শেষ পরিণতি

শেষ পরিণতি

হাসপাতালের গাড়ীটা ভেপু বাজাতে বাজাতে বাজারের মোড় পেরিয়ে এইমাত্র গ্রামের রাস্তায় নেমে গেলো। মুহূতের মধ্যে মনটা দুর্বল হয়ে গেলো। বুকের মধ্যে ধুকধুকি শুরু হলো। কেন জানিনে। একটা ছেলে দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে সম্মুখে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল চাচা, রসুল ভাই বলল, নার্গিস মারা গেছে। একটু আগে যে এ্যাম্বুলেন্সটা বেরিয়ে গেলো ওই গাড়ীতে তার লাশ রয়েছে।

ও কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে গেলো। রসুল আমার ছোট বেলার বন্ধু। যে কোন একটা দ্বন্দ্বে আজ বছর দশেক তার সঙ্গে আমার কথা হয়না। আজ এই দুঃখের সংবাদটা না দিয়ে পারল না! সে নিজে আসতে দ্বিধা; বিধায় অন্যকে দিয়ে খবরটা জানিয়ে দিলো। কিন্তু এ খবর আমার না জানাই ভালো ছিল। আজ পঁচিশ বছর হৃদয়ের মধ্যে যে ব্যথাটা সুপ্ত অবস্থায় লালন করে আসছি, সেই সুপ্ত ব্যথাটা আবার বাইরে প্রকাশ পেয়ে নতুন করে জ্বলতে শুরু করেছে। শুরু হয়েছে বুকের মধ্যে তীব্র বেদনা।

রসুলের উদ্দেশ্য তো এটাই। ও আমাকে ব্যথা দিতে চায়, দুঃখ দিতে চায়। আমি দুঃখ পেলে ওর আনন্দ লাগে, সুখ লাগে। ও জেনে বুঝেই এ কাজটা করেছে। তারপরও অন্য একটা অবাঞ্চিত ছেলে যে কোন দিন জানতো না নার্গিসের সঙ্গে আমার কথা, কতদিনের সম্পর্ক। আর সে সম্পর্কের পরিণতিইবা কি! খবরটা এভাবে তার দেয়া উচিৎ হয়নি।

একজনের মনে দুঃখ দিলে নিজেও দুখে পড়তে হয়। এ রকমের কতকগুলো বন্ধুদের জন্যে নার্গিসের আমার বিয়েটা হয়নি। কিন্তু নার্গিস মরলো কিভাবে! অনুসন্ধান করে জানা গেল গত দু’দিন আগে তার স্বামী মাথায় লাথি মারলে ঘরের দেয়ালের সঙ্গে লেগে তার মাথা ফেটে যায়। তড়িঘড়ি করে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসায় কোন কাজ হয় না। আজ বিকেলে ডাক্তার তাকে হাসপাতালে মৃত্যু বলে ঘোষণা করে। এ সময় তার বয়স হয়েছিল পঁয়তাল্লিশ। এক ছেলে আর এক মেয়ে রেখে গেছে নার্গিস। বিশ বছরের মধ্যে তার সাথে একটি বারের জন্যে দেখা হয়নি আমার। দেখা হয়নি তার সন্তানদের সঙ্গেও। ছেলেটা এবার নাকি কলেজে পদার্পণ করেছে। আর মেয়ের সামনে এসএসসি পরীক্ষা। ঠিক এই মুহূর্তে তার মা এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো! শুনলাম নার্গিসের ছেলে-মেয়ে দু’টি তার পিতার সঙ্গে হোটেলে বসে দুঃখ ভরা মন নিয়ে বসে আছে। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে এক নজর দেখে এলাম। মেয়েটি ওর মায়ের থেকেও সুন্দরী হয়েছে। ছেলেটাও কম না।

আবার নিজের ঘরে ফিরে এলাম। হারানো দিনের স্মৃতিগুলো এক এক করে চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সে স্মৃতিগুলো কতই না পীড়াদায়ক। সে কথা কাউকে বোঝানোর মতো ভাষা আমার জানা নেই।

তিন যুগ আগের কথা, নার্গিস আমার সঙ্গে নলিণীবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়তো। বয়স এবং শ্রেণী পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আমার সঙ্গে তার ভালবাসার সুদৃঢ় বন্ধনটা বাধতে থাকে সুকঠিনভাবে। আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় সে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলো। দু’টি জীবন এক হয়ে চিরজীবন থাকার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ভালবাসার বন্ধনটা ছিন্ন হয়ে বানের জলে ভেসে গিয়েছিলো। সে হয়তো ভুলে গিয়েছিলো কিন্তু আমি ভুলতে পারিনি- পারবোও না কোনদিন।

সে আমাকে তিনটি জিনিস দিয়েছিলো। ভালবাসা দিয়েছিলো, শীতের একটি নক্সী কাথা আর দিয়েছিলো তার বড় এক গোছা লম্বা চুল থেকে একটি ভ্রমর কালো চুল। এতো লম্বা চুলওয়ালা রমনীর সাথে আর কখনো সাক্ষাৎ মেলেনি আমার। কাঁথা না হয় মানুষ শীত নিবারনের জন্য দেয় কিন্তু চুল দেওয়ার অর্থ আমি বুঝিনি। তবুও তার সেই স্মৃতিগুলো আমি আজও বহন করে চলেছি।

এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলো। নিজেকে আড়াল করে ওর সঙ্গে দেখা করতে যেতে হতো পরীক্ষার হলের আঙ্গিনায়। ওর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল পরীক্ষা শেষের দিন এবং কথা হয়েছিলো বিয়ের কাজটাও সেরে ফেলা হবে। এই সিদ্ধান্তের কথাটা হয়তো জানাজানি হয়ে গিয়েছিলো। আর সে কারণেই ওকে বাড়িতে বদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। বদ্ধ করে রেখেই সেদিন রাতে গোপনে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো।

শীতের সকাল রোদ পিঠ করে বসেছিলাম, হঠাৎ একজনের আগমন। সে অতি নিকটের মানুষ; দুঃখ ভারাক্রান্ত চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে অপলক চেয়ে রইল; মুখে কোন কথা নেই। ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল কালবৈশাখী ঝড়ের একটা পূর্বাভাস। আমি শুধালাম, কিরে রনক এই সাজ সকালে তবো মুখটি কেন এত ভার? ও বলল, হয়েছে তবো সর্বনাশ। আমি বললাম কবিতার বুলি না উড়িয়ে কি হয়েছে তাই বল। ও বলল, গত রাত্রে নার্গিসের বিয়ে হয়ে গেছে। কথাটা শুনে আমার মাথায় বজ্রাঘাত হলো। স্থির থাকতে পারছিলাম না। নিদারুণ যন্ত্রণা শুরু হলো বুকের মধ্যে। সে দৃঢ় অঙ্গীকারটা ভঙ্গ করলো, বিশ^াসের গলাটিপে হত্যা করতে এতটুকু দ্বিধা করলো না নার্গিস।

কয়েক রাত ঘুম হলো না ওর চিন্তায়। নাওয়া খাওয়ার নিয়মনীতি সব গড়বড় হয়ে গেল। অল্প দিনের মধ্যে শরীরটাও ভেঙ্গে পড়েছে। বেশ কিছুদিন পর একটা পিকনিক স্পটে নার্গিসের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বান্ধবীদের সঙ্গে খুব খুশিতে সময় কাটাচ্ছিল তার। তাকে দেখে আমার মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হলো। সমুদ্রের ঢেউ এসে যেন হৃদয় কূলে আঁচড়ে পড়ছিল বার বার, নিজেকে সামাল দিতে পারছিলাম না।

ওর সামনে গিয়ে সিংহের মতো হুংকার দিয়ে বললাম, কে তোকে রক্ষা করবে আমার হাত থেকে। সুদে আসলে আমি সব পাওনা মিটিয়ে নেব তোর কাছ থেকে, এমন শিক্ষা দেবো যে জীবনে আর কোনদিন প্রতারণা করা, কারো জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার নাম ভুলে যাবে। কি অপরাধ ছিল আমার? আমার ভালবাসার মধ্যে কোন খাদ ছিল না। জীবনের সব প্রেম আমি উৎসর্গ করেছিলাম তোমার হৃদয়ে, কানায় কানায় ভরে দিয়েছিলাম আমার অস্তিতের সবটুকু। আমার জীবন নিয়ে এমনি খেলা করার কি অধিকার ছিল তোমার। কেন, কেন আমার এ জীবন তুমি ধ্বংস করে দিলে? কি লাভ হয়েছে তাতে তোমার।

মুহূর্তের মধ্যে অনেক মানুষের ভিড় জমে গেল সেখানে। এই কাহিনী শুনে অনেকে ধিক্কার দিয়ে আবার যার মতো সে চলে গেলো। কিছু মানুষ সেই স্থান ত্যাগ করতে চাইছিল না। নার্গিসের বান্ধবীরা তার হয়ে ওকালতি করতে চাইছিলো। ওর একজন বান্ধবী বলল, দেখ তোমাদের ব্যাপারটাতো আমি জানতাম। ও তোমাকে ঠকাতে চায়নি; ওর কোন দোষ নেই, কিছুই করার ছিল না ওর। তুমি ওর জায়গায় থাকলে হয়তো তুমিও পারতে না। তুমি ওকে অপবাদ দাও; কিন্তু অভিশাপ দিও না। পাশ থেকে আরেকজন বান্ধবী উত্তেজিত হয়ে বলল, তাকে এত বোঝানোর কি প্রয়োজন আছে? যা হবার হয়ে গেছে এখন কি করার আছে তার, যা পারে করুকগে যা।

আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম তাহলে আমি ওর পরিবর্তে তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাবো এখান থেকে,আমার কি করার আছে তোকে দেখিয়ে দেবো। এবার নতুন করে আবার ভিড় জমে গেল। নিজেকে শামলে নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করলাম।

যাহোক সেই ঘটনার পরে নার্গিনের স্বামী তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। একই গ্রামের ছেলে সাঈদ, নার্গিস তার পাড়া প্রতিবেশী বোন। আর সাঈদের মামার সঙ্গে নার্গিসের বিয়ে হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি মনিরামপুর সে ঢাকায় ডাক্তারী করে। সাঈদ মামার বাসায় থাকে। মামাকে সাহায্য করে সকল কাজে। সাঈদের সঙ্গে আমারও ভাব কম নয়। সেও আমার ক্লাসমেট। তার বিদ্যা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। নার্গিসের সঙ্গে সে আমার সম্পর্কের কথা জানে। কিন্তু এতটা জানতো না।

তিন মাস পর নার্গিসের রেজাল্ট শোনা গেলো। সে ফেল করেছে। তিনটি বিষয়- ইংরেজী,গণিত ও ইতিহাসে ফেল করেছিলো। বিয়ের প্রায় পৌনে এক বছর পর শুনলাম নার্গিসের পিতার বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। বেশকিছুদিন পর শুনি ওর স্বামী একটা তালাক নামা পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু নার্গিস যে তখন মা হতে চলেছে। খুব দুঃখ হলো ওর জন্য এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো ওর জীবনে।

একদিন সাঈদ ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে । সব ঘটনা বললো, এখান থেকে নাকি পাঁচ/সাতটা চিঠি নার্গিসের স্বামীর কাছে দিয়েছিলো কেউ। সেই চিঠিতে নার্গিসের পূর্বের ঘটনা সব লিপিবদ্ধ ছিল।

যাহোক বেশ কিছুদিন পর শুনলাম নার্গিস রোগ শয্যায়। সে মরতে বসেছে। হাসপাতালে মৃত্যুও সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সে একেবারে কৃশকায,সাদা হয়ে গেছে। গর্ভেও বাচ্চাটা সে রাখতে চাইলো না। সে কোন পরিণতি নিয়ে তালাক দেয়া স্বামীর সন্তান গর্ভে নিয়ে আছে। তাই সন্তানটি শেষ করে নিজে নতুন করে বাঁচতে চাইলো। কিন্তু অবশেষে তারই জীবন বাচানো দায় হয়ে পড়লো। জীবনের আর আশা নেই। তাকে দেখে লোকে চিনতেও পারে না। একি সেই নার্গিস না অন্য কেউ! ফল ফলাদি নিয়ে নার্গিসকে আত্মীয় স্বজনেরা দেখতে আসে। আহা! কি মেয়ে কি হয়ে গেছে,এমন হয়েছে মেয়েটার!

কয়েক মাস ভূগে ভূগে রোগটা একটু আরোগ্য হলো কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরো একবছর সময় লেগে যায়। তারপর আবার সেই আগের মতো। এতো কিছু হয়ে

গেলো কিন্তু যার সঙ্গে নার্গিসের বুক ভরা ভালোবাসা ছিলো তার সঙ্গে একবারের জন্যেও সাক্ষাত হলো না। কওম তাকে এতটা দুরে সরিয়ে রেখেছে।

যাক সে কথা, আবার নতুন করে মনে পড়ে নার্গিসকে। ভাবতে ইচ্ছে করে ওকে নিয়ে সারাক্ষণ। কিন্তু সে কি ভাবে? এ প্রশ্নের কোন উত্তর মেলে না। তবুও মনে পড়ে। এতো অভিনয়, এতো ছলনা, এতো প্রতারণার কথা কিছুই মনে থাকে না। সবকিছু ক্ষমা করে দিতে পারি যদি কোন এক অন্ধকার রাতে খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে একটি বার বলে, ওগো আমি ফিরে এসেছি আবার তোমার কাছে। আমি যে তোমারই ছিলাম, তোমারই আছি। কিছুদিন তোমার কাছ থেকে দুরে ছিলাম সেটা আমার অপরাধ; আর সেই অপরাধের জন্য আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমি যে চিরদিনের জন্যে তোমার কাছে চলে এসেছি। তাহলে আমি ফিরিয়ে দিতে পারতাম না। কিন্তু এলো না। শুধু আশায় আশায় দিন অতিবাহিত হতে থাকে।

আশায় আশায় অনেকটা দিন পার হলো। একদিন শুনলাম, নার্গিসের পুনরায় বিয়ে হয়ে গেছে। তার শারীরিক গঠন সুস্থতা আবার আগের মতো দাঁড়িয়েছিলো। একই গ্রামে বাড়ি হয়ে এই চোখ দুটি তাকে আগে কখনো দেখেনি। শুধু আবেগ তার উচ্ছ্বাস নিয়ে আমার জীবন। হৃদয়টা আবার ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে। আবার এক দফা আঘাত সইতে হলো নতুন করে।

একসময় আমি সংসার পাতলাম। তারপর নিজের স্ত্রীর কাছে শুনেছি নার্গিস নামের একজন ভদ্র মহিলা আমাদের বাড়ি এসেছিলো। রীতিমতো এ নিয়ে সন্দেহের একটি দানা বেধেছে আমার স্ত্রীর মনে। কারণ নার্গিস যে আমার বাগদত্তা ছিলো তা নানা মুখে সে শুনেছে। আর সেই কথা নিয়ে আমার পারিবারিক দ্বন্দ্বও হয়ে থাকে মাঝে মধ্যে।

এভাবে অনেক দিন যায়। নার্গিসের স্বামীর অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো। তিনি চাকরি জীবি মানুষ। দিনে দিনে তার অবস্থা আরো ভালো হতে থাকে। কিন্তু তারপরও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় সংসারে সুখ ছিলো না। ভেতরের দ্বন্দ্বটা বাইরেও প্রকাশ পেতে থাকে ধীরে ধীরে। নার্গিসের অনেক গোপন ঘটনা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়েছিলো তার স্বামীর কাছে। বিয়ের সময় নাকি অনেক ঘটনা গোপন করা হয়েছিল তার স্বামীর কাছে। এখন এতো দিন পরে এসে যেন সহ্য শক্তির বাইরে চলে যাচ্ছে। ছেলে মেয়ে এখন বড় হয়েছে, বেড়েছে নিজেদের বয়স।

শেয়ার বাজার ব্যবসার লোভ দেখিয়ে নার্গিসের ভাই তার স্বামীর কাছ থেকে নগদ দুই লক্ষ টাকা নিয়ে আসে। নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে আরো কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু টাকাটা দেওয়ার নামে কোন খবর নেই। কারণ শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। এই ধসে তারও লোকসান হয়েছে। নার্গিস ভাইয়ের কাছেও কয়েকবার টাকা চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। টাকা দিতে পারেনি। আর এ টাকার জন্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। লড়াইটা শুধু মনে নয়, শারীরিকভাবেও শুরু হয়েছে। অন্তরের ভালবাসা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বাড়িতে বাস করেও এখন যেন দু’জনের দুই মেরুতে বাস। দাবানলে জ�লতে থাকে দু’জনই। এক সময় নার্গিসের স্বামীর টাকার ভীষণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নার্গিসকে বলে এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। টাকা নিয়ে ফিরে এসো। আর তা না হলে আসার দরকার নেই।

-এই সামান্য কিছু টাকার জন্য তুমি আমাকে ত্যাগ করবে।

-দুই লক্ষ টাকা তুমি সামান্য বলছো। দাও সেই সামান্য টাকায় আমাকে ফেরত দাও।

-আমি কি তোমার টাকা নিয়েছি? যে নিয়েছে তার কাছে যাও।

-তর্কটা শেষ পর্যন্ত মারমারিতে রূপ নেয়। নার্গিস বলে, ঠিক আছে, তোমার ঘর করবো না আর। বলতে বলতে জিনিসপত্র গোছাতে থাকে।

-আমার ঘর করবে কেন? ইতোপূর্বে তুমি তো দুই ঘর ভেঙ্গে এসেছো। তোমাদের তো ওই অভ্যাস আছে। বুড়ো বয়সে না হয় এ ঘরও ভাঙ্গবে, তোমাদের তো লোকের অভাব নেই। আগে জানলে তোমার মতো চরিত্রহীন মেয়েকে বিয়ে করতাম না আমি।

-মা বাপ তুলে গালি দেবে না বলে দিচ্ছি। আগে জানলে আমি তোমার ঘরে আসতাম না। তোমাদের মতো ছোট লোক আর একটাও এদেশে নেই। আর সব জানা হয়ে গেছে তোমাদের সম্বন্ধে। হঠাৎ করে নার্গিসের স্বামী ফুসে ওঠে। সে নার্গিসের পিঠে লাথি মারে। মাথাটা ওয়ালের সঙ্গে লেগে ফেটে যায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। চিৎকার করে গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। ছেলে মেয়ে দু’টি চিৎকার শুনে পাশের কক্ষ থেকে ছুটে আসে। মায়ের এই অবস্থা দেখে কান্নাকাটি শুরু করে। মায়ের মাথা দুই হাত চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করতে চায়। ধিক্কার দিতে থাকে পিতাকে। সেও দিশেহারা হয়ে পড়ে। গাড়ি ডেকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা চলতে থাকে। সারারাত চিকিৎসা চললেও নার্গিসের কোন উন্নতি হয় না। সারা রাত এই অবস্থায় কেটে যায়। রোগীনির অবস্থা মারাত্মক দেখে হাসপাতালে ডাক্তার ঢাকায় নিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়।

সবে মাত্র সকাল। নার্গিসকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়ার পরেই সে একবার মাত্র চোখ তুলে তাকায় তার সন্তানদের দিকে। তার পরেই আবার চোখ দু’টি বোজে। হঠাৎ নার্গিসের দেহটা প্রাণহীন হয়ে যায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত