সুখের ঠিকানা

সুখের ঠিকানা

ইলিশ মাছটা কাটতে গিয়ে হাত কাটলো পায়েলের।পাশ থেকে শাশুড়ির ফোঁড়ন ,

– ধৈর্য্য বলতে কি কিছু নেই তোমার , পায়েল! সব কিছুতেই তাড়াহুড়ো।

– আম্মা ইচ্ছে করে হয়নি , হাত পিছলে গেছে।

– কই আমাদের তো এতো হাত পিছলায় না।

পায়েল কথা বাড়ালো না।গত রাতে পায়েলের বর অর্ক শখ করে দুটো ইলিশ মাছ এনে মাকে বললো ,

– কাল ইলিশ পোলাও করো তো মা , অনেকদিন খাওয়া হয় না।

পরক্ষণেই সালেহা খাতুনের স্পষ্ট জবাব ,

– ওসব বায়না এখন তোমার বউয়ের কাছে করো গিয়ে।আমি এখন শুধু আল্লাহ্‌ -রাসূলের নাম নিয়ে যে কটা দিন আছি বাঁচতে চাই।

তাই পায়েল সকালে নাস্তার ঝামেলাটা সেরেই মাছ কাটতে বসে গেছে।সালেহা খাতুন রান্নার কথায় এড়িয়ে গেলেও , পায়েলকে রাঁধতে দেখলে দুদন্ড শান্তিতে বসে থাকতে পারেন না নিজের ঘরে।প্রায়ই রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে পায়েলের কাজ তদারকি করেন।

আর , পায়েল রান্নার বিষয়ে তেমন পারদর্শী না হওয়ায় শাশুড়ির ওসব কটুবাক্য সহ্য করে।
রান্নাশেষে পায়েল এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে , তাতে দুটো আইসকিউব দেবার সাথে সাথেই শাশুড়ি মা গ্লাসে একটা চুমুক দিলেন।

– খুব ভালো করেছো। যা গরম পড়েছে না ! লেবু কি দু-টকরো দিয়েছো নাকি ? একটু বেশী টক লাগছিলো !

এক গ্লাস শরবত বানাতে দুমিনিটের মতো সময় লাগলেও তৃষ্ণার্ত পায়েলের আর তা ইচ্ছে হচ্ছিলো না।মোবাইলটা হাতে নিয়ে গা এলিয়ে দিলো বিছানায়।অনেকদিন হলো ফেইসবুকে বসা হয় না তার।তবে লগইন করে বুঝতে পারলো সেটা আসলে অনেক দিন নয় ,মাস হবে।কিন্ত বিয়ের আগে তো এমন ছিল না।মাত্র দেড় বছর হয়েছে সংসার শুরু করেছে পায়েল – অর্ক।অথচ, অর্কের টাইম-লাইন দেখে মনে হচ্ছে না ফেইসবুকে তার অনুপস্হিতির পরিমাণ পায়েলের মতো।

সময় পেলেও সে ফেইসবুকে বসে না আলসেমি করে – হয়ত এই বলে নিজেকেই স্বান্তোনা দিয়ে চুপ করালো পায়েল।

বন্ধুদের বিয়ের পর বিভিন্ন দেশে ঘোরাঘুরির বর্ণিল ছবিগুলো দেখে পায়েলের মুখটা ম্লান হয়ে গেল।পায়েলের সহপাঠী শীলা চার -পাঁচটি প্রণয়ের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিয়ে করেছে তাপসকে।এখন তাকে মনে হচ্ছে স্বামি নিয়ে বেশ সুখেই আছে।পায়েল ওদের সিঙ্গাপুরের ছবিগুলো দেখছিলো।

বাবা – মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছে পায়েল।বিয়ের পর অর্কের বাবার হার্টের সার্জারি আর পরবর্তীতে, কাজের চাপের কারণে আজও কোথাও যাওয়া হয়নি ওদের।
অথচ, যে শীলার ছবি দেখে পায়েল একথা ভাবছিলো তার জীবনেও কি ছিল শান্তির অস্তিত্ব !

শীলার বর মালয়শিয়াতে ছোট একটা চাকরি করছে এখন।এদিকে বেচারি শ্বশুড়বাড়ির অত্যাচারে থাকতে না পেরে বাবার বাড়িতেই থাকছে আজকাল।স্বামি, তনয়ের কথা খুব মনে পড়ছিলো।তাই একবছর আগের ছবিগুলো আপলোড দিচ্ছিলো মাত্র।

উপরের এই ছোট গল্পটি কাল্পনিক হলেও ; আমাদের জীবনেও এমন অনেক ঘটনা ঘটে।সকালের এক কাপ চা থেকে শুরু করে, অলস দুপুরে কিংবা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আমরা নিজেরাই সঙ্গীরূপে বেছে নিচ্ছি ফেইসবুককে।প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে এর ব্যবহারকারীদের সংখ্যা।প্রযুক্তির এই অবদানে আমরা যদিও দূরের জিনিসকে কাছে পেতে সমর্থ হয়েছি, কিন্ত কাছের মানুষগুলোকে কি হারাতে বসেছি ! কখনো ভেবে দেখেছেন কি? আবার, কখনো এই ফেইসবুকই হয়ত পরোক্ষভাবে অবসাদ আনে আমাদের জীবনে।কিন্ত কেন ? এটাই তো ভাবছেন।

এখানে প্রত্যেকটি মানুষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার নিজস্ব জগতটাকে আপনার সামনে উপস্হাপন করতে পারে।সেটা হতে পারে সত্য, অথবা তার কোন অপূর্ণ আকাঙ্খা ( ফ্যান্টাসিও বলতে পারেন ) অথবা, পুরোটাই বানোয়াট – ফেইসবুকের ভাষায় যাকে আমরা ফেইক বলি।কেউ নিজের ব্যর্থতা বা গ্লানির গল্প সুবিন্যস্ত ভাবে সাজিয়ে এখানে উপস্হাপন করে না।অথচ দেখুন, আমরা নিজেরা যাকে “ভার্চুয়াল ওয়াল্ড ” বলি, সেখানকার অনেক কিছুকেই খামোখা সত্য মেনে হতাশায় ভুগে থাকি।কি পায়নি আর কেন পায় নি এই ভেবে, আগামী দিনগুলো দুবির্ষহ করে তুলবেন ; নাকি কতটা ভাল আছি এবং আমার সাথে এরচেয়েও খারাপ কিছু ঘটতে পারতো – এই ভেবে জীবনটা উপভোগ করবেন, সে সিধান্তটা একান্তই আপনার।তাই, অবসরের সুখটুকু ফেইসবুকের মাঝে খুঁজে না বেরিয়ে ; আপনার কাছের মানুষগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখুন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত