মেঘে ঢাকা চাঁদ

মেঘে ঢাকা চাঁদ

– আমাদের গলির মোড়ের মাথায় “মদীনা ফার্মেসী” টা চিনো না?
– হ্যাঁ চিনি তো।
– আসার সময় ওই ফার্মেসী হইয়া আসবা।
– কেন? কার কি হইছে?
– উফ মাহিন, এত প্রশ্ন না কইরা, যেটা বলছি সেটা করো।
– ঠিক আছে।
– তাড়াতাড়ি আসো। আর শুনো, ফার্মেসীর সামনে আইসা আমাকে ফোন দিবা।
– আচ্ছা দিবো।
– আসো এখন।
– কিন্তু মীরা, ফার্মেসী তে গিয়া কি বলবো সেটা তো বললা না!
– আরে গাধা, সেজন্যই বললাম ফোন দিতে।
– ওহ্, আচ্ছা ঠিক আছে।

ফোনের লাইন টা কেটে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আম্মুর গতিবিধি বুঝতে চেষ্টা করছিলাম,এমন সময় ছোট ভাই “রাদিন” এসে পেছন থেকে ওড়না ধরে টান দিলে আমি হকচকিয়ে গেলাম। পেছন ঘুরে দেখলাম, রাদিন মিটমিট করে হাসছে। ওর হাসি দেখে রাগে আমার গা কিড়মিড় করতে শুরু করলো। বিচ্ছুটা নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছে আমার এভাবে উঁকিঝুঁকি মারার কারণ। কোনোমতে ওর হাত ধরে টানতে টানতে আমার ঘরে নিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

– এইভাবে হাসতেছিলি কেন?
রাদিন তার হাসির বেগ আরো একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে উত্তর দিলো,
– মাহিন ভাইয়্যা আসতেছে তো তাই খুশি খুশি লাগতেছে।
যা সন্দেহ করেছিলাম তাই ঠিক। দাঁতে দাঁত চেপে আবারো প্রশ্ন করলাম,
– তুই আবার আড়িপাইতা কথা শুনতেছিলি?
– এত প্রশ্ন না কইরা স্টকে চকলেট কয়টা আছে দেখো।
চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে হালকা ঝুঁকে রাদিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আকুতির সুরে বললাম,

– বাবু, একটা চকলেটও নাই এখন। কালকে কলেজ থেকে আসার সময় নিয়া আসবো নে কেমন?
আমার কথা কানে না তুলে রাদিন চুপচাপ চেয়ারে বসে টেবিলের উপর রাখা আমার বইপত্রগুলো নাড়াচাড়া করছে। রাদিনের মতিগতি কিছু বুঝতে পারছি না আপাতত। ক্লাস ফাইভে পড়ে মাত্র। অথচ এতটুকু বয়সেই খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধি নিয়ে চলে।আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে তার এক মিনিট সময়ও লাগে না। আব্বু এত কৃপণ অথচ রাদিন ঠিকই আব্বুকে তার কথার প্যাঁচে ফেলে ভুলিয়েভালিয়ে তার সব আবদার পূরণ করিয়ে নেয়।
এর মধ্যে মাহিন কল করলো, আমি রিসিভ করলাম,

– হ্যালো।
– হ্যাঁ মীরা, ফার্মেসীর সামনে আসছি। বলো কি লাগবে তোমার? তুমি কিন্তু একটুও লজ্জা পাবা না, আমি তো তোমার ভবিষ্যৎ স্বামীই, তাই না? আমার কাছে আবার লজ্জা কিসের?

– এই তোমার বকবকানি থামাও তো। এক পাতা সিভিট কিইনা নিয়া আসো।
– অ্যাঁ…? সিভিট?
– হ্যাঁ। রাখলাম।
রাদিন বইপত্র নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,
– চকলেট নাই বুঝলাম, তোমার গল্পের বইগুলা তো আছে।
আমি আঁৎকে উঠে হুংকার দিলাম,
– খবরদার, আমার গল্পের বইয়ে হাত দিবি না।
– ঠিক আছে, আমি যাই, বেডরুমের খবর টা রান্নাঘরে পৌঁছাইয়া দিয়া আসি।
– এই না না, আচ্ছা দাঁড়া দিতেছি গল্পের বই।
পুরনো একটা গল্পের বই দিয়ে রাদিন কে বিদায় করলাম। গল্পের বইয়ের পাতায় আঁকিবুঁকি করা রাদিনের অনেকগুলো শখের কাজের মধ্যে অন্যতম।
রাদিন চলে যাওয়ার পর আমি মাহিন কে কল দিলাম,

– এতক্ষণ লাগতেছে কেন আসতে?
– আরে আমি তো তোমার বাসার দরজার সামনে দাঁড়াইয়া আছি। দরজা না খুললে আসবো ক্যামনে!
– মানে? তোমাকে উপরে উঠতে কে বলছে? জানো না, আজকে শুক্রবার, আব্বু বাসায়?
– তুমি তো সবসময় আমাকে ভীতুর ডিম বইলা অপমান করো,তাই আজকে….
– ওরে আমার বীরপুরুষ রে, এত সাহস থাকলে দরজার সামনে মূর্তির মত দাঁড়াইয়া থাকতা না, কলিংবেল বাজাইতা।
সংগে সংগে কলিংবেল বেজে উঠলো। মোবাইল টা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে হন্তদন্ত হয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। রান্নাঘর থেকে আম্মু গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

– মীরা, কে আসছে?
সাতপাঁচ না ভেবে তড়িঘড়ি করে উত্তর দিয়ে দিলাম,

– ময়লাওয়ালা আসছে আম্মু।
মাহিন অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম,

– আমার সিভিট কই?
সিভিটের পাতা টা আমার হাতে দিয়ে মাহিন চলে যেতে নিলে আমি ডাক দিলাম,

– এই দাঁড়াও, এক মিনিট।
কয়েক সেকেন্ড পর এসে ময়লার পলিথিন টা হাতে নিয়ে মাহিনের দিকে এগিয়ে দিলাম,

– যাওয়ার সময় ডাস্টবিনে ফালাইয়া দিয়া যাবা।
মাহিন করুন সুরে মিনমিন করে বললো,

– শেষমেষ আমার হাতে ময়লার পলিথিন ধরাইয়া দিলা!

– এইটা তোমার অতিরিক্ত সাহস দেখানোর ফল, বুঝছো? যাও এখন, আব্বু গোসল করে বের হয়ে যাবে এখনি।
মাহিন আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল।

মাহিন হচ্ছে আমার বাধ্য প্রেমিক। মাস্টার্সে পড়ছে। বাবা-মা গ্রামে থাকেন আর সে ঢাকায় চারজন বন্ধুর সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকে। দেড় বছরের সম্পর্ক আমাদের। আমার চাচাতো ভাই ফাহিমের বন্ধু মাহিন। এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে আমরা সবাই গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম সাতদিনের জন্যে। সেই সময় ফাহিম ভাইয়্যাও তার কয়েকজন বন্ধু নিয়ে গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলো। তার মধ্যে মাহিনও ছিল। আর পরিচয় টা তখন থেকেই। প্রথমে মোবাইল নাম্বার আদানপ্রদান তারপর ধীরে ধীরে হৃদয়ের লেনদেন। আমাদের কাহিনী টা আর ১০ টা প্রেমের কাহিনীর মতোই। রাত জেগে কথা বলা, মান-অভিমান, প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবেলা খাওয়া-ঘুম-গোসলের খোঁজ খবর নেয়া, লুতুপুতু রোমান্স এসবের একটাও আমাদের সম্পর্কের মধ্যে নেই।

যেগুলো আছে সেগুলো হল- রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য পরস্পর কে তাড়া দেয়া, রাগ-অনুরাগ,প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবেলা ঝগড়া করা নিতান্তই কিছু তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আর প্রেমিকা হিসেবে নিজের কতৃত্ব ধরে রাখা। আমাদের মধ্যে লুতুপুতু ব্যাপারটা একেবারেই নেই,এটা বললে অবশ্য ভুল হবে। তবে এই লুতুপুতু টা নিতান্তই প্রয়োজনের খাতিরে করা হয়ে থাকে। এই যেমন আজকে সকাল থেকে মাহিন একনাগাড়ে কল দিয়ে যাচ্ছিলো,তার নাকি আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। তখন আমি বাসার সামনে আসতে বললাম মাহিন কে। এমন হঠাৎ করে প্রেম উতলে উঠার কারণ টা হচ্ছে কাল রাতে মেজাজ দেখিয়ে বলেছিলাম, ” শুনো মাহিন, তোমার মত নিরামিষ মানুষের সাথে কখনো প্রেম জমে না, যা জমে তা হচ্ছে অভিমান”।
আলগা লুতুপুতু দেখানোর ফলস্বরূপ তাকে আজ ময়লাওয়ালা হতে হল। দুপুরবেলা আব্বু,রাদিন আর আমি খেতে বসেছি। আম্মু যথারীতি খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। আব্বু হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন,

– তরকারি তে এত ঝোল রাখছো কেন? রান্নার সময় এত তাড়াহুড়ো থাকে কেন? আমরা তো মানুষ,গরু ছাগল না যে যাই সামনে দিবা তাই খাইয়া নিবো!
পরিবেশ থমথমে হয়ে গেল। আম্মুকে মাথা নীচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আব্বু আবার হুংকার ছাড়লেন,

– মূর্তির মতো দাঁড়াইয়া থাইকো না। যাও গিয়া নিজের কাজ করো। আমরা নিজেরা নিয়া নিয়া খাইতে পারবো।
আব্বুর নির্দেশ মেনে আম্মু ডাইনিং রুম থেকে চলে গেলেন।

এই ধরনের পরিস্থিতি আমাদের সংসারে নতুন কিছু না। আব্বু প্রায় সবসময়ই খুব তুচ্ছ বিষয়াদি নিয়ে আম্মুকে অযথা বকাবকি করেন। মাঝে মাঝে কোনো কারণ খুঁজে না পেলে অকারণেই আব্বু এমন রুক্ষ আচরণ করেন আম্মুর সাথে। আমার কেন জানি মনে হয়, আব্বু ইচ্ছে করে এমন করেন। অথচ আমাদের দুই ভাইবোনের সাথে আব্বু কখনো এভাবে কথা বলেন না। আমাদের কে তিনি যথেষ্ট আদর করেন, ভালবাসেন। তাঁর সব রাগ,জেদ শুধু আম্মুর সাথেই। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আব্বুর এই চরিত্র। অথচ আম্মু কে কখনো প্রতিবাদ করতে দেখি নি। তিনি মুখ বুজে এসব সহ্য করে নেন। আড়ালে গিয়ে শুধু চোখের পানি ফেলেন। আব্বুর এত অবহেলা পাওয়ার পরও আম্মুর চোখে আব্বুর জন্য কখনো এতটুকু ঘৃণা দেখি নি। বরং উপচে পড়া ভালবাসা,বিনয় আর শ্রদ্ধাবোধ দেখেছি। আব্বুর প্রত্যেকটা কাজ খুব যত্ন নিয়ে করেন আম্মু। আব্বুর প্রতি আম্মুর ভালবাসার কোনো কমতি দেখি নি কোনোদিন।উল্টো আমি যখন অতিষ্ট হয়ে আব্বুর আড়ালে আব্বুর বিরুদ্ধে কিছু বলে ফেলি,আম্মু তখন জোর গলায় প্রতিবাদ জানান আর সতর্ক করে দেন “আর কখনো যেন এ ধরনের কথা আমার মুখে না আসে”।

পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরী হওয়ায় কলেজে যাওয়ার সময় আমার তাড়াহুড়ো লেগে গেল। নাস্তা খাওয়ার সময় ছিল না বিধায় নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে যাচ্ছিলাম,কিন্তু আম্মু জোর করে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে ভাত মেখে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন। খুব অসহ্য লাগছিলো আমার। আম্মুর এই জোরজবরদস্তিগুলো মাঝে মাঝে আমার বিরক্তির কারণ হয়। বাসা থেকে বের হয়ে মাহিন কে গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে মনে খুব খুশি হলাম কিন্তু প্রকাশ করলাম না। চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি ফুটিয়ে মাহিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম,

– কি ব্যাপার? এখানে কেন? সন্ধ্যের পর কোচিং থেকে ফেরার পথে দেখা করবো বলছিলাম না?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে মাহিন পালটা প্রশ্ন করলো,

– তোমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসি?
ভেবে দেখলাম, এমনিতেই দেরী হয়ে গিয়েছে অনেকটা। এখন যদি ঢং দেখিয়ে মাহিন কে ফিরিয়ে দিই আজ তাহলে আর ক্লাসে ঢুকতে পারবো না।
আমি বললাম,

– ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাইয়া দিবা, ঠিক আছে?
মাহিন বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বললো,

– তুমি পেছনে বসলে এমনিতেই আমার বাইকের স্পীড বেড়ে যায়। উঠে পড়ো।
কলেজ থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে এসে আম্মু কে টেবিলে ভাত বাড়তে বললাম। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেটে। আম্মু রান্নাঘর থেকে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আমার ঘরে আসলেন,

– গ্যাস ছিল না এতক্ষণ। মাত্র রান্না বসাইছি। তোর বেশি ক্ষুধা লাগলে দই-চিড়া মাখাইয়া দিই?
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল আম্মুর কথা শুনে। আমি ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারি না, আর ক্ষুধা পেটে মিষ্টি কিছু খেতেও পারি না,বমি বমি ভাব হয়। মেজাজ দেখিয়ে আম্মুকে বললাম,

– লাগবে না। গ্যাস যখন ছিল তখন রান্না করতে পারলা না? সারাদিন যে বাসায় থাইকা কি করো,আল্লাহ্‌ই জানে!
আম্মু কোনো প্রতিউত্তর দিলেন না। মুচকি হেসে নিঃশব্দে চলে গেলেন। আর আমি ক্ষুধা পেটে নিয়ে মাহিনের সাথে ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম এক সময়।
একদিন বিকেলবেলা বারান্দায় বসে গল্পের বই পড়ছিলাম, এমন সময় আম্মু মোবাইল হাতে নিয়ে এসে বললেন,

– মীরা, দেখ না,ইমো তে তোর ছোট খালামণি ভিডিও কল দিতেছে কিন্তু আমি রিসিভ করতে পারতেছি না।
আমার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায় যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে বললাম,

– উফ আম্মু,দেখতেছো না বই পড়তেছি? আর তোমাকে এই এক জিনিস কতবার শিখাবো,বলো তো? তোমার আর টাচ মোবাইল ইউজ করতে হবে না, আব্বুকে বলবো একটা বাটন মোবাইল কিইনা দিতে তোমাকে।
আম্মুর আর কোনো কথা না শুনে আমি ঘরে চলে এলাম শান্তিতে বই পড়তে।

আমার এইচ.এস.সি পরীক্ষার আর মাত্র ১ মাস বাকি। রাতদিন এক করে পড়াশুনা করতে হচ্ছে আমাকে। আমি রাত জেগে যখন পড়তাম,আম্মুও আমার পাশে বসে থাকতেন। ঘুমে ঢলে পড়ে গেলেও ঘুমের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করেই জেগে থাকতেন। অথচ আমার ঘুম কাটানোর জন্য আম্মু একটু পরপর কফি বানিয়ে দিতেন আমাকে। আমি আম্মুকে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য বলতাম কিন্তু তিনি শুনতেন না। আমি যতক্ষণ পড়তাম,ততক্ষণ আমার সাথে জেগে থাকতেন।

আমার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মাহিন একটা প্রাইভেট ব্যাংকে ভালো স্যালারি তে জব পেয়ে যায়। পোস্টিং হয় ঢাকার বাইরে,চিটাগাং এ। তখন আমার মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকে যায়। দূরত্ব বেড়ে গেলে নাকি ভালবাসা কমে যায় শুনেছি। আমার ভেতরের খবর মাহিন টের পেয়ে গেলে,সে আমাকে আশ্বস্ত করে এই বলে যে,আমার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপর ই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার ফ্যামিলি থেকে আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে।

এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পর বাসায় বড় ফুফু আসলেন বেড়াতে। আমি খানিকটা অবাক হলাম। বড় ফুফু কখনো আমাদের বাসায় আসেন না, বলা যায় আসতে চান না। তাই হঠাৎ নিজের ইচ্ছায় বেড়াতে আসলেন, ব্যাপার টা আমার কাছে সুবিধার মনে হল না। এই মানুষ টা কোনো কালেই আমার পছন্দের ছিল না। কারণ হচ্ছে, আম্মু কে বড় ফুফু একেবারেই সহ্য করতে পারেন না এটা আমি জ্ঞান হবার পর থেকে দেখে আসছি। ঈদের ছুটিতে যখন গ্রামে যেতাম, তখন আম্মুর সাথে তিনি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতেন। শুধু বড় ফুফু না, দাদী আর বড় চাচ্চু ছাড়া দাদা বাড়ির প্রায় প্রত্যেকটা মানুষ ই আম্মুর সাথে এমন ব্যবহার করতেন।

অথচ আম্মুর কোনো অন্যায় আমার চোখে পড়ে নি কখনো। বরং আম্মু সবসময় ভয়ে ভয়ে বুঝেশুঝে চলতেন,যেন তার কোনো ভুলত্রুটি না হয়ে যায়। কিন্তু দাদী যতদিন বেঁচে ছিলেন,তাঁর সামনে কেউ আম্মুকে অসম্মান করতে পারতো না। খুব ভালবাসতেন তিনি আম্মুকে। আম্মুর মুখে শুনেছি,দাদী ই নাকি আম্মুকে পছন্দ করে এ বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছিলেন। বড় ফুফু বাসায় আসার পর থেকে দেখতাম,আব্বু অফিস থেকে ফেরার পর দরজা বন্ধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা ফুফুর সাথে কথা বলতেন। এটা নিয়ে আম্মুর কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও আমার ছিল। গোয়েন্দাগিরি তে নেমে পড়লাম। গোয়েন্দাগিরি করেও যখন রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলাম না তখন একদিন বিকেলবেলা বারান্দায় বসে ফুফু আমার চুলে তেল লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন,

– আর কয়েকদিন পর থাইক্যা তো আমারি তোর চুলে তেল লাগাইয়া দিতে হইবো, তাই এহনি অভ্যাস কইরা নিতাছি আর কি।
উনার কথার মানে বুঝতে না পেরে আমি বললাম,

– কি বলতেছেন, কিছুই তো বুঝতে পারতেছি না।
ফুফু ঠোঁটের কোণে প্রশস্ত হাসি টানলেন,

– তোরে আমার ঘরে বউ কইরা নিমু। সজীব এহন তোর ফুফাতো ভাই না, হবু স্বামী। বুঝলি মুখপুরী?
আম্মু শুকানো কাপড়গুলো বারান্দা থেকে নিতে এসেছিলেম,ফুফুর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলেন।
পুরোপুরিভাবে স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। চুলে তেল দেয়া শেষ না করেই উঠে চলে এলাম,তারপর দরজা বন্ধ করে দিলাম নিজের ঘরে গিয়ে।
আমি চলে আসার পর আম্মু ফুফুকে বললেন,

– এইসব কি বলতেছেন বড় আপা? এইটা তো অসম্ভব।
ফুফু আম্মুর দিকে তেড়ে আসলেন,

– সম্ভব অসম্ভব তুমি বিচার করার কেডা? আমার ভাই আমারে কথা দিছে মীরা রে আমার হাতে তুইল্লা দিবো। হুনো শেফালী, এই বিষয়ে তোমার নাক গলানোর কোনো দরকার নাইক্কা।

– বড় আপা,মীরা তো আমারও মেয়ে। ওর জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্তের সময় আমি নাক গলাবো না, এইটা আপনি কেমনে বললেন!
ঘর থেকে সবকিছু শুনতে পাচ্ছিলাম আমি। এই প্রথম আম্মুর মুখে বুলি ফুটতে দেখলাম। কথা চালাচালির এক পর্যায়ে শুনতে পেলাম ফুফু আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,

– তোরে তো আমার ভাই বিয়াই করতে চায় নাই। নেহায়েত বড় ভাইজান জোরাজুরি করছিলো বইলা রাজি হইছিলো শেষমেষ। আইজ যদি আমার ভাইয়ের পছন্দমতো সালেহার লগে ভাইয়ের বিয়া করাইতাম তাইলে আইজ আমার এমন অপমান সহ্য করণ লাগতো না। আইজ আমার ভাই আসুক, তোর একদিন কি আমার একদিন!
খুব ইচ্ছে করছিলো ফুফুর মুখের উপরে কয়েকটা জবাব দিয়ে আসি।কিন্তু আমার মা আমাকে বেয়াদবি করার শিক্ষা দেন নি বিধায় পারলাম না। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে শুরু করলাম আমি। আম্মুর প্রতি আব্বুর এত অসন্তুষ্টির আসল কারণ তাহলে এটা! আব্বু বিয়ের আগে অন্য কাউকে ভালবাসতেন!
আব্বু অফিস থেকে ফেরার পর বাসায় তুমুল অশান্তি শুরু হয়ে গেল। আম্মুকে যা তা বলে গালাগালি করলেন আব্বু। ফুফু কিছুক্ষণ পরপর আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছিলেন।

দু’তিনদিন পর ফুফু বাড়িতে চলে গেলেন। পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হল। কিন্তু আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। এর মধ্যে আমি আম্মুকে মাহিনের কথা জানিয়ে দিলাম। মাহিনের সাথে কথাও বলিয়ে দিলাম আম্মুকে।
এদিকে ফুফু বাড়িতে গিয়ে সমানে আব্বু কে ফোন করে বিয়ের ডেট ফিক্সড করার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। নানাবাড়ি দাদাবাড়ির দুই পরিবারের মধ্যে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেল। আমার মামাবাড়ির কেউই এই বিয়েতে রাজি হল না। কারণ আমার ফুফাতো ভাই সজীব মেট্রিক পাশ করে তাদের জমিজমা দেখাশুনা করার জন্য গ্রামেই থাকে এখন। কয়েক বিঘা জমির মালিক হওয়ায় আমার বড় ফুফু অহংকার নিয়ে চলেন সবসময়। কিন্তু আমার মামাবাড়ির সবাই আর্থিকভাবে দূর্বল থাকায় আব্বু কখনো তাদের খুব একটা গোণায় ধরতেন না। তাই সত্যিকার অর্থে এ ব্যাপারে তাদের করার মত কিছু ছিল না। আর বড় চাচা রাজি না থাকলেও তিনি ছিলেন নিরুত্তাপ।
একদিন আমার এক ক্লাসমেটের বিয়েতে যাওয়ার জন্য ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছিলাম। তখন আম্মু ঘরে এসে আমার সামনে বসে একদৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আম্মু কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,

– কি দেখো আম্মু?
আম্মু মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,

– আমি অসুন্দর হইলেও তুই তোর আব্বুর মত হইছিস। ফর্সা ধবধবে গায়ের রং,টানা টানা চোখ, তোর আব্বুর মত লম্বাও হইছিস। তোরে অন্তত আমার মত পোড়াকপালি হইতে হবে না রে। রূপ নাই দেইখা সারাজীবন জামাইয়ের তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহ্য করতে হবে না।
আমি খেয়াল করলাম,আম্মুর চোখজোড়া অশ্রুতে চিকচিক করছে।
সেদিন আমি আম্মুকে কোনো শান্তনা দিতে পারি নি। আমার আম্মুর বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের ঘাটতি থাকলেও মানসিক সৌন্দর্য্যের কোনো অভাব ছিল না।
অশান্তি দিনের পর দিন বেড়েই যেতে লাগলো। আম্মুর সাথে কথা বলে অনুমতি নিয়ে মাহিন বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু আব্বু তা মেনে নেন নি। কারণ তার বোনের কথা অমান্য করার সাধ্য আমার বাবার ছিল না। খুব ভেঙে পড়লাম আমি। আমার এই অবস্থা দেখে আম্মু বললেন,

– তুই চিন্তা করিস না মা। এতদিন নিজের কষ্ট সব মুখ বুইজা সহ্য করলেও, তোর সুখের জন্য আমি এইবার মুখ খুলবো। দরকার হইলে তোর বাপের বিরুদ্ধে যাব।
এরপর আম্মু আব্বুর মুখের উপর কথা বলা শুরু করলে আব্বু আরো ক্ষেপে গেলেন আম্মুর উপর।
প্রতিদিনই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলতো। আম্মু সমঝোতায় এসে আব্বুকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু আব্বু তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকতেন।
এমনি একদিন সকালে আব্বু অফিসে যাওয়ার আগে আম্মুকে কড়া করে হুমকি দিয়ে গেলেন,

– আজকে বাসায় আইসা যেন তোরে আমি না দেখি। ব্যাগপত্র গুছাইয়া বাপের বাড়ি চইলা যাবি। আমার কথার নড়চড় হইলে কুরুক্ষেত্র হইয়া যাবে বইলা দিলাম।
আব্বু বের হওয়ার পরপর ই আম্মু আমাকে বললেন,রাদিন কে স্কুলে দিয়ে আসতে। দু’বালতি কাপড় ধুতে হবে তাই আম্মু আজ রাদিন কে স্কুলে নিয়ে যেতে পারবেন না।
রাদিন কে স্কুলে দিয়ে বাসায় ফিরে এসে দেখি, সদর দরজার সামনে প্রচুর ভীড়। বুকটা আঁৎকে উঠলো আমার। ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই বাড়িওয়ালী আন্টি বলে উঠলেন,

– গ্যাস বিস্ফোরনে তোমার আম্মু তোমার আব্বু কে কল করে জানাও তাড়াতাড়ি।
আমার মাথায় তখনো কিছু কাজ করছে না। আম্মুর পুরো শরীর টা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই ছাইগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করছিলাম আঁকড়ে ধরতে। নিস্তব্ধতা কাটিয়ে সম্বিত ফিরে পেলে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলাম। আর কোনো আলোর দিশা দেখতে পাচ্ছিলাম না যে! চারিদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। মুহূর্তেই যেন আমার পুরো দুনিয়াটা ওলটপালট হয়ে গেল। বারবার কানের কাছে একটা কথাই ভেসে আসছে,
“পাগলী মেয়ে আমার, এইভাবে ভাইঙ্গা পড়লে চলবে? যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষ অনুপস্থিত থাকলে,যুদ্ধ চালানো যায় না।এখন দেখবি,সব ঠিক হইয়া যাবে। কাঁদিস না মা, তোর যে এখন অনেক দায়িত্ব”।

মনে হল,হাতের মুঠোয় আগলে রাখা ছাইগুলোর প্রতিটা কণা এই কথাগুলো একনাগাড়ে বলে চলেছে। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার।
আম্মু কে কবর দিয়ে সাতদিন পর গ্রাম থেকে ফিরলাম আমরা। এই কয়েকটা দিন মা হারানোর শোকে আমি এতটাই কাতর ছিলাম যে,আব্বুর দিকে খেয়াল করার সময় পাই নি। রাদিন টা কে সামাল দিতে পারছিলাম না কোনো অবস্থাতেই, তাই মামী এসে কিছুদিনের জন্য ওকে নিয়ে গেলেন। সেই সাথে ইন্টার পড়ুয়া মামাতো বোনটাকে রেখে গেলেন আমাকে সংগ দেয়ার জন্যে।

রাত্রি দ্বিপ্রহর। দু’চোখে ঘুমের লেশমাত্র নেই। ক্ষণে ক্ষণেই আম্মুর স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে, আর চোখের পাপড়ি ভিজে যাচ্ছে। আম্মুর কোনো কথায় আমি বিরক্ত হলে আম্মু যেভাবে অসহায় হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন, তার সেই অসহায় চাহনি টা যতবার মনে পড়ছে,ততবার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আমার। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ আম্মুর স্মৃতিগুলোর সাথে লুকোচুরি খেলার পর বড্ড ক্লান্ত লাগছিলো। পানি খাওয়ার জন্যে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়াতেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। কান্নার আওয়াজ টা আব্বু আম্মুর ঘর থেকে ভেসে আসছে মনে হল। বেশ ভড়কে গেলাম আমি। এত রাতে কে কান্না করবে! রাদিনও তো বাসায় নেই। আব্বুর ঘরে গিয়ে লাইট অন করলাম। তারপর যা দেখলাম, তা দেখার জন্য সত্যি ই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আম্মুর একটা পুরনো ছবি বুকে আগলে ধরে মাটিতে বসে বাচ্চাদের মত ঠোঁট ভেঙে কাঁদছেন আব্বু। কাছে গিয়ে আমি আব্বুর কাঁধে হাত রাখলাম। আমাকে দেখে আব্বু এবার হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ শুরু করলেন,

– আমি আকাশের তারা গুনতে গিয়া চাঁদ রে হারাইয়া ফেলছি,মা। সারাজীবন তোর মা রে একটু সুখের মুখ দেখাইতে পারলাম না আমি। আমি কত হতভাগা,চাঁদের কদর করতে পারলাম না। তারে ছাড়া যে এখন আমার বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতেছে।

আব্বুর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে খেয়াল করলাম,মাত্র এই ক’দিনেই মানুষটা অনেকখানি বুড়িয়ে গেছেন। চোখের নিচে কালি পড়েছে,চেহারায় ভাঁজ পড়ে গেছে,কেমন যেন একটা এলোমেলো ভাব। এভাবে কেটে গেল আরো সপ্তাহখানেক। রাদিন কে মামাবাড়ি থেকে নিয়ে আসলাম। মামাতো বোনটাও চলে গেল। সংসারের পুরো দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। সাঁতার না জানা একটা মানুষ কে যদি মাঝসমুদ্রে ছেড়ে দেয়া হয়,তখন সে তীরে উঠার জন্য এদিক সেদিল হাতরাতে থাকে। আমার অবস্থাও তেমনই হয়েছে এখন। আমার কষ্ট হবে ভেবে আব্বু একটা কাজের বুয়া রেখে দিলেন। দু’বেলা এসে কাজ করে দিয়ে যায়। এর মধ্যে একদিন বড় ফুফু ফোন দিয়ে আবার বিয়ের কথা তুললে,আব্বু প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলেন।
বললেন,

– এই তোমার আস্কারা পাইয়া পাইয়া আমি ভালমন্দের বিচার কর‍তে ভুইলা গেছিলাম আপা। আজকে আমি আর অন্ধ নাই। মীরার মা আমার চোখ খুইলা দিয়া গেছে। তোমার ঘরে আমি আমার মেয়ে রে কিছুতেই দিবো না। আমার মেয়ের বিয়ে আমি ওর মায়ের পছন্দ করা ছেলে মাহিনের সাথেই দিবো। আমারে তুমি আর ফোন দিবা না,সাবধান।
তারপর মাহিনের বাবা-মা’র সাথে কথা বলে পাকা কথা দিয়ে দিলেন আব্বু। চারপাশের সবকিছু ঠিকঠাক চললেও,মায়ের শূণ্যতা টা আমি প্রতি মুহূর্তে টের পেতাম।

একদিন বুয়া আসে নি বলে খুব ঝামেলায় পড়ে গেলাম। রাদিন কে স্কুলে দিয়ে এসে,আব্বুকে অফিসে বিদায় করে দিতে দিতে দুপুরের রান্নার আয়োজন করতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো। এরই মধ্যে আবার গ্যাসও চলে গেল।
দুপুর ২ টা বাজে। এদিকে, ক্ষুধার জ্বালায় পেট চোঁ চোঁ করছে। উপায় না পেয়ে ফ্রিজ থেকে দই বের করে চিড়া মাখিয়ে নিলাম। কিন্তু মুখে আর তুলতে পারলাম না। তার আগেই কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত