রাখাল বালক

রাখাল বালক

এক ছিল রাখাল বালক। সে প্রতিদিন তার ছাগলগুলোকে সবুজ পাহাড়ের ওপর ঘাস খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যেত। একদিন ছাগলগুলো পাহাড়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে রাখাল বালক ঘুমিয়ে পড়ল। এ সুযোগে ছাগলগুলো ঘাস খেতে খেতে একটা বাগানের ভেতর ঢুকে গেল। রাখাল বালক ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখল তার ছাগলগুলো পাশের এক বাগানে। সে তখন বাগানে ঢুকল এবং ছাগলগুলোকে বাগান থেকে বের করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কোনোভাবেই সে ছাগলগুলোকে বাগান থেকে বের করতে পারল না। ফলে সে নিরুপায় হয়ে বসে কাঁদতে লাগল।
এমন সময় একটা খরগোশ তার পাশে এলো এবং বলল, তুমি কাঁদছ কেন?

রাখাল বালক বলল, আমি কাঁদছি, কারণ আমার ছাগলগুলো বাগান থেকে কিছুতেই বের হচ্ছে না।
খরগোশ বলল, সেজন্য কাঁদতে হয় নাকি! কেঁদনা! আমি এখনি তোমার ছাগলগুলো বের করে দিচ্ছি।
এই বলে খরগোশ ছাগলগুলোকে বাগান থেকে বের করতে চলে গেল। কিন্তু ছাগলগুলো কিছুতেই বের হলো না। খরগোশ ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো এবং সেও কাঁদতে শুরু করল।
এবার সেখানে একটা বানর এলো। সে বলল, তুমি কেন কাঁদছ?
খরগোশ বলল, আমি কাঁদছি কারণ বালকটা কাঁদছে। বালকটা কাঁদছে, কারণ তার ছাগলগুলো বাগান থেকে কিছুতেই বের হচ্ছে না।
এ কথা শুনে বানর বলল, ও তাই! তাহলে তোমাদের কান্না থামাও! আমি এখনি ছাগলগুলো বের করে আনছি।
এবার বানর ছাগলগুলোকে বের করার জন্য বাগানে চলে গেল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পরেও সে ছাগলগুলোকে বের করতে পারল না। ফলে খরগোশের ন্যায় সেও কাঁদতে শুরু করল।
এমন সময় একটা হরিণ যাচ্ছিল ওই পথ দিয়ে। সে বানরকে কাঁদতে দেখে কাছে এসে বলল, কেন তুমি কাঁদছ?
বানর বলল, খরগোশ কাঁদছে তাই আমিও কাঁদছি। খরগোশ কাঁদছে কারণ বালকটা কাঁদছে। বালকটা কাঁদছে কারণ সে তার ছাগলগুলোকে বাগান থেকে বের করতে পারছে না।
হরিণ বলল, এটা এমন কি কাজ, দাঁড়াও! আমি এখনি বাগান থেকে ছাগলগুলো বের করে আনছি। এই বলে হরিণ ত্বরিত বেগে বাগানের ভেতর ছুটে গেল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো এবং অন্যদের মতো কাঁদতে শুরু করল।
হরিণের মায়াবী কান্না শুনে সেখানে দ্রুত উড়ে এলো এক মৌমাছি। সে হরিণকে তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করল।
হরিণ বলল, আমি কাঁদছি, কারণ বানর কাঁদছে। বানর কাঁদছে, কারণ খরগোশ কাঁদছে। খরগোশ কাঁদছে, কারণ রাখাল বালক কাঁদছে। রাখাল বালক কাঁদছে, কারণ তার ছাগলগুলো বাগান থেকে কিছুতেই বের হচ্ছে না।
সবকিছু শুনে মৌমাছি হাসল এবং বলল, এমন তুচ্ছ ঘটনায় কান্নার কোনো মানেই হয় না। তোমরা সবাই তোমাদের কান্না থামাও! আমি এই মুহূর্তে বাগান থেকে ছাগলগুলোকে বের করে আনছি।
মৌমাছির কথা শুনে রাখাল বালক বলল, তুমি আমাদের ঠাট্টা করছ কেন? তুমি এত ছোট যে তোমার পক্ষে এ কাজ মোটেই সম্ভব নয়। যা খরগোশ পায়নি, বানর পায়নি এবং এমন কী হরিণ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। আর তুমি তা কিভাবে পেতে পার?
মৌমাছি একটা ছোট্ট জবাব দিল, দেখাচ্ছি!
তারপর উড়ে গেল বাগানের দিকে। বাগানে গিয়ে মৌমাছি ছাগলগুলোর পেছনে ভোঁ ভোঁ আওয়াজ তুলল। মৌমাছি হুল ফোটাবে, তা ছাগলগুলো চাইল না। তাই তারা দৌড় দিয়ে বাগান থেকে বের হতে থাকল।
মৌমাছির ছাগল তাড়ানোর দৃশ্য দেখে অবাক হলো খরগোশ, বানর ও হরিণ। আর তখন রাখাল বালক বলল, একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত