স্বপ্নকন্যা

স্বপ্নকন্যা

অবুঝ দুটি প্রাণ আপন মনে বাগানে খেলা করছে।হঠাৎ একটা প্রাণ চুলে টান দিয়ে আরেকটা প্রাণকে বলে
– আমালে যে ভেংতি দিতিলি মনে আতে? একন! একন কেমন নাগে?
ঐ প্রাণটাকে দেখলে তার কোনো না কোনো ভাবে রাগাতেই হবে।সে দোষ করলেও আবার দোষ না করলেও।এটা এই প্রাণের স্বভাব।কাঁদতে কাঁদতে ঐ প্রাণটা বলে
– শয়তান তেলে, খালাপ তেলে।ভেংতি দিতিলাম বলে তাই তুলে ধলে টান দিবি? আমি দুঃখ পাইতি না?
– হি হি হি দুঃখ পাইতে দুঃখ পাইতে কি মদা কি মদা
– পতা তেলে আমালে কত্ত দিয়ে আবাল হাসে।

একটা প্রাণের নাম ফারাহ।ও কান্না করতে করতে তাওহীদের(অন্য প্রাণটার নাম) মায়ের কাছে গিয়ে বলে
– আন্তি আন্তি আপনেল তেলে আমাল তুল ধলে তান দিতে।
ফারাহ তেমন ব্যাথা পায়নি।কিন্তু তাওহীদ কিছু করলে সাথে সাথে তার মায়ের কাছে গিয়ে বিচার দিবে।এটা তার স্বভাব।তাদের বাসা পাশাপাশি হওয়াতে, তারা দুজন সব সময় লেগে থাকে।আবার তাদের একটা মিল ছিল, দু’জনেই ঠিক করে অক্ষর বলতে পারতো না।তাওহীদের মা রাগে বলেন।
– কিহ! তাওহীদ তোমার চুলে ধরে টান দিয়েছে?
– হ্যাঁ আন্তি অনেক ধুলে টান দিতে।
ফারাহর কথা শুনে তিনি আরও রেগে যান।
– তাওহীদ! এই তাওহীদ! একটু শুনে যা তো।

তাওহীদ কাঁদতে কাঁদতে আসে।ওর কান্না দেখে সবাই বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে।ফারাহর মা বলে
– তাওহীদ বাবা, তোমার কি হয়েছে?
– আন্তি!
– বল কি হয়েছে?
– আপনেল মেয়ে আমাল হাতে কামুল দিতে।
– কিহ! ফারাহ তোমার হাতে কামুড় দিয়েছে?
– হ্যা আন্তি, এই যে দেখেন।
উনি দেখেন যে, তাওহীদের হাতে কামুড়ের দাগ লেগে আছে।ফারাহ মিথ্যা কথা শুনে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে।ফারাহর মা রেগে গিয়ে বলেন
.
– ফারাহ! এসব কি শুনছি?
– মা! ও মিত্তা কথা বলতে।তুমি তাল কতা বিত্তাত কলো না।
– না তুই মিথ্যা কথা বলছিস
তাওহীদের মা বলেন
– ভাবী ফারাহ সত্য কথা বলছে।তাওহীদ বাঁচার জন্য মিথ্যার অযুহাত নিয়েছে।
তাদের কথার মাঝে তাওহীদ পালিয়ে যায়।
– তাওহীদ! তাওহীদ!
– আন্তি ও তলে গেতে গা।
কখনও সত্য বলে।আবার কখনও মিথ্যা বলে।এভাবে তাওহীদ প্রতিবার বিভিন্ন বাহানা ধরে নিজেকে বাঁচাবে।

স্বপ্নটা দেখে ফারাহ ঘুমের মাঝেই হেসে ওঠে।আঁখি দুটি মেলে দেখে, রাতের আকাশে চাঁদ ও তাঁরারা লুকোচুরি খেলছে।হৃদয়ের গহীনে অন্যরকম এক অনুভূতি জাগে।ফারাহ তাওহীদকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমের অতলে হারিয়ে যায়।
.
তাওহীদ স্বপ্ন দেখছে, স্বপ্নের মাঝেই তার হৃদয়টা হাহাকার করছে।হঠাৎ চোখ দুটো মেলে দেখে, রুমটা অন্ধকারে ডুবে আছে।জানালা দিয়ে রাতের আকাশে তাকিয়ে দেখে, চাঁদটাকে একবার মেঘে ঢেকে ফেলছে।চাঁদটা একবার মেঘের ছায়া থেকে বেড়িয়ে আসছে।স্বপ্নে দেখা মেয়েটার কথা ভাবতে থাকে।হঠাৎ ফারাহর কথা মনে হতেই; তার বুকের মাঝে একটা কষ্ট অনুভব করে।এক মনে মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আবার ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যেতে থাকে।
.
দূরের মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসে।তাওহীদ ও ‌ফারাহ ঘুম থেকে ওঠে ওযু করে নামাজ পড়ে।তারপর কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকে।
.
পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠে।পাখিরা কলরব করতে থাকে।ফারাহ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পাখিরার কলরব শুনতে থাকে, রাতের স্বপ্নটার কথা ভাবতে থাকে।স্বপ্নের কথাগুলো মনে হতেই লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে।মনে মনে বলে, আমি কি খুব ঝগড়াটে ছিলাম? কিন্তু আমি তো তাকে ছাড়া থাকতে পারতাম না।আবার দেখা হলে ঝগড়া না করে পারতাম না।আমি এমনটা কেন করতাম? “আমালে যে ভেংতি দিতিলি মনে আতে” এই কথাটা মনে হতেই মুখে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।
.
তাওহীদ ছাদে দাঁড়িয়ে চা খেতে থাকে, সকালের সূর্য ওঠা দেখতে থাকে।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে, কে এই মেয়ে? প্রতিদিন স্বপ্নে কেন আসে? আমাকে ঘুম ছাড়া কেন করে? কেন আমাকে তার মুখটা দেখতে দেয় না? মোম বাতির আলোতে কেন মুখটা লুকিয়ে রাখে? অবচেতন মনে আরও না না রকম কথা বলে যেতে থাকে।

তাওহীদ ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে তার মাকে বলে
– আম্মা ভার্সিটিতে যাব, তাড়াতাড়ি নাস্তা দিয়ে যাও।
মাওয়া তার ভাইকে রাগানোর জন্য নকল করে বলে
– আম্মা ভার্সিটিতে যাব, তাড়াতাড়ি নাস্তা দিয়ে যাও।
.
– তুই আমাকে নকল করে বললি কেন?
ভাইকে আরও রাগানোর জন্য বলে
– তুই আমাকে নকল করলি কেন?
– তুই আবার নকল করে কথা বলছিস?
– আবার নকল করে কথা বলছিস?
.
তাদের মা রান্নাঘর থেকে বলে
– সকাল সকাল তোরা আবার শুরু করে দিলি? এতো বড় হয়েছিস তবুও তোরা লেগেই থাকিস।তোরা কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না?
মায়ের কথা শুনে দু’জন চুপ মেরে যায়।তারপর একজন আর একজনকে মুখ ভেঙ্গাতে থাকে।

আজ ফারাহকে এক অদ্ভুদ ভাললাগা ঘিরে ধরেছে।এমনটা তার কেন হচ্ছে? সে জানে না।খুশি মনে সকালের নাস্তা সেরে, ব্যাগ নিয়ে বের হতে হতে মাকে বলে
– মা! ক্লাসে যাচ্ছি দরজাটা বন্ধ করে দাও।
তার মা রান্নাঘর থেকে বলে
– মা দিনকাল ভালো না।সাবধানে যাবি সাবধানে আসবি।
– ঠিক আছে মা তুমি চিন্তা করো না।
.
ফারাহ বাসা থেকে বের হতেই; তাওহীদ ও মাওয়াকে দেখে।সে তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়।তাওহীদ রাগে-অভিমানে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।ওর এমন আচরণে ফারাহ অনেক কষ্ট পায়।ফারাহ মাওয়াকে নিয়ে বিষন্ন মনে ভার্সিটিতে যেতে থাকে।

ঝগড়া-ঝাটি, মান-অভিমান, আবার সব কিছু ভুলে কাছে আসা।ছোট থেকে ধীরে ধীরে এভাবেই তাদের বেড়ে ওঠা।তাদের দিন গুলি কেমন যেন স্বপ্নের মতো চলে যাচ্ছিল।এর মাঝে ফারাহ ৬ বছর বয়স থেকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে পর্দা করা শুরু করে।
.
বাবা-মা ছাড়া অন্য কারো সামনে পর্দা ছাড়া বের হতো না।সব সময় নাক-মুখ-চোখ নেকাপ দিয়ে ঢেকে রাখতো।এই পর্দা নিয়ে তাওহীদের সাথে সময়ে অসময়ে ঝগড়া হতো।আবার দিন শেষে তাওহীদ ক্ষমা চেয়ে নিত।কি করবে? ওর সাথে কথা না বলে যে থাকতে পারতো না।

তাওহীদ ক্লাসে এসে চুপচাপ বসে থাকে।আড় চোখে খোঁজ রাখে, ফারাহ এসেছে কিনা।সে যতই অভিমান করে থাকুক না কেন ফারাহর খেয়াল রাখবেই।কেন তার খেয়াল রাখে? সে জানে না।
.
ফারাহ ক্লাসে ঢুকে দেখে, তাওহীদ চুপচাপ বসে কি যেন ভাবছে।হৃদয়ে কষ্ট নিয়ে বান্ধবীদের সাথে গিয়ে বসে।আজ কতদিন হলো তার সাথে কথা বলে না।একটু পর পর আড় চোখে তাওহীদকে দেখছে, মনে মনে কেঁদে চলেছে।

ক্লাস শেষে প্রত্যেকে ক্যাম্পাসে গিয়ে বসে।তাওহীদ আনমনে স্বপ্ন কন্যার কথা ভেবে চলেছে।তার এক বন্ধু বলে
– তাওহীদ চুপচাপ কি ভাবছিস?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাওহীদ বলে
– না, কিছু না।
– কিছু না? নাকি অন্য কোনো কাহিনী?
মুচকি হেসে বলে
– কোনো কাহিনী নেই।
.
ফারাহ উদাস মনে দূর আকাশে তাকিয়ে থাকে।তার মনমরা হয়ে থাকা দেখে, তার এক বান্ধবী বলে
– কিরে ফারাহ! তোর কি হয়েছে? কখন থেকে দেখছি- কেমন যেন মনমরা হয়ে আছিস।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
– না, কিছু না।এমনেতেই কিছু ভালো লাগছে না।
– কোন সমস্যা?
– নাহ, কিছু হয়নি।হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে গেল তাই ঐটা নিয়ে ভাবছিলাম।
.
আড় চোখে একজন আর একজনকে দেখে যাচ্ছে।কেউ কিছু বলতে পারছে না।কাউকে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না।মনে মনে দুজনেই কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু ভালো থাকার মিথ্যা অভিনয় করে যাচ্ছে।অল্পসল্প গল্প হতে থাকে, একটু একটু করে সময় বয়ে যেতে থাকে।

তাওহীদ আকাশে মেঘের ভেলা দেখছে।তার হৃদয়ের আকাশেও মেঘের ভেলা উড়ছে।বিষন্ন মনে বলতে থাকে, ফারাহ কিভাবে পারল আমার সাথে এমনটা করতে? কিভাবে পারল আমাকে থাপ্পড় দিতে? আমি তো তার কাছে বেশী কিছু চাইনি, শুধু একটিবার তার মুখটা দেখতে চেয়েছিলাম।এটাই আমার অপরাধ ছিল? ঠিক আছে।দেখব না তোর মুখ, বলব না তোর সাথে কথা, তাই বলে কি আমি চলতে পারব না? অবশ্যই পারব এবং পারছিও।আজ কতদিন হলো নিজ থেকে দেখা করি না, কথা বলি না।কই আমার তো কিছু হয়নি।আমি ঠিক চলতে পারছি।কখন তার চোখের কোণে পানি চলে আসে, সে বুঝতেই পারেনি।তাওহীদ আপন মনে মেঘদের ভেলার দিকে তাকিয়েই থাকে।
.
ফারাহ মাগরিবের নামাজ পড়ে ছাঁদে আসে।আকাশ পানে তাকিয়ে দেখে, মেঘেরা চাঁদটাকে ঘিরে রেখেছে।মনে মনে বলতে থাকে, তাওহীদ আমি জানি তুই আমার সাথে অভিমান করে আছিস।কিন্তু আমি কি করব বল? আমার তো কিছু করার নেই।আমি মানি তুই আমার ভালো বন্ধু তাই বলে আমি তোকে মুখ দেখাতে পারব না।সে অধিকার আমার নেই।কারণ আমি যে আমার ধর্ম মেনে চলি।হঠাৎ তার ঐদিনের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়।
.
ফারাহর রুমে এসে তাওহীদ বলে
– ফারাহ তুই আমার ছোট কালের বন্ধু।আমি তোর ছোট কালের বন্ধু।তাই না?
– হ্যা, তাই তো। আমরা ছোট কালের বন্ধু।
– ফারাহ কত বছর ধরে তোর মুখটা দেখতে পারি না।একবার তোর মুখটা দেখতে দে না!
– না, আমি পারব না।
– কেন তুই পারবি না।
– এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না।
– প্লিজ ফারাহ
– আচ্ছা তোর কি এটা ছাড়া আর কোনো কথা নেই?
– প্লিজ ফারাহ শুধু একবার দেখতে দে!
ফারাহর নেকাপ ধরে টান দিতেই
– ঠাসসসসস(থাপ্পড় মারে)
আজ থেকে তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।সাবধান করে দিচ্ছি- আমার সাথে কখনও দেখা বা কথা বলার চেষ্টাও করবি না।
– তাওহীদ কোনো কথা না বলে একবার তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসে।
– কথাগুলো বলার পর তার হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে ওঠে।চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে।সে এমনটা করতে চায়নি, কিন্তু না করেও পারেনি।
ওর কথামত তাওহীদ নিজ থেকে দেখা বা কথা বলার চেষ্টা আর করেনি।পরে ফারাহ রাগ ভাংগানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু সে পারেনি।কখন চোখের কোণে নোনা জল জমে ফারাহ টেরও পায়নি।ওর ঐদিনের হাসিটা মনে হতেই তার বুকের ভিতরটা কেমন করে যেন ওঠে।

– তাওহীদ! তাওহীদ! চোখ মেলে দেখো আমি এসেছি।দুটো আঁখি মেলে দেখো
– ———-
– তাওহীদ! এই তাওহীদ! দেখো তোমার স্বপ্নকন্যা এসেছে।
সাথে সাথে তাওহীদ চোখ খুলে বলে
– আমার স্বপ্নকন্যা!
তাওহীদ তাকিয়ে দেখে, স্বপ্নকন্যা তার দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখ দুটো দেখতে পারছে, কিন্তু মুখটা দেখতে পারছে না।
– স্বপ্নকন্যা তোমার চোখ দেখতে পারছি, কিন্তু তোমার মুখটা কেন দেখতে পারছি না?
মুচকি হেসে বলে
– একদিনে সব কিছু দেখলে যে সহ্য করতে পারবে না, তাই দেখতে পারছ না।
– স্বপ্নকন্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমার সব কিছু সহ্য করতে পারব আমি।
আস্তে আস্তে মুখের পর্দাটা সরিয়ে নেয়।তাওহীদ মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকে।
– আচ্ছা তুমি আমার সাথে এতোদিন লুকোচুরি করলে কেন? আমার কষ্ট হয়নি?
– আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি বুঝতে পারিনি।
দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে, ভালোবাসার গভীরতায় হারাতে থাকে।
.
স্বপ্নটা দেখে তাওহীদ লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে।রাতের আকাশে তাকিয়ে দেখে, তাঁরারা সারা আকাশ জুড়ে লুকোচুরি খেলছে।দৃশ্যটা দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়।আবার ধীরে ধীরে ঘুমের সাগরে ডুবে যায়।
.
ফারাহ অপলক দৃষ্টিতে ইট পাথরের শহরটার দিকে তাকিয়ে আছে।আজও সে স্বপ্ন দেখেছে।পুরনো স্মৃতিগুলো মনের ক্যানভাসে উড়ে বেড়াচ্ছে।ফারাহ নিজে নিজেই হেসে যাচ্ছে।হঠাৎ তাওহীদের এড়িয়ে চলাটা মনে হতেই; তার বুকের ভিতরটায় একটা চাপা কষ্ট অনুভব করে।মলিন মুখে রাতের শহরটার দিকে তাকিয়েই থাকে।

তাওহীদ খুশি মনে নাস্তা করছে।মাওয়া চেয়ারে বসতে বসতে বলে
– ভাইয়া আজ সকাল সকাল মুডটা অন্যরকম লাগছে, কাহিনী কি?
– স্বপ্নের মাঝে তোর ভাবীকে পেয়ে গেছি।আজ বলেছে আমার সাথে দেখা করবে।
– না, এ হতে পারে না।
– কেন?
– কারণ আমরা একজনকে ঠিক করে রেখেছি।
– কে সে?
– সময় হলেই জানতে পারবে।
– ওকে।সময় আসতে থাকুক আমিও চলতে থাকি।
ভায়ের ভাব আর কথা শুনে, মাওয়া রাগ করে নাস্তা না করে চলে যায়।
.
ফারাহ বিষন্ন মনে বেলকনিতে বসে আছে।ফারাহকে ডাকতে ডাকতে বেলকনিতে আসে।
– ফারাহ আপু
– মাওয়া কি হয়েছে?
– ভাইয়া না এক মেয়ের প্রেমে পরেছে।
– কিহ!
– হ্যা, ঐ মেয়ের সাথে আজ নাকি দেখাও করবে।
কথাটা শুনে ফারাহর মুখটা মলিন হয়ে যায়।

তাওহীদ পার্কে স্বপ্নকন্যার জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু ওর আসার কোনো নাম নেই।হঠাৎ তার ফোনটা বেজে ওঠে।
– আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?
– ওলাইকুম আসসালাম।আমি স্বপ্নকন্যা বলছি।
– স্বপ্নকন্যা আমি তোমার কথামত জায়গায় অপেক্ষা করছি।তুমি কোথায়?
– আমি খুবই দুঃখিত।আমি আজ আসতে পারব না।
– কেন আসতে পারবে না?
– হঠাৎ আম্মু অসুস্থ হয়ে পরেছে।
– ঠিক আছে।তাহলে আসার প্রয়োজন নেই।
– তুমি কষ্ট পেয়ো না।অন্য একদিন আমাদের দেখা হবে।
তাওহীদ একা একা অন্য কাপলদের প্রেম-কাহিনী দেখে যাচ্ছে।তার মনে একটু একটু করে এক টুকরো মেঘ জমা হচ্ছে।

তাওহীদ মাগরিবের নামাজ পড়ে ছাদে আসে।আধো আলো আধো অন্ধকার আচ্ছন্ন ইট পাথরের শহরটার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে বলতে থাকে, বিচিত্র পৃথিবীর বিচিত্র নারী তাদেরকে চিনা বড় দায়।
.
ফারাহও তাদের ছাদে আসে।এসে দেখে, তাওহীদ গভীর ধ্যানে কি যেন ভাবছে।তাওহীদ এক দৃষ্টিতে রাতের তাঁরারার দিকে তাকিয়ে থাকে।ফারাহ অপলক দৃষ্টিতে তাওহীদকে দেখে যেতে থাকে।
.
সময় তার নির্দিষ্ট গতিতে বয়ে যেতে থাকে।তাওহীদ ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে।সময়ে অসময়ে, বাসায়, ভার্সিটিতে কিংবা যেকোনো স্থানে ফোনে পুটুর পুটুর করে কথা বলে।কখনও হাসে, কখনও রং তামাশায় মেতে উঠে।আর ফারাহ! এসব দেখে জ্বলে।তার হৃদয়ের মাঝে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করে।তাওহীদকে ভাল লাগার জন্য নাকি ভালোবাসার জন্য তার এমন অনুভূতি কেন হয়? সে জানে না।
.
সময় যেতে থাকে, দিন যেতে থাকে, স্বপ্নকন্যা বদলাতে থাকে।ঠিকমত স্বপ্নে আসে না, কথা বলে না, কিছু জানতে চায়লে উত্তর দেয় না।তার সাথে খারাপ আচরণ করে।তাওহীদ বিরহে জ্বলে পুড়ে মরে।ফারাহ আড়াল থেকে তার এই অবস্থা দেখে, আরও কষ্ট পেতে থাকে।তার বুকের মাঝে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করে।তাওহীদের চোখের কোণে পানি দেখে।তার চোখের কোণেও পানি আসে।
.
তাওহীদ ঠিকমত রুম থেকে বের হয় না, কারো সাথে কথা বলে না।ক্লাসে যায় না।তাওহীদের মা আরও অনেক পরিবর্তন ওর মাঝে দেখতে পায়।তিনি চিন্তা করে পান না।হঠাৎ ছেলে এমন কেন হল?

শেষ বিকেলের আলোতে, তাওহীদের বাবা এক মনে পত্রিকা পড়ছেন।তাওহীদের মা দুকাপ চা নিয়ে স্বামীর পাশে বসেন।দুজন চুপচাপ চা খেয়ে যাচ্ছে।চায়ে চুমুক দিতে দিতে তাওহীদের মা বলেন
.
– ছেলেটা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
– তোমার ছেলের আবার কি হয়েছে?
– বুঝতে পারছি না কি হয়েছে।সময় যাচ্ছে আর কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে।
.
মাওয়া ভাইকে নিয়ে বাবা-মার সাথে কথা বলতে এসেছিল।আড়াল থেকে তারা কি বলে চুপচাপ শুনে যেতে থাকে।
.
– ছেলের পড়াশুনা তো শেষ পর্যায়, তাহলে বিয়ে দিয়ে দাও।
– আমিও সেটাই ভাবছিলাম।ফারাহর সাথে বিয়েটা দিলে কেমন হয়? বর্তমান সময়ে এমন মেয়ে কমেই আছে।আপনার ছেলে দু’দিনেই ঠিক হয়ে যাবে।
– ঠিক বলেছ।দুইদিন পরে বিয়ে না হয়ে দুইদিন আগে হবে।আমরা বরং তাদের সাথে কথা বলি।
.
মাওয়া বাবা-মার কথা শুনে নিজের রুমে আসে।তার কষ্ট করতে হয়নি।এমনেতেই সব ঠিক হয়ে গেল।মাওয়া অপলক দৃষ্টিতে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে বলে, আমাকে বউ সাজালে কেমন দেখাবে? আমার স্বামী কেমন হবে? আমাকে কি নামে ডাকবে? স্বামীর পরিবারের লোকেরা আমাকে কিভাবে বরণ করবে? এটা সেটা নিয়ে কল্পনার জগতে হারাতে থাকে।হঠাৎ কল্পনা থেকে ফিরে আসলে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে।

ফারাহ পড়াশুনা করছে।এমন সময় তার বাবা-মা রুমে আসে।সে তাদেরকে দেখে একটু অবাক ও চমকে যায়।সে বলে
– বাবা-মা তোমরা? কিছু বলবে?
– হ্যা মা।
– তাহলে আমাকে ডাকলেই পারতে।
– ফারাহ মা আমরা তোকে না বলে একটা কাজ করে ফেলেছি।জানি না ঠিক করেছি কিনা।
– আমাকে বলেই করো আর না বলেই করো।আমি জানি যেটা করবে সেটা আমার ভালোর জন্যই করবে।
– আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি।যদি তোর কোনো চিনা জানা বা পছন্দ থাকে।তাহলে আমাদেরকে বলতে পারিস।আমরা এই বিয়ে ভেঙ্গে দিব।
– না বাবা আমার কোনো চিনা-জানা বা পছন্দের ছেলে নেই(কথাটা বলতে তার গলাটা আটকে আসে)
– আমরা তাওহীদের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছি।চিনা জানা আর কত ভালো ছেলে।আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখেনি।কোনো বাজে নেশা করতেও দেখেনি।
– ফারাহ মনে মনে বলে, কত ভাল ছেলে আমার দেখাই আছে।স্বপ্নে স্বপ্ন কন্যার সাথে প্রেম প্রেম খেলা করে।আবার তোমরা বলছ ভালো ছেলে? ওর মতো লুচ্চা ছেলে কমেই আছে।
– আগামী শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।তোর বান্ধবীদরর বলে রাখিস।
– ঠিক আছে বাবা।
ওর বাবা-মা রুম থেকে চলে যাওয়ার পর, ফারাহ রাগে-অভিমানে, খুশিতে কেমন যেন হয়ে যায়।সে ঠিক বুঝতে পারছে না।মনে একবার তাওহীদের প্রতি রাগ হচ্ছে, আর একবার খুশির আনন্দ বয়ে যাচ্ছে।হৃদয়ের আকাশে তাওহীদকে নিয়ে ভাসতে থাকে।

প্রত্যেকে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।তাওহীদ আরও চুপচাপ খাচ্ছে।কারণ তার বাবা যে পাশে আছে।তা না হলে ভাই-বোন মিলে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে রাখত।খেতে খেতে তাওহীদের বাবা বলেন
– তাওহীদ তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
– জি বাবা বলেন।
– আমরা তোমাকে না জানিয়েই তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।
– কিন্তু বাবা আমি এখনেই বিয়ে করতে পারব না।আর আমার তো এখনও পড়াশুনাই শেষ হয়নি।
– এসব নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।তারা তোমাকে এভাবেই মেয়ে দিবে।
– কিন্তু বাবা!
– আর কোনো কিন্তু শোনতে চাই না।
– তাওহীদ অসহায় দৃষ্টিতে মা ও বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তাওহীদের অবস্থা দেখে, মাওয়া মনে মনে হেসে মরছে।

বিয়ে বাড়ি, প্রত্যেকের মনে অন্যরকম এক খুশি বয়ে যাচ্ছে।শুধু পাত্র আর পাত্রী এর মনে খুশি নেই।তাদের মনের আকাশে এক টুকরো মেঘ জমে আছে।হৈ চৈ, হাসি-আনন্দ এর মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
.
বাসর ঘর, ফারাহ তাওহীদের জন্য অপেক্ষা করছে।তাওহীদ এক দৃষ্টিতে রাতের আকাশে তাকিয়ে আছে।আজ স্বপ্নকন্যার কথা তার খুব মনে পড়ছে।স্বপ্নকন্যা তাকে এভাবে ঠকাবে ভাবতে পারেনি।ঐদিনের পর কতবার ফোন করেছে, কিন্তু ফোন খোলা পায়নি।অনেকবার বাড়ির ঠিকানাও জানতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটাও বলেনি।তাহলে তাকে কে দেখা দিত? তাকে কে ফোন করত? তার সাথে কে কথা বলত? তাহলে স্বপ্নকন্যা কে ছিল?
.
ফারাহকে বিয়ে করতে চায়নি।কারণ যে তাকে এতো কষ্ট দিয়েছে, তাকে কি করে বিয়ে করে সে? কিন্তু বাবা-মার জন্য না করতে পারেনি।তাওহীদ রুমে ডুকে জানালার গ্রিল ধরে ইট পাথরের শহরটার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারাহ চুপচাপ তাওহীদের ভাব দেখে যাচ্ছে।অল্ল-অল্প করে সময় বয়ে যেতে থাকে।ফারাহ রাগে-অভিমানে তাওহীদের কাছে আসে।তারপর সে বলে
– কি ব্যাপার! তুই এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন?
– ———
– আমি কি কিছু জানতে চেয়েছি?
– —————
– তোর এতো অভিমান কেন?
– ————
কথা বলে না দেখে রাগ করে খাটে এসে বসে থাকে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তাওহীদের হাবভাব দেখতে থাকে।এই রাগের মাঝেও অজানা এক সুখ তাকে ঘিরে ধরেছে।হৃদয়ের মাঝে এক শান্তি অনুভব করছে।অনেক্ষণ পর তাওহীদ খাটে আসে।তারপর মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখে।ফারাহ বলে
– মানুষ বিয়ে করলে বউয়ের মুখ দেখতে পাগল হয়ে পরে।আজ এমন এক ছেলেকে দেখছি যে
ফারাহ কথা শেষ করতে পারেনি তার আগেই তাওহীদ বলে
– কে আপনি? আপনি আমার বউ হন? তিনবার কবুল বললেই বউ হয়ে যায়?
হঠাৎ এরকম কথা শুনে চমকে ওঠে।তাদের মাঝে কিছু হয়নি ফারাহ এমন ভাবে বলে
– তোকে কিছু বলতেও হবে না, মানতেও হবে না।শুধু একবার আমার দিকে তাকা।
– আমার তাকানোতে কারো আসবে না, যাবেও না।
মুখটা ধরে বলে
– দয়া করে একবার আমার দিকে তাকা।
– হাতটা সরা
– পারব না।
– হাতটা সরা বলছি
– না, পারব না।যতোক্ষণ তাকাবিনা, ততোক্ষণ ছাড়ব না।
– ঠাসসসসসস
থাপ্পড় দিয়ে তাওহীদ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।ফারাহ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর আড় চোখে ফারাহর দিকে তাকিয়ে চমকে যায়।সে কাকে দেখছে? এটা কিভাবে সম্ভব? স্বপ্নকন্যা এখানে! কিন্তু কিভাবে?
ভেজা ভেজা চোখে ফারাহ তাকিয়ে আছে।মনে মনে বলে
– খারাপ ছেলে, বদ ছেলে, বজ্জাদ ছেলে বাসর ঘরে বউকে কেউ মারে?
মনে মনে তাওহীদ বলে
– খারাপ মেয়ে, আমার স্বপ্নের মাঝে আসতি।বলা নেই কওয়া নেই বউ সেজে বসে থাকবি? আজ তোকে মেরেই ফেলব আমি।
কল্পনা থেকে ফিরে আসতেই ফারাহ দেখে, তাওহীদ কত দিনের অতৃপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে।তার হৃদয়ের মাঝে সুখের শীতল বাতাস বয়ে যায়।আনন্দে তার চোখে পানি চলে আসে।হাসি মুখে ভেজা চোখে ফারাহ বলে
– এই যে এভাবে তাকিয়ে থাকলে নজর লাগবে
.
তাওহীদ লজ্জা পেয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই।
কান্না সুরে ফারাহ বলে
– আমি বলেছি বলেই চোখ ফিরিয়ে নিবি? এই তুই এমন কেন রে? এই তাওহীদ একটু কাছে টেনে নিবি না? ভালোবাসার কথা বলবি না? আমাকে একটু ভালোবাসা দিবি না? ঐ দিনের কথার জন্য এভাবে এতদিন কষ্ট দিলি? আমিও যে প্রতিটা মুহূর্ত কষ্ট পেয়েছি একবারও বুঝলি না? তোরা ছেলেরা মেয়েদের মন কেন বুঝতে চাস না?
তাওহীদ কিছু বলছে না, ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর চোখ দুটো মুছে কপালে ভালোবাসার পরশ আঁকে।তারপর পরম যত্মে ফারাহকে বুকে টেনে নেয়।তাওহীদ কানে কানে বলতে থাকে

তোমার হৃদয়ে বাস করি তুমি বোঝনা
আমার মনে বসত কর তুমি জানোনা
হৃদয়ে হৃদয়ে কত কথা বলি তুমি বোঝনা
মনে মনে কত স্বপ্ন আঁকি তুমি জানোনা
তুমি যে আমার প্রথম প্রেম প্রথম ভালোবাসা
তুমি যে আমার স্বপ্নে দেখা প্রথম স্বপ্নকন্যা
কেন বোঝনা কেন বোঝনা তোমায় কত আমি ভালোবাসি।
কেন বোঝনা কেন বোঝনা আমার বুকে তোমার ছবি
তাওহীদ বলছে, ফারাহ নিরব শ্রোতা হয়ে শুনে যাচ্ছে।তার মনের ভিতর শীতল হাওয়া বইছে।ফারাহকে আবার বলে
.
– ফারাহ তোকে আমি ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।ভালোবাসি ছাড়া বলব না তোকে কিছু আমি।তুই আমার স্বপ্নকন্যা তুই আমার সব।
ফারাহ একটু নড়ে তাওহীদের বুকে তার মুখটা আরও লুকায়।

জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ফারাহর চোখে মুখে এসে পড়ে।তাওহীদ মুগ্ধ নয়নে ফারাহর দিকে তাকিয়ে আছে।ফারাহ চুপচাপ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
– এমন করে কি দেখছিস?
– আমার স্বপ্নকন্যাকে।
.
– তুই আমালে ভালোবাতাল কতা কইতিনা(চুল ধরে)
– না কইতাম না।তুই এমন কতা আলও কবি ক(কান ধরে)
– তুই ক আলও এমন কলে না কলবি(চুলে টান দিয়ে)
– তুল তাল কইতাতি না তাললে তল খবল আতে(কাঁদো কাঁদো
সরে)
– না তাললে কি কলবি কল(আরও শক্ত করে ধরে)
– আমাল লাগতাতে তাল কইতাতি(কেঁদে কেঁদে)
– আগে তুই আমাল কান তাল
– না আগে তুই আমাল তুল তাল পঁতা তেলা
– কি আমি পঁতা তেলা?(আরও শক্ত করে চুল ধরে)
– না না তুই ভালা তেলা।আমি তোলে ভালোবাতি ভালো তেলা।
– হি হি হি লক্ষী মেয়েল মতো কতা।আমিও তোলে ভালোবাতি।
টিভি দেখতে দেখতে এতই পেঁকেছিল।
.
কল্পনা থেকে ফিরে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে, দু’জন চোখে চোখ রেখে হাজারও কথা বলে যেতে থাকে।
লিখাঃ MD Mahmudur Rahman Tauhid

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত