স্মরণীয় দিন

স্মরণীয় দিন

দোস্ত কি অবস্থা,,কত দিন পর দেখা তোর সাথে,,কোথায় ছিলি এতদিন,,,কত খুঁজেছি তোকে,,কোথাও পাইনি,,,,কি করস এখন,,

প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অর্ক,,কতদিন পর প্রশান্তকে পেয়েছে,,হটাৎ করে একদিন গায়েব কথা নেই বার্তা নেই কোথাই চলে গেছে,,কম হলেও বছর সাতেক পর দেখা হইছে,,

-আরে দাড়া, চল কোথাও বসে আড্ডা দিই,,,সময় আছে,,নাকি ব্যস্ত??প্রশান্ত একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,

-তোর জন্য সব ব্যস্ততা কিছুই না,, প্রশান্ত কি বলবে,বন্ধুগুলা এমনি হয়,,, ওরা একটা কফিশপ এ বসলো,,,

-তা বল কেমন আসোস -আছি ভালোই,তোদের কি অবস্থা??

-আমাদের কথা পরে আগে তোর কথা বল,,এরকম দেবদাস হই গেছোস কেন??

দাড়ি মোছে মুখ ভর্তি,,,,,চুল কাটছিস যে কয় বছর হইছে?আর এ গরমের মাঝে চাদর গায়ে দিয়ে আসোস কেন??

-আসলে ব্যস্ততার জন্যে সেভ হওয়া হয়ে উঠেনি,,,আর চাদরটা স্পেশাল,,,

-তা কি এমন ব্যস্ততা,,,

-সেটা বাদ দে,,আগে বল রিয়া কোথায়?যোগাযোগ আছে??

-যোগাযোগ আছে,,স্বামীকে নিয়ে বিদেশ থাকে,,সপ্তাহ খানিক আগে দেশে এসেছে,,থাকবে মাসখানেক,,,

-বাকিরা,,আচ্ছা রিয়ার নাম্বার আছে?? আজকে কিন্তু রিয়া আর রেহানের জন্মদিন, কত ফাজলামি করতাম দুজনকে নিয়ে,মনে আছে??

-মনে থাকবে না,,দাড়া সবাইকে কল দি,,

-আমি কথা বলি,,দে,,

প্রশান্ত ছিলো বন্ধুদের মধ্যমণি,, সব রকম ফাজলামিতে সেরা,,প্রশান্ত পারে না এমন কিছুই নাই,,,চুরি, পকেটমারা,চিটিংবাজি,ইভটিজিং,প্রেম,,,দেখতে খুব সুন্দর ছিলো,,,এখনো সুন্দর,,,আর সে এসব করতে পারতো তার ইনোসেন্ট মার্কা ফেসের জন্যে,,প্রশান্ত আবার কন্ঠ নকল করতে পারতো,,,বান্ধবী সবার কাছ থেকে টাকা মারি খাইছে,,প্রশান্ত,,সবাইকে হাসাইতেও পারতো,,,মানে এক কথায় পুরা একশতে একশ সে,,,

তো সবাইকে পাওয়া গেলো শুধু তামান্নাকে পাওয়া গেলো না,,,পরে জানতে পারে প্রশান্ত যাবার পর তামান্না বাবা মায়ের সাথে দেশের বাহিরে চলে যায়,, সবাই এখন রিয়ার বাসায়,,,বাসা দেখে বুঝা যায় রিয়ার স্বামী কত টাকা ওয়ালা,,,

ওরা বন্ধুরা মোট ৮জন,,মেয়ে ৪ ছেলে৪,,,এরা যখন কোথাও যেত জুটি বেধে যেত,,আর প্রশান্ত আর তামান্না ছিলো এক জুটি,,বাকিরা মজা করে হলেও এ দুজন সত্যিকারেই প্রেমিক প্রেমিকা ছিলো,,কিন্তু কেউই জানতো না,,,,

রিয়াতো বিশাল আয়োজন করে পেলছে,,,সব বন্ধুরা আজকে এক হয়ে গেছে,,কিন্তু তামান্নাটা থাকলে অনেক ভালো লাগতো,,,

প্রশান্ত।কয়েকবার তামান্নার কথা বললো,,,অন্যরাও খুব মিস করতেছে,,, কিন্তু মেয়েটা একবার কারো খোজ করলো না,

অনেকদিন পরে দেখা সবাই গল্প গুজব করতেছে,,,প্রশান্ত আনমনে কি যে বলে মাঝেমাঝে,,,, অর্ক কয়েকবার লক্ষ্য করে কিছু বলে না,

এমন সময় রিয়ার দেবর আসে,,,এসে তো প্রশান্তকে দেখে অবাক হয়,আর সাথে সাথে কাকে যেন কল দে,,,প্রশান্ত তাকে দেখে ভয়ে পালাতে গেলে,,,রিয়ার দেবর দরোয়ানদের বলে প্রশান্তকে ধরতে,

সবাই অবাক হয়ে এতক্ষন কর্মকান্ডগুলো দেখতেছিলো,,প্রথমে রিয়া মুখখোলে,,, -কি হয়েছে,,রাকেন ভাই??

-ভাবি আর বইলেন না,,ইনি মানসিক রোগী আমার আন্ডারে ছিলো,,কয়েকমাস আগে পালাই গেছিলো,,,কিন্তু তোমাদের সাথে কি করে???

ওনার বেশভূষা দেখতেছেন না,,গরমের মাঝে চাদর পড়ে আছে,অবশ্য ওনার আচরনে বুঝা যায় না,,, সবাইতো রিয়ার দেবরের কথা শুনে অবাক,,,প্রশান্ত পাগল,,,,,কিছুইতে বিশ্বাস করতে পারতেছে না,,,

বাহিরে প্রশান্তের চিৎকার শুনা যাইতেছে,,,আমাকে ছেড়ে দাও আমি তামান্নার কাছে যাবো,,,তামান্না তামান্না বলে চিৎকার করে যাচ্ছে,,,রাকেন ওর ব্যাগ থেকে একোটা ইঞ্জেকশন বের করে প্রশান্তকে ঘুম পাড়ানোর জন্যে পুশ করে,,,, আস্তে আস্তে প্রশান্ত মাটিতে পড়ে যায়,,,কিছুক্ষণ এর মধ্যে এম্বুলেন্স আসে রাকেন প্রশান্তকে নিয়ে চলে যায়,

অর্ক- তামান্নাদের বাসায় যাবো,,, অন্যরা যেতে চাইলে বলে আমি তোদের জানাবো,,,অর্ক তামান্নাদের বাসায় গেলে জানতে পারে ওরা বাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগে,,, বাড়ি ছেড়ে বিদেশ চলে গেছে অনেক আগে,,,অর্ক এবার তামান্নার এক খালার বাসায় যায়,,,ওনার বাসায় ওরা অনেক এসেছিলো,

ওনার বাসায় গিয়ে যা শুনে তা সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না,,, অর্ক বাসায় গেলে,,, তামান্নার।খালা:আরে অর্ক বাবা,, তুমি,,তামান্না যাওয়ার পরতো আর আসলেই না,,,ফুঁফিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে বলে,, অর্ক আস্তে আস্তে বলে:আন্টি তামান্না কোথায় আছে??

খালাতো অবাক,বলে:তুমি কি বলো,,,বছর তিনেক হলো তামান্না আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে,,,,প্রশান্ত ছেলেটা পুরা পাগল হই গেছিলো,,,তুমি জানো না(কান্না করতে বলে) খালা কান্না করতেছে,,,,

অর্ক হাটার শক্তি চলে গেছে,,,ওরা কেমন বন্ধু হলো নিজেদের বন্ধু মারা গেছে।জানে না,,,সব ছেয়ে ভালো বন্ধুটা পাগল হইগেছে,,,,নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে কত কিছু হই গেলো,,,

তামান্না খালাতো বোনের কাছে জানতে পারে,,তামান্নারা বিদেশ চলে যাওয়ার পর তামান্না বাবা ওখানকার তার একবন্ধুর ছেলের সাথে তামান্নার বিয়ে ঠিক করা হয়,,তামান্না পালিয়ে চলে আসে,,অনেকদিন সে সব বন্ধুদের খুজছিলো,,,

প্রশান্তও ছিলো,প্রশান্ত আর তামান্না বিয়েও করে,,,তামান্নার বাবা কেমনে কেমনে তাদের খুজে বের করে জোর করে তামান্না কে আবার বিয়ে দিতে চায়,,আর তামান্না কোনো উপায় না পেয়ে আত্মহত্যা করে,তখন প্রশান্ত জেলে ছিলো,,,,আর প্রশান্ত বের হয়ে জানলে, শোকে পাগল হয়ে যায়,

সবচেয়ে দুঃখের কথা ঘটনাগুলো যখন ঘটে এ শহরে ওরা কেউই ছিলো না,,,,কেউ গিয়েছিলো উচ্চ ডিগ্রির জন্যে মেয়েদের সবাই স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত,,, ,,, সবাই এখন তামান্নার কবরের সামনে সবাই কান্না করতেছে,,,

এ মেয়েটার জন্যে তারা কিছুই করতে পারে নাই,,সবার মাঝে অপরাধবোধ কাজ করতেছে,,,কিন্তু তাদের হয়তো কোনো দোষ নেই,

কিন্তু আজকের এ দিনটা তারা কোনো দিন ভুলবে না,,,,তাদের জীবনের স্মরণীয় দিন এটি,

 

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত