নিঃশব্দ প্রতিক্ষা

নিঃশব্দ প্রতিক্ষা

বাসা থেকে মেয়ে দেখতেছে। বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমার বাবা মায়ের ধারণা আমি দিন দিন উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি। বিয়ে শাদি করিয়ে দিলে সুস্থ হয়ে যাবো। আসলে ব্যাপারটা ঠিক না, আমি এখনো সুস্থ সবল আছি। তবে বিয়েতে আমার অমত নেই শুধু একটা কন্ডিশন আছে।

কন্ডিশনের কথা পরে বলছি, তার আগে বলে নেই কেন তারা মনে করছে আমি উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি। ঘটনার শুরু বছর তিনেক আগে যেদিন ফেসবুকে একটা নিউজ আমার চোখে পড়লো। “কম সিজিপিএ পাওয়া ছাত্ররাই জীবনে সফল হয়” শিরোনামের সেই নিউজ দেখার পরে তিন বছর ভালো সিজিপিএ পাওয়া আমি পড়াশোনা প্রায় বন্ধ করে দিলাম। শেষ বর্ষে এসে টেনেটুনে সেমিস্টার পার করলাম। ফাইনাল্লি আমার সিজিপিএ এভারেজের নিচে চলে গেলো। দুই বছর ধরে চাকরি খুঁজছি, সিজিপিএ কম থাকায় কোন চাকরি পাচ্ছি না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস সফল আমি হবোই।

বছর দুয়েক আগে ফেসবুকে আরেকটা নিউজ দেখলাম। সেখানে লেখা যারা অতিরিক্ত গালিগালাজ করে, তারা মেধাবী হয়। ছোট বেলা থেকে আমার রেজাল্ট ভালো, সবাই মেধাবী বলে। তবে ঐ নিউজ দেখার পরে নিজের মেধার উপর আর ভরসা রইলো না। আসল মেধা অর্জন করতে আমি গালিগালাজ শুরু করলাম। প্রতিবেশী বাড়িওয়ালা হারুন ভাইকে “আসসালামুয়ালাইকুম হারামির বাচ্চা, কেমন আছেন? ভাবী হারামজাদি ভালো আছে?” বলার পরে প্রথম বিচার বসেছিল আমাকে নিয়ে। এরপরে তো কতই বিচার বসলো, আমার ওসবে কিছু আসে যায় না। আমি জানি ওরা সবাই আমার মেধা দেখে হিংসা করে।

গত বছর ফেসবুকে আরেকটা নিউজ দেখলাম, গাঁজা খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। আমার মনে দৃঢ়তর বিশ্বাস জন্মালো আমার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নইলে আব্বা আম্মুর বিয়ের ঘটনা মনে থাকবে না কেন? আমার লাইফের এতবড় একটা দিন, অথচ সেদিনকার কোন স্মৃতিই আমার মনে নেই!

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য জীবনে সিগারেট না ছোঁয়া আমি গাঁজা খাওয়া শুরু করলাম। কয়েকবার গাঁজাসহ পুলিশে ধরেছে। এটা কোন বড় ঘটনাই না। কেলেঙ্কারিয়াস কান্ডের মধ্যে প্রথম প্রথম একদিন পরনের লুঙ্গি খুলে মাথায় বেঁধে এলাকা প্রদক্ষিণ আর একদিন তিনতলার পাশাপাশি জানালা থেকে পস্রাব করে পাশের বাসার বাড়িওয়ালা হারুন ভাইয়ের বেডরুমের খাট ভিজানো ছাড়া বড় কোন ঘটনা অন্তত আমার মনে পড়ে না।

মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে আরেকটা নিউজ লিংক থেকে জেনেছি খালিপেটে লেবু আর আদার রস খেলে যৌবনশক্তি বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে এমন কোন পুরুষ নেই যে যৌবন ধরে রাখতে চায় না। আমি নিয়মিত খালিপেটে লেবু আর আদার রস খেয়ে পেটে আলসার বাঁধানো ছাড়া তেমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হইনি। শুধু একসপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। ঐ এক সপ্তাহ গাঁজা খাওয়া হয়নি। তাছাড়া বাকি সব ঠিক আছে। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আমার যৌবন শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফেসবুকের নিউজ মিথ্যা হতে পারে না।

এর পরই আরেকটা নিউজ আমার জীবন বদলে দিলো, নিউজটা হচ্ছে মদ খেলে ভালো ইংরেজি বলা যায়। এবার খাওয়া শুরু করলাম মদ। এক সপ্তাহের মাথায় আমার বিশ্বাস জন্মালো আমি ইংরেজির প্রফেসর হয়ে গেছি। B@iforce নামে নামে একটা ইংলিশ কোচিং খুলে ফেললাম। সেখানে বাই ফোর্স পোলাপান ধরে আনতে শুরু করলাম। ভয়ে এলাকার ছেলেপেলেরা এখন আমার ধারেকাছে ঘেঁষে না। তবে আমার বিশ্বাস একদিন ইংরেজি শিখিয়ে আমি সফল মনিষী হয়ে যাবো।

কয়েক মাস আগে নিউজ দেখলাম বাসন কোসন ধোয়াতে স্ট্রেস কমে। উপরের ব্যাপার গুলো পড়ার পরে আপনার কি মনে হয় না আমি স্ট্রেসে আছি? সবাই আমার পিছনে লেগেছে। আমার উন্নতি দেখে এদের হিংসা হয়। এজন্যে আমি বেশ স্ট্রেসে ছিলাম। এই নিউজ দেখার পরে আম্মুকে বললাম কাজের বুয়া বিদায় করে দিতে। আম্মু রাজি হলেন না।

পরদিন এলাকার হকি ক্লাব থেকে হকিস্টিক এনে বাসার নিচে বুয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দৌড়ানি খেয়ে বুয়া আর কাজে আসে নাই। এরপর থেকে আমি বাসার হাড়ি পাতিল বাসন কোসন ধোয়া শুরু করলাম। তারপরেও দেখি স্ট্রেস কমে না। এরপরে পাশের বাসার বাড়িওয়ালা হারুন ভাইয়ের বাসায় যেয়ে বাসন কোসন ধোয়া শুরু করলাম। প্রথম প্রথম ভাবী আপত্তি করলেও ইদানিং ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নেয়। আমার বিশ্বাস বাসন ধোয়ার পর থেকে আমার স্ট্রেস প্রায় কেটে গেছে।
কিছুদিন আগে থালা বাটি ধোয়ার সময় ভাবী এসে বললেন, “তোমার জন্য মেয়ে দেখতে বলেছে তোমার মা। আমি একটা মেয়ে দেখেছি। ছবি দেখবা?”

আমি লজ্জিত লাল হয়ে বললাম, “দেখান দেখি ভাবী।”
ভাবী ফেসবুক ঘেঁটে একটা মেয়ের ছবি বের করে মোবাইলটা আমার সামনে ধরলেন। ছবি দেখেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ভাবীর হাত থেকে ছোঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে দেয়ালে ছুঁড়ে মেরে বললাম, “চিকনা মেয়ে! এই শুকনা মেয়ে দেখাচ্ছেন আমাকে! হারুন ভাইয়ের বউ না হলে আজকে আপনাকে টেনে হিঁচড়ে ছাদে তুলে লাথি মেরে ফেলে দিতাম। আর কোনদিন যেন শুকনা মেয়ের ছবি না দেখি।”

শুরুতেই বলেছি বিয়েতে আমার অমত নেই, শুধু একটা কন্ডিশন আছে। সেইটা হচ্ছে আমার মোটা মেয়ে চাই। কিছুদিন আগে আমি ফেসবুকের একটা নিউজে দেখেছি মোটা মেয়েরা দাম্পত্য জীবনে স্বামীকে সুখী করে। সুতরাং বিয়ে যদি করতেই হয়, মোটা মেয়েকে করবো।

ইদানিং সবাই আমাকে এড়িয়ে চলে। ভাবী এরপরে কোনদিন আর বিয়ের কথা তুলেন নাই। এলাকার সকলে আমাকে দেখলে দূর দিয়ে হাঁটে। আড়চোখে তাকালে কেউ কেউ ভোঁ দৌর মারে। এতে আমার কিছু যায় আসে না। বরং নিজেকে বেশ উজ্জীবিত এবং প্রতাপশালী মনে হয়।

তবে আজ আমি বেশ চিন্তিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঢুকেই একটা নিউজ দেখলাম যে বউকে বেশি বেশি চুমু খেলে আয়ু বৃদ্ধি পায়। নিউজটা দেখার পরে থেকেই মন খারাপ লাগছে। মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে আমার আয়ু কমে যাচ্ছে। চুমু খাওয়াটা খুব বেশি দরকার আমার। ব্যাপারটা জরুরী হয়ে গেছে। সমস্যা হচ্ছে চুমু খাবো কিভাবে? আমার তো বউই নাই!
যদিও এটা খুব বড় সমস্যা না। পাশের বাসার বাড়িওয়ালা হারুন ভাইয়ের বউ আছে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত