আবুলের বিড়াল

আবুলের বিড়াল

-আপনি কি বিবাহিত?

-হ্যা।

-বাসর রাতে বিড়াল মারার অভিজ্ঞতা তাইলে আপনার আছে? দয়া করে ঘটনাটা একটু শেয়ার করবেন প্লিজ আবুলে কথা শুনে তাইজুল বিস্ময়ে ফিরে তাকায়। আবুল কিন্তু মরিয়া,সে কাতর গলায় মিনতি করে বলে…

-রাগ কইরেন না, উদ্ধার করেন প্লিজ বাসর রাতে বিড়াল মারার কথা আমি সেই বাল্যকাল থেকেই শুনে আসছি, কিন্তু কেন এই বিড়াল মারা- কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না! জগতে এত এত প্রাণী থাকতে- why should you kill only a cat at wedding night তাইজুল উত্তর দিল না। ভ্রু কুচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল আবুলের দিকে। আবুল অসহিষ্ণু গলায় আকুতি জানায়,

-ও ভাই কন না কেন?  আজ বাদে কাল আমার বিয়া!  অথচ বিলাই মারা বিষয়টা এখনও বুঝতে পারছি না।

-সত্যিই বিয়া, নাকি ইয়ার্কি করছিস?

-না না, ইয়ার্কি নয়। সত্যিই বিয়ে! আদাবর থেকে এক বন্ধুর মাধ্যমে বিড়ালও একজোড়া কিনে নিয়ে এসেছি- খাটের নিচে সুতলি দিয়ে বেঁছে রেখেছি- কিন্তু আবুলের কথা শেষ হবার আগেই তাজুল অবাক বিস্ময়ে জানতে চাইল,

-একজোড়া কেন?

আবুল বলে–বিড়াল মারা নিয়ে যাতে বউয়ের সঙ্গে কোন ধরণের কাড়াকাড়ি-মারামারি কিংবা মনোমালিন্য না হয় তাই একজোড়া।  একটা মারব আমি আরেকটা আমার বউ.। তাইজুল হাহাকার করে উঠে। বিরক্ত স্বরে বলে…

-জীবনে বহুত গাধা দেখেছি,  তোর মতো দেখি নি! তুই কি সত্যি সত্যিই বাসর রাতে বিড়াল মারবি?

-অবশ্যই!  দশটা না, পাঁচটা না, একটা মাত্র বিয়ে করব জীবনে-!  সুতরাং শুধু বিড়াল কেন, যদি ডাইনোসরস মারার কথা থাকে তাই-ই মারব!

-আ-রে-এ-এ আহাম্মক, এই বিড়াল সেই বিড়াল না!  এইটা হল বিলাই! বিলাই মানে cat ক্যাটের প্রতিশব্দ হল pussy মানে “চকিতে উঠে দাঁড়িয়ে ঝটিকা গতিতে নাক বরাবর হাঁটা শুরু করে আবুল” সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না, মানুষ এত অশ্লীল কেন? নাউজুবিল্লাহ ওয়াক থুঃ ছিঃ রাত সাড়ে এগারটা।

আবুলকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে খিল এঁটে দিয়েছে বাড়ির ছেলেমেয়েরা। হাবাগোবা আবুলের কীর্তি-কলাপে সকলেই ব্যাপক বিনোদিত। ইতোমধ্যে সে একজোড়া বিড়াল জোগাড় করে খাটের নিচে বেঁধে রেখেছে। বিড়ালকে জবাই করার জন্যেই বোধহয় কামারশালা থেকে শানিত ছুরি নিয়ে এসে ঘরের বাতায় গেঁথে রেখেছে।  তার উপর, মুর্খসুর্খ আবুল ভাগ্যগুণে অতি রূপবতী এবং শিক্ষিত এক মেয়েকে পেয়ে গেছে একেলা ঘরে mএকেবারে নির্জন নিরিবিলি রাতে! আবুল তার বিড়াল এবং বউকে নিয়ে কী কী উদ্ভট কান্ড করে তা দেখার জন্য বেড়ার ফাঁকফোকর দিয়ে চোখ পেতে রেখেছে গোটা দশেক মানুষ! আবুল বাসর শয্যার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই রুবিনা খাট থেকে নেমে এসে ওর পা ছুয়ে সালাম করে। রুবিনার কাধে হাত রেখে আবুল তাকে উঠিয়ে নিয়ে খাটে বসায়। নরম গলায় ডাকে—-

– বউ

– জ্বি

– আজ আমাদের সংসার জীবনের প্রথম রজনী। বেঁচে থাকলে দুইজনেই এইরূপ অগুন্তি রজনী পাব।  কিন্তু সবার আগে খুব জরুরি একটা বিষয়ে কথা বলতে চাই-

– জ্বি, বলুন

– খাটের নিচে দুইটা বিড়াল বেঁধে রাখছি, আওয়াজ পাইছ?

– জ্বি!

– কেন রাখছি কও দেখি?

রুবিনা ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে। উত্তরটা সে জানে না।  কিন্তু জানতে আগ্রহী। বাসর রাতে বিড়াল মারার কথা রুবিনা নিজেও শুনেছে। সে ভেবেছে এইগুলা নেহাতই কথার কথা। কিন্তু এই মানুষটা সত্যি সত্যিই বিড়াল মারার পায়তারা করছে নাকি? আজব তো! মানুষটা দেখতে খুব নিরীহ টাইপ। নামটাও খুব গাইয়্যা। নামের মতোই বোকা নাকি উনি?

– রুবিনা

– হু

– আমি আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, বিড়াল হচ্ছে নোলা টাইপ প্রাণী।  নোলা কারে কয় জান?

– জ্বি না।

– নোলা মানে লোভী।

অন্যের খাবার দেখে লোভে জিব থেকে লালা ফেলে যে তারেই লোকে নোলা বলে।  চোরের মতো এর-ওর খাবারে মুখ দেয়- রুবিনা বিস্ময়ের ভান করে।

আবুল বলে-মানুষের মধ্যেও বিড়ালের মতো নোলামি আছে। আমাদের এই হাজী বাড়িতেই রমিজা নামের একটা মেয়ে আছে। সে বিবাহিতা। কিন্তু রোজ রাতে এর-ওর ডাক শুনে পাটক্ষেতে যায়। রমিজার স্বামী আহাদ যখন বাড়িতে থাকে না, বিভিন্নসব পুরুষের সাথে রমিজা শয্যা গরম করে রুবিনা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। অন্যদিকে বাসরঘরের বাইরে যারা চোখ পেতে ছিল, তাদের মধ্যে রমিজা ছিল, তার স্বামীও ছিল হুট করেই ওদিক থেকে একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ ভেসে আসে। রমিজা “ও-বাবা-গো” বলে গুঙিয়ে উঠতে যায়, তার আগেই আহাদ ওর মুখ চেপে ধরে বাশঁবনের ওদিকে সরে যায়। রমিজার আজ খবর আছে! এইসব আওয়াক অবশ্যি বাসর ঘরে পৌছায় না! আবুল বলে,”বউ-

– জ্বি

– খুব জরুরি একটা কথা বলি,  মন দিয়ে শোন।

– বলুন

– আমাদের সবার ভেতর নোলা বিড়ালের মতো একটা মন্দ বিড়াল বাস করে।

আজ রাতে এই বিড়াল দুইটাকে আমরা মুক্ত করে দেব। বিনিময়ে স্রষ্টার কাছে দোয়া করব আমাদের বুকের ভেতর যে খবিশ বিড়ালগুলি রয়েছে তার আগ্রাসন থেকে দয়াময় স্রষ্টা যেন আমাদের মুক্তি দেন রুবিনার নিজেও টের পায় নি, আচমকাই ওর চোখ থেকে দুইটা সকরুণ জলধারা নেমে এসেছে।

এই মানুষটাকে তার পছন্দ হয়েছে। খুব পছন্দ হয়েছে! আবুলের কথা অবশ্যি তখনও শেষ হয় নি। ঘরের বাতায় গেঁথে রাখা চকচকে ছুরিকার দিকে তাকিয়ে বলে,”যদি কোনদিন তোমার মনে হয়, আমার ভেতর থেকে নোলা বিড়াল জেগে উঠেছে যদি দেখ, অন্যকোন মেয়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিবের জল ফেলছি, এই ছুরিটা হাতে নিয়ে ঘুমের ভেতরেই আমার বুকে বসিয়ে দেবে। আমি তোমাকে অগ্রিম অনুমতি দিয়ে রাখলাম রুবিনা নির্বাক! আবুল বলে,”আর যদি তোমার মধ্যে কোনদিন এইরকম কিছু দেখি রুবিনা বলে,”ওকে ডান!” আবুল বিস্ময়ে ফিরে তাকায়।

জানতে চায়,  “ওকে ডান-মানে কি”রুবিনা বলে,”এর মানে হচ্ছে, আমাদের বুকের ভেতর যদি কখনো নোলা বিড়ালের উৎপাত শুরু হয়,  আমরা তাকে খুন করে ফেলব যদি আমার বুকে বিড়াল ঢুকে, খুন করবেন আপনি। আর যদি আপনার ভেতর ঢুকে, খুন করব আমি! আবুল হাসিমুখে বলে,”ওকে ডান!” রুবিনা জলভেজা চোখে আবুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে দয়াময় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে “নোলা বিড়ালের উৎপাত থেকে আমাকের হেফাজত করুন প্রভূ! আমাদের বেঁচে থাকার দিনগুলিকে আরও বেশি মঙ্গলময় করুন
আরও বেশি পূণ্যময়!

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত