দুর্ঘটনার রাতে

দুর্ঘটনার রাতে

দাঁইহাটা আর কাটোয়া জংশনের মাঝে গয়া প্যাসেঞ্জার যখন লাইন থেকে ছিটকে গেল,
তখন রাত প্রায় দশটা। যাত্রীদের আর্তচিৎকারে জায়গাটার তখন এক ভয়াবহ অবস্থা।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে, নির্জন প্রান্তরে রক্তমাখা অবস্থায় কুমুদ কয়েক মুহূৰ্ত্ত কী যেন চিন্তা করল,
তারপর কোনোরকমে সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াল। বা-হাতটা যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছিল।
ভয়ানক ভাবে কেটে যাওয়া ছাড়া হাতের হাড়ও ভেঙ্গেছিল বোধ হয়। অন্ধকারে কামরার
ভেতরে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মনে হল, পায়ের তলাতে বোধহয়, কোন মানুষের অচৈতন্য
দেহ।

স্টেশন এখানে থেকে অনেকটা দূরের পথ। কুমুদ হামাগুড়ি দিয়ে দরজার কাছে গেল।
বা হাতটা নাড়াতেই পারছিল না। ডানহাতে কোনক্রমে হাতড়ে হাতড়ে কামরার বাইরে
এল। ইতিমধ্যে আরো অনেক যাত্রী কামরার বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে কেউ
কেউ ওর মতো আহত, কেউবা আরো বেশি।
কুমুদ ঐ পরিবেশে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। হাতের যন্ত্রণা ক্রমাগত বাড়ছিল।

রিলিফ ট্রেন কখন আসবে তারও কোনো ঠিকানা নেই। আর আশেপাশের গ্রাম থেকে
সাহায্য আসতে হয়ত মাঝরাত গড়িয়ে যাবে।
হাটতে শুরু করল কুমুদ। ধানক্ষেত আর মাঠেব মধ্যে দিয়ে হাটতে হবে ওকে। দু
ক্ৰোশ পথ পেরিয়ে তবেই ও পৌছবে শ্রীবাটি গ্রামে। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে পা
চালাতে চেষ্টা করল ও।
মাইলখানেক পথ এবড়ো খেবড়ো ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হাটার ফলে পা দুটো আর
চলতে চাইছিল না। কেমন যেন টলতে লাগল ওর পা। মাথার মধ্যে হঠাৎ কে যেন হাতুড়ি
পেটাতে শুরু করেছে তখন। সেই মুহুর্তে হঠাৎ ভূত দেখার মতো চমকে উঠল কুমুদ।

সামনেই একটা একতলা পাকাবাড়ি। হঠাৎ ধান ক্ষেতের শেষে বাড়িটা দেখে খানিকটা
আশার আলো দেখতে পেল। তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছিল। আর কিছু না হোক, ঐ
বাড়িতে একগ্লাস জল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
বাড়িটার সামনে এসে বাড়তি শক্তি এল বুকে। বাডিটা বসত বাড়ি নয়। ডাক্তারখানা।
দরজার ওপরে ছোট একটা সাইনবোর্ডে লেখা “দাতব্য চিকিৎসালয়।কিন্তু ডাক্তার খানার
দরজা বন্ধ। এত রাতে ডাক্তারবাবুকে কী পাওয়া যাবে? ডাক্তার খানার কাছাকাছি কোনো
বাড়ি ওর চোখে পড়ল না। দূরে কয়েকটা বাড়ি দেখা যাচ্ছিল বটে, কিন্তু পথ অনেকটা।
“ডাক্তারবাবু! ডাক্তারবাবু!” বলে চিৎকার করতে করতে কুমুদ প্রাণপণ শক্তিতে দরজা
ধাকাতে শুরু করল। ওর মনে হল, গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরুচ্ছে না। আরও কয়েকবার
নিস্ফল ধাক্কা মারতে চেষ্টা করল, তারপরই ওর শরীরটা ডাক্তারখানার দরজার ওপরে
বিকট শব্দ করে পড়ে গেল। গোঙানির মতো অফুট কয়েকটা আওযাজ কবে জ্ঞান হারাল
কুমুদ।

এমনি অবস্থায় কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ।
কুমুদের যখন জ্ঞান ফিরল, তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। ও দেখল একটা
ঘরের মধ্যে শুয়ে আছে, ঘরে আসবাবপত্র বলতে খাট, টেবিল, চেয়ার আর একটা বন্ধ
আলমারি। দেওয়ালে একটা বাঁধানো ফোটোগ্রাফ আর বড় একটা কাঠের র্যাকে বিভিন্ন
আকারের শিশি বোতলে ভর্তি ওষুধপত্র। টেবিলের ওপরে হ্যারিকেনেব মৃদু আলো জ্বলছিল
টিমটিম করে।
হঠাৎ এমন একটা অচেনা পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার কবে প্রথমটায় হকচকিয়ে
গিয়েছিল ও। ধড়ফড় করে উঠে বসল বিছানায়। বাঁ-হাতটায় প্লাস্টার করা। হাতটা গলার
সঙ্গে ঝোলানো। ঠিক তখনি অচেনা একটা স্বরে চমকে উঠল কুমুদ।

“কেমন লাগছে এখন ? আগের থেকে নিশ্চয় অনেকটা সুস্থ?”
কুমুদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে। ওর সামনে একজন পাঁচিশ-ছাব্বিশ
বছরের যুবক স্টেথো হাতে দাঁড়িয়ে। যুবক ডাক্তারটি এগিয়ে এল ওর দিকে। ওর হাতের
প্লাস্টারে কয়েকবার আঙুল ছুইয়ে, বুকে পিঠে স্টেথোস্কোপ বসিয়ে পরীক্ষা করল। তারপর
নাড়ি দেখে বলল “কোয়াইট ও-কে।
“আমি এখানে কেন? কী হয়েছিল আমার ?” কুমুদ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।
“সে কি! কিছু মনে নেই? ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে …
ডাক্তারবাবুর কথা শেষ না হতেই কুমুদের চোখের সামনে ভেসে উঠল ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টের
সেই ভয়াবহ দৃশ্য। ও চকিতে নিজের প্লাস্টার করা হাতটা চেপে ধরল। নাড়ালও কয়েকবার।

অশ্চর্য! যন্ত্রণার বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই। যুবক ডাক্তারটিকে এতক্ষণ ওর কৃতজ্ঞতা জানানো
উচিত ছিল। বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সব। লজ্জায় কানদুটো লাল হয়ে উঠল কুমুদের।
বলল, “আমাকে ক্ষমা করবেন ডাক্তারবাবু। কিছু মনে ছিল না আমার।
“ছিঃ! ছিঃ! ক্ষমাটমার কথা কী বলছেন?”
“অন্ধকারে পথ চিনে আসতে পেরেছিলেন বলেই না ঠিকমতো চিকিৎসা হল।
“তা ঠিক। কিন্তু আপনার ফিজ ?”
“টাকা পয়সা এখানে লাগে না। এটা দাতব্য চিকিৎসালয়।
“আমি তাহলে এখন উঠি। আমাকে আবার সেই শ্ৰীবাটি গাঁয়ে যেতে হবে।”
“আগে সকাল হোক। বাকী রাতটুকু এখানে বিশ্রম করে যান।
হ্যারিকেনের সেই ঝাপসা আলো আঁধারিতে ডাক্তারবাবু বন্ধ আলমারিব দিকে এগিয়ে
গেলেন। কুমুদ আর কোনো কথা বলল না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জানালার বাইরের দিকে
তাকাল। তখনও তারা দেখা যাচ্ছিল আকাশে। কুমুদ শরীরটাকে এলিয়ে দিল বিছানায়।

ডাক্তারবাবুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠল ওর। যে নিঃস্বার্থ সেবার নিদর্শন যুবক ডাক্তারটি
দেখালেন, তা তুলনাহীন। কি, ডাক্তারবাবুর নামটা তো জানা হল না। হঠাৎ কোথায়
গেলেন উনি। ঘবের দরজায় খিল লাগানো। খিড়কির দরজাও বন্ধ! কুমুদ কয়েকবার
ডাক্তারবাবু!’ বলে ডাকল। কোনো সাড়া পেল না। ঘরের মধ্যে এদিক ওদিক দেখল। কিন্তু
কোথাও তার হদিস নেই। ক্লাস্তিতে দুচোখ বুজে আসছিল ওর। আর জেগে থাকতে পারল
না কুমুদ।
ভোর হতে না হতেই হৈচৈ পড়ে গেল গ্রামে। ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট দেখতে গায়ের সব
লোক তখন ছুটছে রেললাইনের ধারে।
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল কুমুদের। আগের চেয়ে ওর শরীর এখন
অনেকটা সুস্থ। বাঁহাতের প্লাস্টার শুকিয়ে খটখটে। খাট থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে
গেল ও। ডান হাতে খিল খুলে দেখল, বাইরে একজন মধ্য বয়সী ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে।

একনজর দেখেই কুমুদ বুঝতে পাবল, আগন্তুক ভদ্রলোক একজন ডাক্তার। ভদ্রলোক অবাক
চোখে কুমুদের পা থেকে মাথা অব্দি একবার দেখলেন। ভদ্রলোকের হাতে একটা চামড়ার
ডাক্তারি ব্যাগ। গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ। ডাক্তার ভদ্রলোক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন ,
“আপনি এখানে কী করে এলেন ? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না ?”

কুমুদ বলল, “কাল রাতে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টের পর এখানে এসেছিলাম। বাঁ হাতটা ভেঙে
গিয়েছিল। এখানে যে ডাক্তারবাবু ছিলেন, তিনি আমার হাত প্লাস্টার করে রাতটুকু বিশ্ৰাম
নিতে বলেছিলন।
“ডাক্তারবাবু! ডাক্তারের চোখে মুখে বিস্ময়। “আমি ছাড়া অন্য কোনো ডাক্তার তো
এখানে নেই? আর কম্পাউন্ডার যিনি আছেন তিনি তো কাল রাতে আমার সঙ্গেই
গিয়েছিলেন। এতক্ষণ হয়ত উনি সদর হাসপাতালে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টের রিপোর্ট দিতে পৌছে
গেছেন।
“তাহলে উনি কে?”কুমুদ হা হয়ে গেল ডাক্তারের কথায়।

ডাক্তারবাবু কুমুদকে খাটে বসালেন। হাতের ব্যাগ টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“যিনি আপনার ট্রিটমেন্ট করেছিলেন, তিনিই কী এই ঘরের তালা খুলেছিলেন।
“সে কথা তো বলতে পারব না।”কুমুদ বলল, “আমি এখানে পৌছতেই জ্ঞান হারাই ।”
“তারপর ?”
“জ্ঞান যখন ফিরল দেখলাম, এই খাটে শুয়ে। বা হাতে প্লাস্টার করা”
“যিনি প্লাস্টার করেছিলেন তাকে দেখেছিলেন?
“হা। জ্ঞান ফেরার পর উনি আমাকে পরীক্ষা করেছিলেন যখন, তখন দেখেছিলাম।
পরে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। তারপর আর দেখিনি ওঁকে। উনি আমাকে একলা
ফেলে কোথায় যে চলে গেলেন? কত ডাকাডাকি করলাম। কিন্তু, কোনো সাড়াশব্দ পেলাম
না”
“আশ্চর্য! এই গায়ে ভাঙা হাত জোড়া দিতে পারে, এমন কোনো লোক আছে বলে
তো শুনিনি? কেমন দেখতে ছিলেন সেই ডাক্তারটি?”
“পচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়স হবে। চেহাবাও বেশ ভাল। লম্বা-চওড়া। মুখে চাপ দাড়ি।
সত্যি অমন ভদ্রলোক জীবনে দুটো দেখিনি আমি। ট্রিটমেন্ট করলেন, অথচ একটা পয়সাও
নিলেন না আমাব থেকে। বললেন, এটা দাতব্য চিকিৎসালয়।

“হুম!” বলে ডাক্তারবাবু ঝিম মেরে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। উনি কিছুতেই ভাবতে
পারছিলেন না, কে সেই ডাক্তার। যে দরজার তালা খুলে চিকিৎসা করার সাহস বাখে। এই
গায়ের কোনো ছেলে কী তবে ডাক্তারী পড়ছে? তাই বা কী কবে হয? গায়ের সকলেই
ওঁকে শ্রদ্ধাভক্তি করে, আর এই সুখবরটা ওকে কেউ জানাবে না? গয়া প্যাসেঞ্জারের
অ্যাক্সিডেন্টের খবর শুনে, মানবিকতার খাতিরে ওঁকে দৌড়তে হয়েছিল আহত যাত্রীদের
প্রাথমিক চিকিৎসা করার জন্য। রেলের রিলিফ ট্রেন এল সেই ভোরবেলা। নইলে, আরও
আগে হয়ত উনি ফিরতে পারতেন। চাক্ষুষ দেখতে পেতেন যুবক ডাক্তারটি গেলই বা
কোথায়। এই লোকটা বানানো গল্প বলছে না তো ? কোন বদ মতলবে ঘরে ঢোকেনি তো?
এদিকে লোকটার চেহারা আর জামাকাপড়ে রক্ত দেখে মনে হচ্ছে, সত্যি সত্যি ট্রেন
অ্যাক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে ফিরেছে।

কুমুদ চুপচাপ বসে ছিল। হঠাৎ দেওয়ালে টাঙানো ফোটোগ্রাফের দিকে চোখ পড়তেই
চমকে উঠল ও। চিৎকার করে ছবির দিকে আঙুল তুলে বলল, “ঐতো সেই ডাক্তারবাবু!
সম্বিত ফিরে পেয়ে ডাক্তারবাবু চমকে উঠলেন, “কই?”তারপর— ছবির দিকে চকিতে
তাকিয়ে ফের বললেন, “ও এসেছিল?” কুমুদ ঘাড় নেড়ে সায় দিল। দ্রুত বুক ওঠানামা
করতে শুরু করল ডাক্তারবাবুর।
“কিন্তু!” ডাক্তারের চাহনি হঠাৎ কেমন যেন ঘোলাটে
হয়ে গেল। বন্ধ আলমারির দিকে তাকিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠলেন, “অসম্ভব!”
তাবপর কুমুদের কাধে দুহাত রেখে উত্তেজিত হয়ে ঝাকুনি দিলেন, “ঠিক বলছেন আপনি ?
ছবিতে যাকে দেখছেন, সেই এসেছিল?”
কুমুদ ছবিটা আর একবার দেখে নিশ্চিহ্ন হল। বিনয়ীভাবে বলল, “অমন ভদ্র ভাক্তারের
নামে, আমি কী মিথ্যে কথা বলতে পারি? অজ্ঞান অবস্থা থেকে তুলে এনে উনি যেভাবে
আমার চিকিৎসা করলেন, তা কী আমি ভুলতে পারি?”অভিভূত কুমুদ। ডাক্তারবাবু বোবার
মতো নিশ্চুপ।

কুমুদ ফের জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার বলুন তো? ছবিটা কার?’
ডাক্তারবাবু কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে লম্বা একাট নিঃশ্বাস ফেলে গলা থেকে
স্টেথোস্কোপ খুলে বললেন, ‘সত্যি যদি ও এসে থাকে, আর স্বচক্ষে দেখে থাকে, ওর কথা
আমি রেখেছি। তাহলে এতদিনের পরিশ্রম আমার সার্থক।
কুমুদ মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছিল না। ডাক্তারবাবুর কথা কেমন যেন হেঁয়ালি বলে
মনে হচ্ছিল ওর।
“এতদিন কাউকে যে কথা বলতে পারিনি, আজ আপনাকে সেই কথা বলছি। আমার
কাছে বড় মর্মান্তিক ঘটনা!” ডাক্তারবাবু বলতে লাগলেন, “বছর বিশেক, আগের কথা।
সিরাজুল আর আমি একই সঙ্গে ডাক্তারি পড়তাম। দুজনে ছিলাম অভিন্নহৃদয় বন্ধু। বেশ
ভাল সুডেন্ট ছিল ও। কলেজের ছাত্রছাত্রী মহলেও ছিল খুব পপুলার। ওর জীবনের ধ্যান
জ্ঞান ছিল আর্টের সেবা। ডাক্তারি পড়তে পড়তে নিজের পকেট খরচা থেকে গরীব মানুষের
চিকিৎসা করত, ওষুধ পথ্যিও কিনে দিত। ওর খুব ইচ্ছে ছিল, ভবিষ্যতে আমরা দুজনে
কোনো গ্রামে গিয়ে দাতব্য চিকিৎসালয় খুলি। কিন্তু কী যে হল, ঘটনাটা হঠাই ঘটে গেল
যেন। মাত্র তিনদিনের ঘরে সিরাজুল চলে গেল আমাদের ছেড়ে। ডাক্তারিশাস্ত্রের কোনো
বিদ্যাই ওকে বাঁচাতে পারল না। তখন আমার ফোর্থ ইয়ারে পড়তাম। ডাক্তার হওয়া আর
হল না সিরাজুলের। কলেজে এমন কোনো সুডেন্ট বা ডাক্তার ছিল না যে, ওর জন্য
চোখের জল ফেলেনি।” কথা বলতে বলতে চোখ ছলছল করে উঠল ডাক্তারবাবুর।

শিরশির করে উঠল কুমুদের গোটা শরীর। ও আড়চোখে একবার হাতের প্লাস্টারের
দিকে তাকাল। গলা শুকিয়ে কাঠ। কোনো স্বর বেরল না গলা দিয়ে।
ডাক্তারবাবু রুমালে চোখ মুছতে মুছতে ফের বললেন, “ওর মতো মানসিকতা আমি
আর কোনো মানুষের মধ্যে দেখিনি। মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে আমাকে দু-হাত ধরে
অনুরোধ করেছিল, ওর কঙ্কালটা যেন ডাক্তারি সুডেন্টের ব্যবহারের জন্য কাজে লাগাই।
সিরাজুলের মৃত্যুর বছরখানেক পরে আমি ওর কবর থেকে কঙ্কালটা চুপিচুপি তুলে এনেছিলাম
বটে কিন্তু কোনো হসপিটালে দিইনি। বন্ধুপ্রীতি আমাদের দুজনকে কাছছাড়া করতে পারেনি।
এই দাতব্য চিকিৎসালয়েই ওকে লুকিয়ে রেখেছি আমি।
ভয়ে শিউরে উঠল কুমুদ। ডাক্তারবাবু ধীর পায়ে বন্ধ আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন।

আলমারির পাল্লা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষন।
কুমুদ উকি মেরে দেখল, আলমারির মধ্যে একটা কঙ্কাল আংটায় ঝোলানো রয়েছে।
কঙ্কালটা চোখে পড়তেই ঠকঠক করে কেঁপে উঠল ও৷ মনে হল, শিরদাঁড়া বেয়ে একটা
ঠান্ডা শ্রোত নেমে গেল। বোঁ বোঁ করে ঘুরতে লাগল মাথা। পা দুটো হঠাৎ ভারী হয়ে গেল
খুব। বিড় বিড় করতে করতে ফের জ্ঞান হারাল কুমুদ।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত