ভাই-বোনের ভালবাসা ২

ভাই-বোনের ভালবাসা ২

সাদিয়া, বোন আমার উঠে পড়। অনেক বেলা হয়ে গেছে।
— ভাইয়া আরেকটু ঘুমাই প্লীজ।
— সকাল দশটা বেজেছে। আর কত ঘুমাবি?
— ভাইয়া আরেকটু ঘুমাতে দে। আজতো
শুক্রবার।
— দেখ তুই তাড়াতাড়ি উঠ। আমি কিন্তু এখনো নাস্তা করিনি। আমরা একসাথে করবো। তাড়াতাড়ি উঠে পড়।
— ভাইয়া তুই এখনো নাস্তা করিসনি?
কেন নাস্তা করলি না?
— তোকে ছাড়া কি কখনো নাস্তা করেছি বল?

.. আমার এই কথা শুনে আমার পাগলী বোনটা কেঁদে দিল। ও আসলে খুবই আবেগি, কিছু হলেই কেঁদে দেয়।
— ভাইয়া তুই আমাকে এত ভালবাসিস কেন?
— কারন তুই ছাড়া যে আমার আর কেউ
নেই।
— ভাইয়া তুই একটু এদিকে আয়।
— কেন কি হয়েছে?
— একটু আয় এদিকে প্লীজ।
— আচ্ছা আসলাম। এবার বল কি বলবি।
— উম্মাহ আমার লক্ষী ভাইটা।
— উম্মাহ আমার পাগলী বোনটা। এবার
তাড়াতাড়ি উঠে যা। ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলছে।

.. যখন আমার বয়স সাত বছর আর আমার এই আদরের বোনটার বয়স তিন বছর তখন
আমাদের বাবা মা একটা নৌকাডুবিতে মারা যায়। আমরা বাবা মার লাশ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি।
তারপর থেকে আমি আর আমার এই বোনটা একা। আমাকে ছাড়া সাদিয়ার আর সাদিয়াকে ছাড়া আমার আর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। অনেক কষ্ট করেছি আমরা। কখনো কখনো
না খেয়েই দিন পার করেছি। আজ আমি পড়ালেখার পাশাপাশি মোটামুটি ভাল বেতনের একটা চাকরি করি আর আমার বোন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
.. নাস্তা করতে করতে..
— আচ্ছা ভাইয়া আজকে তো শুক্রবার। চল সিনেমা দেখে আসি।
— হুম বুদ্ধি খারাপ না। তা কি
সিনেমা দেখতে চাস?
— ভাইয়া যমুনা ব্লকবাস্টারে একটা
নতুন হরর সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। চলনা দেখে আসি।
— না কখনোই আমি এসব হরর সিনেমা দেখতে যাবো না। কারন তাহলে রাতে তুই ঘুমাতে ভয় পাবি আর আমাকে জ্বালাবি।
— উহুম কখনোই আমি ভয় পাই না। বরং তুই ভয় পাস। তাই আমি তোর সাথে থাকি। যাতে তুই ভয় না পাস।
— ও তাই! আচ্ছা চল দেখে আসি। — লাভইউ ভাইয়া।
— লাভইউ টু আপু।

.. আমি জানি সাদিয়া রাতে আমার কাছে এসে ঘুমাতে চাইবে। কারন ও
হরর সিনেমা দেখে রাতে ঘুমাতে ভয় পায়। কিন্তু তারপরও ও হরর সিনেমা দেখবেই।

.. — কিরে সাদিয়া টিকেট তো মনে হয় পাবোনা। — আরে পাবি ভাইয়া। একটু ভাল করে খুঁজে দেখ।
— আচ্ছা দেখছি। তুই এখানে দাঁড়া।

.. অনেক কষ্টে দুইটা টিকেট যোগাড় করলাম। কাউন্টারে টিকেট ছিল না। তারপর ব্ল্যাকে দুইটা টিকেট কিনে আনলাম।
— আপুরে অনেক কষ্টে টিকেট পেলাম।
চল এবার।
— ভাইয়া কিছু পপকর্ন কিনে নে। খেতে খেতে দেখবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে নিচ্ছি।

.. যতক্ষন পর্যন্ত ছবি চললো ততক্ষন পর্যন্ত সাদিয়া আমার সাথে কোন কথাই বললো না। পুরোপুরি ছবি দেখায় মগ্ন
ছিল। কি মজা পায় এসব ভৌতিক ছবি দেখে? ..

–ভাইয়া ছবিটা কিন্তু অনেক ভয়ের ছিল। কিন্তু আমি একটুও ভয় পাইনি।
— হুম দেখা যাবে কে ভয় পেয়েছে আর কে পায়নি। রাতে শুধু আমার সাথে
ঘুমানোর বায়না ধরলেই হলো। মেরে একেবারে তক্তা বানিয়ে দিব।
— উহু আমি বায়না ধরবোই না। আমি তো ভয়ই পাইনা।
— আউচ! চিমটি দিলি কেন?
— মনে চাইছে তাই দিলাম।
— ও আচ্ছা মনে চাইছে না?
— উহু উহু! তুই আমার চুল টান দিলি কেন?
— মনে চাইছে তাই দিলাম।
— তবে রে! আজকে বাসায় চল, তোর
একটা চুলও রাখবো না আজকে।
— ওরে বাবা! আপু প্লীজ মাফ করে দে আমায়।
— নাহ মাফ করবো না। তোর চুল আমি ছিড়বোই।
— না আপু এটা করিস না প্লীজ। দেখ আমার এমনিতেই চুল নাই। তুই টানলে তো সবই উঠে যাবে।
— আচ্ছা তাহলে আমাকে ফুচকা খাওয়া। তাহলে আজ আর তোর চুল
ছিড়বো না।
— এইতো আমার লক্ষী বোনটা।
— এইতো আমার কিউট ভাইটা।
— দশ টাকার ফুচকা খাওয়ালেই তো হবে নাকি? — কি! দশ টাকার ফুচকা? ভাইয়া তুই এত কিপ্টা কেন?
— কি আমি কিপ্টা? যা খাওয়াবোই না তোকে? — তাহলে আমার হাত থেকে তোর
চুলগুলোকে কে বাঁচাবে?
— ওরে বাপস! আচ্ছা ঠিক আছে চল তোকে ফুচকা খাওয়াই।

লল.. সারাদিন ঘোরাফেরা করে রাতে বাসায় ফিরলাম। আজ আর সাদিয়াকে রান্না করতে দিলাম না। বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এলাম। খাওয়ার পর্ব শেষে সাদিয়া ঘুমাতে চলে গেল আর আমিও আমার শোবার ঘরে চলে এলাম। কিছুক্ষন কম্পিউটারে চার্লি পুতের গান শুনলাম। তারপর যেই আমি বিছানায় উঠে বসলাম তখনই দরজায় টোকা দিল সাদিয়া।
— কিরে কি হয়েছে আপু? নিজের ঘরে ঘুমাতে কি ভয় করছে তোর?
— ভাইয়া তুই একটু আমার ঘরে আসবি? কে যেন আমার খাটের নিচে বসে আছে।
— আগেই নিষেধ করেছিলাম ভূতের সিনেমা দেখতে হবে না। এখন আমাকে জ্বালাতে এসেছিস?
— কি আমি তোকে জ্বালাই? যাহ তোর সাথে কথা বলবো না। ( কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
— ওলে বাবা আমার আপুটা কি রাগ করেছে নাকি?
— হুম এত্তগুলো রাগ করেছি। তোর সাথে আড়ি।
— আপু রাগ করলে তো তোকে আমার সাথে ঘুমাতে দেব না। এখন নিজের ঘরে গিয়ে বালিশ নিয়ে আয়।
— নাহ তুই গিয়ে নিয়ে আয়। আমার ভয় লাগছে। ..্

অগত্য নিজেই ওর ঘর থেকে বালিশ নিয়ে আসলাম। সাদিয়া এখন আমার পাশে শুয়ে আছে।
— ভাইয়া তুই ঘুমাবি না?
— ঘুমাবো, একটু ফেসবুক থেকে ঘুরে আসি।
— ভাইয়া তুই কি কোন মেয়ের সাথে চ্যাটিং করিস না?
— তোর এই ক্ষেত ভাইটার সাথে কোন মেয়ে চ্যাটিং করবে?
— এই তোকে কে বলল যে তুই ক্ষেত?
— অনেক মেয়েই বলে যে আমি ক্ষেত।
— উহ যে মেয়ে বলে তুই ক্ষেত সেই
মেয়ের নাক কেটে দিব।
— ও তাই বুঝি?
— হ্যা তাই। আমার এত কিউট ভাইটা কখনো ক্ষেত হতেই পারে না।
— নারে আমি আসলেই ক্ষেত।
একারনেই কোন মেয়ে আমাকে পাত্তা দেয়না। — তোকে দিব এখন মাইর। তুই জানিস আমার বান্ধবীরা তোর সাথে প্রেম করার জন্য পাগল। শুধু আমার জন্যই ওরা তোকে প্রেম নিবেদন করতে পারে নাহ।
— ও তাই বুঝি? তাহলে তুই ওদের আটকাচ্ছিস কেন?
— আরে ভাইয়া ওরা সবগুলা বদের
হাড্ডি। তোর সাথে আমি কোন বদের হাড্ডি মেয়েকে প্রেম করতেই দিব না।
— হা হা হা। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে, এবার ঘুমা।
— ভাইয়া ঘুম আসছে না তো! তুই একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি?
— আচ্ছা আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তুই ঘুমিয়ে পড়। কাল আবার কলেজে যেতে হবে।
.. আমার বোনটা ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমন্ত অবস্থায় আমার পাগলী বোনটাকে বাচ্চাদের মত লাগছে। একেবারে নিষ্পাপ শিশুর মত ঘুমাচ্ছে আমার বোনটা।

………………………………………..সমাপ্ত……………………………….

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত