এই ক্ষণে

এই ক্ষণে

অনেকক্ষণ ধরে শ্বেতা সাব্বিরের সেল এ ট্রাই করে যাচ্ছে।
বার বার এই মেসেজ শোনা যাচ্ছে।

মোবাইল ক্যান নট বি রিচড এট ডি মোমেন্ট। চেষ্টা করতে করতে সে ক্লান্ত। সে বসে আছে কাজী অফিসে। আজ তাদের রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা। কথা আছে সাব্বির দুইজন ফ্রেন্ড সহ এখানে বিকাল ছয়টায় পৌছবে। ছয়টার জায়গায় এখন বাজে সাড়ে সাত টা। টেনশন এ শ্বেতার মাথা ঘুরাচ্ছে।

ওর কোন বিপদ হয়নি তো ? ঠিক আছে তো ? এরকম কখন ই করেনা সাব্বির। পরিচয় হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন কম করে আট থেকে দশবার লং টাইম তারা ফোন এ কথা বলেছে। আজ চারটা থেকে পাচটা একঘন্টা কথা বলেছে তারা। ভবিষ্যতের স্বপ্ন তে বুদ হয়েছিল দুজন।

সাব্বির এর সাথে পরিচয় ফেস বুক এর মাধ্যমে। আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতা একপর্যায়ে প্রেম ভালবাসা পর্যন্ত গড়ায়। সাব্বির বাবা মারা গিয়েছে অনেক আগে। বিধবা মা আরেক ভাই। বড়ভাই এর সংসারে সে থাকে। থাকতে থাকতে ভাবীর বাজার সরকার এখন সে। হওয়া স্বাভাবিক। সে এখন ও ছাত্র। পড়াশোনা করছে খুব সাধারণ সাবজেক্ট এ যাতে কোন ও ভাল চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থায় ভাবীর দয়ার উপরে ই থাকা। মা এবং সে অনেক কুন্ঠিত অবস্থায় থাকে। যখন ভাবীর সাথে মার ঝগড়া হয় তখন বেচারী মা খুব অসহায় ভাবে তার রুম এ এসে জিজ্ঞাসা করে

হ্যারে তোর পড়াশোনা কবে শেষ হবে ? কোন চাকরি বাকরি করবিনা ? ভাইয়ের সংসারে কত দিন থাকবি ?

মায়ের অসহায় প্রশ্নের উত্তরে সেও অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকে উত্তর না দিয়ে। সে এখন শেষ বর্ষের ছাত্র। কিন্তু পড়ালেখা শেষ করার তেমন আগ্রহ খুঁজে পায়না। তেমন কোন জব পাওয়ার ও সম্ভাবনা নাই এই পড়ালেখা বা এই বিষয়ে পড়ে। ভাল রেসাল্ট করলে যদি অধ্যাপনার সুযোগ পায় কোন কলেজ এ। তাও হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কোন রকমে হয়ত পাশ করে যাবে। হিস্ট্রি তে মাস্টার্স করছে সে।

শ্বেতার ব্যাকগ্রাউনড সেই তুলনায় বেশ উজ্জল। সে ফার্মাসী তে অনার্স পড়ছে। তার বাবা একজন নামকরা সি এ। সে চার ভাই এর এক বোন। এরকম এক মেয়ের সাথে সাধারণ নিয়মে বিয়ে হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। শ্বেতা ভাইদের যেমন আদরের তেমনি কড়া শাসনে আছে। তার ফ্যামিলিতে বাবা ভাই এর সাব্বির এর মত এরকম অনুপযুক্ত পাত্র কখন ও মেনে নিবেনা সে বলা বাহুল্য। তাই দুজনে ঠিক করেছে আপাতত রেজিস্ট্রি সেরে রাখবে। পরে আস্তে আস্তে দুইপক্ষকে জানাবে।

সেই রেজিস্ট্রি করতে আসা। এখন ও সাব্বির এর কোন খবর নাই। ফোন বন্দ করে রাখা। আর ও আধাঘন্টা অপেক্ষা করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সে রিক্সায় উঠে বসল যখন দেখল রাত হয়ে যাচ্ছে ,সাব্বিরের ও আসার সম্ভাবনা নাই।

চোখের জলে সাজ মুছে গেছে। হাতের ফুল ফেলে দিয়েছে। দূর থেকে দৃশ্য টি দেখছে সাব্বির। তার বুক বেদনায় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তবু ও সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। শ্বেতাকে এইভাবে বিয়ে করবেনা। আজ বিয়ে করলে কোথায় এনে রাখবে সে ? সে নিজে যেখানে আছে আরেকজনের দয়ায়। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক সে ইচ্ছে করে যায়নি শ্বেতার কাছে। শুধু দূর থেকে একবার প্রিয়তমাকে দেখে নিল।

শ্বেতার অজান্তে আজ সকালে তার ব্যাগে রেখে দিয়েছে চিঠি ,যাতে লিখেছে সে অপারগতা র কথা।
তবে বিশেষ নোট ও দিয়েছে তার সাথে। যদিও কোন ভদ্র মানসম্পন্ন কাজ পায় সে অবশ্যই শ্বেতার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। তাছাড়া সে চায় তাদের বিয়ে হবে গুরুজনের আশীর্বাদে। যদি গুরুজনের মত না থাকে সে এই বিয়ে করবেনা। এই ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সে।

একবছর নয় দুইবছর নয়। আর ও সাত বছর পরের কথা। শ্বেতা এসেছে এক বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী সিনিয়র এক্সিকিউটিভ এর ইন্টারভিউ দিতে। দেখা হয় মার্কেটিং ম্যানেজার এর সাথে। চমকে হাত থেকে ব্যাগ পড়ে যায়। যখন এতদিন পরে সাব্বির কে এখানে দেখে। প্রথমে অভিমান ভরে শ্বেতা জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছিল। জোর করে হাত ধরে টেনে থামায় সাব্বির।

আগের মত দুজন আবার কলকাকলিতে আনন্দে মুখর হয়ে উঠল কিছুক্ষণে।

পরিশিস্ট : অবশেষে শ্বেতা সাব্বিরের বিয়ে হল পারিবারিক ভাবে সবার অনুমতিতে অনেক ধূমধাম করে। বাসর রাত আজ তাদের। সাব্বির শ্বেতার গালে টোকা দিয়ে বলল ” কি বুঝতে পেরেছ কেন ওইদিন কাজী অফিসে যাইনি। ওইদিন যদি আমরা বিয়ে করে ফেলতাম গুরুজনদের সাথে অন্যায় করে আজকের এই আনন্দ টা কি পেতাম বল।

শ্বেতার এই বিষয়ে কোন সন্দেহ রইলনা।

দুইজনে আনন্দজ্জল চোখে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল ভালবাসায় , পরম নির্ভরতায়।
(সমাপ্ত )

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত