আমার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি

আমার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি

‘আমার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি’

বন্ধুর বিয়েতে যাচ্ছি, দেখতে দেখতে আমার সব বন্ধুরই বিয়ে হয়ে গেলো, শেষ যে দুইজন বাকি ছিল তাদের মধ্যে নিলয়েরও আজকে বিয়ে, এখন শুধু বাকি রইলাম আমি। শুধু বন্ধুদেরই নয়, আশাপাশে যাদের বড় হতে দেখলাম প্রায় সবারই বিয়ে হয়ে গেছে, আমার বিয়েটাই শুধু হচ্ছে না। বিয়ে হচ্ছে না বললে ভুল হবে আব্বা বিয়ে করাচ্ছে না, নইলে আমার মত ছেলেকে বিয়ে করার জন্য মেয়েদের লাইন লাগবে বলেই আমার ধারণা। লাজলজ্জা ভেঙ্গে কয়েকবার বিয়ে করার জন্য কঠোর আন্দোলনের ডাক দিলেও তাতে আব্বার মন বিন্দুমাত্র গলেনি। মাঝে মাঝে মেয়ে নিয়ে পালিয়ে আসার ভয় দেখালেও আব্বা এতে সামান্যতম বিচলিত হয় না, উনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন আমাকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে না।

বয়স ২৮ পেড়িয়ে ২৯ হচ্ছে, তাও নাকি আমি বড় হইনি। ৬০/৬৫ গড় আয়ুর এই দেশে অর্ধেক জীবনই পাড় করে দিলাম একা। কিন্তু বাবা মায়ের এক সন্তান হওয়ায় সবাইকে বলে বেড়াতাম আমার বিয়েই সবার আগে হবে, এরপর বন্ধুমহলে যখন প্রথম বিয়ে রিয়াদের হয়েছিল সেদিনও উঁচু গলায় বলেছিলাম, রিয়াদের বাপ ওরে বাল্যবিবাহ না দিলে আমিই প্রথম হইতাম। দেখতে দেখতে সবার বিয়েই হয়ে গেলো, এখন উঁচু গলাটা নিচু করে বলতে হয় আমার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি।

মাঝে মাঝে বিবাহিত বন্ধুদের বউসহ বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এনে খাইয়ে আব্বাকে বিয়ের গুরত্ব বোঝানোর দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তারাও ব্যর্থ হয়েছে৷ এরপর আর কাউকে দাওয়াত দিয়ে বাড়তি খরচ বাড়াইনি।

আব্বা বলেন জীবনটাকে আরেকটু উপভোগ করতে, কিন্তু আব্বা কি বোঝে না বউ নিয়ে জীবনটা আরও ভাল উপভোগ করা যায়। এই যে যখন তখন ফোন দিয়ে ওগো ডাক শোনার মাধ্যমেও তো জীবনটা উপভোগ করা যায়। না, আর সহ্য হচ্ছে না, বিয়েটা এবার আমি করেই ছাড়বো। বাবাকে বলে দিলাম, এবার বিয়েটা না করালে কিন্তু যেদিকে চোখ যায় চলে যাবো। শুনে বাবার পাশ থেকে মা বললো লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছিস? বেহায়া ছেলে। যা এবার তোকে বিয়ে করচ্ছি। প্রথম কথাটা গায়ে লাগাইনি, বিয়ে করাবে শুনেই নাচতে নাচতে অফিস চলে গেলাম। সবাই আমার দিকে আজ অন্যভাবে তাকাচ্ছে, তারাও কি বুঝে ফেললো মা বিয়ে করাবে বলছে। যার যা ইচ্ছা বুঝুক, আমার তাতে মাথা ব্যাথা নাই, বিয়ে করবো এটাই শান্তি।

অনেক খুঁজেও একটা মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। আব্বা বিয়ের বাজারে আমার তেমন কদর নাই এমন ভাব নিলেও আমার মনে হয় উনি ইচ্ছে করেই এমন করছেন, নয়তো আমার মত ছেলে বিয়ে করবে সেটা তো বিবাহযোগ্য মেয়ে আছে এমন বাবা মায়েদের কাছে ব্রেকিং নিউজ হওয়ার কথা।

যাইহোক অবশেষে একটা মেয়ে পাওয়া গেলো। মেয়ে তেমন সুন্দরী না হলেও আমার তাতে কোন মাথা ব্যাথা নেই, বিয়ে করতেছি তাতেই শান্তি। আগামী এক সপ্তাহ পর আমার বিয়ে, কিন্তু সময় যেন কাটছেই না। এত বছর অপেক্ষার পর বউ পাচ্ছি তাই হয়তো অপেক্ষাটাও বেরসিকের মত নিজেকে দীর্ঘ করে নিচ্ছে।

যাইহোক অবশেষে সেই দিনক্ষণ আসলো, কাল আমার বিয়ে আজ গায়ে হলুদ। সকাল থেকেই আমি খুব উত্তেজিত। নিজের বিয়ের সব তদারকি নিজেই করতেছি। সবাই আমাকে এমনভাবে দেখতেছে মনে হয় অপরাধ করতেছি, তাতে আমার কিছুই যায় আসে না, বিয়ে করতেছি এটাই শেষ কথা। প্রচন্ড সাউন্ডে গান ছেড়ে এলাকার সবাইকে জানান দিচ্ছি আমার বিয়ের খবর৷ কয়েকবার সাউন্ড কমানোর অনুরোধ আসলেও শুনিনি, বিয়ে করতেছি আমি আজ কারও কথা শোনার সময় নেই আমার।

গায়ে হলুদের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিজের রুমে ঢুকলাম। আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে নয়তো চেহারা ফ্রেশ লাগবে না।

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, মোবাইলে সময় দেখলাম। রাত ২.৪৫ বাজে, বিয়ের আগে এত রাতে কে আমায় বিরক্ত করছে! চেহারায় রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলেই অনেক রাগ ঝাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে দরজা খুললাম। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়ার আগেই পাশের বাড়ির পিচ্চি মেয়েটা ভাইয়া আপনার বউ অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে বলে হাসতে হাসতে দৌড়। মজা করছে ভেবে সামনে এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সে সঠিক তথ্যই দিয়েছে। সবাই এটা নিয়ে কানাকানি করছে।

এবারও বিয়েটা আমার হলো না। আব্বাই ঠিক, জীবনটা উপভোগ করতে হবে। তাই ব্যাগ গুছিয়ে হানিমুনের জন্য কাটা টিকেট নিয়ে কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। জীবনটা কিছুদিন উপভোগ করে আসি৷ বিয়েটা পরে করা যাবে,আমার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত