করবো বাবু? উঁচু তলার কাম না কইরলে শিখবো ক্যামনে?” মুখ কাঁচুমাচু করে বলল পচু।

“বলছিস? বেশ, তুইই কর। তবে সাবধান, বুঝলি? দুবছর আগে সেলিমের কি অবস্থা হয়েছিল মনে আছে তো?”

“হাঁ, মুনে আছে! আপনি ভাইববেন না।” মনে মনে বলল ‘সেকি আর মুনে লাই! কোম্পানির কাছ থিক্যা সেলিমের পরিবার দশ লাখ ট্যাহা ক্ষতিপূরণ বাবদ পেইয়াছিল! এখুন কত্ত সুখে আছে অর বউ বেটা!’

দাঁতে দাঁত চিপে তড়বড় করে টাওয়ারের মাথায় উঠে গেল পচু। চোখে অনেক স্বপ্ন এসে ভিড় করেছে এখন…‘বেটাটার দুইটা কিডনির একটা কম সে কম পাল্টানো যাইবে। বেটা আর বউটা ভাল কইর‍্যা বাঁচবে! হামি ইটুকু তো অদের জইন্য কইর‍্যা যাচ্ছি! ইটাই সান্তনা!’

নীচ থেকে সকলের চিৎকার কানে আসছে পচুর। “এই পচু, ভাল করে ধর, শক্ত করে ধর, পা টলছে যে, পড়ে যাবি তুই!”

পচুর চোখে অন্ধকার, টলতে টলতে ভাবছে, ‘সেলিমের পরিবার দশ লাখ ট্যাহা ক্ষতিপূরণ বাবদ পেইয়্যাছিল, হামার পরিবারও দ—-শ লা—-খ—–!’

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত