অবশেষে স্বপ্ন পুরন

অবশেষে স্বপ্ন পুরন

:-দুপুরে ঔষধ খেয়েছো?(রিতু)
:-হুম..খেয়েছি(আমি)
:-কেমন লাগছে?
:-তোমাকে দেখলে ভালো থাকতে পারিনা..খুব কষ্ট হয়।তোমাকে আর আসার দরকার নেই এখানে
:-আমি না আসলে তোমার দেখাশোনা কে করবে?
:-নিজেই পারবো আমি..তাছাড়া নার্সেরাতো আছেই
:-এগুলো বললে হয়না..আমি তোমাকে একা থাকতে দিতে পারিনা..
:-আমার এখানে পড়ে থেকে তোমার ভবিষৎ নষ্ট করার মানে হয়না..
:-তুমিই আমার ভবিষৎ..তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে কষ্ট হয়..
:-কিছুদিন পর তোমাকে একাই থাকতে হবে তাইনা?
:-পরেরটা পরে দেখা যাবে..এখন ঘুমাও
:-হুম..তুমিও একটু রেষ্ট নাও..
এবার পরিচয় দিই..আমি চয়ন..আর রিতু আমার প্রেমিকা..বর্তমানে হাসপাতালে আছি..ধীরে ধীরে আমার স্বপ্ন পুরনের পথে এগোচ্ছি..মানে আমার ব্লাড ক্যান্সার।ধীরে ধীরে মৃত্যর পথে এগোচ্ছি..এটাই আমার স্বপ্ন।গরীবের স্বপ্ন এর থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়না..অভাবের তাড়না প্রতিনিয়ত তাড়া করে..তাই এমন একটা স্বপ্ন মনে জেগেছে..আর স্বপ্নটা ঈশ্বর তাড়াতাড়ির পুর করে দিচ্ছে..
বাড়ি থেকে কেউ জানে..শুধু অসুস্থ এতটুকুই জানে..নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি..অযথা পরিবারকে চাপ দিতে চাচ্ছিনা..
কারন তারা আমার চিকিৎসা করানোর চেষ্টা ঠিকি করবে..কিন্তু তারা আমাকে বাচাতে পারবেনা..বরঞ্চ পথে বসবে..
সারাদিন শুয়ে বসে খেতে খেতে টাকা প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি..১লক্ষ টাকা জমিয়েছিলাম টিউশনী করিয়ে।আর কিছুদিন গেলেই টাকা অর্ধেক হয়ে যাবে..তাই ভাবছি বাকি ৫০হাজার টাকা পরিবারের জন্য রেখে যাবো…
এখন আমার ঔসধ খাওয়ার সময় রিতু চলে এসেছে..
:-নাও ওসুধ গুলো খেয়ে নাও..
:-হুম দাও..
ওসুধগুলো খেয়ে একটু বসলাম কিন্তু দেহটা কেমন যেনো শক্তি হারিয়ে ফেলেছে..
হঠাৎ করেই বসা থেকে পড়ে গেলাম..বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হলো..কিছুই বলতে পারছিনা..মনেহয় স্বপ্ন পুরনের দারপ্রান্তে পৌছে গেছি..ভেবেছিলাম 14ফ্রেব্রুয়ারি রিতুকে নিয়ে শেষবারের মতো ভালোবাসা দিবসটা পালন করবো..মনেহয় তা আর হবেনা..বালিশের নিচ থেকে পায়েলটা বের করলাম..ভালোবাসা দিবসে নিজে হাতে রিতুর পায়ে পরিয়ে দিবো বলে কিনেছিলাম…
:-রিতু..আর পারছিনা..পায়েলটা তোমার জন্য..আর হ্যা আমার বাকিটাকাগুলো আমার পরিবারকে দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিও..
:-খুব কষ্ট হচ্ছে?দাড়াও ডাক্তার ডাকছি তোমার কিচ্ছু হবেনা..(কেদে কেদে)
:-তার দরকার নেই..ভালো থেকো।নিজের খেয়াল রেখো..আমার স্বপ্নপুরনের সময় চলে এসেছে..চললাম আমি..
:-না..আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো কি করে?(জোরে কেদে)
:-(আমি কিছু বলতে গেলাম কিন্তু পারলাম না..মুখ থেকে গাদাখানিক রক্ত বেরিয়ে এলো..আমার দেহটা নিথর হয়ে গেলো..)
:-চয়ন কথা বলো..প্লীজ কথা বলো।আমি তোমাকে ছাড়া অসম্পূর্ন..
রিতু..আমি আর তোমাদের সাথে কথা বলতে পারবোনা।কারন আমার কথা তোমরা শুনতে পারবেনা..
ওইতো মা..বাবা ছুটে আসছে..মা দৌড়ে এসে আমার দেহটাকে ঝাকালো..সাথে সাথেই আমার মুখ থেকে আরেকটু রক্ত বেরিয়ে গেলো..
:-চয়ন কথা বল..আমাদের ছেড়ে কোথায় গেলি?আমাদের কেনো বললিনা তোর এত বড় অসুখ হয়েছে..(মা)
মা অজ্ঞান হয়ে গেলো..রিতু আর বাবা দুজনে মিলে মাকে পাশের বেডে শুয়ালো..
এখন মার জ্ঞান ফিরেছে..তবুও মা কাদছে..আমাকে সবাই মিলে এম্বুলেন্সে বাড়িতে নিয়ে আসলো..উঠানে মাদুর বিছিয়ে খুব যত্নে আমার দেহটা রাখা হলো..
অনেকে দেখতে আসছে আমাকে..বন্ধু-বান্ধব সবাই এসেছে..ঐদিকে রিতু আর মা কেদেই চলেছে..
.
অনেক রাত হয়েছে..হিন্দুধর্ম অনুযায়ী শ্মশানে সবাই মিলে আমার দেহটাকে পুড়িয়ে বাড়িতে এসেছে…
মা আর রিতু এখনো কাদছে..তাদের দেখে বাবাও কেদে দিলো…
.
প্রতিবছর আমার মৃত্যবার্ষিকিতে..রিতু আমার ডাইরি থেকে…আমার লেখাগুলো পড়ে…
কিছুক্ষন কাদে তারপর আবার চলে যায়..রিতু এখনো বিয়ে করেনি..হয়ত এখনো আমাকে আগের মতই ভালোবাসে সেজেন্য..
আর “মা”আমার জন্য কেদে কেদে চোখের জল সব ফুরিয়ে গেছে..এখন মা আমার ছবিটা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে..আমাকে খুব ভালোবাসতো মা……
রিতু..মা,বাবার খেয়াল রাখে..প্রায় সময় আমাদের বাড়িতেই থাকে..মা বাবাকে সান্তনা দেয়..

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত