নানির বান্ধবী এবং অন্যান্য

নানির বান্ধবী এবং অন্যান্য

আমার নানু একজন রিটায়ার্ড ওটি ভিজিটর। শিক্ষিত বয়স্ক মানুষ তাই বান্ধবীর অভাব নেই। আর সেই বান্ধবীদের কথারও অভাব নেই।
একবার নানুবাড়ি থাকা অবস্থায় আসলেন নানুর এক বান্ধবী। স্থানীয় ভাষায় ‘চাটামবাজ’ হিসেবে তার বিশেষ খ্যাতি। আমরা ভাইবোনেরা সেই খবর তো পেয়েছিই। তাই চলে গেলাম তার সাথে একটু ‘চ্যাট’ করতে।
আমরা গিয়ে শুরুতে সকলে লম্বা সালাম ঠুকলাম। তাঁকে ব্যাপারটাতে উত্তেজিত হতে দেখা গেল। নানুকে বলে উঠলেন, “বেবি(নানুর ডাকনাম), তোমাকে বলা হয় নি। আমার মেয়েটার যে বাবু ঐযে গত এপ্রিল মাসে হলো(তখন চলছিল আগস্ট মাস)। সে না পুরো স্পষ্টভাবে সালাম দিতে পারে।”
যে বাচ্চার বয়স ৪ মাসের মত সে কিভাবে সালাম দেয় বুঝতে না পেরে আমরা বাচ্চারা উসখুদ করতে লাগলাম।
তারপরেই তিনি আমার বোনের জামার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এটা কি আড়ং এর জামা?”
আমি মাথা নাড়লাম।
তিনি সোৎসাহে বলে উঠলেন, “ছেলের করা জিনিস কি না চিনে থাকা যায়! বেবি জানিস তো সিয়াম(উনার ছেলে) তো আড়ংএর এক নম্বর ডিজাইনার।”
আমার পেটে কেমন একটা গুড়ড় করে উঠল।
এবার আমরা উঠে আসলাম। উনার কথা শুনে মাথা ঘুরাচ্ছিল। রুবিক্স কিউব নিয়ে মিলাতে লাগলাম। মিলানোর পরে যেই আবার আলাদা করতে যাই তখনই দেখি রুমে তাঁর আগমণ। প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলেন, “কত সময় লাগলো বাবু?”
আমি একটু গর্বের সাথেই বললাম, “১ মিনিটের একটু বেশি মনে হয়। আমার ওরকমই লাগে।” আসলে ক্লাসে রুবিক্স কিউব মেলানো নিয়ে আমার বেশ হাঁকডাঁক ছিল।
উনি প্রায় হাসো হাসো হয়ে বললেন, “আমার মেয়ের বড় বাবুটা আছে। সেটার বয়স তো মাত্র ৪ বছর। ওর মিলাতে ১০ সেকেন্ডের বেশি লাগে না। বুঝলা!”
আমি খুব সুন্দর একটা হাসি দিয়ে “ওয়াও” বলে উঠলাম। ভেতরের ব্যাপারটা পাঠক যে জানে তা আমি জানি এবং জানি বলেই জানাচ্ছি না।
এবার আসলো খাবার পালা। খেতে বসে উনি দেখলে আমার মামি বাঙালি খাবারের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান আর চাইনিজ কিছু খাবারও ঢুকিয়েছেন। ওমনি বলে উঠলেন, “জানো তো আমার ছোট মেয়ে থাকে কানাডা। তো ওকে আমি প্রায়ই চাইনিজ, ফাস্টফুড কুরিয়ার করে পাঠাই। ওইখানে পাওয়া যায় না তো! আর ও আবার এসব ছাড়া খেতেই পারে না।”
আমার গলায় খাবার এঁটে যাবার আগ মুহূর্তে মুখে গ্লাসকে ভর পানি ঢাললাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষে এবার উনি চলে যাবে। আমরা সবাই আনন্দিত মন এবং ভারাক্রান্ত চেহারা নিয়ে উনার সামনে হাজির হলাম। উনি শুরু করলেন, “বাবুরা, সবাই ঠিকভাবে পড়ো। আমার বড় ছেলের বড় মেয়েটা এবার এসএসসিতে ১২৯৮ নম্বর পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। তোমরাও পাবা ঠিক আছে!”
আমরা কাঠের পুতুলের মত মাথা নেড়ে বিদায় দিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো আমার দায়িত্ব পড়ল উনাকে গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসার। বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাঁদা ছিল। তাই বুড়া মানুষকে একটু আগায় দিতে হবে। অবশ্য উনি নিজের গাড়িতে এসেছিলেন। সে পর্যন্তই নিয়ে যেতে হবে।
সারাপথই “চাটামমুক্ত” থাকার পর গাড়ির সামনে গিয়ে উনি বললেন, “জানো তো এই গাড়িটার কিন্তু অনেক দাম।আমার ছেলে ব্যাংকক থেকে নিয়ে আসছে।”
আমি কিছু না বলে দাঁত কটা বের করে দিয়ে বাই বাই হাত নাড়লাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত