অমঙ্গলের বাধা সরিয়ে

অমঙ্গলের বাধা সরিয়ে

-দিদি ও দিদি, কোথায় গেলো গো! ছেলেকে আশীর্বাদ করতে হবে যে!
যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছে তাকে দেখতে না পেয়ে, কাজের ছেলেটিকে ডাকলেন সুজাতা। 
-ভোলা যা তো বাবা দিদি কে ডেকে নিয়ে আয় তো? বল ঋষি এখন বেরোবে, দিদি এসে যেন আশীর্বাদ করে।
সুলতা ঘর থেকে ছোট জায়ের গলার স্বর শুনতে পেয়েছে তবু উত্তর না দিয়ে চুপচাপ ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।

সত্যি এই ছোট জা’কে নিয়ে পারাই যায় না। তার ছেলে আজ বিয়ে করতে যাচ্ছে, তবু বুদ্ধি সুদ্ধি কিছুই হলো না।
ঘর ভর্তি আত্মীয় স্বজন রয়েছে। সবাই এসেছে চৌধুরী বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়েতে। এ বাড়িতে বিয়ে হয়ে যখন সুলতা এলো তখন সবাই একডাকে চিনতো চৌধুরী বাড়িকে। জমিদার ছিলেন বাড়ির কর্তা অবনি মোহন চৌধুরী। লোকজন, আত্মীয় স্বজনে ভরা থাকতো বাড়ি। সে অনেক দিন আগের কথা। শুভম তখন স্কুলের গণ্ডি পেরোইনি। দিন রাত বৌদিদি বৌদিদি করে তার পায়ে পায়ে ঘুরতো। বড় দুই মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছিলো তত দিনে।
বিয়ের পর সুলতার কোনো ছেলেপুলে হলোনা। শাশুড়ী মায়ের সাথে জল পড়া, তেল পড়া, উপোষ, পূজো করে কোনো লাভ হলোনা। গোপনে ডাক্তারও দেখিয়ে ছিলেন অনেক। হতাশায় ভরে গেছিলো তার মন। বাঁজা, অপয়া, এসব শুনে মাঝে মাঝে মনে হতো, এমন জীবনের চেয়ে না থাকাই ভালো। মরার কথা ভাবলেই, স্বামী, দেওর, শ্বশুরের মুখটা চোখে ভাসতো। সে চলে গেলে এই মানুষ গুলোর কি হবে!

শুভমের বিয়ের সময় বড় ননদ ও পিসি, মাসী শাশুড়ীরা বার বার করে বলেছিলেন, তুমি আবার সব জিনিস আগ বাড়িয়ে করতে যেওনা, শুভমের তো ভালো, মন্দ আছে।

সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচে ছিলো সেদিন। শুভম বিয়ে করতে যাওয়ার আগে খুঁজে ছিলো বৌদিদি কে, দিদিরা তাকে বুঝিয়ে ছিলো, এতো তাকে ডাকাডাকি কেন? আমরা তো আছি নাকি?

ছোটো জা ঋতিকা হয়েছে তেমনি, সবকিছুতে দিদি দিদি করে অস্থির করে তোলে। কোনো বিধি নিষেধ মানতেই চায় না। তার সাধের সময় কি সমস্যা তৈরী করেছিলো, বলেছিলো – দিদি আমার পায়েস রান্না যদি না করতে পারে তবে, আমার পায়েস খাওয়ার দরকার নেই।

বুক কেঁপে উঠেছিলো সুলতার, যদি কোনো অমঙ্গল হয়ে যায় তবে?
সে মেয়েকে বোঝানোর সাধ্য কারো ছিলোনা। শেষে শুভম এসে বলে- তুমি আর না কোরোনা, ঠাকুরের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে বৌদিদি, তোমার ছোঁয়ায় কোনো ক্ষতি হবেনা।
তার জন্য কি কম কিছু শুনিয়ে ছিলো লোকে! তুমি তো বড়, বাড়ির ভালো মন্দের দায় তো তোমারই।
যতদিন না ঋষি হয় ভয়ে কাঁটা হয়েছিলেন সুলতা। সেই ঋষির আজ বিয়ে, ঋষির জ্যাঠা এখন আর নেই। একে তো বাঁজা তার ওপর বিধবা সে আর কোন কাজে লাগবে?

ছোটটাও হয়েছে তেমনি, ঋষি বিয়ে করতে বের হবে, তারমধ্যে দিদি দিদি করে বাড়ি মাথায় করছে।
– কি হলো দিদি,সেই কখন থেকে ডাকছি নীচে এলেনা যে, ভোলাকে বললে পায়ের ব্যাথার জন্য আর নামা ওঠা করতে পারবেনা, ওসব অন্য কাউকে বোঝালেও আমাকে বোঝাতে পারবে না। ভালোয় ভালোয় ঋষি কে আশীর্বাদ করবে চল নইলে কিন্তু…

আমি বিয়েই করতে যাবোনা, বলে উঠলো ঋষি। সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন তারা ঋষি উঠে এসে জড়িয়ে ধরেছে বড় মাকে। বললো – জন্ম থেকেই আমি আমার দুটো মাকে পেয়েছি। দুটো মায়ের আদর বড় হয়েছি। আমার সব শুভ কাজে তোমরা আশীর্বাদ করেছো। আজ আমি সংসার জীবনে প্রবেশ করবো, আর আজই তুমি সবার আড়ালে এখানে বসে আছো?

কি বলবেন বুঝতে পেলেন না সুলতা। ঋতিকা তার হাতে ধান দুব্বো তুলে দিয়ে বললো- যার দুটো মা তার আবার কিসের অমঙ্গল!

উলু, শাঁখ বেজে উঠলো, ঋষি চললো বিয়ে করতে দুই মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত