প্লে-বয়

প্লে-বয়

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এসেছে। যোহরের আজানের সময় হয়ে এসেছে। মামুন সাহেবের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে, চারদিকে হাওয়া উত্তাল হয়ে রয়েছে,অশান্ত হয়ে আছে পরিবেশটা। যদিও সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সুন্দর একটা ভবিষ্যতের, অপেক্ষা করছে নতুন অতিথির আগমনের।

মামুন সাহেবের স্ত্রী তামান্না বেগম প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মামুন সাহেব ব্যবসায়িক কাজে ঢাকার বাহিরে গিয়েছেন,তামান্না বেগমের কাছে তার আত্মীয়স্বজন রা রয়েছেন,যোহরের আজান ভেসে আসছে দূরে মসজিদ হতে,প্রকৃতিটা হঠাৎ ই শান্তরূপ ধারণ করলো। অনেক কষ্ট, যন্ত্রণা আর দীর্ঘ সময়ের প্রতিক্ষার পর তামান্না বেগমের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হলো।

কিছুক্ষণ পূর্বের এই নারীর যন্ত্রণার আর্তনাদ তার সন্তানের কান্নার আওয়াজের সাথে আর তার সন্তানের মুখ দেখার পরেই নিমেষেই সব দূর হয়ে গেলো।

সকলেই আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো। তামান্না বেগমের সন্তানকে নিয়ে সকলেই ব্যস্ত। খুব ফর্সা হয়েছে ছেলেটির গায়ের রং। দেখতে বেশ সুন্দর হবে সেটা নিশ্চিন্তে বোঝা যাচ্ছে।

মামুন সাহেব বাড়িতে এসে ছেলের মুখখানা দেখে খুব খুশি হয়েছে। মামুন সাহেব আর তামান্না বেগমের এটাই ছিলো প্রথম সন্তান। তাই তাদের খুশির মাত্রাটা আরও একটু বেশি। মামুন সাহেব ছেলের নাম রাখলেন–
“নাহিয়ান ইসলাম শান্ত।” সকলে শান্ত বলেই ডাকে।

পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো থাকায় শান্তর আদরযত্ন,বেড়ে ওঠায় তারা কোনো ত্রুটি রাখেনি বললেই চলে।
শান্ত ধীরে ধীরে বড় হয়ে বেড়ে উঠতে লাগলো। ছেলেটা একটু জেদী হয়ে উঠলো। শান্তর বয়স যখন ৫ বছর, তখন থেকেই তার হাতেখড়ি শুরু হয়। আস্তে আস্তে বাড়িতে তার মা তাকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করতে লাগলো,কিন্তু ভীষণ জেদ তখন থেকেই,লেখাপড়ার সকল সরঞ্জাম সব ছুড়ে ফেলে দিতো,একটুও বসে লেখাপড়া করতো না। সারাক্ষণ ভীষণ ছুটোছুটি করতো। নামটা যেমন শান্ত, অভ্যাসটাও তেমনি উল্টো রকমের,একদমই অশান্ত।

শান্ত ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো, স্কুলে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু সে বেশ জেদী। স্কুলেও শিক্ষকদের অনেক অবাধ্য,শান্তর বাবা-মা শান্তকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। এভাবে আস্তে আস্তে সে তৃতীয় শ্রেণীতে উঠলো। তখন শান্তর বয়স ৯ বছর। তখন শান্তর বাবা-মা সবাই মিলে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর চলে আসে। সেখানেই নতুন স্কুলে শান্তকে ভর্তি করানো হয়। শান্ত কথায় বেশ পটু, তার কথার মায়ায় যে কেউ আবদ্ধ হতে বাধ্য। একবার শান্তর এক মামি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলো। শান্তরা সবাই মিলে সেখানে গিয়েছিলো, ওর ই সমবয়সী একটা মেয়ে ছিলো,মেয়েটির নাম ছিলো আনিকা। আশ্চর্যজনকভাবে খুব সহজেই মেয়েটির সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছিলো। শান্তর কথায় যেনো যাদু রয়েছে,যেনো সহজেই যে কেউ তার মায়ায় পড়ে যায়। শান্ত তখন একদম ই অবুঝ,শুধু ছেলেমানুষী ভাব কাজ করতো। এভাবেই অবাধ্যতা আর দুষ্টমি তে সে অষ্টম শ্রেণীতে উঠলো। শান্ত বেশ দুষ্ট হলেও পড়ালেখাতে ভালোই ছিলো। দেখতেও ছিলো বেশ ভালো। ক্লাসের মেয়েদের সাথে শান্তর বেশ ভালো ভাব ছিলো। কিন্তু শান্ত এখন কেবল ই আবেগী সময় পার করছে। আবেগের ঘোরের মাঝে রয়েছে। যেখানে তাকায় সেখানে সেটাই ভালো লাগে। শান্ত অাড্ডা নিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক ব্যস্ত থাকতো। গ্রামের কিছু বাজে ছেলেদের খপ্পরে পড়ে গেলো সে সময়।

শান্ত ধীরে ধীরে তার বন্ধুদের সাথে মিশতে থাকলো, অনেক কিছু দেখতে,জানতে ও শিখতে লাগলো। শান্ত তার বন্ধুদের দেখতো তারা একাধিক মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে,কিছুদিন পর ছেড়ে দেয় আবার নতুন একজনের সাথে শুরু করে। শান্তর এটা বেশ ভালো লাগতে শুরু করলো। সে চিন্তা করলো সে ও এমন টা করবে আর মজা নেবে। যেই ভাবা সেই কাজ,সেই অষ্টম শ্রেণী থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরতে লাগলো।

শান্ত এখন প্রায় ই সকালে আগে বাসা থেকে বের হয়ে যেতো, এরপর স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো। শান্তর দিকে একবার কোনো মেয়ে তাকালেই,সে মেয়ে শান্তর মায়ায় পড়ে যেতো। তখন বন্ধুদের কাছে থেকে থেকে সে ভালোলাগা আর ভালোবাসা জিনিস দুটোকে আয়ত্তে এনে নিয়েছিলো। শান্ত মেয়েদেরকে বিভিন্নভাবে কথার জালে আবদ্ধ করতে লাগলো। মেয়েগুলো আসলেই খুব নিষ্পাপ ছিলো। মনটা ছিলো অনেক সহজসরল,আর শান্তর প্রতি ছিলো তাদের অনেক বিশ্বাস। খুব বেশি দিন নয়। সামান্য কয়েক দিনেই শান্ত খুব সহজে মেয়েদেরকে ভালোবাসার জালে আবদ্ধ করে ফেলতো।

একটি মেয়ে যখন শান্তর ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে যেতো, তখনই শান্ত তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতো ডাস্টবিন এর উৎকৃষ্ট আবর্জনার মতো। ওই নিরীহ মেয়েগুলো ছিলো নিষ্পাপ,কোমলমতি। তারা শুধু দিনের পর দিন শান্তকে বিশ্বাস করেছিলো,হয়তো মেয়েগুলো খুব বোকা ছিলো,তা না হলে এতো সহজে কেনো একটি ছেলেকে বিশ্বাস করবে? মেয়েগুলো হয়তো অনেকটা অবুঝ ছিলো,তা না হলে তারা শান্তর খেলাটা কেনো বুঝতে পারবে না? কিন্তু তারা শান্তর মতোন পাষাণ ছিলোনা কখনই। সেই মেয়েগুলো দিনের পর দিন শান্তর কাছে এসে অনুরোধ করেছিলো, দিনের পর দিন শান্তর পায়ে ধরেছিলো,কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলো শান্তর ই সামনে। কিন্তু হায়রে দুনিয়া!!! কতটা পাষাণ হতে পারে একটি ছেলে!একটা মেয়ের মন ভাঙা,একটি মেয়ের চোখের জল,এসব নাকি শান্তর কাছে কেবল ই ভালো লাগা আর মজা!

ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে উঠলো একজন প্লে-বয়। যার অভ্যাসটা ই হয়ে গেলো মেয়েদের নিয়ে খেলা। শান্ত যে ভীষণ চালাক ছিলো,সেটা নিঃসন্দেহে মানতেই হবে। দিনের পর দিন এতোগুলো মেয়েকে নিয়ে শুধু খেলেই চলেছে,কিন্তু আজ পর্যন্ত কখনো মেয়ের কাছে নিজেকে খেলার পুতুল বানায়নি। শান্ত সকলকে নিয়ে মজা করে,কিন্তু শান্তকে নিয়ে খেলার মতো আজও কেউ আসেনি। অনেকে শান্তকে নিষেধ করেছিলো এসব ছেড়ে দিতে, কিন্তু নাহ, শান্তর কাছে এটা শুধু এখন নেশা ই নয়,এখন এটা তার কাছে পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দেখতে দেখতে শান্ত এসএসসি পরীক্ষার্থী হলো।

২০১৫ সালের ঘটনা। খুব সকালে শান্ত তার এক পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর শহরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে লাগলো ট্রেন আসার জন্য। প্লাটফরমে ট্রেন এসে পৌঁছানো মাত্র ট্রেনের একটি মেয়ের দিকে শান্তর নজর পড়লো। অপরূপ লাগছিলো তাকে দেখতে। বাতাসে এলোমেলো চুলগুলো তার মুখের ওপর এসে পড়ছে,তার শত বাধা দূর করে তাকে একটিবার দেখার জন্য শান্তর প্রচেষ্টা।

সে ঝটপট ট্রেনে উঠে পড়লো এবং সে মেয়েটির পাশে সিট নিয়েছিলো। পার্বতীপুর থেকে দিনাজপুর যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। সেই ১ ঘন্টা সময়ের সবটাই শান্ত সেই মেয়েটির দিকেই কেবল তাকিয়েছিলো। তবে মেয়েটিও বার বার শান্তর দিকে তাকাচ্ছিল, দুজনেরই ভালোলাগার একটা আবেশ পাওয়া যাচ্ছিলো। মেয়েটি খোলাহাটি থেকে ঠাকুরগাঁ যাচ্ছিলো। অবশেষে ১ টি ঘন্টা অতিক্রম হয়ে এলো, ট্রেন দিনাজপুর এসে পৌঁছালো। শান্তর কাছে এটা একটা ঘন্টা নয়,
যেনো ১ টি শতাব্দী ছিলো।

শান্ত দিনাজপুর এসে ট্রেন থেকে নামলো, শান্ত ট্রেন থেকে নেমে পড়লো,বাহিরে বের হয়ে আবার এলো মেয়েটির জানালার কাছে। ইশারায় ফোন নাম্বার চাইলো, কিন্তু মেয়েটি বললো ফোন নাম্বার নেই। ইতিমধ্যে ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে এলো। শান্ত আবারও ট্রেনে উঠে পড়লো। ট্রেন পরের স্টেশন সেতাবগঞ্জ এসে থামলো। সারাটাপথ আজ শান্তর ইচ্ছে করছিলো সে অনামিকার চোখে চোখ রেখে সময়গুলো পার করে দিতে। সেতাবগঞ্জ এসে শান্ত মেয়েটিকে তার ফোন নাম্বার দিলো। অতপর এবার ট্রেন থেকে নেমে পড়তে হলো।

বাড়িতে এসে মেয়েটি শান্তকে টেক্সট করলো, আর তার নাম জানালো। মেয়েটির নাম ছিলো মৌরি। সেদিন থেকে শান্তর শুরু হলো মৌরির সাথে কথা বলা। সেদিন রাতেই শান্ত মৌরিকে তার ভালোলাগার কথা জানিয়ে দিলো। মৌরিকে প্রোপোজ ও করলো। মৌরি যদিও প্রথমে সম্মতি জানায়নি,কিন্তু খানিকবাদে মৌরি রাজি হয়ে গেলো। মৌরি ছিলো তখন ছিলখোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। দিন যতই বাড়তে লাগলো,একে অপরের কাছে আসা ততই বাড়তে লাগলো। কিন্তু মৌরি ছিলো ভীষণ জেদি। কিছু হলেই রেগে গিয়ে শুধু ব্রেকাপের কথা বলতো। কিন্তু শান্ত এই প্রথমবারের মতো সত্যিকারভাবে নামের মতো ই শান্ত হয়ে গেলো। মৌরি শান্তর ওপর যত ই রাগ করতো,শান্ত কখনো মৌরির ওপর রাগ করেনি। শান্ত মৌরির সবকিছু মেনে নিতো, সামলে নিতো। শান্ত বারবার নিজেকে একটা ই প্রশ্ন করেছে,,কেনো এতোটা ভালোবাসে সে মৌরিকে???
কিন্তু নাহ,এ প্রশ্নের যেনো কোনো উত্তর মেলেনা।
শান্তর বাড়ি থেকে মৌরির বাড়ির দূরত্ব ১০ কি.মি.
মৌরির সাথে শান্তর সম্পর্কটা মোবাইলের মাধ্যমেই চলতে লাগলো। তপ্ত দুপুরে শীতলতা আর হাজারো কষ্টের মাঝে সুখের অনুভূতি পাওয়ার জন্য মৌরির সে কথাগুলো ই ছিলো যথেষ্ট। শান্তর পৃথিবীটার নাম আজ
“মৌরি”

সম্পর্কের প্রায় একমাস হয়ে এলো। কিন্তু নাহ, শান্তর কাছে এটা ৩০ দিন হতে পারে,কিন্তু শান্তর প্রতিটি মুহূর্তের অনুভূতি,মৌরিকে ঘিরে তার প্রতিটি স্বপ্ন, এগুলো আজ শান্তর কাছে অবর্ণনীয়,গণনাহীন।
শান্তর কাছে আজ ভালোবাসা মানে শুধুই মনের এক অনুভূতি, যা কোনো সজ্ঞা দ্বারা সজ্ঞায়িত করা যায়না।
শান্ত আর মৌরির এর মাঝে আর কখনো দেখা হয়নি।

কিন্তু মৌরি হঠাৎ করে জানিয়ে দিলো সে আর শান্তর সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। কারণ হিসেবে অজুহাত দিলো তার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। শান্ত মৌরিকে বার বার বললো সে অনেক ভালো কিছু করবে তার জন্য,কিন্তু নাহ,মৌরি কিছুতেই আর শান্তর সাথে সম্পর্কটা রাখলো না। ঠিক সেভাবে শান্তকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো যেভাবে শান্ত এতোদিন মেয়েদের ছুঁড়ে দিয়েছিলো ডাস্টবিন এর মতোন করে!!! শান্ত আজ প্রথমবার অনুভব করতে লাগলো বুকের কষ্ট কি জিনিস। কতটা কষ্টে মানুষের চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু ঝড়ে পড়ে।

মৌরি আর শান্তর জীবনে ফিরে আসেনি। শান্ত ভাবতে লাগলো শান্ত যদি ভালো কিছু করতে পারে তাহলে হয়তো মৌরি তার কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু শান্তর সে ধারণা ছিলো ভুল। শান্ত মৌরির অনেকভাবে খোঁজ করতে লাগলো,মৌরির খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো যে, মৌরি শুধু শান্তর সাথে নয়, শান্তর মতো এরকম আরও অনেক ছেলের সাথে কথা বলতো, সম্পর্ক তৈরি করতো। ছেলেদের নিয়ে খেলা করতো বলা যায়। আর শান্ত মৌরির ফাঁদে পা দিয়েছিলো। শান্ত এসব জানার পর আর ঠিক থাকতে পারলো না। ওর সমস্ত পৃথিবীটা যেনো ঢেকে গেলো অন্ধকারে। শান্তর মাথায় শুধু মৌরিকে নিয়ে ভাবনাগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে,, কিন্তু তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে হাজারো মেয়েদের ছবি। কে এইসব মেয়েগুলো? হ্যাঁ,,এগুলো সেইসব মেয়েরা,যাদেরকে শান্ত এভাবেই একসময় ব্যবহার করেছিলো,করেছিলো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য। আজ সেই এক ই কষ্ট ভোগ করার সময় এসেছে শান্তর। কর্মের ফল ভোগ করার সময় এসেছে হয়তো আজ। মৌরি আসলে একটা ছেলেকে ভালোবাসে। তাই সে শান্তকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ শান্ত বুঝতে পেরেছে, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কতটা যন্ত্রণা। এখন শান্ত চায় মৌরি যেনো জীবনে সুখী হতে পারে।

সেইবার আর শান্তর এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি। ধীরে ধীরে লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা করা শুরু করলো, আর সিগারেট ছাড়াতো চলতো ই না,বাড়িতে এসব জানাজানি হবার পর অনেকে শান্তকে বুঝাতে চাইলো, কিন্তু নাহ,এতো সহজেই সব ঠিক হয়ে উঠলো না। অনেক হতাশা আর কষ্টের মাঝে কাটতে লাগলো শান্তর প্রতিটি দিন। প্রতিটি মুহূর্তে আজ বুঝতে লাগলো মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করে কাউকে ঠকানো, কাউকে কষ্ট দেয়ার যন্ত্রণা কতটা তীব্র। এভাবেই অনেক কষ্ট, যন্ত্রণা আর হতাশা নিয়ে কাটতে লাগলো শান্তর এক একটা দিন। সামনের বার শান্ত এসএসসি পরীক্ষা দিলো, আর ভালো ফলাফলও করলো। এর মাঝে ঈদ এর সময় দিনাজপুর একটি শপিংমলে মৌরির সাথে দেখা হয়েছিলো,কিন্তু কথা হয়নি কখনোও আর। শান্ত কলেজে ভর্তি হলো, পড়ালেখার অনেক ব্যস্ততা চলতে লাগলো। এসবের মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রেখে মৌরিকে ভুলতে চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু নাহ,বেলা গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা নেমে আসে, পাখিরা যখন বিশ্রামের জন্য নীড়ে ফেরে, শান্ত পৃথিবীতে শান্ত তখন অশান্ত হয়ে ওঠে। চোখের নোনাজলে ভিজে যায় তার বালিশটা,আর কষ্টে পাথর হয়ে যায় অদৃশ্যমান মন টা।

সেদিনের পর থেকে কোনো মেয়েকে দেখা মাত্রই শান্ত মাথা নিচু করে চলে যায়,আজ পর্যন্ত আর কখনো কোনো মেয়ের দিকে চোখে চোখ রেখে আজও দেখা হয়নি শান্তর। আজ আর তার সেই দুরন্তপনাগুলো নেই, সে আজ শান্ত নদীর স্রোতের মতোন ই শান্ত হয়ে রয়েছে। আজ শান্ত চোখের পানির মূল্য বোঝে, আজ শান্ত মন ভাঙার বেদনা বোঝে, আজ শান্ত ধুকে ধুকে কষ্টের তীব্রতা অনুভব করার যন্ত্রণা বোঝে। আজ শান্ত ভালোবাসার মূল্য বোঝে। অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গিয়েছে,,আজও শান্তর মনের সে অপূর্ণতা তাকে যন্ত্রণা দেয়,আজও তাকে সেসব কথা ভাবায়। শান্তর আজও অনেক কষ্ট হয়,কিন্তু আজ আর শান্ত কাঁদেনা। সে কাঁদেনা মানে এটা নয় যে তার কান্না পায়না, সে কান্না করেনা কারণ এতোটাই সে কেঁদেছে যে আজ চেখের পানিগুলোও হয়তো তার ই মতো শান্ত হয়ে রয়েছে!

মৌরির বিয়ে হয়েছে পাঁচ মাস হলো। প্রিয়তমার প্রিয় মানুষটার সাথে তার জীবনটা শুরু হলো। ভালোবাসা টা যখন একপক্ষ,বেঁচে থাকার স্বান্তনা হিসেবে বলতে হয়-

“প্রেয়সী তো মোর সুখে আছে,থাকনা,
আমার কষ্টগুলো ভেতরেই চাপা রয়ে যাক না”

ভালোবাসা,সে তো দুটি মনের মিলন, সে তো আত্মার সাথে আত্নার বন্ধন। আর অনুভূতিগুলো? কেবলই শব্দহীন। ভালোবাসা কখনো বলে আসেনা, কখনো ভেবে-চিন্তে হয়না। আপনার মনের অজান্তে ই কেউ আপনার মনটাকে হয়তো দখল করে ফেলবে। যে মানুষটি বার বার সকলের সাথে প্রতারণা করে, যে মানুষটি একটি সময় সকলকে কাঁদিয়ে আনন্দ পায়, মনে রাখবেন সে মানুষটিও একটি সময় কারো দ্বারা প্রতারিত হবে। সে মানুষটি একসময় অনেকটা কাঁদবে, একসময় তার কান্না দেখার মতো কেউ থাকবে না।

যে মানুষটি অন্য মানুষটিকে একসময় অনেকটা যন্ত্রণা দিয়েছিলো,সে মানুষটি জীবনের একটা সময়ে এসে অন্যকে ভালো রাখার জন্য নিজের সুখটাও বিসর্জন দিয়ে থাকে। কিন্তু আর কেউ যেনো শান্তর মতো এমন ভুল জীবনে না করে,,কেউ যেনো কারো সামান্য কিছুক্ষণের আনন্দের জন্য কাউকে আর কষ্ট দিতে না পারে। সত্যিকারের ভালোবাসা সকলের জীবনে ই একবার আসে। ভালোবাসা নিয়ে কোনো খেলা নয়, মনের গহীনে স্থান দেওয়া উচিত। প্রকৃত ভালোবাসার মর্যাদা দেওয়া উচিত। সকলেই প্রকৃতভাবে ভালোবাসতে জানে,কোনো না কোনো ভাবে, জীবনের কোনো একটা সময়ে।হোকনা সে কোনো “প্লে-বয়!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত