মোবাইল আর সোনার চেইন

মোবাইল আর সোনার চেইন

শান্তার সাথে খুব সাধারণভাবে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয় । রাস্তাঘাটে দেখা হলে টুকটাক কথাবার্তা বলতাম । তারপর মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলতাম । এভাবে কথা বলতে বলতে আমাদের মাঝে একটা প্রেমের সম্পর্ক হয়ে যায় । আমরা কখনও ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতাম না । সপ্তাহের মধ্যে দু-তিন দিন কথা বলতাম । আর প্রতি সপ্তাহে একবার দেখা করতাম । এখনকার ছেলে মেয়েদের মতো পাকে বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা করতাম না ।
আমাদের দেখা হতো একটা পুকুর পাড়ে ।

শান্তার সাথে একদিন দেখা করার সময় ,সে আমার হাতটা ধরে বলে ” তোমাকে একটা কথা বলি মনে কষ্ট নিও না । তুমি কোন কাজ কাম করো না , এভাবে বেকার বসে থাকলে কি হবে । তোমাকে যে কিছু একটা করতে হবে ‌। কোন কাজ বা ব্যবসা শুরু করো । তুমি যদি এভাবেই বেকার ঘুরাফেরা কর , আমি কি করে বাবা মা কে তোমার কথা জানাবো । বাবা-মা কখনো একটা বেকার ছেলের কাছে আমার বিয়ে দিবে না । ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এখন থেকে তোমাকে প্লান করতে উচিত।
তুমি যদি আমাকে সত্যি ভালবাসো ,তুমি যদি সত্যি আমাকে তোমার জীবন সঙ্গী করতে চাও ।
তাহলে তুমি একটু ভেবে দেখো আমি ঠিক বলেছি কিনা ।

সে দিন রাত আমি অনেক ভেবে দেখেছিলাম ।
আসলে শান্তা ঠিকই বলেছে । আমি কোন কাজ কাম করি না বেকার ঘুরাফেরা করি । এভাবে আর কতকাল , আমাকে যে কিছু একটা করতে হবে । এরকম বেকার ঘোরাফেরা করলে তার বাবা-মা কখনো শান্তাকে আমার হাতে তুলে দিবে না । শুধু শান্তার বাবা-মা না , পৃথিবীর কোন মা বাবাই একটা বেকার ছেলের হাতে তাদের মেয়েকে তুলে দিবেন না ।

অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম আসলে আমাকে কিছু একটা করতেই হবে । আমার পড়াশুনা তেমন নাই । তাই ভাবলাম ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করব ।এরপর দেখলাম দেশে ব্যবসা করা আমার পক্ষে সম্ভব না । তারপর আমি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম ।

বিদেশ যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করা শুরু করলাম । আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন , আমাদের কাছে তেমন কোন টাকা পয়সা ছিল না ,তাই আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিলাম ,আর কিছু সুদের উপরের টাকা নিলাম । তারপরও প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো শর্ট পরে । অনেকের কাছে চাইলাম । অনেক জায়গায় গেলাম কিন্তু কোথাও টাকা পেলাম না । অন্যদিকে যে লোকটার কাছ থেকে ভিসা নিচ্ছিলাম , সে বলল চার দিনের মধ্যে টাকা জমা না করলে সে অন্য কারো কাছে ভিসা বিক্রি করে দিবে ।
রাতে শান্তার সাথে কথা বলার সময় কথায়

কথায় শান্তা কে বললাম টাকাটা এখনো জমা হয় নাই। তার দুদিন পরে সে আমাকে তার সাথে দেখা করার জন্য বলে। আমি তার সাথে দেখা করার জন্য গেলাম ।

তখন সে একটা টাকার বান্ডিল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে এখানে পাঁচ চল্লিশ হাজার টাকা আছে । আজকে বিকালেই টাকাটা জমা করে দিবে । আমি তার কাছ থেকে টাকাটা নিতে চাইনি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এতো টাকা তুমি পেলে কোথায় ।

সে তখন বলে , টাকাটা কোথায় পেয়েছি সেটা তোমাকে আমি পরে জানাবো, আগে তুমি টাকা গুলো নিয়ে জমা দাও।

আমি তখনো বললাম আমি এই টাকা নিতে পারব না ।
সে বলে – যৌতুক হিসেবে নেও, মনে করো শ্বশুর বাড়ি থেকে তোমাকে যৌতুক দিয়েছে বিয়ের আগেই ।
কথাটা শুনেই আমার প্রচন্ড রাগ হয় ।

আমি রেগে গিয়ে বললাম তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে বিয়ে করলে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করবো তুমি আমাকে এরকম ছেলে মনে কর ।

এই বলে আমি চলে আসতে চাইলাম ।
তখন সে আমার হাত ধরে বলে সরি সরি আমি তো ফাজলামি করে বলছিলাম ।
দেখো তুমি আমাদের ভালোবাসার জন্য আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ।তুমি আপনজন ছেড়ে এ দেশের মায়া ত্যাগ করে তুমি বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ । আর আমি আমার ভালোবাসার জন্য আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এই সামান্য সাহায্য টুকু কি করতে পারি না । আচ্ছা মনে করো তুমি তোমার আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে যেভাবে টাকা নিয়েছো ,আমার কাছ থেকে তেমন ভাবে নাও। তোমার যখন সময় হবে তুমি আমাকে রিটান দিয়ে দিও ।

এরপর আমি টাকাটা নিলাম , বিকালে টাকাটা জমা করে দিলাম । তার দুদিন পর তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম এই টাকা কোথা থেকে পেয়েছে, কে দিয়েছে ।

তখন জানতে পারলাম সে তার স্মার্টফোন আর গলার স্বর্ণের চেইন বিক্রি করে দিয়ে এই টাকা আমাকে দিয়েছে । স্মার্ট ফোনটা তার খুব প্রিয় ছিল কারণ তার বড় ভাই তাকে গিফট দিয়েছে তার বড় ভাই সৌদি আরব থাকে ।
আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম তোমার মা বাবা তোমাকে কিছু বলে নাই মোবাইল আর চেইন এর জন্য ।
তখন সে বলল সে তাদের সবাইকে মিথ্যে বলেছে , বলছে মোবাইল আর গলার চেন চুরি হয়ে গেছে ।
আসল ঘটনা ছিল সকালে সে খালার বাসায় গিয়েছিল, তারপর খালার বাসায় সবার সামনে গলার চেইন খুলে মোবাইলের সাথে ব্যাগে রাখল, তারপর বাজারে গিয়ে তা বিক্রি করে দিল । বিক্রি করে বাসায় এসে বলল তার ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে ব্যাগের মধ্যে মোবাইল আর
স্বর্ণের চেইন ছিল । অবশ্যই তার বাসা থেকে তাকে অনেক বকাও শুনতে হয়েছে ।
এর দুই মাস পরে আমি পাড়ি জমালাম বিদেশ ।

বিদেশে এসেছি এখন তিন বছর হয়েছে । সব দেনা ক্লিয়ার করেছি । তারপর একটা ঘর করলাম । কিন্তু এখনো তার সেই পাঁচ চল্লিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়নি । অবশ্য আমি বিদেশ আসার কয়েক মাস পরেই তাকে দিতে চেয়েছিলাম। যখনই তাকে বলতাম, টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ।

সে তখন হেসে বলতো ” আমার এখন টাকা লাগবে না ,তবে বিয়ের পর তোমার কাছ থেকে সুদে আসলে উসুল করে নেব ” এ বলে শুধু হাসতে থাকে ।

সবচেয়ে মজার বিষয় হয়েছে , আমাদের রিলেশনের এখন চার বছর চলছে । তার সাথে আমার সব সময় কথাবার্তাও হয় ।

অথচে আমাদের সম্পর্কের কথা আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ জানে না । কে জানি বলছিল ভালবাসা যত গোপন থাকে তত গভীর হয় ।

কতটা সত্য কিনা মিথ্যা জানিনা তবে আমাদের দুজনের বেলায় তাই হয়েছে । আমাদের ভালবাসাটা দিন দিন গভীর হচ্ছে ।

তার বিয়ের জন্য তার মা বাবা এখনি ছেলে দেখছে ।কিন্তু শান্তা বারবারই এখন বারণ করে দেয় । তার মা বাবা কে বলে ” পড়াশুনা শেষ করে তারপর বিয়ে করবে । আসল ঘটনা হচ্ছে সেতো আমার জন্য অপেক্ষা করে চলছে ।
আমি কবে দেশে ফিরে যাব সেই অপেক্ষা ।

সামনের বছর দেশে যাওয়ার প্লান আছে , দেশে গিয়েই বাবা মাকে নিয়ে শান্তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব । আশা করি এখন তার মা বাবা আমার হাতে তাকে তুলে দেয়ার জন্য সংকোচ বোধ করবেন না ।
তার পরও জানি না ভাগ্যের লিখনে কি আছে ।

সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি জেন আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আমার জীবন সঙ্গী করে সারা জীবনের জন্য পাশে পাই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত