পিঞ্জরে বসিয়া শুক

পিঞ্জরে বসিয়া শুক

জয় মাধব, তারা ব্রহ্মময়ী, মাগো—জয় রামকৃষ্ণ

তখনই যে সময়ে সুঘরাই হারাইয়া যায় এই দিব্যমাল্য সাজান, ভাস্কর, হীরক-শোভাতে বিনিদ্র শহরে—ইহা শিবপুরী, ভক্ত ও মুক্তি প্রদায়িনী যাহা, সৌন্দর্য্য যাহা, যে শহর, তখনই সে আপনকার সীমা বুঝিয়া তীব্র আতান্তরে পড়িয়াছিল; যে তাহার শেষ অঙ্গুলিশীর্ষতেই ও অন্য প্রত্যঙ্গাদিতে যে ইহার পর হইতেই এবং বনস্থলী চমকপ্রদ হইয়া রহে, যে ইহার পরে হইতেই দীপের জ্যোতির্ম্ময়ী ঘটনা প্রবাহ! যে ইহার পর হইতেই আমি, হায়! আমি নারসিসস্‌-রে পথিক করিয়াছি।

ঐ সীমা ভাবিয়া, এ আমার মনিব! ও আমার মনিব! বলিয়া সে বড়ি উভরায় কান্দিয়া থাকে ইহা সত্য, অথচ আদতে তাহাতে প্রচ্ছন্ন ছিল কূট বিদ্বেষজনিত ক্রোধ, সে যেমন সেই সাধক—যে যিনি নির্ভীক তোয়াক্কাহীন দামাল, আকর্ণবিস্তৃত নেত্র যাঁহার হিঙ্গুল, চেহারা যাঁহার বৈরাগ্যসুন্দর দশাসই, গাত্র যাঁহার মসৃণ ও উজর তাম্রবর্ণের, যাহার পরনে কৌপীন, হস্তে যাঁহার সুমহৎ চিমটা; এখন যিনি এই লোকপ্রসিদ্ধ মন্দিরের দরজার চৌকাঠেতে অদম্য দুঃসাহসে ভীষণ রাগে ঐ চিমটা দ্বারা বারম্বার আঘাত করিতে উন্মাদ; ইহাতে ক্রমান্বয়ে তদীয় স্কন্ধ বলীবর্দ্দের প্রায় স্ফীত হইতেছিল, ঘর্ম্মে তাঁহার কপালের হোমতিলক ঘুণাক্ষরে পরিণত হইল, ইঁহার রুদ্রাক্ষমালা আন্দোলিত, আর যে তিনি মুহুর্মুহুঃ বীরবিক্রমে ত্রিভুবনের ত্রাসসঞ্চারী হুঙ্কার পাড়িতেছিলেন।

ঐ বিপুল হুঙ্কারমধ্যে ওই অভিনব সাধক জলদগাম্ভীর্য্যে মা ভৈঃ উচ্চারণ করিয়াছিলেন, আবার কখনও বা ভগবান শিবকে বিকট আঁশটে বচনে গালি ও টিট্টিকার দিতে থাকিয়া ইহাও বলিতেছিলেন, শালা…অদ্য আমারে দর্শন দিতে হইবে, আমি কণ্ঠে ফিরিয়া আসিতে চাহি না, দে শালা অখণ্ডতা!

যে এবং ঐ সাধক এরূপ অহঙ্কারও প্রকাশ করেন, যে, আমি তোমার সর্ব্বস্ব ত্যাগ করিয়াছি…আর তুমি আমাকে ফাঁকি দিবে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত