নদীর পাড়ে

নদীর পাড়ে

পূবাইল বাস স্টপে দাড়িয়ে আছি। একটা বাসও পাচ্ছি না। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার উপর বাজে। আজ বাসায় যাওয়াটা খুব প্রয়োজন। আসলে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরীর এই একটাই জ্বালা। বাসায় আজ ছোট বোনের গায়ে হলুদ। নিতু আমার বোন হয়ত আমার উপর অনেক রাগ করে আছে। কিন্তু কিভাবে বুঝাই তার ভাই যে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরী করে। এটা কোন গল্পের মত জীবন নয় যে চাইলেই চাকরী থেকে ছুটি পাওয়া যাবে।

অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে, আজ অফিস শেষ করেই বাসার জন্য বেড়িয়ে পরলাম। কিন্তু রাস্তার জ্যামের কারনে পূবাইল আসতেই আমার সাড়ে ১১ টা বেজেঁ গেছে।এই সময়টায় বাস না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর একটা সি এন জির দর্শন পেলাম কিন্তু সমস্যা হলো এটা নাকি কালীগঞ্জ পর্যন্ত যাবে। যাই হোক, কালীগঞ্জ গিয়ে নদী পার হয়ে সি এন জি নিয়ে সোজা বাসায় চলে যাবো, এই চিন্তা করে সি এন জি তে উঠে বসলাম।
সি এন জি চালকের সাথে কথা বলে বুঝলাম ওনার বাসা কালীগঞ্জ তাই যাচ্ছে । প্রায় ১ ঘন্টা পর কালীগঞ্জ নদীর পাড়ে চলে আসলাম। গাড়ী ড্রাইবারকে টাকা দিয়ে নদীর পাড়ে গেলাম। এখন নদীটা পার হতে পারলেই অপর পাশ থেকে গাড়ী নিয়ে নরসিংদী চলে যাবো।

তবে সমস্যা হলো, সব নৌকা বন্ধ। কারন রাত ১২টার পর কেউ নদী পার হতে আসে না। এমনি অমাবস্যার রাত মনে হয়, তার উপর হালকা বাতাসটা নদীর কিনারা গুলোকে ভয়ানক রূপ দিচ্ছে। মনের ভিতর একটা ভয় চলে আসল। কালীগঞ্জের পাশেই নাগরিতে খ্রিস্টানদের গির্জা আর তার পাশেই নাকি মানুষ দাফন করা হয়, যদিও আমি এটা শুনেছি তবে এখন মনে পড়তেই বুকটা কেপেঁ উঠলো। এদিকে সময় এখন ১৫ মিনিট কম ১ টা বেজেঁ গেছে।

সাহস করে একটা নৌকার বাধঁন খুলে উঠে দাড়ালাম। নদীটা পাড় হলে ওই পাশে নৌকাটা বেধেঁ চলে যাবো। প্রথমে বাশ দিয়ে কিনারা থেকে নৌকাটাকে সরিয়ে সামনে নিয়ে গেলাম। এবার বৈঠা দিয়ে কোন রকমে এলোপাথাড়ি এগিয়ে চলেছে । হঠাৎ মনে হলো নৌকায় কেউ বসে আছে। নৌকায় মাছ ধরার জাল মনে করলেও কেউ যেন সোয়া থেকে উঠে বসলো আর মাথা নিচু করে গুনগুন করছে। আমি যদিও ভীতু তবু সাহস করে প্রশ্ন করলাম…
— কে? কে আপনি?

কোন জবাব দিচ্ছে না? ভয়টা ক্রমশ যেন বেড়েই চলেছে। যদিও বৈঠা চালাচ্ছি ততই মনে হচ্ছে নৌকা চলছে না,এক জায়গাতে যেন আটকে রয়েছে। আমি সাতাঁ পারি না যে লাফ দিয়ে নদী পার হয়ে যাবো।আর এদিকে নৌকা কাজ করছে না। হঠাৎ কালো চাদরে মানুষটা বলল…
— ভয় করছে না তোমার?এত রাতে একা এই নদীতে কি করো?

একটা রহস্যময় মেয়ে কন্ঠ , আমি কথাটা শুনে থমকে গেলাম। আমার হাত পা যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমার মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

আমি মেয়েটাকে খেয়াল করতে পারছি না কারন অমাবস্যা রাত আর আমার ভয়। আমি কথা বলতেও বার বার হোচট খাচ্ছিলাম। মনের মাঝে একটা ভয় কাজ করছে আর সেটা হলো আজ হয়ত আমার বাড়ি ফেরা হবে না। মরে গেলে যাবো এটা ভেবে জবাব দিলাম…
— আপনি কে?
— আমি কে? বললে বুঝি চিনবে।
— তা ঠিক, তবে আপনি আমার নৌকায় কি করেন?
— তোমার নৌকায় আমি উঠেছি নাকি আমার নৌকায় তুমি।
— মানে?
— আমি তো কয়েক বছর যাবত এই নৌকাতে থাকি।
— আপনার কথা কিছুই আমার মাথায় ডুকছে না।
— সবই ডুকবে। এবার তারাতারি নৌকা পাড়ে নিয়ে চলো। তোমাকে আমার কিছু কাজ করে দিতে হবে?
যেহেতু পাড়ে নৌকা নেওয়ার কথা বলল,তাই আমি খুব তারাতারি নৌকা চালাতে শুরু করলাম আর এখন নৌকাও চলছে। আমি ভাবলাম পাড়ে নেমেই একটা দৌড় দিবো। কিন্তু পাড়ে নৌকা আসতেই যখন আমি ব্যাগটা কাধেঁ নিয়ে দৌড় দিতে যাবো তখনই মনে হলো আমি সামনে যেতেই পারছি না। তখন কালো ছায়াটা বলে উঠলো…
— চেষ্টা করে লাভ নেই। আমি যা বলছি তা করো নয়ত এখন থেকে তোমার যাওয়া হবে না।
— কি করতে হবে আমায়?
— একটু ডান দিকে এগিয়ে যাও, সেখানে অনেক ময়লার স্তুপ পড়ে আছে। ময়লা গুলো সরাতে থাকো। তারপর সেখানের মাটি খুড়তে থাকতো। দেখবে মাটির নিচে একটা সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগ। সেই ব্যাগটা তুলে আনো।

আমি যে না করবো সেটা বলার মত সাহস আমার নেই। আমি কালো ছায়াটার কথা মত কাজ করতে লাগলাম। মাটি খুড়তে খুব সমস্যা হচ্ছিল। তারপর প্রায় ৩০ মিনিটে মাটি খুড়লাম। নদীর পাড়ের মাটি একটু নরম, যদি উপরে মাটি খুড়তে হতো তাহলে আমার কয়েক বছর লেগে যেত। আমি সাদা প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে এনে কালো ছায়াটার সামনে আনলাম।
— এই যে আপনার ব্যাগ।

আমার কথা শেষ হতে কালো ছায়াটা আমার দিকে তাকলো। আমি হয়ত ভুল বশত এটাকে কালো ছায়া বলছিলাম, আসলে এটা একটা মেয়ে। এত সুন্দর মেয়ে কখনো আমি দেখি নি। এই অমাবস্যার রাতও যেন তার রূপের কাছে হার মানতে চাইবে। কিন্তু মেয়েটার চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। তবে বুঝতে পারছি না, মেয়েটার চোখে রক্ত কেন?হাজারও প্রশ্ন এখন মাথায় ঘুরছে।
— ব্যাগটা সাথে নিয়ে আমার সাথে হাটতে থাকো।
— হুম।

এখন যেন মেয়েটাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে না বরং মনে কৌতুহল তৈরি হচ্ছে। আমি মেয়েটার পিছন পিছন হাটতে লাগলাম। ব্যাগটার ওজন কমই লাগছে। ভেতরে কি আছে? এই মেয়েটা এই ব্যাগের ব্যাপারে জানে কেমন করে? অনেক প্রশ্ন এখন মনে।

প্রায় ১ ঘন্টার মত হেটেঁ একটা বাড়ির সামনে আসলাম। তখন মেয়েটি বলল…
— ব্যাগটা বারান্দাতে রেখে দাও।
— হুম।
— ধন্যবাদ।
— একটা প্রশ্ন ছিল?
— তোমার মনে একটা নয় অনেক গুলো প্রশ্নই ঘুরছে।
— হুমম
— আজ থেকে এক বছর আগের ঘটনা। আমি টাঙ্গাইলের একটা কোম্পানি তে জব করতাম। ভালই চলছি সব কিছু। আমার বিয়ে ঠিক হয়। তাই চাকরী থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। রাত তখন সাড়ে ১০টার মত বাজে হয়ত। আমি নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি তবে নৌকা চালানোর লোক নেই। কিছু দূরে দেখালাম কয়েকটা লোক বসে মদ খাচ্ছে। আমি তবুও নৌকা চালানো লোকের অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ ওইখান থেকে একটা লোক আমার সামনে এসে বলল..
— আপু কি নদী পার হবেন?
— হুমম। নদীর পাড় হতে পারলেই হবে। এরপর আমার বাড়ি হাটা পথ।
— ও আচ্ছা, চলেন আমরা নিয়ে যাই।

আমার হাতে এর থেকে বেটার অপশনও ছিল না যে অন্য কিছু করবো।আমি নৌকায় উঠতেই বাকি তিনজনই নৌকায় উঠলো। ওরা কিছু নিয়ে হয়ত হাসাহাসি করছিল। হঠাৎ মাঝ পথে নৌকা চালানো বন্ধ করে দিলো। আমি কিছু বলার আগেই আমার উপর হানিয়ে পরলো পাষন্ড লোক গুলো। আমি একা কোন রকমেই পেরে উঠি নি। অনেক চিৎকার করেছি কিন্তু কেউ আসে নি। তখন ওদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়ে ছিলাম। একের পর একজন আমাকে ছিরে ছিরে খেয়েছে। শুধু তাই না, ওরা বৈঠা দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। তখন নৌকায় আমার মৃত শরীরটা পড়ে থাকে। ওরা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে আমার লাশটা ভড়ে। ওই নদীর এক পাশে চাপা দিয়ে দেয়। আমার বাসার লোক আমাকে অনেক খুজে ছিল কিন্তু আমাকে পায় নি।

আমি মেয়েটার কথা শুনতে শুনতে কখন যে চোখে জল চলে আসছিল খেয়ালই করি নি। তখন আমি বললাম…
— তাহলে এই ব্যাগে…
— হা এটাতেই আমার লাশটা। হয়ত গলে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি প্রতি রাত অপেক্ষা করতাম কেউ একজন আসুক। যে আমার লাশটা আমার বাসায় পৌছে দিবে। গত এক বছরে কেউ আসে নি। আজ তুমি আসলে।
— হুমম। ওই তিনটা লোকের থেকে প্রতিশোধ নিবে না।
— অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছি।
— আচ্ছা তাহলে আমি আসি।
— হুমম আর কিছুক্ষন পরই তোমার সি এন জি চলা চালু হবে।
— তুমি জানো কি করে আমি সি এন জির জন্য অপেক্ষা করছি।
— এইসব তোমার না জানলেও চলবে। সাবধানে যাও।
— হুম।

আমি বিদায় বলে সামনে এগিয়ে চলেছি। একবারও পিছনে তাকাই নি। এখন মনে হয় প্রায় সাড়ে ৫ টা বাজতে চলল। আমি সি এন জি স্টপে আসতে আসতে সূর্যের আলোও উকি দিয়েছে আর সি এন জিও চলে এসেছে। আমি সি এন জি তে উঠে বসলাম।
আমি মেয়েটাকে ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু মেয়েটার সাথে যা ঘটেছে তা শোনার পর থেকে স্থির থাকতে পারছি না।
সারাটা পথ মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরলাম।

বাসায় এসে কলিং বেল চাপতেই কারো খোলার হুশ নেই। মনে হয় রাতে গায়ে হলুদের পর অনেক লেট করে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ তনু এসে দরজা খুলে দিলো। যদিও ও আমাকে দেখে অনেক রাগ দেখালো তবুও আমাকে রুমে ঠিকই আসতে দিলো। তনু হলো আমার সনদ প্রাপ্ত গার্লফ্রেন্ড। ওর কথা আমাদের দুই পরিবারই জানে আর ওর বাসাটা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই।হয়ত রাতে আমাদের এখানেই ঘুমাইছে তাই ও এসে দরজা খুলল…
— বাব্বা এত সকাল সকাল আসলে কেন? বিয়েটার পরই আসতে পারতে।
— তনু রাতেই রওনা দিয়ে ছিলাম। কিন্তু আসার উপায় ছিল না।
— হুমম তোমার তো উপায় থাকবেই না। কিন্তু আরো অনেকেই রাত ১১ টা ১২টার দিকে পূবাইল থেকে এখানে এসেছে। ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। যাও এবার নিতু ঘুম থেকে উঠলে ওর রাগ ভাঙ্গাও।
— ঠিক আছে।

আমি আর কথা না বলে আমার রুমে চলে গেলাম। অনেকই আমার বেডে ঘুমিয়ে আছে। আমি আমার ব্যাগটা রেখে ফ্রেশ হতে গেলাম। সারা রাত ঘুম হয় নি আর এখন ঘুমানোর জন্য হয়ত জায়গাও পাবো না।

সকালে গোসল শেষে হালকা কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দুপুরের দিকে মনে হলো কেউ আমায় মারছে। চোখ খুলেই দেখি নিতু। রেগে একদম আগুন হয়ে আছে। এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারছি না, আরো মানুষ নাকি রাত ১১টা ১২টার দিকে পূবাইল থেকে গাড়ী পেয়েছে কিন্তু আমি কেন পাই নি।
— ভাইয়া তুই যে কাল আসবি না এটা বলতেই পারতি। আর ইচ্ছা হলে আজকেও না আসতি।
— নিতু আমি একটু সমস্যায় ছিলাম রে।
— তোর তো সমস্যারই শেষ নেই।
— একটু বুঝার চেষ্টা কর নিতু।
— তোকে কত ফোন দিয়েছি তোর কোন খেয়াল আছে।
–আচ্ছা আচ্ছা সরি তো, আর এমন হবে না প্রমিস।
অনেক কষ্টে নিতুর রাগটা কমলো। বিকেল থেকে সবার সাথে কাজে হাত দিলাম। অনেকেই আমাকে বলছে এত লেট হওয়ার কারন কি? কিন্তু আমার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে আমি বলতেও পারছি না। কাজের মাঝে হঠাৎ করে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি।

অনেক ব্যস্ততার মাঝে দিয়ে বিয়েটা শেষ হলো। সকালে নিতুকে বিদায় দিয়ে বাবার সাথে বাড়ির কাজ শেষ করে বিকেলের দিকে ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ রাত প্রায় ১২টা বাজে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। সারা বাড়ি তখন নিরব। আসলে বিয়ের কাজে সবাই ব্যস্ত থাকায় এখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।

হঠাৎ রুমে একটা মিষ্টি গন্ধ আসতে লাগলো। আমি চোখ বন্ধ রেখেই গন্ধটা অনুভব করছি। তখনই একটা কন্ঠস্বর ভেসেঁ আসলো…

— আমার কথা ভাবছিলে বুঝি?
গত রাতের সেই কন্ঠ শুনে আতকে উঠলাম। চোখ খুলে রুমের চারপাশটা দেখতে লাগলাম। কিন্তু কেউ তো কোথাও নেই। আমার সারা শরীর বরফের মত ঠান্ডা হতে লাগলো। আস্তে আস্তে বসা থেকে শুয়ে পড়লাম। কোন একটা হাত আমার মুখের চার পাশে ঘুরছে। আমি এখন চোখও খুলতে পারছি না আর শরীরও নাড়াতে পারছি না।
এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে হাসপাতালের বেডে দেখলাম আর বাবা মা সবাই এখানে।মা কান্না করতে করতে বলল…
— তোর কি হয়েছে রে বাবা? সকালে মেঝেতে শুয়ে হাত পা এমন করছিলি কেন?
— বলতে পারি না, বাজে স্বপ্ন ছিল।

আমি বলতে পারি না, মেয়েটাকে সাহায্য করার পরও আমার সাথে এমন কেন ঘটলো? তবে এর পর মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমন হয়েছে কিন্তু এর মানে জানি না।

অফিসের এক ছুটিতে আমি বাসায় যাই। অন্য দিন গুলোর মতই রাতে একটা ঘুমিয়ে ছিলাম।
রাত তখন কয়টা বাজে আমার খেয়াল নেই। আমার ঘুমটা যখন ভেঙ্গে ছিল তখন ঘরে আবার সেই মিষ্টি গন্ধটা পাচ্ছিলাম। আমার হাত পা আমি নাড়াতে পারছিলাম না। তখন মনে হলো আমার বিছানার অপর পাশে কেউ শুয়ে আছে। আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকে দেখতে পারছিলাম না কিন্তু হালকা বুঝতে পারছিলাম একটা গলে পচে যাওয়া কংকালের মাথায় এলোমেলো চুল। আমার রুম টা মিষ্টি গন্ধ থেকে হঠাৎ বাজেঁ গন্ধে ভরপূর হয়ে গেল। আমি এত চিৎকার করছি কিন্তু কোন আওয়াজই হচ্ছে না।
— ভয় পেও না, আমি তো তোমাকে নিতে এসেছি।
পাশে পড়ে না গলে পচেঁ যাওয়া মেয়ের লাশটা বলল। কন্ঠ টা সেই পরিচিত। আমি কথা বলতে পারছিলাম না কিন্তু হঠাৎ বলে উঠলাম…
–তুমি আমার পিছু ছাড়ছো না কেন?
— এত সহজে কেমন করে ছেড়ে দেই বলো?
— আমি কি করে ছিলাম?
— গত এক বছর আগে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল রাজ। মনে পড়ে কিছু?
— হুমম কিন্তু মেয়ে তো বিয়ের আগে পালিয়ে যায়।
— সেই মেয়ে পালিয়ে যায় নি। সেই মেয়েটাই আমি। আমার নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে তুমিই সব চেয়ে বাজে কথা বলে ছিলে না। মনে পড়েছে।
–……..(আমি চুপ)
— আমাকে না তুমি কত ভালবাসতে বলছিলে। আমি নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিনের মাথায়ই তনুর পিছু নিয়েছো।
— আমাকে মাফ করে দাও।
–জানো রাজ অনেক কষ্ট হয়েছিল আমার। নৌকায় আমার সাথে যারা এমন করেছে। তাদের সাথে তোমায় সাময়িক ভাবেই তুলনা করা যায়। কারন তুমি এরই যোগ্য। যে মেয়েদের সম্মান করতে জানে না সে কেমন পুরুষ?
— আমাকে মাফ করে দাও আমি তনুকে সম্মান করবো। প্লিজ

তখনই আজানের শব্দ আমার রুমে এসে পরলো আর আমার শরীরও নড়াচড়া করতে লাগলাম। পাশে তখন কেউ নি। আমার সারা শরীর দিয়ে ঘাম পড়ছে। নিজের ভুলটা বুঝতে পারছি এখন। আমার উচিৎ হয়নি। কারো সম্পর্কে সত্যটা না জেনে এমন করা। অন্তির সাথে আমি যা করেছি, এমনটা যেন আর তনুর সাথে না করি। অন্তি তুমি যেখানেই থাকো, ভাল থেকো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত