মেখলার ঘর

মেখলার ঘর

লিভ ইন করাতে খুব একটা আপত্তি ছিলো না মেখলার। চার বছরের প্রেম ওদের, তাছাড়া আবির ছেলেটাও খুব ভালো। এ বছরেই বিয়ে করতো ওরা। কিন্তু হঠাৎ এমন করে চলে গেল বাবা!

মাকে মনে পড়ে না মেখলার। ছোটবেলা থেকে অভিভাবক বলতে বাবাকেই চেনে ও। দাদার সঙ্গে ঝগড়া হলে বাবা সবসময় মেখলার পক্ষে কথা বলতো। দাদাও কিছুক্ষণের জন্য রাগ করলেও একটু পরেই আবার ভাব করে নিত বোনের সঙ্গে। কোনোভাবে যেন দাদাও বুঝে গেছিলো, মা হারানো বোনটাকে মানুষ করার দায়িত্ব ওর উপরেও কিছুটা বর্তায়।

বেশ কাটছিলো দিনগুলো। এই তো দু’বছর আগে দাদার বিয়ে হলো। কত খুশি বাড়িতে! তার এক বছর পর মেখলা চাকরিও পেয়ে গেল! কী খুশিই না হয়েছিলো বাবা!

প্রথম প্রথম ঘর ছেড়ে পিজিতে এসে থাকতে কষ্ট হলেও মানিয়ে নিয়েছিলো মেখলা। বাবা মানসিকভাবে খুব সাপোর্ট করতো সবসময়, আর এদিকে আবির তো ছিলোই। একটু সময় পেলেই দেখা করতে চলে আসতো উত্তর থেকে। আস্তে আস্তে শহরটা ভালো লাগতে শুরু করেছিলো মেখলার। কলকাতার এদিকের রাস্তাগুলো বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম, কোথাও যেন নিজের মফঃস্বলের বাড়ির ছোঁয়া পায় মেখলা। শুধু একটাই জিনিস অদ্ভুত লাগে মেখলার, এখানে সবাই যেন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত৷ এমনকি পিজিতে থাকা মেয়েগুলো পর্যন্ত, কই, ততটা আন্তরিক তো কেউই হতে চায় না!

বছরখানেক আগেই আবিরের বাড়ির সঙ্গে বাবার যোগাযোগ করে দিয়েছিলো মেখলা। সব ঠিকঠাক, হঠাৎ এই দুর্ঘটনা। দাদা যখন মেখলাকে খবর দিল, ততক্ষণে সব শেষ। কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না মেখলার, ওর বাবা, এত শক্ত মানুষটা, এইভাবে দুম করে নেই হয়ে গেল!

প্রায় আট মাস হয়ে গেল বাবার চলে যাওয়া৷ খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে মেখলার। বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছেটাও চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। বাড়ি গেলে খুব কষ্ট হয় বাবার জন্য। কলকাতাতেও একলা লাগতো খুব। এরই মধ্যে নতুন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কিছুটা এগিয়ে এল আবির। মূলত মেখলার কথা ভেবেই নতুন ফ্ল্যাটটা নিয়েছে আবির। এখান থেকে মেখলা বেশ যাতায়াত করতে পারবে। একসঙ্গে থাকলে মেখলারও খুব একটা একা লাগবে না।

প্রথম প্রথম ক’টা দিন বেশ কাটছিলো মেখলার। অনেকদিন পর কেউ আবার খাইয়ে দিচ্ছিলো নিজে হাতে করে, কেউ ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছিলো মাথায় হাত বুলিয়ে। সব মেয়েই বোধহয় বয়ফ্রেন্ড বা হাজব্যান্ডের মধ্যে একটা বাবার মতো মানুষ পেতে চায়। আবির খুব খেয়াল রাখে মেখলার, খুব যত্ন করে। এই ক’টাদিন আর রাত্রে কেঁদে বালিশ ভেজায়নি মেখলা। কেবল আজই হঠাৎ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে খুব। কেবলই কান্না পাচ্ছে।

সকাল থেকে শরীরটা খারাপ থাকায় আজ আর অফিস যায়নি মেখলা। আবিরের আবার ছুটি নেওয়ার উপায় ছিলো না আজ৷ সারাদিন মেখলা একাই আছে তাই। এই প্রথম এই ফ্ল্যাটটায় একটা গোটা দিন একলা কাটালো মেখলা। সারাদিনটা গল্পের বই, সিনেমা, গেম আর ওপরের ফ্ল্যাটের শব্দ শুনতে শুনতেই কেটে গেল। ওপরের ফ্ল্যাটে বোধহয় একটা বাচ্চা আছে। মাঝে মাঝেই বাচ্চার গলার আওয়াজ আসছিলো। সন্ধের পর মশার ভয়ে সব জানলা বন্ধ করে দেওয়ায় এসব শব্দ আর পাওয়া যায় না। বাচ্চাটার মা বোধহয় হাউস ওয়াইফ। দুপুর থেকে রান্নার আওয়াজ হচ্ছে ছ্যাঁকছোঁক। এমনকি একবার শিলে বাঁটার আওয়াজও পাওয়া গেল। তাছাড়া দুপুরদিকে নানারকম বাংলা সিরিয়ালের গানও ভেসে আসছিলো কানে। এমনিতে এসব বড্ড বোকা বোকা মনে হয় মেখলার। কিন্তু আজ এসব শুনেও মন কেমন করছে মেখলার। কেমন সাজানো একটা সংসার। সারাদিন গল্পগুজব, বাচ্চার শব্দ, রান্নার শব্দ, টিভি চলার আওয়াজ, সুখী বাঙালী সংসার৷ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় মেখলার। বাড়িতে থাকার সময় কখনো এভাবে ভেবে দেখেনি ও। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার পর খাইয়ে দিত বাবা, ঠাম্মু নিজের ঘরে বসে বসে টিভি দেখতো, রান্নার মাসি ঘটরঘটর করে মশলা বাঁটতো শিলে। এসব শব্দ যে এত জীবন্ত, এত আপন, আগে কখনো অনুভব করেনি মেখলা। যদি সম্ভব হতো এক ছুট্টে ওপরে চলে যেত মেখলা। কিন্তু কলকাতায় তেমন করে না কেউ। এই যে এই ফ্ল্যাটটায় এতগুলো পরিবারের বাস, কই, এরা তো কেউ বিকেলবেলা চুল বেঁধে, চা খেতে খেতে এবাড়ি ওবাড়ি গল্প করে না! এমনকি এতদিন ধরে যে আছে মেখলা, কারোর সঙ্গে পরিচয়ও হয়নি তেমন।

আবিরের ফিরতে ফিরতে সাতটা হয়ে যায়। রাস্তায় যা জ্যাম হয়! আবিরের ফেরার আগে কিছু বানিয়ে রাখা যেতে পারে। নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলো মেখলা। খুব একটা রান্নাবান্না জানে না ও। বাবা কোনোদিন শিখতেই দেয়নি কিছু। আর এমনিও এই ফ্ল্যাটে যে রান্নার সব জিনিসপত্র আছে তাও না। মেখলা, আবির দুজনে প্রায়ই বাইরে খায়। ঘরে বানাতে হলে ওই টুকটাক ম্যাগি বা অমলেট। বড্ডজোর চিকেনের কোনো আইটেম। এসবের জন্য ইনডাকসন আছে একটা। কিন্তু তাই বলে সারপ্রাইজ দেওয়ার মতো কোনো রান্না করার জিনিসপত্র নেই এখানে৷ কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলটা বেজে উঠলো৷ ঘড়ি দেখলো মেখলা। সবে সাড়ে পাঁচটা। এর মধ্যে চলে এল আবির! একরাশ আনন্দ নিয়ে দৌড়ে গিয়ে আইহোলে চোখ রাখলো মেখলা। আবির তো নয়! কী দরকার এই ভদ্রমহিলার! ভাবতে ভাবতেই দরজা খুললো মেখলা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলা একগাল হেসে নমস্কার করে বললো, “আমি নম্রতা। তোমাদের ওপরের ফ্ল্যাটেই থাকি আমরা। খুব ব্যস্ত থাকি মেয়েকে নিয়ে! আলাপ করতে আসা হয়নি তাই! এইমাত্র ঘুমোলো মেয়েটা, মায়ের কাছে রেখে তবে আসতে পারলাম।”

ভগবান কি মনের কথা বুঝতে পারে! ভীষণ খুশি মনে মেখলা দরজা থেকে সরে গিয়ে বললো, “ভেতরে এসো দিদি। আসলে ফ্ল্যাটটা তো আবিরের। আর আমরা এখনো বিয়েও করিনি। আমারও একটা ভয় থেকেছে, কেজানে সবাই কীভাবে দেখবে আমাদের সম্পর্কটা! তাই আমিও আর নিজে থেকে আলাপ করতে যাইনি।”

হেসে ঘরে ঢুকলো নম্রতা। বললো, “আরে ঠিক আছে! অত লজ্জার কী আছে! এমন তো কলকাতা শহরে হামেশাই হয়। তাছাড়া কাউকে ছেড়ে যাওয়ার থেকে কারোর সঙ্গে থাকা অনেক ভালো। ”

হেসে ফেললো মেখলা। বললো, -“আজ সারাদিন তোমাদের ফ্ল্যাটের শব্দ শুনেই কেটেছে আমার। কিচ্ছু কাজ ছিলো না সারাদিন। সারাদিন বোর হয়েছি আর আফসোস করেছি কেন একা একা ঘরে থেকে গেলাম তাই ভেবে!”

-“ইসস! তাই! জানলে আগেই তোমাকে ডাকতাম। কেমন করে জানবো বলো তুমি সারাদিন একা একা আছো! যাক গে, যা বলতে এলাম, আজ আমাদের ঠাম্মি মানে দিদিশাশুড়ির ছিয়াত্তরতম বার্থডে। তাই ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি আমরা। এমনিতে তো ফ্ল্যাটের কারোর সাথে সময় কাটানো হয়েই ওঠে না, তাই ভাবলাম এই উপলক্ষে সবাইকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াই একটু। বাঙালী মেয়ে তো, খেতে আর খাওয়াতে দু’টোই ভীষণ ভালোবাসি। তোমার সঙ্গে থাকে ছেলেটা, ও কখন ফিরবে? আটটার দিকে আসতে পারবে না দুজনে?”- শেষ কথাটা বলতে বলতে মেখলার হাতে হাত রাখলো নম্রতা। কলকাতায় আসার পর থেকে এত আন্তরিকভাবে নিজের বাড়ি যেতে বলেনি কেউ। ভীষণ খুশি মনে বলে উঠলো মেখলা, “নিশ্চয় দিদি! কেন যাবো না! আবির ফিরুক, দুজন মিলে একসঙ্গে যাবো! এমন পার্টি মিস করা যায়!”

সারাদিনের মন খারাপটা কেমন যেন মিলিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক করে নেয় মেখলা। এর মধ্যে আবিরকে ফোন করে গিফট আনতেও বলা হয়ে গেছে, তাছাড়া বাচ্চা যখন আছে তখন একটা চকলেট নিয়ে না গেলেও খারাপ দেখায়। কলকাতায় এসে নতুন একটা চুড়িদার কিনেছিলো মেখলা। পরাই হয়নি কোনোদিন। সেটাই বের করে ওড়নাটা ভাঁজ করে রাখলো মেখলা। সব রেডি।

এই বিল্ডিংটায় প্রায় বারোটা মতো ফ্ল্যাট থাকলেও লোক আছে মাত্র সাতটায়। তার মধ্যে দু’টোতে কয়েকজন ষ্টুডেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকে। তারা আবার রাত না করে ফেরে না। তাই লোকজন খুব একটা বেশী না। মেখলা যেমন ভাবছিলো ঠিক তেমনটা না। সবাই চেনে সবাইকে, কথা বলছে, আড্ডাও চলছে বেশ। মেখলারাই বোধহয় সবচেয়ে নতুন এই ফ্ল্যাটে। আস্তে আস্তে পরিচয় হয়ে গেল সবার সঙ্গে৷ নম্রতাও একফাঁকে এসে একটু গল্প করে দিদিশাশুড়ির কাছে নিয়ে গেল আবির আর মেখলাকে। হঠাৎ ঠাম্মুর কথা মনে পড়ে গেল মেখলার। একেবারে জন্মের সময় যেমন মানুষ একইরকম দেখতে থাকে প্রায়, অনেক বয়স হয়ে গেলেও বোধহয় সবার সঙ্গে সবার মুখের মিল হতে শুরু করে। সেই একইরকম সাদা শাড়ি আটপৌরে করে পরা, সেই একইরকম ভাঁজ হওয়া গালে মিষ্টি হাসি। এতটা বয়স হয়ে গেলেও এখনও বেশ শক্তসমর্থ মনে হলো ভদ্রমহিলাকে। কাছে গিয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে মেখলা বললো, “ভালো আছো দিম্মা?”

-“খুব ভালো আছি দিদিভাই! তোরা তো বেশ ক’দিন হলো এসেছিস। আসিস না কেন ওপরে?”
-“সারাদিন অফিস থাকে দিদিমা। তারপর বাড়ি ফিরে এমনিতেই ও যেমন বিছানায় পড়ে যায়..”- হাসতে হাসতে আবির কথাগুলো বলতেই একটু মুখ ভেঙচে বলে ওঠে মেখলা, “ওর কথা একদম শুনবে না দিম্মা! আমি আসবো এবার থেকে! আমি কি আর জানতাম তোমরা এত ভালো!”

-“কী ভাবতিস তাহলে? তোদের ওপরের ফ্ল্যাটে বাঘ ভাল্লুক থাকে! গেলেই কামড়ে দেবে? তা এটা তোর বর?”
হেসে ওপর নিচে মাথা নাড়ায় মেখলা। মেখলাকে হাসতে দেখে থুতনিতে হাত রেখে চুমু খেয়ে দিম্মা বলে ওঠে, “তোরা এই বাচ্চাবাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো কেমন বাইরেও কাজ করিস, ঘরও সামলাস, সবদিকে নজর সবসময়! ভালো থাকিস মা! আসিস মাঝে মাঝে! আজ তো অনেক লোক, পরে কখনো গল্প করবো জমিয়ে।”

অনেকদিন পর এতজনের সঙ্গে আনন্দমাখা একটা সন্ধে কাটালো মেখলা। অনেকদিন এরকম হইচই করেনি ও। সকালের মনখারাপটা এখন আর একেবারেই নেই!

ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেল মেখলাদের। গল্প করতে করতে কখন যে রাত বেড়ে যায় বোঝাই যায় না। বিছানাটা ঠিক করতে করতে আবির বললো, “অনেকদিন পর তোকে খুব খুশি দেখলাম। ভালো লাগলো খুব। নম্রতাদির মেয়েটা এত কিউট, এত কথা বলে…”

-“আবির, একটা রিকোয়েস্ট করবো?”- কথার মাঝে বলে ওঠে মেখলা।
-“বল!”
-“আমরা যখন বিয়ে করবো, মানে আসছে বছরেই, বিয়ের পর বাবা মাকে বলবি প্লিজ আমাদের কাছে এসে থাকতে? আমরা আরেকটু বড় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নেব তখন! তাহলেই আর মা বাবার অসুবিধে হবে না!”
-“হ্যাঁ, সেটা তো হতেই পারে! কিন্তু মা বাবা কি চাইবে বাড়ি ছেড়ে আসতে! বাড়িতে অতগুলো ঘর! অত ছড়িয়েছিটিয়ে থেকেছে তো সারাজীবন! এখানে এসে বেশীদিন থাকতে চায় না মা। তাই…”

-“আমি কিচ্ছু শুনবো না! আমি মায়ের কাছে গিয়ে খুব আবদার করবো, তাহলেও মা শুনবে না আমার কথা?”- বাচ্চাদের মতো করে বলে ওঠে মেখলা।

-“তুই বললে হয়তো শুনতে পারে! মা তো এমনিতেই তুই বলতে অজ্ঞান!”
-“বেশ!”- খুশিমনে বলে ওঠে মেখলা- “তবে তাই হবে! মা বাবাকে থাকতেই হবে আমাদের কাছে। নয়তো আমি খুব কাঁদবো, দেখে নিস!”

-“আচ্ছা আচ্ছা! এখন ঘুমো! কাল কিন্তু আর ছুটি পাবি না!”
আবিরের গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো মেখলা। আর কিছুদিন পর থেকেই মা বাবাও এসে থাকবে তাহলে। মা বাবা থাকলে সমস্ত ঘরে কেমন লক্ষ্মী শ্রী থাকে! এই যে ওদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেসের মতো থাকা, তেমন আর হবে না! ওপরের দিম্মা কত ভালো! এবার থেকে ওপরে যাবে মেখলা! বিকেলেই কেমন একা লাগছিলো, কেমন মনে হচ্ছিলো কেউ নেই যেন ওর! এখন আর তেমন লাগছে না। নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে এখন৷ শহরে এত বৃদ্ধাশ্রম কেন তাহলে! যারা না চাইতেই সবাইকে পেয়ে যায় তারা বোধহয় মূল্য দিতে পারে না। যাক গে, এত বড় শহর যখন, মানুষগুলো তো আলাদা আলাদা হবেই! এর মধ্যেই তো মেখলা আজ ভালো করে বাঁচার রসদ পেয়ে গেছে! শান্ত মনে চোখ বন্ধ করে মেখলা। রাতের ঘুমে ডুব দেয় সারা শহর।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত