প্রতিশোধ

প্রতিশোধ

সন্ধ্যা হতে চলল কিন্তু দেবিকার আসার নাম নেই। সকাল ১০ টায় ভার্সিটির পাশের কাশফুল ঘেরা রাস্তার পাশে একটা বাশেঁর মাচাঁর উপর বসে আছি আর এখন সন্ধ্যা হতে চলল কিন্তু দেবিকা তো আসছেই না। ও আমায় বলছিল আমি যেন ঠিক ১১ টায় এই রাস্তার পাশের মাচাঁয় বসে থাকি। আর সাথে করে শিউলি ফুল নিয়ে আসি। ফুল গুলোও শুকিয়ে গেল আর সময়ও চলে গেল। কিন্তু তবুও ও আসলো না। ওর নাম্বারে ফোন দেওয়ায় বলছে, নাম্বারটি এখন বন্ধ। আজ ওর সাথে আমার প্রথম দেখা করার কথা ছিল কিন্তু সেটাও হলো না। রাস্তায় হাটার সময় তো কয়েকবার চোখে চোখ পড়ে দেখা হয়েছে তবে কথা বলি নি। কিন্তু ও গতকাল রাতে আমায় ফোন দিয়ে বলে আমার সাথে দেখা করবে কিন্তু করলো না। আমি আর ও একই ভার্সিটিতে পড়ি। আমাদের জীবনের গল্পটা হয়েছিল ঠিক এমন…

ভার্সিটির পাশের চায়ের দোকানে বসে আমি আর সকল বন্ধুরা মিলে আড্ডা মারছি। হঠাৎ তুহিন আসলো আমাদের আড্ডার মাঝে।আজ দেখি তুহিন আর আমি এক কমলা রং এর গেঞ্জি পরছি। ওরে আমরা লাভ গুরু বলে থাকি কারন ওর আইডিতে ছেলেদের সাথে সেলফির থেকে মেয়েদের সাথে সেলফিই বেশি। যদিও শুধু ক্লাসমেট বলে বন্ধু মনে করি তবে আমি ওর থেকে একটু দূর দূরই থাকি। কারন,আজ পর্যন্ত ও কয়টা প্রেম করছে সেটা হয়ত সে নিজেও জানে না। আমরা তো এখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র কিন্তু তুহিন যখন প্রথম বর্ষের প্রথম ক্লাসে আসে ওইদিনই এক মেডামকে প্রপোজ করে। ওই দিনই বুঝে ছিলাম যতটুকু পারা যায় ওর থেকে দূরত্ব মেনে চলতে হবে। যাই হোক এখন আড্ডায় ফিরে আসি। তুহিন হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল…

— কিরে রাজ সব সময় কি চার চোখের ফাকঁ দিয়ে কি বইয়ের পাতাই দেখবি নাকি জীবনটাকে মজা করে কাটাবি?
— কথাটা ঠিক বুঝলাম না তুহিন।
— আরে তোর দুইটা চোখ আর একটা চশমা হলো আরো দুইটা চোখ। মোট হলো ৪ চোখ। আর এতো গুলো চোখ দিয়ে কি শুধু বই পরবি নাকি আমাদের মত এইদিক ওইদিক তাকাবি।
— নারে ভাই যেমন আছি খুব ভাল আছি।
— ও আচ্ছা। ওকে বাদ দে। তোরে দিয়ে কিছু হবে না। যদি তুই একটা প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে পারিস তাহলে আমি আর তোরে নিয়ে মজা করবো না।
— ওকে বল।
তুহিন চারপাশটা ভাল করে দেখলো আর আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো…
— ওই যে ভার্সিটির গেটের সামনে সাদা আর নীল রং এর থ্রী-পিছ পরা মেয়েটা দাড়িয়ে আছে ওর মনে এখন কি চলছে বা ও কি ভাবছে এটা ওর মুখ দেখে বল তো।
— এটা কেমন করে সম্ভব? ভাই আমার কাছে মেয়েদের মন বুঝা আর উচ্চতর গনিত বুঝতে পারা দুইটা এক বিষয়ই।
–হা হা হা জানতাম তোর উত্তর এটাই হবে কারন তুই এইসব বুঝতে পারবি না।
— হুম পারবো না, এবার খুশি তো।
— আরে রেগে যাচ্ছিস কেন? ওকে বাদ দে, পারলে একটা কাজ করে দেখা।যদি পারিস তাহলে এখানে বসে সবাই যত কাপ চা খেলি সব গুলোর দাম আমি দিবো।

তুহিনের কথা শুনে আমার কিছু বলার আগে পাশের সব গুলো বলতে লাগলো আমি নাকি কাজটা করবো। তাই বাধ্য হয়ে বললাম করবো।

— হুমম আমি রাজি। এবার বল কাজটা কি?
— তুই গিয়ে ওই মেয়ের নামটা জেনে আসবি?
— আচ্ছা তোর কি মেয়েদের সম্পর্কে ছাড়া আর কোন কথা নেই।
— কেন ভয় পেয়ে গেলি?
— রাজ কাউকে ভয় পায় না এই পৃথিবীতে তবে মেয়েদের বাদে ।
বলেই উঠে চলে আসলাম আর মেয়েটার সামনে যাচ্ছি। মনে মনে ভাবছি মেয়েটা অনেকখন হলো এখানে দাড়িয়ে আছে কারনটা কি আর কি বলেই বা কথা বলা শুরু করবো?যদি ওর বয়ফ্রেন্ডের জন্য দাড়িয়ে থাকে তাহলে তো আমার কপালে শনি আছে আর যদি মেয়েটা খুব ভদ্র হয় তাহলে আজ আমার শুক্রবার। মেয়েটা কাছে যেতেই….
— এই যে শুনো,
আমার দিকে ফিরে তাকালো আর আমি হাত নাড়ালাম আর কেমন যেন কাপছিঁ।
— কি হলো আপনি এমন কাপছেঁন কেন?
— তোমার নামটা কি?
— মানে?

আমার মাঝে কেমন যেন একটা ভয় কাজ করতে লাগলো। কারন নিজের বোন বাদে এই প্রথম অপরিচিত কোন মেয়েকে ডাক দিলাম। আর দাড়াতে না পেরে পিছনে তাকিয়ে সোজা দোকানের ভিতরে। মেয়েটা অবশ্য পিছন থেকে আমায় ডাক দিছিল কিন্তু আমি আর কারো কথা শুনার পাত্র না।

দোকানে আসতে সব গুলো হাসঁতে লাগলো। আর আমি কি বলবো? তাই খুব রাগ হচ্ছিল বলে আমার ব্যাগটা কাধেঁ নিয়ে বাসার জন্য বেড়িয়ে পরলাম।

বাসায় এসেই কারো সাথে কথা না বলে রুমে চলে গেলাম। তখন আমার ছোট বোন নিহিকা আসলো….

— কিরে ভাইয়া মন খারাপ?
— না রে, কিছু কি বলবি?
— হুমম আসলে আজ আমার এক ফ্রেন্ডের জন্মদিন। আর রাতে ওর বাসায় পার্টি। বাবাকে বলছি যেতে দেওয়ার জন্য আর বাবা বলল তুই যদি নিয়ে যাস তাহলে নাকি যেতাম। তাই প্লিজ আজ রাতে আমার সাথে যাবি।

— আচ্ছা যাবো।
ও খুব খুশি মনে চলে গেল। আমি যে বলে দিলাম আমি যাবো কিন্তু ওইখানে তো অনেক মেয়ে থাকবে। কিন্তু আমি তো বোরিং ফিল করবো। যাই হোক এখন যদি বলি যাবো না তাহলে নিহিকার হাসি মুখটা কালো হয়ে যাবে। এর থেকে ভাল ওর সাথেই যাই, মাত্র কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার।

নিহিকার পিছু পিছু ওর বান্ধবীর বাসায় গেলাম। অনেকেই আসছে তো দেখা যাচ্ছে আর নিহিকা ওর ফ্রেন্ড আর ওর ফ্রেন্ডের বাবা মায়ের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো। ওনারা আমাকে বসার জন্য আলাদা একটা রুমে নিয়ে গেলেন। মনে হয় আমি আসায় ওনারা খুশি। আমি একটা জিনিস বুঝতে পারি না, আমাকে দেখে সকল বড় মানুষরা খুশি হয় কিন্তু কিছু বন্ধুই বলে আমি খুব আনরোমান্টিক আর সেকেলে।

আমি রুমে বসে বসে ফেসবুকে চালাচ্ছি হঠাৎ একটা মেয়ে হাতে শরবত নিয়ে আসলো। আমি তো ওর দিকে তাকাতেই পুরু শকড। কথায় বলে, যা থাকে নসিবে আপনাআপনি আসিবে। কথাটা আজ বুঝলাম আর মেয়েটাও আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়ত ও ভাবছে আমি ওর পিছু নিয়ে এখানে চলে আসছি। আমি ওরে কিছু বলতে যাবো তখন ও বলল…

— আমার নাম দেবিকা। আর এটা জানার জন্য যে আমার বাসা পর্যন্ত চলে আসবে এটা ভাবি নি।
— আসলে সরি। ওইদিন আমি বন্ধুদের কথায় আপনার নামটা জানতে গেছিলাম আর এখানে আমার ছোট বোন নিহিকাকে নিয়ে আসছি।
— থাক বেশি বলার দরকার নেই।
— আসলে তোমরা মেয়েরা না এক একটা ইয়ে। শুনো একটা আর বুঝো আরেকটা আর তর্ক করো উল্টা পাল্টা।
— কি??
— না মানে সরি বললাম তো।
— ঠিক আছে। আজ শুধু বাসায় আমার ছোট বোনের জন্মদিন বলে ছেড়ে দিলাম।
— যাক বাচাঁ গেল।
বলেই ও চলে গেল। তাহলে ওর নাম দেবিকা। আর আমার বোনের বান্ধবীর বড় বোন। যাই হোক, মেয়েটা দেখতে কিন্তু খারাপ না তবে একটু ঝগড়ুটে।
পার্টিতে সবার সাথে মোটামোটি কথা বললাম। একসাথে দাড়িয়ে কেক কাটলাম আর দেবিকাকে দেখলাম ওর বান্ধবীর সাথে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে যেন কি বলছে?যা ইচ্ছা বলতে পারে, আমি নিজে তো জানি আমার মনে কোন খারাপ ইচ্ছা নেই।

অনুষ্ঠান শেষ করে নিহিকাকে নিয়ে যখন বাসায় ফিরে আসলাম। আর বাসায় আসতে প্রায় ১০ টা বেজেঁ গেল। আর শরীরটাও খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরি। আর তাছাড়াও আমার ১১ টার মাঝে ঘুমিয়ে যাওয়ার স্বভাব।

সকালে খুব ভোরে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল তাই ছাদে গেলাম আমার গাছ গুলোতে জল দিতে। জল দেওয়া শেষ হতেই আমি রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

তারপর সবার সাথে বসে নাস্তা করে বেড়িয়ে পরলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
ভার্সিটি যেতেই পথে দেখা হতো তুহিনের সাথে….
— আরে রাজ একটু সিগারেট টা ধর তো।
— তুই খুব ভাল জানিস আমি এইসব খাই না।
— আরে তোরে খেতে বলি নি। একটু ধরতে বললাম আর আমার জুতার ফিতাটা একটু বাধঁবো।
— আচ্ছা দে।

আমি ওর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে দাড়িয়ে আছি আর তুহিন ওর জুতার ফিতাটা বাধঁছে।আর তখনই চোখ পড়লো দেবিকার দিকে। আর ও খুব তিরিক্ষি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন যদি বলি আমি সিগারেট খাই না তাহলে ও হয়ত মানবেই না। আমার কপালটা খারাপ, কাল সকালে যখন ওর সাথে আমার প্রথম দেখা তখন ও ভাবলো আমি বখাটে। তারপর কাল রাতে ভাবলো আমি ওর পিছু নিছে আর এখন ভাবছে সিগারেটও খাই। বাহ্ সোনায় বাধাঁনো কপাল আমার। ছোট বেলা থেকে প্রেম করার খুব শখ তবে মেয়েদের ভয় পাই বলে এইসব আর করা হয় নি। আর এখন যেহেতু একটা মেয়ের সাথে দেখা হতে শুরু হলো তখনই বার বার কোন না কোন বাজে কাজের মাঝেই দেখা হচ্ছে। বুঝা গেছে কিছু হওয়ার আগেই বুঝি সব শেষ।
দেবিকা খুব একটা খারাপ ভাবেই চলে গেল। তুহিন উঠে বলল…
— দে সিগারেট টা।
— ( অন্য দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সিগারেট টা দিতে গিয়ে পরে গেল)
— আরে এতখন ধরতে পারলি আর এখন ফেলে দিলি।
ওরে আর কিছু না বলে আমি ওইখান থেকে চলে আসলাম। ওরে কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের দিকে যেতে দেখছি তাহলে হয়ত ও কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী।আমি আমার ক্লাসে চলে আসলাম।
তারাতারি ক্লাস শেষ করে ওর ডিপার্টমেন্টেরর সামনে গেলাম। কিন্তু এখন ভাবনার বিষয় হলো, ওর ক্লাস কি শেষ?যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে অযথা দাড়িয়ে থেকে কোন লাভ নেই।

বাসায়ই চলে আসলাম, দেখি আমার বোন নিহিকাকে দিয়ে কোন কাজ করাতে পারি কি না। কিন্তু কি বলে ওর সামনে দেবিকার নামটা নিবো। যাই বলো এতেই ও হয়ত ভাববে আমি দেবিকাকে লাইক করি।
নিহিকা চেয়ারে বসে মোবাইলে গেমস খেলছে। আমি ওর সামনে গেলাম…
— কিরে কি করছিস?
— এই তো ভাই কিছু না। কিছু বলবি নাকি…
— আসলে গতকাল তোর যে বান্ধবীর বাসায় গেছিলাম না। ওর বড় বোনের নাম্বার টা একটু এনে দিতে পারবি। একটু সমস্যা হয়ে গেছে।
— তুই কি দেবিকা দির কথা বলছিস আর ওনাকেই বা তুই চিনিস কেমন করে?
— আর বলিস না… (তারপর আমি ওরে সব বুঝিয়ে বললাম)
আমার কথা শুনে আমার ছোট বোনও আমার দিকে বড় বোনের মত তাকালো। মনে হচ্ছে আমি যেমন প্রেম করি।
— কিরে এমন করে কি দেখছিস?
— দেখছি যে ছেলে মেয়েদের আশেপাশে ঘুরে না, সে আজ কারো নাম্বার চাচ্ছে।
— এমন করে কেন বলছি? আমি না তোর বড় ভাই হই।
— হুমম এটাই তো আমার ভাগ্য।
— কি বললি?
— না কিছু না। তোরে আমি রাতে নাম্বারটা ব্যবস্থা করে দিবো নে।
— ওকে।
তারপর আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

রাতে রুমে বসে কম্পিউটারে অটোক্যাডের কাজ করছি তখন নিহিকা আসলো রুমে। ও কিছু বলার আগেই আমি বললাম…
— হুমম নাম্বার টা দে..
— তোর দেখছি আর তর সইছে না।
— ধ্যত দে তো।

তারপর ওর থেকে নাম্বারটা নিয়ে ওরে বললাম বাইরে যেতে। আর আমি দরজাটা লাগিয়ে দেবিকার নাম্বারে ফোন দিলাম। ফোন দিতেই কয়েকবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ হলো কিন্তু কোন কথা বলছে না। আমি বুঝতে পারছি হয়ত অচেনা নাম্বার বলে চুপ করে আছে নয়ত কথা বলতো। তাই আমিই বললাম..

— হ্যালো দেবিকা আমি রাজ বলছি। আসলে তুমি আমাকে যতবারই দেখলে ততবারই খারাপ কোন কাজে দেখলে। আসলে আমি এমন ছেলে নই। তাই যাই হইছে এটা বলতেই ফোন দিলাম।

— হুমম বুঝলাম।
— ধন্যবাদ।
— ওকে বাদ দেন। আপনি মনে হয় মেয়েদের একটু ভয়ই পান।
— হুমম তা বলতে পারেন।
— বুঝলাম। আচ্ছা বায় পরে কথা হবে।
— বায়।
ও ফোনটা রেখে দিলো। ও যে আমার কথা গুলো খুব সহজেই মেনে নিছে এটাই তো অনেক। আর এখন মনটাও খুব হালকা লাগছে।

আস্তে আস্তে ওর সাথে আমার ফোনে কথা বলা বাড়তে লাগলো আর আমি নিজেই যেন ওর মাঝে হারাতে শুরু করলাম। কি জানি মেয়েটার মাঝে কি আছে। আমি শুধু ওয়েট করি ওর কখন ফোন আসবে। তবে রাস্তায় যখন আমাদের দেখা হতো তখন শুধু একে অন্যের দিকে তাকাতাম।তবে কথা বলতাম না কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই কথা বলা বাড়তে লাগলো। আর ও হয়ত এতদিনে বুঝতে পারছে যে আমার মনে ওর জন্য একটা ভালবাসার জায়গা তৈরি হয়েছে।

হঠাৎ একদিন রাতে ওর ফোন আসলো….
— হে দেবিকা বলো…
— তো মিস্টার এখন কি করছেন?
— কিছু না। বসে বসে বই পড়ছি… তুমি?
— আমি রোমান্টিক স্টোরি পেজ থেকে গল্প পড়ছি। যদি সময় হয় কখনো ওই পেজের গল্প গুলো পরতে পারো। কিছু বাস্তব,কিছু কল্পনা আর অনেক ভালবাসা দিয়ে সাজানো একটা পেজ।
— হুমম সময় হলে পরলো। তুমি কি মাঝে মাঝেই পরো নাকি।

— মাঝে মাঝে বলতে যখন মানসিক কোন চাপ একটু বেশি হয়ে যায় তখন ওই পেজের গল্প পরে মনটা হালকা করি।
— ও আচ্ছা। আমারও পরতে ইচ্ছা করে তবে গল্পের শেষে যখন কিছু মানুষের বাজে কমেন্ট পরি তখন ওই গুলো দেখলে খারাপ লাগে।

— ঠিক বললে, আসলে কিছু পাবলিক আছে নিজে কিছু পারবে না কিন্তু অন্য কেউ কিছু করলে সেটায় উৎসাহ না দিয়ে উল্টা বাজে কথা বলবে।

— হুমম। তা মেডাম আপনার কি গল্প পড়া শেষ?
— হুমম শেষ তাই তো ফোন দিলাম। আর হা যার জন্য ফোন দিলাম তা হলো কাল কি আমরা দেখা করতে পারি? বেশি কিছু না বরং কিছুটা সময় এক সাথে কাটাবো।

— হুমম আসবো। বলো কয়টায় আসতে হবে আর কোথায়?
— কাল ঠিক ১১ টার সময় ভার্সিটির দক্ষিন পাশে কাশ ফুল ঘেরা রোডের যে পাশে একটা পুরাতন মাচাঁ আছে ওইখানে।
— ওকে আমি ঠিক টাইমে চলে যাবো।
— আচ্ছা, আর শুনো আমার জন্য শিউলি ফুল আনতে কিন্তু একদম ভুলবে না।
— ওকে আনবো।কিন্তু নদীর পাড়ে দেখা করতে ভাল হতো।
— না থাক। আমি তো সাতাঁর পারি না। যদি পরে যাই হুম।
— ওকে বায়

সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাসি মুখে তারাতারি ঘুম থেকে উঠলাম আর ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আজ আর ভার্সিটিতে ক্লাসের জন্য গেলাম না। বরং ওই কাশফুল ঘেরা রোডের সেই মাচাঁর সামনে চলে গেলাম কিন্তু এখন প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু দেবিকার আসার কোন সময়ই হচ্ছে না।এই দিকে আমার হাতে আনা শিউলি ফুল শুকিয়ে গেল আর সূর্যও অস্তের পথ ধরলো আর মাঝে থেকে আসলো না দেবিকা।আজ কেন জানি মনে হচ্ছে শুরু হওয়ার গল্পটা এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল।

প্রায় দুই সপ্তাহ আমি বাসা থেকে বার হই নি। আজ অনেক দিন পর একটু নদীর পাড়ে হাটতে বের হলাম। খুব একা একা লাগছে নিজেকে। ইচ্ছে করছে কোথাও পালিয়ে গিয়ে মুখ লুকাই নয়ত দেবিকা যদি সামনে আসে তাহলে আমি সহ্য করতে পারবো না। খুব বেশি পরিমানে ভালবেসে ফেলেছি তো।

নদীর পাড়ে বসে নদীর ঢেউ গণনা করার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। তখন মোবাইলটা অন করে নোট বুক চালু করলাম আর নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অবহেলিত কাহিনীটা এলো মেলো লেখা শুরু করলাম। যেই গল্পের নাম দিলাম ” শূন্য কাহিনী “। আমার আর ওর মাঝে ঘটে যাওয়া কাহিনীটা খুব যত্ন সহকারে লেখলাম।

গল্পটার লেখার শেষ হতেই অনুভব করলাম মোবাইল স্কিনের মাঝে দুই ফোটাঁ জল। মুচকি একটা হাসি দিয়ে মুছে ফেললাম আর সেই রোমান্টিক স্টোরির পেজে গল্পটা পোস্ট করলাম। যদিও প্রথম গল্প তবুও এপ্রুভ হওয়ার ভয়টা কাজ করে নি। কারন, এটা হয়ত কোন গল্পই না তাই পেজে নাও যেতে পারে কিন্তু আমার কাছে তো এটা বাস্তব।
তারপর পোস্ট শেষ আমি নেট থেকে চলে আসি। এভাবে প্রায় দুইদিন পার হয়ে যায় আর হঠাৎ একদিন নোটেফিকেশনে দেখি গল্পটা পোস্ট হয়েছে। অনেক দিন পর কেন জানি খুব ভাল লাগা কাজ করতে লাগলো।

রাতে প্রায় ১১ টার দিকে সেই চেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। আমি অবাক হয়ে যাই কারন দেবিকা তো আমার নাম্বারটা ব্লক লিস্টে রেখে দিছে। যদিও ভাবলাম ফোনটা ধরবো না তবুও ফোনটা ধরলাম।
— রাজ কাল একটু ভার্সিটি এসো দরকার আছে?
— কেন আরেকটা দিন ধার করি রাখবে বলে?
— প্লিজ এসো। সব কেমন যেন পাল্টে যাচ্ছে? তোমার গল্প আর বাস্তব সত্যি নি আমি খুব কনফিউসড হয়ে আছি।
— ওকে তবে এটাই শেষবার।
— ধন্যবাদ।
ওর কথাটা বলার আগেই আমি ফোনটা কেটেঁ দিলাম। শুধু আমি যাবো ওইদিন ও কেন আসে নি এটা জানার জন্য।

ভার্সিটির পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ দেখি দেবিকা আসছে আর ওর সাথে ওর একটা ফ্রেন্ড।কথাটা প্রথম আমিই শুরু করলাম…

— যাক শেষ পর্যন্ত তুমি আসলেই।
— হুমম। তোমাকে আমি বলতে আসলাম যে তুমি আসলো কত্তো বড় নোংরা ছেলে। কিন্তু গল্পে শুধু তোমার আর আমার সাথে কয়েকটা ঘটনাই তুলে ধরলে।
— মানে? আমি এমন কি করলাম যে আমাকে নোংরা বলছো।
— তুমি আগে এই মেয়েটার সাথে প্রেম করে ওরে ঠকিয়ে আমার সাথে প্রেম করতে আসলে তাই আমি তোমার সাথে প্রেমের নাটক করে তোমায় ওইদিন আসতে বলে আমি আর আসি নি।
— মানে?
আমি তো ওর কথা শুনেই পুরু অবাক কারন আমি কিছুই জানি না আর এই মেয়েকে তো চিনিই না।
তখন আমাদের কথা থামিয়ে দিয়ে মেয়েটা বলল…..

— আরে দেবিকা তুই এইসব কি বলছিস? ওরে তো আমি চিনিই না। আমি তো তোরে ওই দিন চায়ের দোকানে কমলা রং এর গেঞ্জি পরা ছেলে তুহিনকে দেখিয়ে ছিলাম আর তুই ভাবলি ওরে।আর তুহিনই আমার সাথে প্রেমের নাটক করে ঠকিয়েছে। আর সেই প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তুই একটা ছেলের মন ভাঙ্গলি। এটা তোর কাছে আশা করি নি দেবিকা। আর ভাইয়া তোমার কাছে সরি। পারলে আমায় মাফ করে দিয়ো।

— আরে সরি বলতে হবে না। ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়।
তারপর আর কথা না বলে মেয়েটা চলে গেল আর দেবিকা চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। কারন, ভুলটা ওরই ছিল। ও হয়ত আমায় সরি বলতে চাইবে।

— কি হলো এখন চুপ করে দাড়িয়ে আছো কেন? একটু বসো, তোমার জন্য চা পানির ব্যবস্থা করি।
–( ও মাথা নিচু করে আছে)
— কে বলল বাংলাদেশে অভিনেত্রীর সংখ্যা কম? তোমাকে নিলেও তো পারে।
— ( ও কেদেঁ দিয়েছে)
— ওই ওই একদম কাদবেঁ না। কষ্ট তো আমি কম পাই নি। চোখের নিচের দাগ গুলো এখনো যাই নি।
— রাজ আমাকে কি মাফ করা যায় না?
— কেন মাফ করবো? তুমি কি মাফ চাইছো হুম?
— হুমম সরি আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।
— তাহলে যাও পুকুরে একটা লাফ দাও আর সাতাঁর কেটেঁ এসে সরি বলো।
আমার কথা বলা শেষ না হতেই ও লাফ দিতে চলল। আর তখনই আমি পিছন থেকে ওর হাতটা ধরে ফেললাম…
— বাহ্ সাতাঁর পারো না আর লাফ দিতে চললে।
— একটা বার ভালবাসার সুযোগ পাওয়ার জন্য।দেওয়া কি যায় না একটা সুযোগ?
— হুমম আমিও তোমায় বড্ড বেশি ভালবাসি।
বলেই ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম। ও এখনো কাদচ্ছে। একটু কান্না করুক। এতে মনটা হালকা হবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত