ঝড়ের ভয়ংকর রাত

ঝড়ের ভয়ংকর রাত

সেদিন রাতে অফিস থেকে আমি বাসায় ফিরছিলাম,হঠাৎ করেই পথে খুব ঝড়/বৃষ্টি শুরু হলো,গাড়ি থামিয়ে তখন আমি কোন নিরাপদ আশ্রয় খুজছিলাম, আশে পাশে তাকিয়ে তেমন কিছুই দেখছিলাম না খুব ছোট্ট একটা চায়ের দোকান ছাড়া,ভিজে যাচ্ছিলাম তাই সেখানে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় তখন ছিলো না,,।
,
আমি চায়ের দোকানে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সেখানে ৭০/৭৫ বছর বয়ষের এক বৃদ্ধ চাচা ছাড়া আর কেউ নেই,বুঝলাম উনিই হয়তো দোকানটা চালান (মালিক বললাম না একারনে যে সব কিছুর মালিক শুধুই একজন,আমরা মাত্র তার দেয়া কাজের কর্মচারী) আমি দোকানটিতে ঢোকার মিনিট খানের পর ওই দোকানদার চাচা আমার দিকে একটা সিগারেট আর ম্যাচ বাড়িয়ে দিলো,আমি তাকে বললাম “চাচা আমি সিগারেট খাই না” আমার কথা শুনে মনে হয় লোকটি কিছুটা অবাক হয়েছিলো, সেটা তখন আবছা আলোতে ও তার মুখ দেখে আমি বুঝেছিলাম,,আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়া সেই সিগারেটটি দেখলাম সে একটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে আবার অন্য একটা প্যাকেট থেকে আরেকটি সিগারেট বের করে নিয়ে নিজে ধরিয়েছে,,,,তার সিগারেট টানা আর তার বিরক্তিকর ধোয়া এসবের কিছু আমার ভালো লাগছে না, এরকম পরিবেশের বা দোকানে বসার কোন অভ্যাস আমার নাই, সিগারেট বা বাহিরের চা খাওয়া কোন নেশা আমার নেই,ব্যাপারটি খুব বিরক্ত লাগছিলো আমার,দোকানটি খুব বেশি বড় না হওয়ায় তার আর আমার মাঝে খুব বেশি দূরত্ব ছিলো না, তার উপর যখন তার সিগারেটের ধোয়ার গন্ধ এসে আমার নাকে লাগছিলো তখন তো আমার বিরক্তের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো,তার উপর আমার শার্ট সুখে দেখি সেটাতে মাত্র সিগারেটের গন্ধ জরাতে শুরু করেছে,এর মানে ভদ্রলোক যেভাবে সিগারেট টানছে তাতে করে গন্ধের পরিমাণটা আর কিছুক্ষনের মধ্যে আরো বেড়ে যাবে,,কিছুটা ভয় কাজ করছিলো তখন আমার মধ্যো “আব্বু/
আম্মু যদি শার্টে সিগারেটের গন্ধ পায় তাহলে”? যদি ও আমার প্রতি তাদের অন্ধ বিশ্বাস আছে, তাই সেখানে খুব বেশি ভয়ের কারণ না থাকলে ও ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না,অবশেষে দোকানদার চাচাকে বললাম “চাচা এরকম ঝড়ের ভিতর গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফেরাটা ঠিক হবে না,ঝড় বৃষ্টির ভিতরে খুব বিপদে পড়ে আপনার এখানে দাঁড়িয়েছি,পারলে হাতের সিগারেটটা টানা বন্ধ করে ফেলেদিন, ওটার দাম আমি দিয়ে দিচ্ছি” ওরকম একটা কথা বলার আগে লোকটার কাছে আমি তেমন কিছুই আশা করিনি,কিন্তু মনে মনে ভেবেছিলাম যদি সে সিগারেট টানা বন্ধ না করে তাহলে আমি সেখান থেকে বেড়িয়ে যাবো,,,,ঝড় বৃষ্টি না থামলে ও আমার ভাগ্যে ভালো ছিলো যে চাচার সিগারেটটা টানা বন্ধ করেছিলো,খুব জোরে জোরে কয়েকটা টান দিয়ে সে সেটা ফেলে দিলো আর আমি ও বেঁচে গেলাম,,।
,
আমি ভাবলাম এতো রাতে ঝড় বৃষ্টির মাঝে এরকম বয়সী একজন মানুষের দোকান খুলে রাখার কি কারণ,? কোন কাস্টমার আসছে না বা আসার ও কোন সুযোগ নেই,,আর দোকানদার চাচার আচরন ও আমার কাছে খুব ভালো লাগছিলো না,বার বার রাস্তার একটু ওপাশে একটা গাছের দিকে তার চোঁখ যাচ্ছিলো, আর তার ওদিকে তাকানোটা আমি খেয়াল করেছি বেশ কয়েকবার,কারণ তার ওদিকে তাকানোটা স্বাভাবিক ছিলো না, খুব কৌতুহল হলো আমার,তাই আমি ওদিকে হাত দিয়ে দেখিয়ে দোকানদার চাচার কাছে জানতে চাইলাম “চাচা বার বার কি দেখছেন ওদিকে তাকিয়ে”? আমার কাছ থেকে এরকম কোন প্রশ্ন সে আশা করেনি,আমার কথাটা শোনার পর সে যেনো কেমন একটা ভাব নিলো, সে কিছুটা অবাক হয়ে আমাকে “ওদিকেই আমার সব” কথাটুকু সামান্য কিন্তু তার তা বলার ধরন আমাকে ভয় পাইয়ে দিলো,,আমি সত্যিই তখন কিছুটা ভয় পেলে ও তখন তাকে সেটা বুঝতে দিইনি,আমার মাথায় ছিলো “যদি আমার ভয়ের ব্যাপারটা তাকে বুঝতে দিই তাহলে অন্য কিছু হলে ও হতে পারে” হালকা ভয় পেয়ে কোন ব্যাপারে থেমে যাওয়া বা সেখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া ছেলে আমি না, নিজেকে সামলে নিলাম,আর দোকানদার চাচাকে বললাম “চাচা ওদিকে কি সেটা আমাকে বলেন,আমি শুনতে ইচ্ছুক” আমার আগ্রহ হয়তো চাচার ভালো লেগেছিলো,তখন সে বলতে লাগলো “আমি এই দোকান প্রতিদিন রাত ১.৪৫ পর্যন্ত খোলা রাখি,কিন্তু ৯/৯.৩০ এর পর এখানে মানুষের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায়,তখন শুধু মাত্র গাড়ি চলে তা ও সংখ্যায় খুব বেশি না,আর আমি এতো রাত অবধি দোকান খোলা রাখি বেচা বিক্রির জন্য না” কথা গুলি বলে দোকানদার চাচা থেমে গেলো,আমি ও মিনিট খানেক চুপ,যখন দেখলাম সে নিজের ইচ্ছায় কিছু বলছে না তখন “চাচা তার পর কি বলেন”? দোকানদার চাচা “বাদ দেন,বৃষ্টি কিছুটা কমতে শুরু করেছে এবার আপনি আসেন” আমি “না চাচা আপনার বলতে থাকা কথা শেষ না করে আমি যাচ্ছি না” হঠাৎ দেখলাম দোকানদার চাচা হাত উঁচিয়ে আমাকে দেখাচ্ছে “ওইযে ৩ রাস্তার পাশে ভেতরের দিকে কিছু গাছ আর জংগলের মতো দেখা যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন”? প্রথমে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না,কিন্তু একটা ট্রাক যাওয়ার সময় তার আলোতে কিছুটা দেখতে পেলাম কিন্তু ঠিক বুঝতে পেলাম না আসলে কি,,তার পর ও দোকানদার চাচাকে বললাম “হ্যা দেখেছি,তার পর” হঠাৎ করেই আমি আমার চোঁখে ধোয়া আর নাকে সিগারেটের গন্ধ পেতে লাগলাম,একটা অচেনা কন্ঠে তখন শুনতে পেলাম “ঠিক ওই গাছের কাছেই আমি আমার ৯ বছরের মেয়েটার লাশ পেয়েছিলাম”।,
,
হঠাৎ করেই আমি আমার চোঁখে ধোয়া আর নাকে সিগারেটের গন্ধ পেতে লাগলাম,একটা অচেনা কন্ঠে তখন শুনতে পেলাম “ঠিক ওই গাছের কাছেই আমি আমার ৯ বছরের মেয়েটার লাশ পেয়েছিলাম” দোকানদার চাচার মুখ থেকে লাশের কথা শুনে হঠাৎ করে আমি ভয়ে কেপে উঠলাম,আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার তখন খেয়াল করলাম যে “ঝড় বাতাশের মাত্রা ও তখন কেনো জানি বেড়ে গেলে,খুব ভয় পেয়ে ও আমি সেটা দোকানদার চাচাকে কোন ভাবেই বুঝতে দিচ্ছিলাম না,তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম সিগারেট টানতে টানতে চারদিক সে ধোয়া ধোয়া বানিয়ে ফেলেছে,তার ছিগারেট টানা আর তার গন্ধে আমার খুব বিরক্ত লাগলে ও তখন সব কিছু মুখ বুঝে সয়ে নিলাম শুধু ঘটনার বাকিটুকু জানার তিব্র ইচ্ছায়,,ওই সময় দোকানদার চাচার দিকে আমি বেশ কয়েকবার তাকালে ও তার সেদিকে কোন খেয়াল ছিলো না,খুব আনমনা হয়ে সে যেনো কি ভাবছিলো,আমি তাকে, “চাচা তার পরে কি হয়েছিলো”? আমার প্রশ্নটা শুনে লোকটা আমার দিকে প্রায় মিনিট ২ তাকিয়ে ছিলো, তার পর সে, “আমি সেদিন সন্ধ্যায় পর মেয়েটারে দোকানে রেখে একটু বাড়িতে গিয়েছিলাম আর ফিরে এসে দেখি আমার মেয়ে দোকানে নাই,সেদিন সারারাত সব যায়গা খুঁজে ও আমি আমার মেয়েকে পাইনি,পরের দিন খুব ভোরে আমরা ওর লাশ ওখানে ৩টা গাছের ঠিক মাঝখানে পাই” দোকানদার চাচা কথা গুলি বলে থেমে যায়,ওখানে জ্বলতে থাকা হারিকেনের আবছা আলোতে ও সেদিন আমি স্পট তার চোঁখ বেয়ে পানি গড়িয়ে মুখ বেয়ে নেমে যেতে দেখছিলাম,,শেষ হবার সাথে সাথে সে আরেকটি সিগারেট ধরিয়ে আবার টানতে আরম্ভ করলো,তখন তাকে আমি, “চাচা তার পর” দোকানদার চাচা, “আমার মেয়েটারে সকালে যেখানে পেয়েছিলাম রাতে ও ঠিক সেখানে আর তার আশে পাশে আমরা সবাই খুঁজেছিলাম কিন্তু খুব অদ্ভুত ব্যাপার তখন আমরা ওকে না পেলে ও সকালে পাই” তার কথা গুলি খুব অদ্ভুত,আর বেশ রহস্যজনক মনে হচ্ছিলো আমার কাছে,ঝড়ের মধ্যে একটা অচেনা পরিবেশে ওরকম একটা ব্যাপার শোনার সময় আমার ভয় করছিলো খুব কিন্তু বার বার ভয়কে পাশ কাটিয়ে নিজেকে সামলেছিলাম” আমি আবার দোকানদার চাচাকে,,,,,”চাচ
া তার পর” সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে সে, “আমার মেয়ের গায়ে কোথাও কোন আঘাত বা অন্য কোন কিছুর দাগ পাওয়া যায়নি,ওছিলো একদম স্বাভাবিকের মতোই,আমি বা কেউ ওর জামা কাপড় বা শরীরের কোথাও কোন দাগ দেখিনি” কথা গুলি বলে দোকানদার চাচা থেমে গেলো,আমি ও ভেবেছিলাম ঘটনার এইটুকুই শেষ,বৃষ্টি কিছুটা থেমেছিলো কিন্তু বাতাস হচ্ছিলো বেশ,তখন সেখান থেকে বের হবার মতো অবস্তা না হলে ও সেখানে থাকার মতো সাহস আমার ছিলো না,আমি যখন বের হবো তখন দোকানদার চাচাকে বললাম, “চাচা অনেক রাত হয়েছে বাসায় যাবেন না” সে আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত এক হাঁসি দিয়ে, “আমি তো এরকম সময় যায় না” তার কথাটা শুনে আমার আবার তার না যাওয়ার কারণ শুনতে ইচ্ছা হলো, আমি খুব আগ্রহ নিয়ে, “চাচা এখন তো অনেক রাত আর ঝড়ের মধ্যে দোকানে কাস্টমার ও আসবে না,থেকে কি হবে”? মিনিটখানিক চুপ থেকে সে, “আমি আমার মেয়ের সাথে দেখা না করে বাসায় ফিরি না” আমাকে সে হাত উচু করে দেখিয়ে “ওইযে দেখছেন ৩টা গাছ,যেখানে আমার মেয়ের লাশ পেয়েছিলাম ঠিক ওখানে আমি প্রতিদিন দোকান বন্ধ করে যায়,আমার মেয়ে আশে,ওখানে আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলি, ওখানে আমার মেয়ের শরীলের গন্ধ আছে,জানেন ও না খুব দুষ্টু মাঝে মাঝে আশে না,তখন আমি সারারাত ওর অপেক্ষায় বসে থেকে কাটিয়ে দিই”
,
দোকানদার চাচার সাথে আমি আর কথা বাড়াতে চাইনি,ওরকম ভয়ংকর একটা পরিবেশে আমার পক্ষে আর কিছুই নেয়া সম্ভব ছিলো না,ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপারে আমি কোন দিন ওতোটা সাহসী না যতোটা সেদিন দেখিয়েছি,ওই দোকান থেকে ফাকা রাস্তায় আমার বাসায় যেতে ১০/১২ মিনিট লেগেছিলো কিন্তু ওইটুকু সময় তখন আমার কাছে কয়েক দিনের মতো মনে হয়েছিলো,আমি যখন গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলাম তখন বার বার মনে হচ্ছিলো আমার পেছনে কেউ আছে,কেউ আমাকে পেছন থেকে ডাকছে,ফুল সাউন্ড দিয়ে গান চালিয়ে দিয়ে ও কোন কাজ হয়নি, গানের শব্দের থেকে ও বেশি জোরে কানে আসছিলো দোকানদার চাচার আমাকে বলা কথা গুলি,সত্যিই সেদিন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছিলো আমার,যেটা হয়তো মনে থাকবে সারাজীবন,,।

……………………………………………..সমাপ্ত…………………………………….

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত