নগর কীর্তন

নগর কীর্তন

ট্রামটা সবে মেডিকেল ক্রস করেছে। ব্যস! থেমে গেল। সামনে পরপর কয়েকটা ট্রাম ন যযৌ ন তস্থৌ। দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে যাত্রীরা নেমে গেল। পিনাক বুঝতে পারছে না কি করবে। আরও কিছুটা পরে তো কলেজ স্ট্রিট মানে ওর গন্তব্যস্থল। ভবানীপুরে বাড়ি পিনাকের। তাই এ অঞ্চলটা ওর খুব একটা আসা যাওয়া নেই। কিন্তু, রাভি ওকে কলেজ স্ট্রিট মোড়ে দেখা করতে বলেছে। ওর নাকি কিছু বই কেনার আছে। কিকিরাও ছিল পিনাকের সাথে। ও ধর্মতলা থেকে ট্রামে উঠিয়ে দিয়ে নিজে কেটে পড়েছে কোথাও। রাভির দেওয়া ডিরেকশন আর গুগুল ভরসা করে আসছিল পিনাক।

” ভাই আর বসে থেকে লাভ নেই। লাইনে গণ্ডগোল, নেমে যাও।”
কন্ডাকটর পিনাককে উদ্দেশ্য করে বলে, কাঠের লম্বা সিটের ওপর গুছিয়ে বসল।
” আসলে দাদা কলেজ স্ট্রিট যাব।”
” সে তো এসেই গেছে। ওই তো নাক বরাবর সোজা হেঁটে যাও।”
বলেই লোকটি অন্যদিকে উদাস দৃষ্টি মেলল। ভাবখানা এমন এর বেশি আর বলতে পারব না।
সামনের ফুটপাতে উঠে রাভিকে ফোন করল। একবার পুরো বেজে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বারে ধরেই চিতকার,
” হায় পিক, তুই কোথায়? ”
পিনাক তার অবস্থা বোঝাল।
” ওকে ওকে, তুই ইউনিভার্সিটির মুখটায় চলে আয়।আমি আসছি।”
” সেটা কোথায়? ”
” আরে বুদ্ধুরাম, কাউকে একটু জিজ্ঞেস করে নে।”
আঁতে ঘা লাগল পিনাকের। কি! সে বুদ্ধুরাম! সবে দুমাস হল অ্যাফেয়ার হয়েছে রাভির সাথে।তাই সে কলেজ স্ট্রিট আসতে বলায় চলেই এসেছে। এরকম ফাঁপরে পড়তে হবে জানলে গাড়ি নিয়েই আসত।

ভিড় ঠেলে, লোককে জিজ্ঞেস করে ইউনিভার্সিটির সামনে এল।রাভি ফোনে একগাদা বকতে বকতে যখন সামনে এল, পিনাকের রাগ গলে জল। জিন্সের প্যান্ট আর লাল টপে রাভিকে হেব্বি দেখতে লাগছে। পিনাক হালকা রাগ দেখায়,

” পাবলিক ট্রান্সপোর্টে না এসে গাড়িটা আনলেই ভালো হোত।”
” তাহলে আমার আর বই কেনাই হোত না। এখানে এই সময় পার্কিং এর কত সমস্যা ধারণা আছে।তারপর এক্ষুনি গাড়ি, বাস সব বন্ধ হয়ে
যাবে। ”
” কেন?”
” আরে কোন ছাত্রদের পার্টি পথনাটিকা করতে বসবে কলেজ স্ট্রিট মোড়ে। যতক্ষণ না পুলিশ লাঠি দিয়ে তাড়া করবে বাবু বিবিরা নড়বে না।”
রাভি হিরহির করে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল পুরনো বইয়ের দোকানের স্টলগুলোয়। পিনাক তো অবাক।

” শেষে পুরনো বই?”
” আরে পিক, কত পকেট মানি জমে যায় জানিস।আর বেছে নিলে সস্তায় ভালো ভালো বই পাওয়া যায়। ”
পিনাক মায়ের মুখে খুব রবিঠাকুরের নাম শোনে।জোড়াসাঁকোয় ঠাকুর বাড়ি ঘুরে এসেছে একবার। কথায় কথায় একবার রাভিকে বলেছিল। বই বাছতে বাছতে ‘ শেষের কবিতা ‘ বইটা পেল রাভি।একেবারে নতুন মনে হচ্ছে।পিনাককে দিতে ও সামান্য কটা টাকায় কিনে নিল।মায়ের হয়তো ভালো লাগবে।

কলেজ স্কোয়ারের কাছে বিখ্যাত শরবতের দোকানে বসেছিল রুচিরা আর বিয়াস। এক চুমুকে অনেকটা ম্যাঙ্গো শরবত শেষ করে রুচিরা মুখ তুলল বিয়াসের দিকে।

” আব্বে খাবি নাকি ওটাও আমার পেটে যাবে।”
বিয়াস ফোঁস ফোঁস করে নাক টেনে চোখে রুমাল দিল।
” ভালো কথা বলছি, নাটকবাজি রাখ।আশপাশের টেবিল থেকে তোকে দেখছে। আমি মালটা এমনই ছেলেমার্কা আর তোর নেকুপুসু কান্না দেখে নির্ঘাত ভাবছে হোমো কেস।,”

বিয়াস এবার মুখ তুলল।ধরা গলায় বলল,
” রুচি, মুখ খারাপ করিস না।”

এরপর দুজনে যখন দোকানটা থেকে বেরিয়ে এল সূর্য তখন মধ্য গগনে ছেড়ে পশ্চিমের পথে।রোদে চারিদিক পুড়িয়ে দিচ্ছে তখনও। সামনের ফুটপাতে দুটো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে যাচ্ছে।পথচারীর ভিড়ে ওরাও মিশে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ততা দেখাচ্ছে।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হইহই রইরই কাণ্ড এই অঞ্চলের। চারিদিকে বইয়ের গন্ধ, স্কুল -কলেজের ছেলেমেয়েদের হুল্লোড়, বইওলাদের ছুটোছুটি। আর যেই সন্ধ্যে নামে এ অঞ্চল শান্ত, স্নিগ্ধ, নিঝঝুম। তখন শহরের অন্য প্রান্ত জেগে ওঠে স্বমহিমায়। কলকাতা কখনও ঘুমোয় না। সন্ধ্যের পর জেগে ওঠে চিনেপাড়া, পার্কস্ট্রিট অঞ্চল। রাতপরীদের ঘুম ভাঙ্গে। কাচের গ্লাসে নেশায় বুঁদ ঠোঁটের চুমুতে চলে নিশিযাপন।

পরশু সন্ধ্যায় চিনেপাড়ার এক বার কাম রেস্তোরাঁয় রুচিরা, বিয়াস,পিনাক, রাভি, প্লাবন, রঙ্গিত, পামির সকলে মিলে গেছিল শিরিনের জন্মদিন পালন করতে। টেবিল বুক করা ছিল। বেলুন, রঙিন কাগজে দারুণ সাজানো। শিরিন কেক কাটলো। ওরা ঠিক করেছিল ডিনারের আগে এক পেগ করে হুইস্কি নেবে। পামির একটু অরাজী ছিল। সবাই মিলে ওকে লেগপুল করছিল। এমন সময় বিয়াস, দূরের এক টেবিলে চোখ পরায় স্তম্ভিত হয়ে গেল। তার বাপি তো এখন ট্যুরে! কিন্তু একি দেখছে ও! এক মধ্যবয়সী মহিলার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে হাসি গল্পে মত্ত।সামনে রঙিন গ্লাস খাবারের প্লেট। হ্যাঁ, ওর বাপিকেই তো দেখছে। তার মানে কলকাতাতেই আছে। ওকে আর মাকে মিথ্যে বলেছে। কাউকে কিছু বলতে পারে না বিয়াস। শুধু মাঝে মাঝে সেই দিকে চেয়ে থাকে। ভেতরে কিসের অস্থিরতা অনুভব করে। রুচিরা একমাত্র চেনে বিয়াসের বাবাকে। ওরও চোখ গেছে সেদিকে। বিয়াসের চোখ মুখ দেখে আন্দাজ করে কিছু গণ্ডগোল আছে। বিয়াসের বাবা বেরিয়ে যাবার পর রুচিরাই বন্ধুদের থেকে সামলে রেখেছিল বিয়াসকে। কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।

আজ কলেজ কেটে রুচিরা আর বিয়াস এসেছিল কটা বই কিনতে। রুচিরা বলে চলে,
” মাকে সব খুলে বল। আর ক’দিন সহ্য করবি তোরা। মাকে সাপোর্ট কর। বাবা -মায়ের ডিভোর্স করা আর দিব্বি আরামসে মন খুলে থাক। আমাকে দেখিস না।”

রুচিরার বাবা অসীম রায় আর মা পিয়ালী রায় দুজনেই ডাক্তার। পড়তে গিয়ে পরিচয় , প্রেম। তারপর বিয়ে।অসীম রায় গ্রামের ছেলে ছিলেন। এবং গ্রামের টানে তিনি ফিরতে চাইলেন গ্রামে।পিয়ালী চাইল তার শহরকে আঁকড়ে থাকতে। অসীম ধীরে ধীরে পসার জমাচ্ছিল। ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া রুচিরা এক রাতে তার বাবার গলা শুনেছিল। চিতকার করে মাকে বলছে,

” কি আছে তোমার শহরে। নোঙরা, দুর্গন্ধ, আমার হাঁপ ধরে যায়।আর তোমরা শহুরে মানুষেরা এক নম্বরের স্বার্থপর। নিজের ছাড়া কিছু বোঝ না। দমবন্ধ হয়ে আসছে এই চার দেওয়ালে।”
তারপরেই পিয়ালীর গলা,

” চুপ কর অসীম। তোমার ডিসিশনকে আমি সম্মান জানাই। গ্রামের মানুষ তোমার মত এত ভালো একজন ডাক্তার পাবে। কিন্তু, আমার শহরকে তুমি এ ভাবে অপমান করতে পার না। শিক্ষা দীক্ষা, সুযোগ সুবিধে সব কিছু এখান থেকে শুষে নিয়ে আজ মহান সাজছ তুমি। এবার বোধহয় আমাদের সেপারেশনের সময় এসে গেছে। ”

বিয়াস আর রুচিরা সূর্যসেন স্ট্রিট ধরে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিল। পুঁটিরামের সামনে পিনাক আর রাভির সাথে দেখা।
” ওয়াহ! হোয়াট এ সারপ্রাইজ ইয়ার। তোরাও আজ কলেজ স্ট্রিট। ”
রুচিরা লাফিয়ে ওঠে। এরপর চারজন জমিয়ে পুঁটিরামের ডাল কচুরি খেল। রাভি, বাকি তিনজনকে ট্যাগ করে সাথে সাথে ফেসবুকে দিল ছবি।
দুমিনিটের মধ্যে প্লাবনের ফোন। চার অক্ষরের গালাগালি দিয়ে শুরু করল,
” না বলে ভালোই উড়ু উড়ু চলছে। আমাদের বললি না কেন। যেতাম না নাকি।”
পিনাক বলে,
” তা তুই কোথায়? ”
হোয়াটসঅ্যাপ লাইভে আসে প্লাবন। সাথে শিরিন।দুজনে সি সি ডিতে ডেটে গেছে।
এরা সবাই একসাথে দক্ষিণ কলকাতার এক নামকরা কলেজে পড়ে। সুযোগ পেলেই আড্ডা গল্পে মেতে ওঠে। রুচিরা বলে,

” তোদের কটা পিক তুলে ইন্সট্রাগ্রামে ছাড়।”
শিরিন বলে,
” আরে না ইয়ার! আমার জেঠুকে তো জানিস, প্লাবনের সাথে আমার হাগ করার ছবিটা দেখার পর থেকেই খেপচুরিয়াস হয়ে আছে।আবার কোন ছবি দেখলে ভিরমি খাবে।”
রাভি মুখে চু চু আওয়াজ করে বলে,
” সত্যি, কলকাতা কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে।নাবালক থেকে সাবালক হয়ে গেল। বড় বড় শপিংমল, মাল্টিস্টোরেড কমপ্লেক্স। আর তোর জেঠু এখনো হাগ করা, কিস করা দেখলে চমকায়।”
এখন এই হইহই আড্ডায় বিয়াসের মন কিছুটা হালকা হল।

শোভাবাজার রাজবাড়ির গা ঘেঁসে জয়পুরিয়া কলেজের পাশ দিয়ে লাল মন্দিরের সামনে বেরোলো রাজেন। মাসির বাড়ি এসেছিল দরকারে।এমন সময় ওর বোতামটেপা ফোনটা বেজে উঠল।পিনাকের গলা,
” এই তুই কি আজ একা ক্লাস করলি? নোটগুলো গুছিয়ে রাখিস।”
” নারে আমি এখন লাল মন্দিরের সামনে। মাসির বাড়ি এসেছিলাম।”

রাজেন গ্রামের ছেলে। পি জি থেকে মাসির সাহায্যে পড়ে।রাজেনকে অপেক্ষা করতে বলে হইহই করে এসে পড়ল চারজন। পাক্কা দেড়ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে রাজেন।খুব খিদে পেয়েছিল। ফুটপাথের ধারে একটা বেঞ্চে বসে এগরোলে কামড় মারছিল রাজেন। গ্রামে বড় হওয়া রাজেন, গত দুবছর টানা রয়েছে কলকাতায়। কিন্তু, শহরের এই গতিময় জীবন এখনো দু চোখ ভরে দেখে সে।কত বাস, গাড়ি এদিক ওদিক নিমেষে চলে যাচ্ছে।শহরের লোকগুলো এক মিনিট বসে না।সবাই ছুটছে। গ্রামে বিকাল বেলা রাজেন মাঠপুকুর ধারে গিয়ে বসত।পানকৌড়ি জলে ডুব মারত আর নিস্তরঙ্গ জীবনে বুক ভরে অক্সিজেন নিত রাজেন। এইমাত্র ওর সামনে দিয়ে একটা গাড়ি একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে গেল।হয়তো ফ্রেশ অক্সিজেন পায় না এখানে, কিন্তু এখানে আছে ভবিষ্যতের স্বপ্ন। চলমান জীবন দেখতে দেখতে রাজেন ভেসে চলে এক অন্য জগতে। আষ্টেপৃষ্টে একাত্ম হয়ে যাচ্ছে শহরের সাথে।

সবাই মিলে একসাথে কুমোরটুলি গেল। পিনাকের অনেক দিনের ইচ্ছে সেখানে ঠাকুর গড়া দেখতে যাওয়ার।কাছাকাছি যখন এসেছে সুযোগ ছাড়তে চায় না। মায়ের কাছে গল্প শুনেছে। ওর মায়ের বাপের বাড়ি ছিল বাগবাজার অঞ্চলে। শহরের মধ্যে এ এক অন্য জগৎ। চারিদিকে কাঁচা মাটির গন্ধ। পুজো আসতে এখনো অনেক দেরি। কিন্তু, খড়ের গায়ে এখনই মাটির প্রলেপ পড়েছে। গিরিশ পার্ক থেকে মেট্রোরেল চড়ে হাজরায় নামল পাঁচ বন্ধু।

ওরা যখন উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় পৌঁছল তখন সন্ধ্যে গুটি গুটি পায়ে রাতের দিকে এগোচ্ছে। হাজরা মোড় থেকে সবাই আলাদা হয়ে গেল।পিনাক যখন বাড়ি ঢুকলো, দেখে পামির আর রঙ্গিত বসে আছে।পামিরের কাকা প্রবাসী রঞ্জনবাবু প্রায় সতের বছর পর কলকাতায় এসেছেন। এয়ার পোর্ট থেকে গাড়িতে করে যখন এলগিন রোডে পামিরদের বাড়ি এলেন, তখন পুরো স্তব্ধ।এত পরিবর্তন কলকাতার! একের পর এক ওভার ব্রিজ, কোথা থেকে কোথায় গেছে রাস্তা। পুরনো কিছুর সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন না।আজ পামির, রঙ্গিতকে সাথে নিয়ে কাকাকে নতুন কলকাতা দেখাতে বেরিয়েছিল। অ্যাপ ক্যাবে চড়ে ঘুরেছে সারাদিন। রাজারহাট নিউটাউন দেখে তো রঞ্জনবাবু সব থেকে অবাক।

পিনাকের সাথে দরকার থাকায় এখন দুই বন্ধু কাকাকে বাড়িতে রেখে এসে হাজির।
” আরে পিক, আন্টি যা ডিমের ডেভিল খাওয়ালো না, দারুণ দারুণ! ”
এসময় পিনাকের বাবা সুজিতবাবু ঢুকলেন রসগোল্লার হাঁড়ি নিয়ে।এসেই স্ত্রী শতরূপাকে আব্দার,
” শিগগির ছেলেগুলোকে দাও স্পঞ্জ রসগোল্লা। ”
রঙ্গিত বলে ওঠে,
” না না, আংকেল খুব মিষ্টি। আমি খাব না।”
” সেকি রে, রসগোল্লার শহরে জন্মে বলছিস খাব না! আর হ্যাঁ, শহর যত মানচিত্রে বড় হচ্ছে তোদের কথাগুলো সব বদলে যাচ্ছে।আমাদের সময়ের কাকু কাকীমাই ভালো ছিল।এখন আংকেল আন্টি শুনে ঠিক পোসায় না”

পিনাক তার মাকে ‘ শেষের কবিতা ‘ বইটা হাতে তুলে দিতে কপালে একটা চুমু খেল শতরূপা।

সুজিত রাতের খাবার খেয়ে বারান্দায় চেয়ারে চেয়ারে বসে সুখটান দিচ্ছে। শতরূপার তামাকের উগ্র গন্ধ না পসন্দ।বহু বলেও কিছু হয়নি।সুজিত রোজই দিনে দুবার করে নেশা ত্যাগ করে।শতরূপা ‘ শেষের কবিতা ‘ বইটা মুড়িয়ে বইয়ের র‍্যাকে রেখে দিল এক ফাঁকে।মনটা তার ভারাক্রান্ত। ছেলের দেওয়া উপহারে যতটা আনন্দ হয়েছিল,বইটা খুলে মনটা ভেঙ্গে গেছে।

ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় দোয়েলকে জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল বইটা।ভেতরের পাতায় নামটা জ্বলজ্বল করছিল।কলকাতার বাস উঠিয়ে দোয়েলরা একসময় পাকাপাকিভাবে দিল্লি চলে যায়।সে সময় অদরকারী জিনিসগুলোর সাথে এই বইটাও হয়তো বেচে দিয়েছিল।বইটা যেমন টাটকা নতুন অবস্থায় আছে তাতে মনে হয় কখনো বইটা খোলাও হয়নি। এত বছরে অন্য কারোর হাতে না গিয়ে কি ভাবে ঘুরে ফিরে আজ শতরূপার কাছে ফিরে এল।শহরটার আনাচে কানাচে কত ভালো লাগা মন্দ লাগা লুকিয়ে আছে।মানুষ হঠাৎ করেই কিছু হয়তো তার থেকে পেয়ে যায়।

পিনাক আজ আর শোবার আগে মোবাইলটা নিয়ে খুটুরখাটুর করল না। ওর বাবা বলে ওদের তিনতলার বারান্দা থেকে সুন্দরী তিলোত্তমা কলকাতা মহানগরীর অনেকটা অংশ দেখা যায়।পিনাক আগে কখনো তেমন ভাবে দেখেনি।আজ কি মনে হতে বাবার পাশে এসে দাঁড়াল।সুজিত আধখাওয়া জ্বলন্ত সিগারেটটা অ্যাস্ট্রেতে গুঁজে দিল। হাসিমুখে ছেলের কাঁধে হাত রাখলো। ছেলের সাহচর্যের থেকে নেশার বস্তু কি কখনো আপন হতে পারে।
সত্যি কি অপরূপ লাগছে এই শহরকে।বড্ড আপন মনে হচ্ছে।নিজের কেউ, যার কাছে নিজেকে আজীবন সঁপে দেওয়া যায়। সুজিত ভাবে, জব চার্নক আজ থেকে কতদিন আগে কলকাতা- সুতানুটি-গোবিন্দপুর তিনটে জায়গা নিয়ে’ কলকাতা’ তৈরি করেছিল। তিন’শ বছরের ওপর বয়স এই শহরের। কিন্তু গায়ে এতটুকু জরার চিহ্ন নেই। বরং সময়ের সাথে সাথে সে আরও রূপসী হচ্ছে।

পিনাক অবাক হয়ে যায়- এত সুন্দর তার শহর! কখনো ও এভাবে দেখেনি। আজ দেখে মুগ্ধ। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে, শিক্ষাজীবন শেষে ভবিষ্যত জীবনে কি করবে জানেনা পিনাক।তবে আপ্রাণ চেষ্টা করবে এই শহর ছেড়ে কোথাও না যেতে।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত