ইগনোর

ইগনোর

— বাবু, ঐ বাবু ঘুম থেকে ওঠ। কি রে ওঠ বলছি।(মা)
— উহহহহহহ। সকাল সকাল কি শুরু করলে বলো তো??(আমি)
— আজ আর সকাল নেই। সকাল গড়িয়ে বেলা হতে চলল। নয়টা বেজে গেছে বাবু। এবার ওঠ। কাল তোর রত্না আপুর বিয়ে যে।
— রত্না আপুর বিয়ে রত্না আপু বুঝবে। আমি কি করব।
— বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি ওঠ তো।
— আচ্ছা বাবা উঠছি।
— এবার তাড়াতাড়ি মুখ-হাত ধুয়ে তৈরি হয়ে নে। রত্না আপুর বাড়ি যেতে হবে যে।
— তুমি চলে যাও। আমার যেতে দেরি হবে।
— বেশি কথা না বলে যা বলছি সেটা তাড়াতাড়ি কর।
— আচ্ছা হোক যাচ্ছি।

দিয়ে কোনোরকমে রেডি হয়ে মাকে নিয়ে এলাম রত্না আপুর বিয়েতে। রত্না আপু আমার বাবার একমাত্র বন্ধুর একমাত্র মেয়ে। তার ভাই যদিও আমার সাথেই পড়ে ভার্সিটি তে তবে আমার সাথে তেমন বন্ধুত্ব নেই যতটা আমার বাবা আর তার বাবার ভেতর আছে। তবে রত্না আপুর সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। আসলে নিজের কোনো বোন নেই তো। ও এত কথার মাঝে আমার পরিচয়টাই দেওয়া হয়নি। আমি হলাম আমন, বাবা -মা র একমাত্র ছেলে। পদার্থবিদ্যায় অণার্স করছি। ফাইনার ইয়ার, এরপর বিসিএস দেওয়ার খুব ইচ্ছা আছে। বিয়ে বাড়িতে দেখি মজার হাট বসে গেছে। কত সব লোকজন, আত্মীয়-স্বজনে ভরে গেছে। আমার আবার বেশি ভিড়-ভাট্টা ভালো লাগে না। আর মহিলাদের থেকে আমি নিরাপদ দূরত্বে থাকার চেষ্টা করি। এর একমাত্র কারণ, আমার বন্ধুরা যে ভুল করেছে, আমি সেটা করতে চাই না। হঠাৎ রত্না আপুর ভাই শুভ এসে বলল-

— কি রে, তুই এখানে??
— কেন আসতে পারিনা নাকি??
— না তা না, তুই তো এইসব অনুষ্ঠান সাধারণত এড়িয়ে যাস, তাই আর কি!!!
— ও , এবারে জোর করে আসতে হল। মা ছাড়ল না।
— বেলা করেই এলি। চল একসাথে দুপুরের ছাবার চা খাওয়া যাক্।
— চল।

গিয়ে দেখি কোনো টেবিল ফাঁকা নাই। শুধু একটা টেবিলে দুইটা চেয়ার ফাঁকা আছে। শুভ গিয়ে একটা চেয়ারে বসে গেল আর আমিও তার পাশে বসে পড়লাম আর কি। আমি বসতে চাইছিলাম না কারণ টেবিলটাতে দুইটা মেয়ে বসছিল আরকি। কি আর করব বসেই গেলাম। আমন এরা হল আমার কাজিন, এ হল অনু আপু তুই তো জানিস আর এ হলো অধরা। আমার খালাতো বোন। কেমিস্ট্রিতে অণার্স করছে। দেখি অধরা মেয়েটা আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আর আমি মেয়েদের দিকে বেশি তাকাই না। সো তাকে পাত্তাই দিলাম না।

— জানিস অধরা, আমন না খুব ভালো ছেলে।প্রচুর ব্রিলিয়ান্ট।(অনুআপু)
— সে আর বলতে। সবাই জানে। আমি তো তাকেই আমার রোল মডেল বানিয়ে ফেলেছি।(শুভ)
— এই এগুলা কি হচ্ছে?? খাওয়ার সময় বেশি কথা ভালো না। জানিস না।
— ভাই ,এটা বিয়ে বাড়ি এখানে অন্তত জ্ঞান দিস না।
— তোদের নেই, তাই দিচ্ছি।
— কেন আপনি কি নিজেকে বেশি জ্ঞানী মনে করেন নাকি??(অধরা)
— না মানে তা ঠিক না।
— আসলে ও না একটু মেয়েদের সাথে কথা বলতে চায় না।(শুভ)
— এই বাজে কথা বন্ধ কর তো। কে বলেছে আমি কথা বলি না। এইতো বলছি।
— না না তুই এড়িয়ে চলিস, তাই।
— আচ্ছা আমন, এটা কিন্তু ঠিক তুই মেয়েদের এড়িয়ে চলিস।(অনু)
— আচ্ছা মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলে কি মজা আমি বুঝি না। আজকালকার ছেলেরা তো এইসব করেই ডুবছে।
— আপনি মেয়েদের ভয় পান, তাই কথা বলেন না।(অধরা)
— কে বলেছে আমি ভয় পাই??(এ মেয়েকে দেখে মনে হয় কথা বলতে পারে না, কিন্তু ভালোই পারে)
— আচ্ছা ঠিক আছে ,তুই একটা গোলাপ নিয়ে অধরা দিয়ে দেখা।( অনু)
— এর ভিতর আবার এসব চানছ কেন??
— না না দেখা। দেখব তোর কত দম। এত জ্ঞান মারিস।(শুভ)
আমিও ছাড়ার পাত্র নই। ঘর সাজানোর যে গোলাপ এসেছিল , একটা নিলাম আর ফুল টা আমার দিকে আর বোঁটাটা টা অধরার দিকে করে ধরিয়ে দিলাম। আমিও কম যাই না।
— এভাবে হবে না। এভাবে হবে না।(অনু)
— না না। তোমরা দিতে বলেছ। দিচ্ছি ব্যাস।নেওয়ার হলে নিতে বলো। নয়তো না।

দেখি অধরা ফুলটা নিল। আমিও বাসায় চলে এলাম। রাত্রে আর যাইনি। পরেরদিন সকালে গেলাম। বিয়ের দিন হওয়ায় প্রচুর কাজ ছিল। গায়ে হলুদ থেকে তত্তব সাজানো কাজের অভাব ছিল না। বিয়ে তো রাতে। সো রাতে ভালো করে সেজেগুজে গেলাম। আমি সাধারণত সাজি না কিন্তু সেদিন কি যেন মনে হলো তাই সাজলাম। সবাই যে যার মতো ডিএসলার নিয়ে ফটো তুলছে। আমার এসব ডিএসলার কিনে অর্থ নষ্ট করাথ মতো টাকা নেই। আমি আমার ফোন দিয়েই যথারীতি ফটো তুলতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর একটা চেয়ার নিয়ে বসছি। হঠাৎ একটা মেয়ে চেয়ার নিয়ে এসে আমার পাশে বসল। তাকিয়ে দেখি অধরা। খুব সেজেছে। আমার এসব ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না তাই তাকাইনি। হঠাৎ-

— এই যে শুনছেন!!!
— জ্বি আমাকে বলছেন।
— হুম , আপনাকে।আপনি তো দেখছি ফোনেই ছবি তুলে যাচ্ছেন। আপনার কেমেরা নেই??
— জ্বি না। কেন বলুন তো??
— না না এমনি। দেখি আপনার ছবিগুলা কেমন হল??
— না মানে এই নেন।( দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না ভদ্রতার খাতিরে দিলাম।)
— বাহ্। খুব ভালো ছবি তোলেন তো??
— আমার কয়টা ছবি তুলে দেন তো??
— জ্বি মানে।
— কি জ্বি বলছেন বলুন তো ছবি তুলুন তো।
— ওকে।

ছবি তুলতে গিয়ে ক্যামেরার লেন্সে চোখ টা আটকে গেল। যে চোখ এমনি দেখাতে আটকায়নি তার চোখ ক্যামেরার লেন্সে আটকে। অপূর্ব সুন্দর লাগছে লাল-সবুজ শাড়িতে অধরা কে। অপূর্ব রূপ।

— কি হল তুলুন।
— জ্বি হ্যাঁ।

কয়েকটা ছবি তুললাম। তারপর খাওয়ার ডাক পড়ল। খেয়ে আর অধরাকে দেখতে পেলাম না। অনেক খুঁজেও না পেয়ে বাড়ি চলে এলাম। আসলে সকাল থেকে কাজ করে খুব টায়ার্ড ছিলাম। তাই বাসায় এসে শুয়ে পড়লেও ঘুম এল না। ঘুমের মাঝেও অধরা। মেয়েদের ইগনোর করা যার স্বভাব তার হঠাৎ কি হল??
পরের দিন তড়িঘড়ি করে ছুটলাম রত্না আপুর বাসায়। অধরাকে দেখতে পেয়েই-

— কাল খাওয়ার পর কই গেলেন??
— কেন?? এখানেই ছিলাম।
— অনেক খুঁজেছি। পাইনি।
— আপনি তো মেয়েদের থেকে দুরে দুরে থাকেন। আমাকে খুঁজছিলেন কেন??
— না মানে মানে এমনি।
— তোতলাচ্ছেন কেন?
— কই না তো। আসলে কাল যে ছবিগুলা তুললেন নিবেন না??
— হুম নিব তো। শেয়ারিং অ্যাপ আছে তো??
— জ্বি কিন্তু আমি তো ফোন আনিনি।
— তাহলে কি হবে??
— আচ্ছা আপনি আপনার ইমো নাম্বার টা দেন যদি পাঠিয়ে দিতাম।
— ইমো নাম্বার। হোক নেন।01********। এটা কিন্তু আমার ফোন নাম্বার।
— জ্বি। পাঠিয়ে দিব।
— আর কিছু বলবেন??
— না আর কিছু না।
— বলার থাকলে বলতে কারণ আমি আজ বিকালে চলে যাব।
— ফোন নাম্বার নিলাম তো। যা বলার ফোনেই বলব। আসলে আমি সামনা-সামনি বলতে ভয় পাই আর কি।
— বলছিলাম না মেয়েদের ভয় পান।
— জ্বি একটু একটু।
— আচ্ছা হোক ভয় কাটিয়ে কল দিবেন। তখন না হয় যা বলার বলবেন। আবার দুই মাস পর আসব। কথা হবে বাই।

একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে চলে গেল। এদিকে আমিও ফোনে তো বলবই আর দুমাস পর ফিরলে একদম সামনাসামনি বলব। ততদিনে ভয়টা কাটানোর চেষ্টা করব। আপনারা পাশে থাকবেন আশা রাখি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত