মাধবীলতা ও লেখক

মাধবীলতা ও লেখক

তখন আমার বয়স ষোল সবে।সূর্যোদয়ের মতই কুসুম রাঙা বয়স আমার।শীতকালে ঘাসের উপর লেগে থাকা শিশিরকে পায়ে মাড়িয়ে গায়ের মেঠো পথ ধরে স্কুলে যাই আমি।রোজকার মত সেদিনও স্কুলে যাওয়ার পথে এক যুবক দ্রুত আমার কাছে পায়ে হেটে এসে আমার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়েই হাওয়া হয়ে গেল।ওটাকে চিঠি বললে ঠিক ভুল হবে।চিরকুট বলা যায়।কারন ঐ কাগজটাতে শুধু লিখা ছিল আকাশী জামা ও বেল্টের সাথে সাদা সালোয়ার,ওড়না আর স্কার্প পড়া মেয়েটা যখন দুটো বেনী দুলিয়ে দুলিয়ে রোজ সকালে আমার বেডরুমের সামনে দিয়ে যায় তখন আমি আর পড়ার টেবিলে বসে থাকতে পারিনা।আমার
ভেতরে সাইক্লোন হয়।আমিতো জানিনা শ্যামবর্নের এই অপ্সরীর নাম কি কিন্তু আমার অন্তরাত্না তার নাম দিয়েছে মাধবীলতা।
‘প্রিয় মাধবীলতা,তোমাকে বোধ হয় একটু বেশীই ভালবেসে ফেলেছি,এই অন্তর ঝর থামাতে তুমি এগিয়ে আসবেনা এই অধমের হৃদয়ের পানে?
.
আমার ষোড়শী বয়সে বহু প্রেমপত্র পেয়েছি কিন্তু এমন কঠিনভাবে কোন পত্রের ভাষা আমাকে আঘাত করেনি।একবার নয়,দুবার নয়,পুরু একুশবার পরলাম পত্রখানা।বেশ কয়েকবার বুকেও চেপে ধরলাম।এমনভাবে আকৃষ্ট করছে কেন চিঠির ভাষাগুলো আমাকে?মানুষ এত সুন্দর করে কিকরে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে? হাতের লিখাগুলো যেন মুক্তার দানা।একেকটা অক্ষর যেন তার মনের শত সহস্র ভালবাসার আকুতি বহন করে।চিঠির ভাষাগুলো যেন আমাকে চুম্বকের মত আকর্ষন করছে।চিঠিটা যতবার পড়ছি ততবারই সেই কিঞ্চিত পরিচিত যুবককে দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠছে।তাকেতো আগেও আমি স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় দেখেছি।দেখলে চোখ নীচে নামিয়ে চলে গেছি।কিন্তু আজ তাকে এত কেন দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে?আচ্ছা তাকে যদি আবার স্কুলে যাওয়ার পথে পাই তাহলে কি আমি তার চোখের পানে তাকিয়ে তাকে দু চোখ ভরে দেখতে পারব?না না।ছিঃ কি ভাবছি আমি?লজ্জা করবেনা বুঝি আমার?আমি একটা ষোড়শী বালিকা হয়ে কি করে একটা
যুবকের চোখের পানে চাইব?
.
সে যেদিন আমাকে পত্র দিয়েছিল সেদিন স্কুল এক সপ্তাহের বন্ধ দিয়ে দিয়েছিল।তাই তার সাথে দেখা হওয়ার আর কোন সুযোগ ছিল না।তার চিঠির উত্তরে আমি অনেকগুলো চিঠি লিখে লিখে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি।আমার কাছে মনে হচ্ছিল যে ভাষাতেই আমি লিখি না কেন তার ভাষার মত হবেনা।নিজের চিঠির ভাষাগুলো যেন তার চিঠির তুলনায় অতীব নগন্য।অবশেষে একশো চারখানা চিঠি ছিঁড়ার পর আমি বিরাট বড় একটা সাদা কাগজে বড় করে শুধু “হ্যাঁ” লিখে রাখলাম।এটাই আমার উপযুক্ত উত্তর মনে হল।কিন্তু তাকে উত্তর দেয়ার জন্য আমাকে সাতদিন অপেক্ষা করতে হবে ভেবেই যেন বুকের ভেতরটায় কেমন একটা চাপা কষ্ট হচ্ছিল।এতদিন আমার জীবন আর জীবনের হিসেব ছিল রুটিন বাঁধা।সকাল নয়টায় স্কুলে যাওয়া,তারপর এক ঘন্টা প্রাইভেট পড়া,অতঃপর ক্লাসে যাওয়া।চারটি ক্লাস করার পর নজরুল মামার দোকানের মোগলাই পরটা বা পুরী শিঙ্গারার সাথে মরিচ অথবা টমেটোর সস খাওয়া,এরপর বাকী তিনটা ঘন্টা করে মায়ের আদেশমত সুবোধ বালিকা হয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে বাড়ি ফিরে আসা।
.
সাতদিন পর স্কুল খোলার পর থেকে আমার রুটিনে নতুন একটা কাজ যোগ হল আর সেটা হচ্ছে স্কুলে যাওয়ার পথে আমার অপেক্ষায় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা তার সাথে
চোখে চোখে কথা বলা।আমরা কেউই লজ্জার কারনে কারো সাথে সামনা সামনি কথা বলতে পারতাম না।আমি নাহয় মেয়ে মানুষ।লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক।ও যে কেন লজ্জা পায় সেটাইতো বুঝতে পারিনা।
.
একদিন হঠাৎ করেই আমার মনে হল,আমরাতো চিরকুটের মাধ্যমে কথা বলতে পারি ঠিক যেভাবে আমরা জেনেছি যে,দুজন দুজনকে ভালবাসি।ওকে যে আমার মনের অনেক কথা বলার বাকী।ওকে হৃদয়ের না জানানো কথাগুলো জানানোর জন্য মনটা সদা ব্যাকুল হয়ে থাকতো।তাই আমি নিজ থেকেই চিরকুট দিলাম তাকে।লিখে দিলাম”প্রপোজ করেই দায়সাড়া হয়ে গেলে?”এপাশের মানুষটা যে তোমায় কিছু বলার জন্য সবসময় ছটফট করে সেই ব্যাকুলতা কি তুমি বুঝতে পার?সবসময় কি চোখের ভাষাই যথেষ্ট?আমার যে তোমার ঠোঁটের ভাষাও শুনতে ইচ্ছে করে সেটা কি তুমি বুঝতে পারনা?”
.
চিরকুট দেয়ার একদিন পর তার উত্তর পেলাম।সে লিখেছে
“আমার অন্তরের কথাগুলো তুমি কি করে বুঝলেগো মাধবীলতা?তবে কি একেই টেলিপ্যাথি বলে?”আমারও যে আর চোখে চোখে কথা বলা সাধ মিটছে না।কিন্তু মুখ ফোঁটে তোমায় কিছু বলতে গেলেই সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যায়।গুছিয়ে বলতে পারিনা।তৃষ্ঞা যে দিন দিন বেরেই চলেছে।তুমি কাছে থেকেও যেন সাত সমুদ্র দূরে।তোমায় গভীরভাব ছুঁতে চেয়েছি সবসময় আমি।তবে হাত দিয়ে
নয়।মন দিয়ে।আমি কি সেটা পেড়েছি মাধবীলতা?”
.
আমি আবারো ওর চিঠি পড়ে উত্তর দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলি।অনেক কিছু লিখতে চেয়েও কলম থমকে যায়।তাই আবারো জবাবে শুধু লিখি”হ্যাঁগো হ্যাঁ,পেরেছ।তুম
ি তোমার মন দিয়ে আমার মনের মনিকুঠো অনেকটা উষ্ঞতা সমেত আলতো করে ছুঁয়ে দিয়েছ।”আর সেই উষ্ঞতাতেইতো আমি জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছি।”
.
এভাবেই চলতে থাকে আমাদের চিরকুট প্রেম আর সোনালি দিন।স্কুলে যাওয়ার পথে যতটা পথ আমাকে দেখা যায় ও ততটা পথ দাড়িয়ে থাকে আবার ফেরার পথেও।আমার জন্য ও ইচ্ছেমত কলেজ কামাই দিচ্ছে।আমারও আর বাড়ি ফিরে আর পড়ায় মন বসেনা।ষোল বছরের একটা তরুনীর দিন হঠাৎ করেই রঙিন হয়ে উঠেছিল রনির প্রেমে পড়ে।জীবনের গন্তব্যের পথটা যেন চিনে ফেললাম।মনে মনে খুব তাড়া ছিল আগে মেট্রিক পাশ করার। কিন্তু রনির ভালবাসায় থমকে গেলাম আমি।আমার মাথায় রনি ছাড়া আর কিচ্ছু ছিলনা তখন।আমাকে থমকে দিল একটা হলুদ গাঁদা ফুল।রনির ভালবাসার ফুল।ফুলটার ছয়টা পাঁপড়ি আর মাঝখানটা মেরুন রংয়ের।ফুলটার বুকের দিকে তাকালে মনটা প্রেমের ভরাডুবিতে হাবুডুবু খেলে।
.
কথায় আছে আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখে।আমার বেলাতেও তাই ঘটলো।সবাই আমার আর রনির ব্যাপারটা জেনে গেলো।আমাকে আমার ফুফুর বাড়িতে
পাঠিয়ে দেয়া হল।তারপরও রনি আমার ফুফুর বাড়িতে চুপি চুপি আমার সাথে দেখা করতে যেত।একদিন ফুফার হাতে ধরা খাওয়ার পর বাবা আমাকে শেষবারের মত সতর্ক করে দিলেন।কিন্তু অবুঝ দুটো মন আমরা দুজনের জন্য পাগল ছিলাম।আমরা চুপি চুপি দেখা করতেই থাকলাম।আমার ফুফুর বাড়ি ছিল আমাদের থেকে তিন কিলোমিটার দূর।রনি পায়ে হেঁটে এই পথ মাড়িয়ে আমার সাথে রোজ সন্ধ্যার পর দেখা করতে যেত।
.
বাবার শেষ সতর্কবানী না শুনার দরুন আমাদের কপালে শনি নেমে এলো।একদিন সন্ধ্যায় লুকিয়ে রনির সাথে দেখা করার সময় আমার বাবা ফুফার শিখিয়ে দেয়া লোকজন ফুফুর ঘরের কাজের মেয়েকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে আমাকে সরিয়ে নিয়ে চেঁচামেচি করে সবাইকে জানালো যে,ফুফুর কাজের মেয়ে রিতার সাথে রনির অবৈধ সম্পর্ক।আজ এবং এক্ষুনি রনির রিতাকে বিয়ে করতে হবে।
.
আমি বাবার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে বললাম যেন,রনির জীবনটা নষ্ট না করে দেয় আর প্রতিজ্ঞা করলাম যে কোনদিন রনির সাথে কন্টাক্ট করবনা।বাবা আমার কথামত রনিকে ছেড়ে দিলেন আর আমি রনির সাথে সকল যোগাযোগ অফ করে দিলাম।
.
শুরু হল আমার দুর্বিষহ দিন।আমার একলা থাকার দিন।একসময় যে মেয়েটা আকাশের বৃষ্টি ভালবাসতো সে আজ বৃষ্টির প্রতি ভালবাসা থেকে যেন নিজের চোখ দুটোকেই
আকাশ বানিয়ে নিল ইচ্ছেমত বৃষ্টি ঝড়াবার নেশায়।টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজে থাকা বর্ষাকালের সকালে ফোঁটা স্নিগ্ধ সতেজ গোলাপও এখন আর আমার মন ভাল করতে পারেনা।সদ্য ফোঁটা তরতাজা গোলাপের গায়ে কাঁদা ছিটালে গোলাপটা দেখতে যেমন লাগে,আমার চোখে বৃষ্টিভেজা সকালটাও এখন তেমন। দুপুরের তপ্ত রৌদ্রে সবকিছু যেমন চুপসে যায়,খাঁ খাঁ রুদ্দুরে প্রকৃতি যেমন চুপসে থাকে,স্থির আর নির্জীব মনে হয় সবকিছু,আমার মনের আকাশটা সবসময়ের জন্য এমন নির্জীব হয়ে গেল।আকাশের গায়ে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘমালাগুলোকে আমার অন্তর পুড়া ধোঁয়ার মত লাগে।দমকা ঝড়ো বাতাস যখন বয় তখন মনে হয় আমার মনের ঘরের নড়বড়ে খুঁটিগুলোও যেন এবার উড়িয়ে নিয়ে যাবে।নিজেকে অস্তিত্বহীন একটা অসহায় রিক্ত শূন্য জীব মনে হয়।মন জুড়ানোর মত হিম শীতল বাতাসে নজরুলসঙ্গীত মৃদুলয়ে নিয়ে আমাকে নিয়ে যায় ঘোরের জগতে।যেই ঘোরে আমি রনিকে হাতড়ে ফিরি।প্রতিদিন সকাল হয়,বিষ্ময়কর প্রকৃতি নিরবতা ভাঙে ধীরে ধীরে।পাখির কলতানের শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের কর্মব্যাস্ততা বাড়ে,বিলীন হতে থাকে ঠান্ডা ঠান্ডা সকালটা।মানুষ বেলাশেষে ব্যাস্ততায় ভুলে যায় যে নীলরঙা এক খন্ড সকাল নিয়ে তার দিনের শুরু হয়েছিল কিন্তু আমি একলা একা একটা মানুষ
শত চেস্টা করেও ভুলতে পারিনা যে,আমার জীবনে রনি নামের কেউ ছিল।
.
আমার এক আকাশ কষ্টের দিন হাতড়ে পাড়ি দেয়া শেষে একদিন বাবা এসে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন আর বললেন যে উনি আমাকে রনির হাতে তুলে দিতে রাজী।তখন চার বছর পেরিয়ে গিয়েছিল রনি আর আমার বিরহ পর্বের।
.
বাবার হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত বদলাবার কারনটা অবশ্য ছিল রনির বড় লেখক হয়ে উঠা।এই চার বছরে রনি এক উদীয়মান তরুন সেলিব্রেটি লেখকে পরিনত হয়েছে।সেই সাথে শর্টফিল্ম মেকার।বাবা বুঝেই নিয়েছিলেন যে,এই ছেলের ভবিষ্যত উজ্জল।সে আর এখন কোন দিনমজুরের ছেলে নয়।
.
বাসর রাতে ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কি পরিমান যে কান্না করেছিলাম সেটা আল্লাহই জানেন।সেও যে কম কেঁদেছিল তা কিন্ত নয়।
.
দীর্ঘ বিরহের পর আমাদের সুখের সংসার শুরু হল।সুইজারল্যান্ডে হানিমুন করলাম আমরা।হানিমুন থেকে ফিরে আবার আমাদের শুরু হল এক সাথে জোৎস্না বিলাস,কক্সবাজারে গিয়ে সমুদ্র বিলাস আর বাসার ছাদে বৃষ্টি বিলাসতো হয়ে উঠেছিল রোজকার ব্যাপার।প্রতিদিন সকালে এক বালতি পানি মাথায় ঢেলে আমি আমার সোনা পাখিটার ঘুম ভাঙাতাম।সারারাত ওর বুকে শুয়ে কথা বলতে বলতে রাত ভোর করে দিতাম।আমাদের কথাগুলো চিরকুটে লিখলে কতগুলো চিরকুট হত সেটা হিসেব করে হেসে কুটি কুটি
হতাম দুজন।রান্নাঘরে আমি রান্না করার সময় ও পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরতো।সব মিলিয়ে আমরা যেন পৃথিবীর স্বর্গে বসবাস শুরু করেছিলাম।এভাবে বিয়ের এক বছর যে কিভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না।কিন্তু হঠাৎই বিপত্তি বাঁধলো রনির লিখালিখি নিয়ে।যে লিখালিখির মাধ্যমেই ও আজকের এই অবস্থানে এসেছে,যে লিখার জন্যই ওকে আমি ফিরে পেলাম ও আজ সেই লিখালিখিই ছাড়তে বসেছে আমার মোহে পড়ে।ও বলছে যে ও চাইলেও কিছু লিখতে পারছেনা।ওর মাথায় কোন গল্প বা উপন্যাসের থিম আসছেনা।ও কোনভাবেই কোন লিখাকে দু তিন পৃষ্ঠার বাইরে নিয়ে যেতে পারছে না।রনি বলে আগে নাকি ও লিখতে বসলে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত, রাত ভোর হয়ে যেত কিন্তু তবু ওর লিখা শেষ হত না।গত চার বছরে ওর মোট সাতটি উপন্যাস আর তিনটি গল্পের বই বের হয়েছে যার সব কয়টিই বেস্ট সেলার ছিল।ওর ভক্তরা ওর বাসার সামনে এসে ভীর করে ও কেন লিখেনা এই প্রশ্নের জবাব চায়তে।অনেক ভক্ত চিঠি লিখে লিখতে অনুরুধ করে।প্রকাশক পান্ডুলিপির জন্য অস্থির করে ফেলজে।রনি বাহিরে গেলেই সবাই ওকে লিখার জন্য অনুনয় বিনয় করে।সবার অনুরুধ রাখতে গিয়ে সে লিখতে বসে কিন্তু একটু একটু লিখেই সব কাগজ ছিড়ে জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দেয়।মাঝে মাঝে না লিখতে পাড়ার অনুশোচনায়
দুই হাতে মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে উঠে।তারপর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে
-মাধবীলতা,আমি তোমাকে পেয়ে গেছি। আমার আর কিচ্ছু চাইনা।আমার আর লিখালিখির দরকার নেই।আমি লিখালিখির পেছনে সময় দিতে চাইনা।আমি শুধু তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই।আমি ব্যাবসা করব প্রয়োজনে চাকুরী করব।তবু তোমাকে ছেড়ে আমি বড় হতে চাইনা।
.
আমি সারারাত রনির কথাটার মর্মার্থ বুঝার চেস্টা করলাম।”তোমাকে ছেড়ে আমি বড় হতে চাইনা”।তার মানে আমার ধারনাই ঠিক।আমার বিরহে যখন ও কষ্টে দিনাতিপাত করছিল তখনই ও ওর নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে লিখালিখিতে মনোনিবেশ করে আর ওর মনে জমে থাকা বিরহযন্ত্রনা থেকেই ও মাত্র চার বছরে এত বড় লেখক হয়ে গিয়েছে।ওর মনের ভালবাসা হারানোর যন্ত্রনাই ছিল ওর লিখালিখির উৎস।ওর মনে কষ্ট না থাকার কারনেই ও এখন লিখতে পারছেনা।
.
আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।আমি একজন সম্ভাবনাময় লেখকের অগ্রযাত্রার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারব না।আমি তার লাখ লাখ ভক্তের মন ভাঙতে পারিনা।আমি চুপি চুপি রাতের আঁধারে একটা চিঠি লিখে বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে।আমাকে এমন কোথাও চলে যেতে হবে যেখানে রনি আমাকে কোনদিন খোঁজে পাবেনা।
.
পনেরো বছর পর
.
আমার কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর নির্বাচনীর পরীক্ষায় প্রথম,
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারীর জন্য কি পুরস্কার আনা হল তা আমরা সকল শিক্ষকমন্ডলী দেখছিলাম।পুরস্কারগুলো অধ্যক্ষ স্যার নিজ হাতে কিনে এনেছেন।উনার পছন্দের বিখ্যাত লেখক রনি মুরাদের তিনটি উপন্যাস।যেগুলোর নাম “মাধবীলতার অপেক্ষায়”,”মন ভেঙেছে মাধবীলতা” ও “এবারতো ফিরে এসো মাধবীলতা”।আমাদের স্টাফদের সবাই বইগুলো নিয়ে টানাটানি শুরু করলো।আমার এক কলিগ আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-জানেন,এই লেখকের স্ত্রী নাকি উনার লেখার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াবেনা বলে রাতের অাঁধারে পালিয়ে গিয়েছিল।উনি উনার স্ত্রীর জন্য যে কি পরিমান কষ্ট পান সেটা তার লিখা পড়েই বুঝা যায়।উনার স্ত্রী যেখানেই থাকুক এবার অন্তত তার ফিরে যাওয়া উচিত।কি করে পারে নিজের স্বামীকে ছেড়ে থাকতে?আমিতো অামার হাজব্যান্ডকে ছাড়া একদিনের বেশী দুদিন থাকতে পারিনা।ওমনি আরেকজন বলে উঠলো
-দেখুন গিয়ে অন্য কারো সাথে ভেগে গেছে হয়তো।নইলে এতদিনেও ফিরে আসতনা কি?
উপস্থিত সবাই কথাটার সাথে সহমত পোষন করলো।আমাকে এখন বাহিরে যেতে হবে।নতুবা দু চোখের বর্ষন সবাই দেখে ফেলবে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত