সুখ ঔষুধ

সুখ ঔষুধ

মীরা মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী একটি মেয়ে।বয়স আর কত হবে,বড়জোর বাইশ কি তেইশ।আর আমার?চল্লিশে না ঠেঁকলেও চল্লিশ ছুঁইছুঁই।শক্তপোক্ত শিলা শরীরের দৌলতে বয়সের সেরকম কোনো ছাঁপ চেহারায় এখনো ফুঁটে উঠে নি ঠিকই তবে দু একটা চুল, খোচা খোচা দাঁড়ি যে রঙ বদলানো শুরু করে নি তাও অবশ্য নয়।বাসর রাতে দরজা লক করে কয়েক কদম খাটের দিকে এগুতেই মীরা এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছিল।বুকের উপর থেকে শাড়ীর আঁচল একটানে ফেলে শীতল কন্ঠে বলেছিল,

– নিন,যা করার তাড়াতাড়ি করুন।আমার ঘুম পাচ্ছে।ঘুমুবো আমি।

মীরার এমন আচরনে কিছুসময়ের জন্য আমি পুরোপুরি হকচকিয়ে গিয়েছিলাম।হোঁচট খেয়েছিলাম বলা চলে।না চাইতেও বারবার লাল ব্লাউজে আবৃত মীরার উচুঁ বুকের দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল।আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করছিলাম এতে আমার একটু লজ্জাবোধ বা নিজেকে নির্লজ্জ মনে হচ্ছে না।একটা মেয়ের মনে কতটা বিতৃষ্ণা,কতটা তিক্ততা থাকলে এত সাবলীল ভাবে নির্দ্বিধায় এমন একটি কাজ করতে পারে তা পরিষ্কার বুঝা সত্বেও আমার ভেতরের পুরুষ সত্তা বারংবার বিদ্রোহ করে গর্জে উঠছিল।বলছিল,নিজের অধিকার গ্রহন করতে এত দ্বিধা এত ভাবা ভাবির কি আছে?নে,নিজের অধিকার লুটেপুটে।মেয়েরা বিয়ের পর সংসারের সাথে সাথে স্বামীকেও সমানতালে আপন করে নেয়।দুদিন আগে আর পরে স্বামীকে এরা ভালোবেসে ফেলবেই।এটাই নিয়ম।

একটা সময় আমার মনে হচ্ছিল,শরীর লোভী আর পাঁচটা কামুক পুরুষের মত আমিও বোধহয় মীরার শরীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব।নিজেকে নিজের মধ্যে আটকে রাখার ক্ষমতা বোধহয় আমার শেষ।সে রাতে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে আমি জয়ী হয়েছিলাম।মীরার অর্ধনগ্ন বুক শাড়ীর আঁচলে ঢেকে বলেছিলাম,

– ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।আর চাইলে এসব ভারী কাপড়, চোপড় ছেড়ে ল্যাগেজ থেকে হালকা কোন কাপড় চোপড় বের করে পড়ে নিতে পারো।খাট থেকে কিছুটা দূরে থাকা টেবিল দেখিয়ে বলেছিলাম,ওখানে হালকা কিছু খাবার দাবার রাখা আছে।ক্ষুদা লাগলে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়। অরু বেঁচে থাকতে অরুদের বাড়িতে অরু আর মীরার কিছু কথপোকথন অনিচ্ছাকৃত ভাবেই শুনে ফেলেছিলাম আমি।অরু চাপা স্বরে মীরাকে বলছিল,

– এ্যাই,তুই আরিফের সাথে সবসময় এমন দূরব্যাবহার কেনো করিস বলত?সে তোর কি ক্ষতিটা করেছে যে তাকে তোর এত অপছন্দ? মীরার বয়স তখন কম থাকলেও সে স্পষ্ট গলায় বলেছিল,
– তোকে কে বলল যে আমি ওনাকে অপছন্দ করি? অরু আরো চাপা স্বরে বলেছিল,

– করিস না তুই অপছন্দ?অপছন্দ করিস এটা আবার বলতে হবে কেনো, তোর আচার আচরনে স্পষ্ট বুঝা যায়।তুই কি ভাবিস, ও এসব বুঝে না? তোর এমন আচরনে ওর খারাপ লাগে না?আচ্ছা তুই আমাকে বল, আজ পর্যন্ত একবারো মানুষটাকে কখনো দুলাভাই বলে ডেকেছিস?বল আমায়,ডেকেছিস কখনো? এই কথার প্রত্তুত্যরে মীরা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলেছিল,

– অভিনয়,ভান টান এসব আমি করতে পারব না।আমার ভেতর থেকে যেটা আসবে আমি সেটাই দেখাব।আর আপা প্লিজ,তুই এমন মন খারাপ করে মুখ গোমরা করে বসে থাকিস না তো।আমার ভালো লাগে না।এদিকে আয় তো দেখি তোর মাথায় একটু বিলি কেটে দেই।

মীরার কাছে কখনোই আমি পছন্দের কেউ ছিলাম না।কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের আমরা কোন কারন ছাড়াই অপছন্দ করি।তাদের উপস্থিতি বিষের মত মনে হয়।আমিও মীরার কাছে ওর কম বয়স থেকেই তেমনই একজন মানুষ।অরুর মৃত্যুর পর এই অপছন্দেরও একটা কারন পেয়ে গেছে ও।মীরা অরুর মৃত্যুর জন্য আমাকেই দায়ী করে।ওর ধারনা ওর আপা আমায় ভালোবেসে বিয়ে না করলে অনেক বেশি সুখে শান্তিতে থাকত।হয়ত বেঁচেও থাকত।তবে কোন এক অদ্ভুত কারনে অরুর মৃত্যুর পর আমার শশুড় জাকারিয়া চৌধুরী এবং শাশুড়ি রেহেনা চৌধুরী আমাকে আরো বেশি স্নেহ করা শুরু করলেন।আমার জন্য তাদের মমতা যেন বেড়ে নিজের আপন ছেলে মেয়েদের থেকেও বেশি হয়ে গেল।

বিয়ের আগে মীরার সাথে আমার আলাদা ভাবে কিছু কথা হয়েছিল।মীরার রুমের সাথেই একটা বেলকুনি আছে।নানা রকম ফুল গাছের টবে সাঁজানো।বেলকুনির সামনের বড় শিমুল গাছটা ভরা শিমুল ফুল ফুটেছিল।দুটো রোলিং চেয়ারের একটিতে আমায় বসতে দিয়ে অন্য চেয়ার টায় মীরা বসে। চায়ের একটি কাপ আমার হাতে দিয়ে অন্য কাপটিতে চুমুক দিতে দিতে কিছুক্ষন উদাসীন ভঙ্গিতে সামনের শিমুল গাছটার দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট নিঃশ্বাস ফেলে মীরা বলেছিল,

– বাবা, মা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি জানেন? আমি চায়ে চুমুক দিয়ে কাপে সামান্য টোকা দিতে দিতে বলেছিলাম,
– না!তবে কিছুটা আঁচ করতে পারছি। মীরা আবারও ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত কন্ঠে বলল,
– আমি যে আপনাকে কি পরিমান অপছন্দ করি সেটা আপনি জানেন?
– জানি।
– আমি যদি আপনাকে অনুরোধ করে বলি যে আপনি নিজে গিয়ে মা, বাবাকে বলুন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না আপনি কি অনুরোধ টা রাখবেন?
– না।

মীরা আমার এক কথার এমন কঠিন প্রত্তুত্যর শুনে হয়ত কিছুটা আশাহত হয়েছিল।মুখে তাচ্ছিল্যর হাসির রেখা টেনে কিছু সময় চুপ থেকে বলেছিল,

– আমি জানতাম আপনি রাখবেন না।আপার স্মৃতি নিয়ে এতগুলো দিন তো একা একা ভালোই কাটিয়ে দিলেন।এখন আবার সে স্মৃতিতে নতুন স্মৃতি যোগ করার ইচ্ছে জাগল কেনো বলুন তো?আমার শরীরের প্রতি প্রেমবোধ জেগেছে?তিব্র আকর্ষণবোধ করছেন যেমনটা আপা মারা যাওয়ার পর আর কারো প্রতি করেন নি।আচ্ছা আমার কোন জিনিসটা আপনার সব থেকে বেশি ভাল লেগেছে?আপনাকে আকৃষ্ট করেছে?

আমি কঠিন কিছু শুনার পূর্ব প্রস্তুুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তুু এমন ভয়ানক কথা শুনব কল্পনাও করতে পারি নি।পরিস্থিতিটা মুহুর্তেই পাল্টে গিয়েছিল।কথাগুলো এক অসম্ভব বিব্রতিকর পরিস্থিতে ফেলেছিল আমায়।মীরা আর আমার বিয়েটা এর কিছুদিন পরেই হয়ে গিয়েছিল।বিয়েটাক ে আমি আটকাতে না পারলেও ভেবেছিলাম মীরা কিছু একটা করবে।কোন না কোন ভাবে ও ঠিকই আটকে দিবে।কিন্তুু আমার এই ভাবনাটা ভুল ছিল।আমার শশুড় জাকারিয়া চৌধুরী এবং শাশুড়ি রেহেনা চৌধুরীর ইচ্ছার সামনে আমরা দুজনই অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।

একটি পুরুষ এবং নারী একই ছাদের নিচে, একই রুমে থাকবে অথচ তাদের মধ্যে কেউই কারো প্রতি কোনো প্রকার আকর্ষন বোধ করবে না এমনটা কখনই ঘটবে না।নারী-পুরুষ কেউ না কেউ অবশ্যই একে অপরের প্রতি তিব্র আকর্ষন অনুভব করবে।কথায়ই আছে উত্তেজনার বসে পুরুষ কাঁঠের পুতুলকে ছুঁয়েও সংবেদনা আশা করে।আর সেখানে তো আমার সাথে জলজ্যান্ত আমার স্ত্রী বাস করছে।বাসর রাতের কিছুদিন পরেই আমি উত্তেজনায় অভিভূত হয়ে মীরার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম।মীরা নিজের উপর আমার অস্তিত্ব টের পেয়েও আমাকে সরানোর বিন্দু মাএ চেষ্টা করে নি সেদিন।শুধু শীতল কন্ঠে বলেছিল,

– আপনার প্রতিটি স্পর্শকে আমি রায়হানের স্পর্শ সিহেবে অনুভব করছি।আপনাকে রায়হান হিসেবে কল্পনা করে আপনার সাথে সমান প্রতিক্রিয়া করে আপনাকে সাহায্য করছি।আমাকে ক্ষমা করবেন।এছাড়া আপনার সাথে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

কথাগুলোতে কি ছিল আমার জানা নেই।তবে আমার সকল উত্তেজনা মুহুর্তেই বরফের মত জমে গিয়েছিল।স্নায়ু থেমে গিয়েছিল।রাগ, লজ্জা,অপমানবোধ নিয়ে চুপচাপ খাঁট থেকে নেমে বেলকুনিতে গিয়ে সারারাত একের পর এক সিগেরেট পুরিয়েছিলাম।চাঁদের রোমাঞ্চকর জোঁসনার আলোও বিষাদময় মনে হচ্ছিল।প্রচন্ড আক্রোশে জীবনে প্রথমবারের মত নিজের ভাগ্য,ভবিতব্যর উপর থুথু ছিঁটাতে ইচ্ছে করছিল।

এই মুহুর্তে আমি আমাদের দুতলা বাড়ির শেওলা ঘেরা ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি।মাথার উপর থাকা চাঁদটা আলোয় চারদিক মুখরিত করে তুলেছে।আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে মীরা।জোঁসনার আলোয় মীরাকে অপরূপ এক মায়াবতী বলে মনে হচ্ছে।অরুর সাথে মীরার আচার আচরনে তেমন কোনো মিল না থাকলেও শাড়ী পড়ার ব্যাপারে এক আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে।অরুর মতো মীরাও শাড়ী পড়তে পছন্দ করে।বিয়ের পর মীরাকে শাড়ী ছাড়া অন্য কোনো কাপড়ে কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না।আমি অনুধাবন করি,শাড়ীতে মীরাকে অবিকল অরুর মতই লাগে।মাঝেমাঝে মনে হয় সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে মীরা নয় অরু।সেই সহজ, সরল শান্ত শিষ্ট কাজল চোখের মায়াবতী মেয়েটি।

– আপনি রায়হানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন?

আচমকা প্রশ্নে আমি মীরার দিকে তাকালাম।সামনের আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই প্রশ্নটি করেছে।সম্ভবত আমার উত্তর পাবার পর ঘুরে তাকাবে।আমি নির্জীব গালায় বললাম,

– হ্যাঁ। মীরা এবার আমার দিকে তাকাল।শান্ত কন্ঠে বলল,
– দেখা করার উদ্দেশ্যটা কি জানতে পারি?
– না, পার না।

কারনটা বললে তুমি দুঃখ পাবে।তবে আমি আজ তোমাকে এমনি কিছু কথা বলব।অনেক দিন ধরেই বলব বলব করে বলা হয়ে উঠে নি।উওর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলে দিবে, না মনে করলে দিবে না।সব কথার উওর দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

– বলুন। ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে আমি বললাম,
– তুমি কি জানো আমি যদি তোমাকে এই নামের বিবাহের বন্ধন থেকে মুক্তিও দেই তাহলেও রায়হান নামের ছেলেটি

তোমাকে গ্রহন করবে না।তোমাকে বিয়ে করতে রাজী হবে না।
এই কথার প্রত্তুত্যরে মীরা শীতল কন্ঠে বলল,

– আপনি কি আমায় দিবেন এই নামের সম্পর্ক থেকে মুক্তি?
– না! মীরা ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বলল,

– তাহলে এসব কথার কোন মানে নেই।রায়হানের জায়গায় থাকলে হয়ত আপনিও গ্রহন করতেন না।
– অবশ্যই করতাম গ্রহন আর তুমিও এটা খুব ভাল করেই জানো।রায়হান ছেলেটা তোমায় ভালোবেসেছিল তোমার শরীরের প্রতি আকর্ষিত হয়ে।ঠিক ভালোবাসা বলা চলে না। এক অধরা মোহ ছিল এটা।এখন যখন তুমি একটা বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছ।এর মানেই তোমার শরীর এখন এঁটো।আর এই এঁটো শরীর গ্রহন করতে সে পুরোপুরি নারাজ।কারন তোমার শরীরের প্রতি সেই অধরা মোহ টা আর কাজ করছে না তার।আশাকরি তুমিও এতদিনে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গেছ। মীরা চুপ করে থাকল।বেশ কিছু সময় চুপ থেকে বিষণ্ণ মাখা স্বরে বলল,

– দয়া করে আমার সাথে আর কখনো এরকম ভাবে কথা বলবেন না।শব্দ চয়নে সংযত হোন।নীচে খাবার বেড়ে দিচ্ছি এসে খেয়ে যান! মীরা ঝড়ের গতিতে ছাঁদ থেকে প্রস্থান করল।আমি কি মেয়েটার চোখে জোঁসনার আলোয় জল চিকচিক করতে দেখলাম?বড় সড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে দূর আকাশের দিকে তাকালাম আমি।

গ্রাম্য ভাষায় প্রচলিত এক কথা আছে,”দিন যায় জলের মত”।একটি দিন দুটি দিন করে করে মীরার সাথে বিয়ের ছয়টি মাস যে কিভাবে কেঁটে গেছে বুঝতেই পারি নি।আর আজ বিয়ের ছয়টি মাস কেঁটে যাওয়ার পর মীরার পক্ষ থেকে শেষ স্মৃতি হিসেবে সাদা কাগঁজের একটি চিঠিঁ পাব এটা একদম অপ্রত্যাশিত ছিল।যদিও চিঠিঁটা খুলে পড়ি নি এখনো।জানিও না কি লিখা আছে এতে।তবে অনুমান করতে পারছি।সন্ধায় অফিস থেকে ফেরার পর কাশেম চাচার হাত থেকে একগুচ্ছ চাবি আর সাদা কাগঁজের এই চিঠিটা পাওয়ার পরই অজানা শঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠেছিল।চিঠিটা পড়তে ইচ্ছে করছে না।শরীরটাও হঠাৎ খারাপ খারাপ লাগছে।চোখ বন্ধ করে শাওয়ারের নিচে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে বোধহয় ভাল লাগত।

কাশেম চাচা চাঁ রেখে গেছে।গোসল সেরেই চায়ের জন্য মীরাকে ডাকাডাকি শুরু করছিলাম।তারপরই মনে হল মীরা বাড়িতে নেই।হয়ত আর কোনোদিন থাকবেও না।মনে হতেই সব হাহাকার করে উঠল।ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলি আমি।চিঠিঁ টা বিছানার উপর বাতাসে বড় অশান্ত হয়ে উঠেছে।মনে হচ্ছে বাতাসে নয় আমার দৃষ্টি আকর্ষনেই তার যত ব্যাকুলতা।

মীরা চলে গেছে আজ তিন দিন হল।যতটা খারাপ লাগবে ভেবেছিলাম তার থেকে একটু বেশিই লাগছে।কাশেম চাচার হাতের চা,খাবার এখন অখাদ্য কুখাদ্য মনে হয়।ছমাসেই বড় কঠিন খারাপ অভ্যাস হয়ে গেছে।অফিস থেকে বাড়িতে ফিরলেই মীরার কথা মনে পড়ে।হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়।কালো মেঘে ছেয়ে যায় চারপাশ।শূন্যতা,বিষণ্ণতা,আর কিছু অপ্রাপ্তিরা চেপে ধরে আমায়।

মীরার চিঠিঁটা ছিল কয়েক লাইনের সংক্ষিপ্ত একটি চিঠিঁ।চিঠিঁটা খুলার পর কিছুটা আশাহত হয়েছিলাম।মেয়েটা আর কয়েকটা লাইন বাড়িয়ে একটু বড় করেও লিখতে পারত।হয়ত এই চিঠিঁটাই এখন থেকে মাঝেমাঝে বের করে পড়ব।পড়ে দেখব চিঠিঁতে লেখা কোন শব্দে আমার প্রতি একটুও ভালোবাসা একটুও দুঃখবোধ প্রকাশ পেয়েছে কিনা।সংক্ষিপ্ত চিঠিঁটা কিছুটা এরকম ছিল,

উপরে আপনাকে কি বলে সম্মোধন করব ভেবে পেলাম না,তাই জায়গাটা ফাঁকাই রাখলাম।আপনার দিকে তাকালে আমার খারাপ লাগে।অপরাধবোধ কাজ করে।এর কারন একটাই, আপনি সত্যিই ভাল একজন মানুষ।আর আমি আপনাকে আপনার হক থেকে বঞ্চিত করছি।আমি অনেক চেষ্টা করেছি।অনেক চেষ্টা করেও পারি নি।শুধু মাএ নামের এই পঙ্গু সম্পর্কের বন্ধন থেকে বেড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করলাম।তাই চলে যাচ্ছি।আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন।আর ভাল থাকবেন।

ইতি,
মীরা
চিঁঠিটা পড়ার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে আমি বলেছিলাম,আমাদের সম্পর্কটা প্রথমে নামের পঙ্গু সম্পর্কের বন্ধন থাকলেও পরে ছিল না মীরা।আমাদের মাঝে কিছু একটা অবশ্যই ছিল যা তুমি আমি কেউই বুঝতে পারি নি।একটু বিরক্ত বোধ হল।প্রায় সন্ধা হয়ে এসেছে। বাহিরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে।এই টিপটিপ বৃষ্টির সন্ধায় এমন অস্থির হয়ে কলিংবেল বাজাচ্ছে কে!দরজার ওপাশে যে এক চমক আমার জন্য অপেক্ষা করছিল চিন্তাও করতে পারি নি।
দরজা খুলতেই দেখি মীরা চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিরক্তি আর সামান্য রাগ মিশ্রিত স্বরে মীরা বলল,

– আশ্চর্য তো।কখন থেকে কলিংবেল বাজাচ্ছি।দেখো না বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, ভিঁজে কি হয়ে গেছি।নাকে কানে তুঁলো গুজে বসে থাকো নাকি! আমি তখনো অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে আছি।মীরা তাড়া দিতে দিতে আবার বলল,

– মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থেকো না তো।সরো,ভেতরে যেতে দাও। ভেতরে এসে শাড়ীর আচল দিয়ে গা, গলা, হাত মুছতে মুছতে কোমল কন্ঠে মীরা বলল,

– বুড়ো বয়সে এত ঢং আসে কোথা থেকে?রাত বিরেতে বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো!দিন কাল যে ভাল না জানো না তুমি?বলে গিয়েছিলাম না,চলে যাচ্ছি?তারপরেও এমন যন্ত্রণার মানে হয়!! কখন যে আমার চোখ জলে সিক্ত হয়ে উঠেছে বুঝতেও পারি নি।মীরার কথার প্রত্তুত্যরে আমি মনে মনে বললাম,আমার অসুখ হয়েছে মীরা। মনের অসুখ।মনের অসুখ হলে যে রাতে ঘুমানো যায় না।তাই একটু সুখ ঔষুধের সন্ধানে বের হই।বেঁচে থাকার জন্য যে ঔষুধ টার খুব দরকার ছিল আমার।সেই সুখ ঔষুধ হয়েই তুমি এলে!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত