অভিমানী পাগলী

অভিমানী পাগলী

-নিতুর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে শুভর উপর৷ ছেলেটার সাথে আর কথাই বলবনা৷ কিছুতেই না৷ যতই জানপাখি, ময়নাপাখি ডাকুক৷ তারপরও নিতুর মন গলবেনা৷ দাঁতেদাঁত চেপে কঠিন সিদ্ধান্ত নিল নীতু৷
ফোন থেকে এফবি, হোয়াটসএপ যোগাযোগের সব কিছুই বন্ধ করে রেখেছে সে৷ শুভ চাইলেও যোগাযোগ করতে পারবেনা৷ নিশ্চয় এতক্ষণে হাজারখানেক মেসেজ এসে জমা পরেছে৷ শ’খানেক ফোন দিয়েছে ছেলেটা৷
-নীতু মনে একটু আনন্দবোধ করছে৷ বুঝুক এবার মজা৷ কত্তবড় সাহস আমার মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দেয় না৷ অথচ নামের পাশে সবুজ বাতিটা তখনও জ্বলছে৷ নিশ্চই কোনো মেয়ের সাথে লুলামী শুরু করে দিয়েছে৷

ভাবতে ভাবতে জানালার পর্দাটা নামিয়ে দিল নিতু৷ যোগাযোগ করতে না পেরে শুভ নিশ্চয় বাসার নিচে এসে দাঁড়াবে৷ কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে নিতুর জানালার দিকে তাঁকিয়ে থাকবে৷ নিতুর সাথে চোখাচোখি হলে কানে ধরে সরি বলবে৷ আর নিতু এতেই গলে যাবে৷ কিন্তু এবার সেটা হবে না৷ এই ক’দিন সে জানালার পাশে যাবেই না৷ দরকার হলে রুম বদলাবে৷ তারপরও তার রাগ, ইগোর এতটুকুও হেরফের হবে না৷

-“আমাকে ভুলে যাও” নিতুর শেষ মেসেজটা দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেল শুভ’র৷ মেয়েটা প্রতিবারই এমন করে৷ সুবিধা-অসুবিধা কিছু বুঝবেনা৷ হুটহাট উল্টাপাল্টা বলে ফোন বন্ধ করে দিবে৷ রিলেশনের মধ্যে এ পর্যন্ত অনেকবার এমন করেছে৷ প্রত্যেকবারই শুভ নিজেই রাগ ভাঙিয়েছে৷ প্রতিবারই নিতুর বাসার নিচে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়ে৷ কখনো কাঠফাটা রোদ আবার কখনো ঝুম বৃষ্টির মাঝে৷ আশপাশের লোকজনের সন্দেহের দৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থেকেছে নিতুর অভিমান ভাঙানোর জন্য৷
কিন্তু এবার সেটা করবেনা৷ শুভ’র মনেও একটা জেদ চেপে গেল৷ নিজেকে তুচ্ছ্য মনে হল নিতুর ইগোর কাছে৷ ও নিজেও তো একটা মানুষ৷ তারও রাগ-অভিমান থাকতে পারে৷ সে ও চাই তার সমস্যা টা কেউ বুঝুক৷ ময়নাপাখি, সোনাপাখি বলে রাগটা ভাঙাক৷
রাগ-অভিমানের পালা শেষে কেউ জড়িয়ে ধরে বলুক “ভালোবাসি এত্তগুলো”৷

-প্রতিদিন সন্ধ্যার সময়টাতেই তাদের কথা হয়৷ মাঝে মাঝে ফোন করে৷ তবে বেশিরভাগই ফেইসবুকে৷ রিপ্লাই দিতে একটু দেরী হলেই শুভর উপর রেগে যায় নিতু৷ মাঝে মাঝে শুভ ফেইসবুকে থাকে না৷ ডাটা অন থাকলেই নামের পাশে সবুজ বাতিটা জ্বলজ্বল করে৷ অন্যদিকে নিতু মেসেজের পর মেসেজ দিয়ে যায়৷ রিপ্লাই পায় না৷ কিভাবে পাবে? শুভতো ফেইসবুকেই থাকে না তখন৷

গতকাল ও দুজনের কথা হচ্ছিল৷ একদম স্বাভাবিকভাবেই৷ নিতুর সাথে কথা হওয়ার সময় শুভ ইনবক্সেই থাকে৷
কথাবলার এক পর্যায়ে শুভর ডাক পরে৷ তার বাবা ডাকছে তাকে৷ বাবা ডায়াবেটিস রোগী৷ নিয়মিত ইনসুলিন দিতে হয়৷ বাবা চোখে টের পায় না তেমন৷ তাই শুভকেই এই কাজটা করতে হয়৷ তবে সেটাতো রাতের দিকে৷
আজকে অসময়ে ডাক দিয়েছে৷ মিনিট খানেকের রাগ ভেবে শুভ নিতুকে “পরে কথা হবে” বলে নি৷ ইনবক্সে থাকা অবস্থাতেই ফোনের পাওয়ার অফ করে চলে যায়৷ অন্যদিকে নিতুর দেয়া মেসেজগুলো আপনাআপনি “সিন” হতে লাগলো৷ এটা দেখেই নিতুর গা জ্বলে উঠলো৷ রেগেমেগে কিছু ঝাঝালো কথায় মেসেজ লিখে শুভকে পাঠিয়ে দেয়৷”

-আজ ৫দিন ধরে শুভর সাথে যোগাযোগ নেই নিতুর৷ ফোনটা এখনও বন্ধ রেখেছে৷ মন না চাইতে কয়েকবার জানালায় উকি মেরেছে নিতু৷ না শুভকে দেখা যায়নি একবারও৷ নিতুকে একবারও দেখতে আসেনি শুভ৷
রাগ এর বদলে নিতুর মনে ভয় হতে লাগলো৷ শুভ কি তাইলে সত্যি সত্যি অন্য মেয়ের সাথে…..
না! আর এক মূহূর্ত ভাবতে পারছেনা নিতু৷ মাথা ঝিম মেরে আসছে৷ দৌঁড়ে গিয়ে আলমারি থেকে ফোনটা বের করে নিতু৷
নিতু যখন রাগ করে ফোন বন্ধ করে৷ তখন সেটা আলমারিতেই ঢুকিয়ে রাখে৷ যাতে মন চাইলেও খোলা না যায়৷
ফোন অন করে আরেকবার হতাশ হল নীতু৷ শুভর কোনো মেসেজ নেই৷ অন্যবার হলে ফেইসবুক, হোয়াটসএপ মিলিয়ে হাজারখানেক মেসেজ থাকতো ইনবক্সে৷ সবগুলান মেসেজই শুভর দেয়া৷ কিন্তু এবার একটাও নেই৷
বুক ফেটে কান্না আসছে নীতুর৷ শুভকে হারানোর ভয়টা ভালোভাবেই ঝেঁকে বসেছে মনে৷ নিজেকে অপরাধী মনে হল নীতুর৷ ছেলেটাকে কখনো বোঝার চেষ্টায় করেনি সে৷ সবসময় নীতুর জেদ আর ইগোর কাছে হার মেনেছে ছেলেটা৷ নীতু হুটহাট রেগে যেতো সবসময়৷ কত কষ্ট করেই না নীতুর রাগ ভাঙাতো ছেলেটা৷ শুভ একটুও বিরক্ত হয়নি কখনো৷”

-শুভদের বাসার দরজায় ঝুলানো তালাটা চোখে পরতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো নীতুর৷ শুভ কি সত্যি সত্যিই তাকে ছেড়ে চলে গেছে?
শুভদের পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির সাথে কথা বলে জানতে পারে, বেশ কয়েকদিন ধযে শুভর বাবা অসুস্থ৷ সবাই হসপিটালে৷ এখন অবশ্য মোটামুটি সুস্থ্য৷
আন্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দেয় নীতু৷ এই প্রথম হসপিটালে যেতে নীতুর একটু ভালো লাগা অনুভব হচ্ছে৷ তার শুভকে দেখতে পাবে সে৷ শুভ কখনো রাগ করে না৷ এবারও করবেনা হয়তো৷ না করলে না করুক৷ তারপর শুভর রাগ ভাঙাবে নীতু৷ যেমনটা নীতুর রাগ ভাঙাতো শুভ৷ জানপাখি, সোনাপাখি বলে রাগ ভাঙাবে৷”

-নীতুকে হসপিটালে দেখে একটু অবাক হল শুভ৷ প্রথমে চোখের ভ্রম ভেবেছিল৷ কিন্তু না! নীতু সত্যি সত্যিই চলে এসেছে৷ এমনটা আগে কখনোই হয়নি৷ দোষ থাকুক আর না থাকুক শুভই সবসময় নীতুর কাছে গিয়েছে৷
এই কদিনে মেয়েটা শুকিয়ে গিয়েছে একটু৷ শুকনা মুখে অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে নীতুকে৷
-শুভ নীতুকে জড়িয়ে ধরতে যাবে এমন সময় থামিয়ে দিল নীতু৷ গালগোল ফুলিয়ে শুভকে বলল,
-এই তুমি রাগ করো নি?
-আমার পাখির উপর কি আমি রাগ করতে পারি?
-কেন পারোনা?
-ভালোবাসি তাই৷
-এখন থেকে রাগ করবা বুঝেছো?
-কেন?
-কারণ আমারও তোমার রাগ ভাঙাতে ইচ্ছে করে৷ আমি জানপাখি, বাবুইপাখি বলে রাগ ভাঙাবো৷
নীতুর বাচ্চামো দেখে শুভর হাসি পায়৷
নীতুকে জড়িয়ে ধরে শুভ মনে মনে বলল”ভাগ্যিস এসেছিস৷ নয়তো বাসায় গিয়ে থাপ্রাই তোর গাল লাল করে দিতাম৷”

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- বর্তমানে কমবেশী সব প্রেমিকই মেসেন্ঞ্জারের সবুজ বাত্তি নিয়ে প্যারাই আছে৷
প্রেমিকা নামক হারামজাদীগুলান কিছুতেই সিচুয়েশন বুঝেনা৷ প্রেমিকদের নামের পাশে অসময়ে সবুজ বাত্তি জ্বললে প্রেমিকাদের পিত্তি জ্বলে যায়৷
আই হেইট দিস প্রেমিকা৷

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত