মেটাফিকেশন গল্প

মেটাফিকেশন গল্প

অামার যে একটা অদ্ভুত টাইপ মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা বাসর রাতেই বুঝতে পারলাম! অবশেষে এই ছিল আমার কপালে!আমার মত
রোমান্টিক একটা মেয়ের কপালে এরকম একটা রোবটিক টাইপ মানুষ জুটবে ভাবিনি কখনো।
.
বিয়ের আগেতো তাকে দেখে ভেবেছিলাম দারুন কেউ অাসতে যাচ্ছে আমার জীবনে……..আমার মনের মত একজনই আসতে
চলেছে বুঝি অামার জীবনে।কিন্তু হায়!বাসর রাতেই বুঝতে পারলাম যে আমার মত টুকটুকে একটা লাল পুতুলকে একটা গম্ভীর মানুষের কাছে
সমর্পন করা হয়েছে।সারারাত লোকটা আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।হুহ!আমার ডিমান্ড কি তার থেকে কম নাকি যে আমি তার সাথে যেচে কথা বলব?
.
পরেরদিন সকালে অবশ্য কথা বলেছিল কিন্তু একটু। নতুন কাপল আমরা এখনইতি বেশী বেশী কথা বলার সময় তাইনা?সে আমাকে জিজ্ঞাসা করবে আমার
কি কি পছন্দ আর কি কি অপছন্দ,উনাকে আমার ভাল লাগে কিনা,আমার রেজাল্টগুলো কেমন,কাউকে বিয়ের আগে ভালবাসতাম কিনা!বাসলেও কতটুকু
বাসতাম!তারপর আমিও সেইম প্রশ্ন করব তাকে।কই! এসবের কিছু জিজ্ঞাসা না করে সকালে খালি বললো

-একটা ডিমভাজি করে দিতে পারবেন!
নিজের স্বামীর মুখে আপনি শুনেতো আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা হয়েছিল!সেসময় আমার বিপি পরীক্ষা করলে নিশ্চয়ই বাড়তি হত। তবু নিজেকে কষ্ট করে
সামলালাম।সামলে নিয়ে ভুতুম প্যাঁচার মত গাল ফুলিয়ে ডিম ভেজে এনে দিয়েছিলাম।হুহ!প
্রথমদিনেই আমাকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দিল! নিজেকে কাজের বেটী কাজের বেটী মনে হচ্ছিল।
.
জানেন! লোকটা এতটাই সেলফিস যে নতুন বৌয়ের হাতের ডিম ভাজি খেয়ে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলনা। কষ্টে আমার কান্না পাচ্ছিল খুব।মনে মনে ভাবছিলাম
আরেকবার যদি আমার স্বামী……ধূর, কাকে স্বামী বলছি;ঐটাতো একটা রোবট।আরেকবার যদি ঐ রোবট ব্যাটা আমাকে আপনি করে ডাকে তাহলে
আমি বেগম রোকেয়া হয়ে এর প্রতিবাদ জানাব। কিন্তু জানি,আমি সব অদ্ভুদ চিন্তাই করতে পারি। বাস্তবে তার কিছুই করতে পারিনা।
.
বিয়ের তিনদিন পর যখন ফিরানীতে গিয়েছিলাম,সে আমার সাথে যায়নি।আমি আমার শ্বশুড়ের সাথে গিয়েছিলাম।আমার স্বামী নামের অস্বামী,গুস্বাম
ী,কুস্বামীটা তার একশো একটা কাজের অজুহাত দেখিয়ে অফিসে চলে গিয়েছিল।জানেন! আমি সেদিন বাচ্চাদের মত ঠোঁট ভেঙে কেঁদেছিলাম।কেউ দেখেনি আমার কান্না।কত ইচ্ছা ছিল আমার জামাইটা একটু রোমান্টিক টাইপের হবে। কিন্তু কই!রোবটতো আর রোমান্টিক হয়না।বিয়ের তিনদিন পরই ইচ্ছা হয়েছিল যে এই ব্যাটার ভেতরে একটা যন্ত্র ফিট করে দেই।যেন আমার সব অনুভূতি বোঝতে পারে।কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার যে,সেই ক্ষমতা আমার নেই।ইশ!কেন যে বিজ্ঞানী হলাম না।
.
আমি এক সপ্তাহ বাবার বাসায় রইলাম কিন্তু রোবটটা একদিনও আমার খুঁজ নিল না।আমার শ্বশুর শ্বাশুরী দিনে অনেকবার ফোন দিয়েছে শুধু সেই দেয়নি
.
এক সপ্তাহ বাবার বাড়িতে কাটিয়ে শ্বশুর বাড়ি গেলাম। সে শুধু একবার জিজ্ঞাসা করেছিল যে কেমন আছি।তারপর আবারো বোবা।মাঝে মাঝে মনে হয়
মানসিক প্রতিবন্ধী নাকি!বিবাহিত বৌয়ের সাথে কথা বলেনা…..কিন্তু কাজকর্ম দেখেতো সেরকম মনে হয়না।যথেষ্ট স্মার্ট আর ওভার পার্সোনালিটির
একজন মানুষ বলেই মনে হয়।
.
একদিন সন্ধ্যার পর প্রচুর বৃষ্টি নামলো।আমার খুব ইচ্ছা করল বৃষ্টিতে ভিজতে।জোৎস্না রাত।আমি আজ ঝরো ঝরো মুখরো বাদলো দিনে…. সরি
রাতের বেলায়তো রাত বলতে হবে।আজ ঝরো ঝরো মুখরো বাদলও রাতে….গানটা গাইতে গাইতে বৃষ্টিতে ভিজে চলে এলাম।যখন ঘরের
ভেতর চলে এলাম তখন সবাই মিলে রাতে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য আচ্ছামত বকুনি দিল।তবু কষ্ট লাগল না। কারন সে কিছু বলেনি।ওমা!রাত একটার দিকে যখন
আমার জ্বর আসলো তখন ঠিকই বকা দিল।আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম।সকালে উঠে দেখি জ্বর ভাল হয়ে গেছে।ভাগ্যিস জ্বরটা ভাল
হয়ে গিয়েছে নইলে আরো বকুনি খেতে হত।
.
আজ বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব।কিন্তু নতুন বউ,তাই লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারছিনা।মাকে এই দুঃখের কথা বলে ফোনে কান্নাকাটি করলাম কতক্ষন।
.
দুপুরে অারাদ(অামার স্বামী) দু প্যাকেট বিরিয়ানি এনে অামার হাতে তোলে দিল।জিভে জল এসে গেল অামার বিরিয়ানি দেখে। আমিতো আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলাম। আনন্দে মন চাচ্ছে নীচ তলা থেকে চারতলার উপর লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করে ফেলি।ধুর!কিসব ভাবছি!আনন্দে কেউ আত্নহত্যা করে নাকি।
.
অফিস যাওয়ার সময় সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে টাই বাঁধছিল।আমি বললাম
-আমি বেঁধে দেই?
-লাগবেনা।
.
মনটা আবারো ভীষন খারাপ হল বিয়ের আগে কত স্বপ্ন ছিল,অফিস যাওয়ার সময় আমি নিজ হাতে আমার হাজব্যান্ডকে টাঁই বেঁধে দেব। আহ!কত রোমান্টিক একটা দৃষ্টের অবতারনা হবে। আমার জীবনের সব রোমান্সই বুঝি ভেস্তে গেল।
.
শাড়ি পড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎই হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে উদ্যত হলাম।অমনি কেউ একজন আমার হাতটা হেঁচকা টানে আমাকে ধরে
ফেললো।তাকিয়ে দেখি লোকটা আর কেউ নয়। আমার উনি।আমি বেশ লজ্জা পেয়ে যাই।অবশ্য মনে মনে ভালই লাগছিল।আমার দাম্পত্য জীবনে
আজ প্রথম বাংলা সিনেমার একটি দৃশ্যের অবতারনা হল।
.
ভেবছিলাম আরও কিছুক্ষন উনি আমাকে ধরে রাখবেন কিন্তু না।সাথে সাথেই ছেড়ে দিয়ে বলল
-দেখে চলতে পারনা?এক্ষুনিতো পড়ে যাচ্ছিলে
.
ওহ মাই গড!সে তাহলে আমাকে শেষমেষ তুমি করে ডাকল!যাহোক ভাল লাগছে বেশ।
.
শ্বাশুড়ি আম্মা আমার হাজব্যান্ডকে বেশ কিছুদিন ধরেই হানিমুনে যাওয়ার তাগেদা দিচ্ছে।আমারতো এটা শুনে ভালই লাগছে।কিন্তু উনি কিছুতেই রাজী হচ্ছেনা।
উনি কিছুতেই আমাকে পাত্তা দিচ্ছিলো না। শেষমেষ হানিমুনে যাওয়া নিয়ে ওনার সাথে আমার তুমুল কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উনি আমাকে
বললেন,আমি উনার যেই রুপটা চিনি ঐটা উনার আসল রুপ না।উনি আজ রাতে আমাকে অদ্ভুদ কিছু দেখাবেন।
।আমি রাত্রি হবার অপেক্ষায় রইলাম।মনটা অনাকাঙ্খিত কিছু দেখবার আশায় ব্যাকুল হয়ে রইলো।
.
আমি রাতে ঘুমালাম না।রাত বারোটার দিকে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ও রুমের লাইট অফ করে দিল।তারপর ও অামাকর বললো
-তানিয়া,আজকে তোমাকে যা দেখাব কাউকে বলোনা কিন্তু। তাহলে অামার পরিবারের মানুষ অনেক কষ্ট পাবে। তোমাকে বিয়ে করা অামার উচিত হয় নি।বিয়ে করার
অনুশোচনা অামাকে প্রতি মুহুর্তে কুড়ে কুড়ে খায়।অামি মনে হয় পরিবারের সুখের জন্য তোমার জীবন নষ্ট করে দিলাম।তুমি পারলে অামাকে ক্ষমা করে দিও কথাটা বলতে গিয়ে ওর গলাটা কেমন যেন ধরে এলো।
.
অামি ওর কথার কোন মানে বুঝতে না পেরে বললাম
-কি দেখাবে অাগে দেখাও তারপর ভেবে দেখব মাফ করা যায় কিনা
.
ও আমার হাতে একটা দিয়াশলাই দিয়ে বলল
-এই ম্যাচ থেকে একটা কাঠি জ্বালিয়ে আমার যে কোন একটা হাতে ধরিয়ে দাও।আমি চোখে বিষ্ময়ের রেখা টেনে বললাম
-এ কি বলছো? তুমি পুড়ে যাবে না?
-আরে পাগল,কিচ্ছু হবেনা আমার।তবে হ্যাঁ সাবধান!তুমি যাই দেখো না কেন কোন শব্দ করবানা।কেউ
জেগে দেখে ফেললে সমস্যা হবে।অামি চাইনা অামার এই অবস্থার কথা জেনে অামার পরিবার কষ্ট পাক।
.
আমি ভয়ে ভয়ে ওর কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ওর ডান হাতে ম্যাচের কাঠি ধরিয়ে দিলাম অমনি ওর হাতে আগুন জ্বলে উঠলো।আর মোমের মত
করে ওর হাত গলে গলে নীচে পানির ফোঁটার মত কিছু পড়ছিল যা আবার নিমিষেই গলিত মোমের মত হয়ে গেল।সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার
হচ্ছে যে ওকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে,তার কোন যন্ত্রনা হচ্ছে।সে একদম স্বাভাবিক ছিল।আমি ভয়ে একবার চিৎকার দিয়ে ফেলিছিলামই
প্রায়।সে তার বাম হাতে আমার মুখ চেপে ধরলো।
.
হাতটা পুরুপুরি গলে যাবার পর সে আবার তার বাম হাত দিয়ে ডান হাতের গলিত অংশটাকে নাড়িয়ে চাড়িয়ে আবার তার ডান হাত তৈরী করে নিজের দেহের
সাথে জুড়ে নিল।আমি এই ঘটানা দেখে পুরাই অবাক।
.
সে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সুযোগ না দিয়েই বলল
-আমি হচ্ছি একজন ওয়াক্স ম্যান।মানে মোম মানব। আমি মোমের তৈরী।
-এটা কি করে সম্ভব?
-রক্ত মাংসের মানুষ বল আর মোমের তৈরী মানুষই বল আমরা কিন্তু কেউই চিরকাল থাকব না।একদিন না একদিন আমাদের ধ্বংস
অনিবার্য।আমরা সবাই এই দুনিয়ার দুই দিনের অতিথি।
-কি করে হল এসব?তোমার পরিবারের কেউই কি জানে না এটা?
-না।কেউ কিচ্ছু জানেনা।আফটার অল,আমিনিজেইতো জানলাম কিছুদিন আগে।একদিন কলিংবেলেরর অাওয়াজ শুনে দরজা খুলতে গেলাম।
সেদিন অামি একা ছিলাম বাসায়।আমি গিয়ে দরজা খোলে কাউকে দেখতে পেলাম না।হঠাৎই নীচে চোখ গেলো আর দেখতে পেলাম
সেখানে একটা বই।বইয়ের উপর লিখা “ওয়াক্স ম্যান”
আমি ভয়ে ভয়ে বইয়ের একটা পৃষ্ঠা উল্টালাম।প্রথম পাতাতে বড় বড় অক্ষরে লিখা “অারাদ” ।ঐ বই থেকেই আমি প্রথমে জানতে পারি যে আমি
একজন মোম মানব।ঐ বইয়ে আমার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া ছিল।আমাকে আগুনের সংস্পর্শে যেতে বারন করা ছিল।যদি কখনো
কোনভাবে আগুনে আমার কোন বডি পার্টস পুড়ে যায় তাহলে সেটা আবার গলিয়ে আগের মত জোড়ে দেয়া যাবে।
প্রথমে অামি বিশ্বাস করিনি ব্যাপারটা।হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।কারন এর অাগে অামি বহুবার অাগুনের সংস্পর্শে গিয়েছি কিন্তু অামার কোন সমস্যা হয়নি
.
বইটা এনে বুকশেলফে ফেলে রেখেছিলাম অার অামি ভুলেই গিয়েছিলাম এই বইটার ব্যাপারে।
.
এই ঘটনার কয়েকদিন পর একদিন হঠাৎই ইচ্ছে হল লুচি খাবো।ইচ্ছে অনুযায়ী লুচি বানাতে গিয়ে একটুখানি হাত পুড়ে গেল।একজন মানুষ হিসেবে হাত
পুড়ে যাওয়ার দরুন জ্বলাপুড়া হবে,ফোসকা নিবে এটাইতো স্বাভাবিক।কিন্তু না।এমন কিছুই হলনা।বরং হাত গলে যে পদার্থটা বেরুলো দেখলাম সেটা
মোমের মত।আর যে আঙ্গুলটা পুড়েছে সেটা একটু ছোট হয়ে গিয়েছে।ওমনি অামার বইটার কথা মনে হল। বুকশেলফ থেকে বইটা নিয়ে তার
দিকনির্দেশনা অনুযায়ী অাঙ্গুলটা জোড়া লাগিয়ে নিলাম অামি।
.
আরাদের সত্যি রুপটা জানার পর আমি কেমন জানি হয়ে গেলাম!এই জন্যই আরাদ আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায়নি।আমি একটা অষ্টাদশী কন্যা যে স্বপ্ন
নিয়ে স্বামীর ঘরে প্রবেশ করেছিলাম সেই স্বপ্ন আমার এভাবে ভেঙে যাবে ভাবিনি কখনো। আমার কি না একটা ওয়াক্স ম্যান’র সাথে বিয়ে হয়েছে?
.
আরাদ আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা প্রার্থনা করলো।ওর পরিবারকে ওর অবস্থাটা জানিয়ে কষ্ট দিতে চায়নি বলেই ও দু টানায় পড়ে আমাকে বিয়ে
করেছে।আর এ জন্যই ও চায়নি আমি ওর প্রতি দুর্বল হই।আমি এই মুহুর্তে বুঝতে পারছিনা যে,আরাদকে আমার জীবন নিয়ে খেলার জন্য
দোষারুপ করবো নাকি ওর এই অসহায় অবস্থার জন্য ওর স্ত্রী অথবা বন্ধু হিসেবে ওকে শান্ত্বনা দেব?
.
আমি যখন এক রাশ হতাশা নিয়ে বিছানায় বসে কি করব ভাবছিলাম আরাদ তখন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি কি ভেবে যেন শেলফ থেকে সেই বইটা
খোঁজে বের করলাম।বইটা অনেক মোটা।তাই পুরু বইটা না পড়ে আমি শেষের পাতাটায় চোখ রাখলাম। সেখানে লিখা যদি কখনো আরাদের দুটো হাতই
আগুনের সংস্পর্শে এসে গলে যায় তাহলে সে পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন হয়ে যাবে।কারন ওর দেহের গলিত অংশ কেবল ওর হাত দিয়েই
পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব,অন্য কারো দ্বারা নয়।আর ও যদি কখনো ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে ওর মৃত্যুর পর ও মৃত্যুর আগে যাকে সবচেয়ে
বেশী ভালবেসেছিল সেই হবে পৃথিবীর পরবর্তী “ওয়াক্স ম্যান” ।এভাবেই একজন ওয়াক্স ম্যান ধ্বংস হয়ে গেলেও আরেকজন ওয়াক্স ম্যান সৃষ্টি হবে পৃথিবীর বুকে।
.
আমি বইটা পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়ালই করিনি।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আরাদ আমার পাশে নেই।চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানায় উঠে বসলাম।দেখি আমার বালিশের কাছে একটা চিঠি।চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম “আমি বোধ হয় তোমার জীবনটাকে আরও বাজেভাবে নষ্ট করে দিচ্ছিলাম।তাছাড়া আমার প্রতি তোমার এই ব্যাকুলতা ধীরে ধীরে আমাকে তোমার প্রেমে ফেলে দিয়েছিল।আমি অনেক বেশী ভালবেসে ফেলেছিলাম তোমায়।কিন্তু
যতবারই তোমার ভালবাসার ডাকে সাড়া দিতে চেয়েছি ততবারই মনে হয়েছে যে একজন ওয়াক্স ম্যানের কোন মানবীকে ভালবাসার অধিকার নেই। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম আমার মৃত্যুই সবকিছুর সমাধান হতে পারে।তবে এই সিদ্ধান্তটা তোমাকে বিয়ে করার আগে নেয়া উচিত ছিল।বড্ড ভুল হয়ে গেছে আমার।যাহোক আমি নিজেকে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে নিলাম।নতুন কাউকে বিয়ে করে নতুন করে জীবন সাজিও।”
.
চিঠিটা পড়ে শেষ করতে না করতেই আমার জা কিচেন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।আমি দৌড়ে কিচেনের দিকে গেলাম।আমি যেতে যেতে বাড়ির
সকলেই তখন কিচেনে গিয়ে হাজির।কিচেনে বিরাট একটা গলিত মোমের স্তুপ।পাশে একটা দিয়াশলাইয়ের বক্স পড়ে আছে।সবাইতো এটা
দেখে অবাক।আমি কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছিলাম না।কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিল যেন। ঠিক তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো।সবাই
মোমের স্তুপটা নিয়ে ব্যাস্ত তখন।আমিই গিয়ে দরজাটা খোললাম।কেউ নেই দরজায়।দরজা বন্ধ করতে যাব ঠিক তখনি দেখলাম নীচে একটা বই।

বোধ হয় এক্ষুনি রেখে গেছে কেউ।বইটা হাতে নিলাম আমি।বইয়ের প্রচ্ছদে লিখা “ওয়াক্স
ম্যান” ।আমি বইয়ের প্রথম পাতা উল্টালাম।সেখানে বড় বড় অক্ষরে লিখা “তানিয়া”।তাহলে কি আরাদ মৃত্যুর আগে আমাকেই সবচেয়ে বেশী
ভালবেসেছিল?আর আমিই হতে যাচ্ছি এই পৃথিবীর
পরবর্তী “ওয়াক্স ম্যান”?

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত