স্নেহসুধা

স্নেহসুধা

শরীরটা খারাপ লাগছে।প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়তে চাইছে শাশ্বতী।এতটুকু মেয়ে রাই, কবে এত বড় হয়ে গেল ।এত বড় অপমান। তাও নিজের মেয়ের কাছে।

কদিন আগে রেজাল্ট বেড়িয়েছে রাইয়ের। ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট।সেকেণ্ডারিতে নাইনটি থ্রী পার্সেন্ট—কম কথা নয়।শাশ্বতীর ইচ্ছা রাই জেএনইউ থেকে ভূগোল বা ইংরাজী নিয়ে পড়ুক। জেএনইউতে পড়া শাশ্বতীর কাছে স্বপ্ন ছিল । কিন্তু মেয়ে বেঁকে বসেছে। ও মেডিকেল দেবে।ডাক্তার হতে চায়। সব ঐ বড় জায়ের জন্য । নিশ্চই ও ই মাথায় ঢুকিয়েছে।অর্ণব ফিরে আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে শাশ্বতী। ” তোমার মেয়ে আমায় বলে কি আমি ওকে মানুষ করি নি তাই তার ভবিষ্যত ভাবার দরকার নেই। প্রশয়ে মাথায় উঠেছে একবারে।”

” ঠিক আছে আমি কথা বলবো।”অর্ণব প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যায় ।
নিজের মনে গজরাতে থাকে শাশ্বতী। খাবার টেবিলে খাওয়া শেষ হলে অর্ণব বলে ” রাই, মা তুমি তো আমার সোনা মা, এত রেগে গিয়েছিলে কেন মামণি।”

” মাম্মামকে বলে দিও যখন তখন আমার মামণিকে অপমান না করে।আমার ইচ্ছে ডাক্তার হবার আর আমি সেটাই বলেছি”।

“তোমার ইচ্ছে না তোমার মামণির।” ব্যঙ্গ করে ওঠে শাশ্বতী। বেগতিক দেখে শাশ্বতীর বড়জা তমসা ছুটে আসে। ” আমি কিছু বলিনি রে ছোটো। ছোট থেকেই ও ডক্টর’স সেট নিয়ে খেলতো।আমিও মজা করে ডক্টর রাই বলে ডাকতাম। কখন যে ও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বুঝতে পারি নি।”

“চুপ কর দিদিভাই। মেয়েটা আমার । আমি জানি ও কোন পথে গেলে সাইন্ করতে পারবে। আমার স্বপ্ন ও বিসিএস দেবে। এবং তাই ওকে হতে হবে ।”

” হাসালে মাম্মাম। আমি কবে তোমার মেয়ে হয়ে গেলাম বল তো? আমার স্কুলের ব্ন্ধুরা সবাই মামণিকেই আমার মা বলে জানে।”

” রাই” চিৎকার করে ওঠে শাশ্বতী। ” একটা থাপ্পরে তোমায় সোজা ক’রে দেব। বড় বেশি কথা না তোমার ।”
“ঠিক ই তো বলেছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি মামণির কাছে। কর তো স্কুল টিচারি, তাও আমাকে দেখাশোনার সময় হয় নি। চারটে স্কুল ছুটি , তুমি বাড়ি আসো রাত আটটায়। তোমার এনজিও, নানা ইনভিটেশনপার্টিতেই কেটে যেত। কি জানো তো মাম্মাম প্রিটেনশন আমার ভালো লাগে না। অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে এফবি তে ছবি পোষ্ট.কর,” আমার সহজ” “আমার জুঁই” শুধু সোশাল স্ট্যাটাস্ হাই করার জন্য। নিজের মেয়েকে ভালোবাসা স্বাভাবিক , ওখানে হাততালি পাবে না তো ।”

“অর্ণব ,ও কি বলছে এসব”
“রাই, তুমি মায়ের সাথে এভাবে কেন কথা বলছো, এই শিক্ষা দিয়েছি তোমায়!” তমসা বলে ।
“মাম্মাম আমায় বলতে বাধ্য করছে মামণি। শুধু তুমি পছন্দ কর বলে ডাক্তারির মত নোবল্ প্রফেশন্ মাম্মামের পচ্ছন্দ নয়। ” ” ওকে চুপ করতে বল অর্ণব ।আমার শরীর খারাপ লাগছে”
রাগে রাই টেবিল থেকে উঠে যায় ।

রাত গভীর । ঘুম আসে না শাশ্বতীর । অর্ণব মাথায় হাত বোলায়। ” ওকে ওর মত ছেড়ে দাও শাশ্বতী। ও যে তোমারি মেয়ে । তুমি তো ওকে জন্ম দিতে চাও নি। তাহলে অধিকার ছাড়তে পারছো না কেন?”

বিয়ের দুমাস যেতে না যেতেই কনসিভ করে শাশ্বতী। তাই এ্যাবর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নিঃসন্তান তমসা দুহাত ধরে অনুরোধ করে ।বাচ্চার জন্মের পর সব দায়িত্ব নিতে চায়। তাও রাজি হয় নি শাশ্বতী। নেহাত শাশ্বতীর মা সামনে এসে পড়ে তাই । মায়ের হাতের একটা থাপ্পর খেয়ে তবে চৈতন্য হয়। তাও ঐ জায়ের জন্য । সব কথা মাকে ঐ জানিয়ে দেয়। সেই জন্ম থেকে রাই মামণির কাছে। মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত রাই মামণির স্নেহসুধায় বড় হতে থাকে।

প্রচণ্ড অনুশোচনা হয় শাশ্বতীর ।সত্যিই তো এই কটা বছর সে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। নিজের মেয়ে যে এতটা কষ্ট পাচ্ছে ভাবে নি। ভেবেছিল অনাথ আশ্রমে দানধ্যান, বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো দেখে রাই ওর মাকে সম্মান করবে, গর্ব করবে।সকলের থেকে সম্মান ,সম্ভ্রম চেয়ে এসেছে সে। ভালোবাসা দিতে বা নিতে পারে নি।

চোখ দুটো জ্বালা করে শাশ্বতীর । বুকটা এমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন আজ?অর্ণবের বুকের মাঝে মুখ গুঁজে কান্নায় ভেঙে পড়ে শাশ্বতী।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত