আলোর পথে পরিপূর্ণ প্রাপ্তি

আলোর পথে পরিপূর্ণ প্রাপ্তি

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে সুরমা,তবে লেখা পড়ায় বেশ তুখর,তার সাথে বেশ সুন্দরীও বটে।
সুন্দরী হওয়ায় অনেক প্রেমের প্রপোজাল অনেক পায়।কারন তার সুন্দর্য অনায়াসে সবার চক্ষু গোচর হতো।
স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে জীবনে পা দেওয়ার পর থেকে সুরমার একটু উন্নতি হয়।
সে এখন বোরকা পরে হিজাব ও পরে কিন্তু মুখ উন্মুক্ত রেখে চলাফেরা করে।
মুখ হলো শরীরের প্রথমতম আকর্ষিক জায়গা তাই যদি উন্মুক্ত থাকে তাহলে তো পর পুরুষের নজর পড়বে যতোই সাজগোজ না করে সাধারন ভাবে থাকেন।
.
সুরমা সকালে কলেজ যাচ্ছে হঠাৎ করে পিছন থেকে ডাক পড়ল এই মেয়ে দাঁড়াও।
সুরমা পিছন ফিরে ভয় পেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তোমার নাম কি?
সুরমা আক্তার (নিচু কন্ঠে)
কোন বাড়ির কার মেয়ে?
পাটোয়ারী বাড়ীর জাহাঙ্গীর আলম।
ওহহ যাও তাহলে।
সুরমা ভয়ে কলেজ না গিয়ে উল্টো পথে হেঁটে বাড়ি চলে আসে
টেবিলে ব্যাগ রেখে ধড়পর করে চেয়ারে বসে পড়লো।
শব্দ পেয়ে রান্না চুলোয় রেখে নিলুফা বেগম রুমে এসে দেখে সুরমা হাত দিয়ে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে আর কি যেন চিন্তা করছে।
কি রে মা চলে আসলি কেন?(মা)
শরীর ভালো লাগছেনা (সুরমা)
.
সন্ধ্যায় দরজায় টোকা পড়লো রাজুর মা বাসায় আছেন।
সুরমা দরজা খুলে দিয়ে দেখে ঘটক।
কিছু না বলে মায়ের কাছে গিয়ে বলে মা আজকে সকালে একটা কথা তোমার থেকে লুকিয়ে রেখেছি।
কি কথা?
আজকে সকালে হান্নান চাচার ছেলে বেলাল আমাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাস করেছে আমার নাম কি কোন বাড়ি কার মেয়ে তাই ভয় পেয়ে কলেজে না গিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
এখন ঘটক এসেছে তুমি যাও।
ভাবী কেমন আছেন? (ঘটক)
আলহামদুলিল্লাহ্‌ আপনাদের দোয়ায় ভালো।(মা)
ভাবী একটা কথা বলতে এসেছি যদি অনুমতি দেন(ঘটক)
হ্যাঁ বলেন(মা)
আপনার ছোট মেয়েতো মাশায়াল্লাহ্ উপযুক্ত হয়েছে আমার কাছে একটা হিরের টুকরো ছেলে আছে ।(ঘটক)
না ভাই এখন মেয়ে বিয়ে দিব না টাকা পয়সার জোগাড় নেই(মা)
আরে ভাবী কি যে বলেন এমন সম্মন্ধ বার বার আসবেনা।
আগে শুনেন না কার ছেলে আমি কি যেনো তেনো ঘর থেকে সমন্ধ নিয়ে আসবো আপনার মেয়ের জন্য। এ কথা
ভাবতে পারলেন কি করে ভাবী ।
এ এলাকার বিশিষ্ট ধনী হান্নান সাহেবের একমাত্র ছেলে।
শহরের বড় ভার্সিটিতে পড়ে আপনার মেয়ের সাথে বেশ মানাবে রাজপুত্রের মতো।(ঘটক)
আচ্ছা ভাই আপনার ভাই এর সাথে কথা বলে দেখি কিন্তু আমার মনে হয়না এখন বিয়েতে নামতে পারবে ।(মা)
.
মা তুমি এটা কি বললে? আশা দিলে কেন? তুমি জানোনা এ ছেলে কেমন? ইয়াবার গাড়িতে হাতেনাতে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ছয়মাস জেল খেটেছে। মা তুমি কি সব ভুলে গেছ?
বলে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সুরমা ।
নিলুফা বেগম হতাস হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে রুমে নিয়ে আসে এবং মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনার স্বরে বলেন আরে পাগল বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না।
এখন যদি সরাসরি বলে দেই আমরা মেয়ে বিয়ে দেব না এমন ছেলের কাছে। তাহলে ঘটক বেঁকে বসবে এবং তোর নামে মিথ্যা কুৎসারটাবে।
তোর বাবা আসলে বুঝিয়ে বলে দিবো যেন ঘটকে ভালো মতো বুঝিয়ে বলতে পারে।
এর মাঝে সুরমার ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা চলে আসে। সব ভুলে গিয়ে পরিক্ষার প্রস্তুতিতে মগ্ন হয়ে যায়।
.
দুপুরের পরে কলেজ থেকে ফেরার পথে বেলাল এর সাথে দেখা। আজ সাথে আরেক জন থাকায় সাহস পায়।
বেলাল ডাক দিয়েছে শুনেও না শুনার ভান করে বাড়ির পথে হাঁটতে থাকে।
এই আজ কি কানে কম শুন না কি?
এ কথা বলে পিছন থেকে হাত টেনে ধরে।
সুরমা ভয় পেয়েছে এটা বুঝতে না দিয়ে বললো আপনি হাত ছাড়ুন আর কি বলার তাড়াতাড়ি বলেন।
তোমার বাবা-মা অজুহাত দেখিয়ে যতোই বিয়ে ফিরিয়ে দিক আমি তোমাকে বিয়ে করবো। যে বাঁধা দিতে আসবে প্রয়োজনে তাকে সরানোর ব্যবস্থা করবো।(বেলাল)
যদি সেই বাঁধা দেওয়ার ব্যক্তি আমি নিজেই হই।
সুরমা এই কথা বলে এক মূহর্ত না দাঁড়িয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করে।
এর পর থেকে নেমে আশে সুরমার জীবনে ঝড়।
বেলাল লোক দিয়ে সুরমাকে উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে এবং সফল ও হয়।
মাঝ পথে চিৎকার করে এক লোকের সাহায্য নিয়ে ফিরে আসে।
ফিরে আশার পর অনেকে সুরমার বাবাকে যুক্তি দিচ্ছে হান্নান এবং তার ছেলের নামে মামলা করতে।
কেউবা বলছে চেয়ারম্যান মেম্বর দিয়ে শক্ত করে বিচার এর ব্যবস্থা করতে।
কিন্তু সুরমার পরিবার চায় না একথা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে মেয়ের ক্ষতটাকে আরো ঘাঁ করতে।
হান্নান সাহেব সব কিছু তে জিতে যাবে টাকার কারণে।
দিন শেষে নিজেদের মেয়ের দুর্নাম ছড়াবে।
তাই আল্লাহ্ উপর বিচার দিয়ে সম্মান নিয়ে ফিরে এলো।
.
সুরমা অনার্সে ভর্তি হয় ইতিহাস সাবজেক্ট নিয়ে।
অনেক ইচ্ছা ছিল ইংরেজী নিয়ে পড়বে। কোন নামকরা কলেজের ইংলিস শিক্ষিকা হবে।
ভাগ্য যখন উপহাস করে ইচ্ছা তখন ক্ষীন হয়ে যায়।
আর্থিক অবস্থার কারনে সে আশা পূরন হলো না।
তবুও পিছু না হেঁটে এগিয়ে যায়।
পরিবারের সবার ইচ্ছা ছিল বিএ ভর্তি করে দিবে পাশাপাশি ভালো প্রস্তাব আসলে বিয়ে দিয়ে দিবে।
সুরমা দেখলো এভাবে ভর্তি হলে তার সমকক্ষ পাত্র তার ভাগ্যে থাকবেনা।
তাই নিজের পরিশ্রমে প্রাইভেট পড়িয়ে এবং সময় বের করে কিছু হাতের কাজ করে নিজের পড়ার খরচ বহন করে।
.
প্রথম সেমিস্টার পরিক্ষা চলে আসার কারনে মেস এ উঠে সুরমা।
মেসে উঠে সুরমার ভালোলাগে না।
ক্লাসে মন খারাপ করে হাতের নখ কামড়াতে কামড়াতে চিন্তা করলো এ মেসে থাকলে আমি নির্গাত খারাপ রেজাল্ট করবো পরিচিত কেউ নেই যে সাহায্য চাইবো।
এই মেসের প্রায় সবাই ধনীর দুলালি।
এতে অনেক সমস্যার সম্মুখে পড়তে হয় পদে পদে।
সবাই কেমন আড় চোখে দেখে।প্রয়োজনে কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা বলতে চায় না।
ফোনে পুল সাউন্ড দিয়ে গান শুনে তার তালে তালে কি নাচানাচি।
চিন্তার বেগাত ঘটিয়ে এমন মুহূর্তে রুমে ডুকলো বোরকা এবং পরিপূর্ণ হিজাব পরিহিতা চারজন মেয়ে ।
সুরমা বুঝতে পেরেছে ওরা রুমে আসার সাথে সাথে অনেক মেয়ে ছেলে রুম থেকে বের হয়ে গেল এবং নেতা টাইপ একটা ছেলে বের হওয়ার সময় বললো আপনার তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাবেন।
উনারা কিছু না বলে একটা মেয়ের সামনে এসে বললো হালিমা তোমার ফোন বন্ধ কেনো?
সে মেয়ে কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছে।
উনারা বললো তুমি ব্যাগ নিয়ে আমাদের সাথে চলো।
রুমে কথা না বলা ভালো।
সুরমা কিসের টানে নিজের ব্যাগ নিয়ে উনাদের পিছন পিছন যায় নিজেও বুজতে পারেনা।
উনারা নিরিবিলি একটা গাছের নিচে বসে পড়ল এবং একজন হালিমাকে জিজ্ঞাস করলো তোমার কি হয়েছে খুলে বলো আমরা মিটানোর চেষ্টা করবো।
হালিমা বলে উঠলো আপনারা কি সমস্যা সমাধা করবেন আপনাদের নিয়েই তো সমস্যা।
কিন্তু আমি এ পথ ছেড়ে যেতে পারবোনা।
মুক্তা আপু তুমি তো যানো মায়ের সাথে যোগাযোগ করে তোমাদের সাথে যুক্ত হয়েছি ।
মা বাবার সাথেও বলে তখন বাবা কিছু বলেনি। কিন্তু বাবা কাল রাতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে আমি যেন এ পথ থেকে সরে যাই।
যদি আমি না আসি তাহলে আমার পড়ালেখার খরচ বাবা বন্ধ করে দিবে।
এখন তোমারাই বলো আমি কি করবো কি করা উচিত।
হালিমা তুমি তোমার বাবার কথা মত চলো।তুমি তোমার আমল গুলো এভাবেই চালিয়ে যাবে এবং মানুষদের বুঝাবে ইসলাম সমন্ধে।
সঠিক নামাজ পড়ার নিয়ম গুলা পৌঁছে দিবে সবার মাঝে এবং সঠিক পর্দা সম্পর্কে।
এতেই তোমার দ্বিনের কাজ পূর্ণ হবে। তোমার বাবার ভয় তার মেয়ে যদি কোন বিপদে পড়ে হাজত খাটতে হয় তাই এমন বলছে।
ইনশাআল্লাহ্ আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহ নিজেই হেফাজতকারী।
মুক্তা নামের সেই মেয়েটি এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো।
তা শুনে সুরমার অনেক ভালোলাগে এবং এগিয়ে গিয়ে বললো আপুরা তোমাদের সাথে বসতে পারি?
একজন ছোট্ট করে বললো বসো বোন।
সুরমা বলতে শুরু করলো আপু তোমাদের এ পথে আমি সামিল হতে পারি।
একজন বলে উঠল অবশ্যই কিন্তু আগে তোমার পরিবার থেকে অনুমতি নিয়ে এসো।
আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই এ বিষয়ে তোমাদের সাথে যোগাযোগ করবো কি ভাবে।(সুরমা)
আমাদের নাম্বার নাও।
আমার কাছে তো ফোন নেই(সুরমা)
আচ্ছা ক্লাসে এসে হালিমার ফোনে ফোন দিও।
আচ্ছা তাহলে আজ উঠি(সুরমা)
আসসালামু আয়ালাইকুম(মুক্তা)
নত মাথায় সালামের উত্তর দিয়ে সুরমা লজ্জা মুখে চলে আসতে আসতে ভাবলো আমি সালাম না দিয়েই তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করি।
হঠাৎ করে এসে বললাম আপুরা বসতে পারি?
তখন কিছু না বলে আসার সময় সালাম দিয়ে বুঝিয়ে দিল করো সাথে দেখা হলে বা বিদায় বেলায় এবং অপরিচিত ব্যক্তির সাথে প্রথম পরিচিত হতে গেলে মুসলাম হিসাবে প্রথমে আদব এর সহিত সালাম দেওয়া।
.
আলহামদুলিল্লাহ্‌ সুরমার পুরো পরিবার রাজি হলো ইসলামের পথে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।
বড় আপুদের চাপে ছোট একটা পুরাতন ফোন নেয়ে ভাই এর কাছ থেকে চেয়ে।
কারন সব সময় প্রয়োজনে সুরমার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না ।
প্রোগ্রাম এর দিক নির্দেশনা দ্রুত জানিয়ে দিতে পারেনা বলে।
অবশ্য এখন সবাই একই ভিলায়(মেসে) থাকে।
কিন্তু যখন বাড়ি যায় এবং কলেজ যায় তখন খুব প্রয়োজনে তাকে পাওয়া যায় না।
দ্বিনের কাজে প্রচুর সময় দিয়েও অনেক ভালো রেজাল্ট করে যাচ্ছে পর পর তিন বছর।
এ তিন বছর পড়ালেখা পাশাপাশি সকল উঠতি বয়সের বোনেদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া এবং পাশাপাশি সরকারি চাকরির ইন্টার্ভিউ দেওয়া সব গুলা এক সাথে চালিয়ে যায়।
অনেক বার প্রাইমারি স্কুলের চাকরির জন্য ইন্টার্ভিউ দিয়ে ভাইভা পর্যন্ত এসে থমকে যায়।
টাকা না দিতে পারায় মেধার কোন মূল্য হলো না।তবুও ধৈর্য হারালো না।
ধৈর্যর সাথে সুরমা শপথ নিলো ঘুস দিয়ে কখনো চাকরি করবো না যত পারি পরিক্ষা দিবো ধৈর্যশীলদের আল্লাহ্ কখনো নিরাশ করেন না।
চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় সুরমা প্রাইমারীতে চাকরি পায় ঘুস ছাড়া নিজের চেষ্টায়।
কয়েক বছর নিয়ম মাফিক একটা মেয়েকে ভাইভা পর্যন্ত আসতে দেখে প্রথম প্রশ্নকর্তার মাথায় আসলো মেয়েটা আসলেই চাকরির যোগ্য।
হাস্যকর ব্যাপার হলেও সত্য এ বছর কোন কঠিন প্রশ্ন করলো না শুধু নিজের নাম আর আজ কি দিয়ে ভাত খেয়ে আসলো।
.
চাকরি হওয়ার পর থেকে প্রতিবেশী সবাই সুরমার অতীত ভুলে গিয়ে প্রশংসায় করতে থাকে ।
এবং ভালো ভালো ঘর থেকে সমন্ধ নিয়ে আসে।
সুরমা তাদের গ্রামের স্কুলে মাস্টারি করে। এ চার বছরে কোন বেগানা পুরুষ সুরমাকে দেখেনি এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পুরুষদের সাথে কথাও বলতো না।
চাকরি পাওয়ার দুই বছর পর আল্লাহর রহমতের কৃপায় সুরমার উপযুক্ত পাত্রের সাথেই বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
আলহামদুলিল্লাহ্‌ সংসার জীবনেও অনেক সুখি।
.
হে মুমিন আলোর পথে এসো অন্ধকার তোমাকে স্পর্শ করতে পারবেনা।
……………………………………………সমাপ্ত…………………………………..

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত