কালো মুখোশ

কালো মুখোশ

বাস জার্নি জিনিসটাই বোরিং। আমার মত অসামাজিক টাইপ মানুষদের জন্য তো অবশ্যই ।
গান শোনো আর ঘুমাও । বাস এ পাশের যাত্রী যদি হয় বাঁচাল,তাহলে তো কথাই নেই । কেউ কেউ আবার ঘুমের মধ্যে গায়ের উপর ঢলে পড়ে !
অসহ্য !
ইদানিং আবার মলম পার্টি নামে কিছু বিশ্রি চোরের আবির্ভাব হয়েছে ।
বাস যাত্রা এখন আর নিরাপদ নয় :।
আমি চট্টগ্রাম এর বাসে উঠেছি ঢাকা আসার জন্য । বাস কিছুক্ষণের মধ্যে ছাড়বে । এখন বাজছে ১১ টা পঞ্চাশ । গরমের দিনে রাত খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় ।
অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছি ।
আজকের রাত অত দ্রুত কাটছে না ।
নিজের পছন্দমত একটা সিট নিয়েছিলাম।
ভাগ্য ভাল ! আমার পাশের সিট এ কেউ এখনো বসে নাই ।
ভাল ! না বসলেই ভাল ।
আমার সাথে একটা ফুটবল । (যদিও আমি ফুটবল খেলি না । একটা সময় দেখতাম খুব।
ক্লাব ফুটবল নিয়ে আড্ডাও দিতাম বন্ধুরা মিলে। ) আর আছে আমার ব্যাগটা।
ব্যাগ ভর্তি জিনিস পত্র । আর সাথে বেশ কিছু টাকা । ভালোয় ভালোয় ঢাকা গেলে বাঁচি । ঢাকায় গিয়েই…
চিন্তায় ছেদ পড়ল । এক জন
বেঁটে খাঁটো লোক আমার পাশের সিট এ বসার জন্য এল। আমি আবার জানালার পাশে বসি না ।
লোকটার জন্য আমার ফুটবলটা কোলে নিয়ে জায়গা করে দিলাম।
লোকটা জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসল।
মেজাজটাই গরম হয়ে গেল । ডিসগাস্টিং !
একে দেখেই মলম পার্টি বলে মনে হয় ! লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল ।
আমি ভদ্রতা রক্ষা করলাম না । হাসির উত্তর না দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম । লোকটি অপমানিত হয়েছে কিনা জানি না । হলেই ভাল ।
আর কথা বলবে না !
লোকটি একটু ঢেলান দিয়ে বসল । বসেই জানালাটা লাগিয়ে দিল!
আমার জানালার পাশে বসায় সমস্যা হয় ।
কিন্তু তাই বলে লোকটা জানালাটা বন্ধ করে দেবে? ! বিরক্তিকর !
বাস ছেড়ে দিল । বাস ধীর গতিতে এগুতে লাগল ।
রিক্সাগুলো ও যে !
কোন নিয়ম মানে না ! জ্যাম লাগিয়ে রাখে! চট্টগ্রামের এই রোডগুলায় এত বেশি ট্রাক ! রাতের বেলায় ও জ্যাম হয়।
জ্যাম একদম ভাল লাগে না ।
ইদানিং অবশ্য কিছুই ভাল লাগে না !
বেশ কিছুটা সময় পরে বাস গতি পেল । এখন বেশ টান মেরে চলবে ।
লোক টা কথা বলার জন্য বেশ উশ খুশ করছে বোঝাই যাচ্ছে !
আমি মুখ ও ফিরালাম না তার দিকে, হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম । অনেকক্ষণ কেটে গেল ।
পাশের লোকটি তার হাতে রাখা ছোট ব্যাগ থেকে একটা খেজুঁর এর প্যাকেট বের করল। রমজান মাসে খেজুর খাওয়াটা স্বাভাবিক । তাই বলে শুধু খেজুঁর ? !
সে প্যাকেট থেকে বের করে গাপাগাপ খেতে লাগল ! যেন এগুলা মুড়ি !
দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ” ভাইজান খাবেন নাকি? ”
আমি ইচ্ছে করে মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটিয়ে তুললাম ।
লোকটা মনে হয় বুঝতে পারল ।
“ওকে ভাইজান ! অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে বাস এ কিছু না খাওয়াটাই উচিত। তাই বলে আমরা সামাজিক মানুষ ।
কিছু সাধা সাধি না করলে চলে?
সামনেই তো বাস থামবে । ঐ খানের হোটেল থেকে কিছু খেয়ে নিতে পারবেন । ” এক টানে কথা গুলো বলে গেল । এর পর খ্যক খ্যাক করে হাসতে লাগল ।
আমি যেন জানি না আর ! এই সব লোক কেন যে এত কথা বলে !
“ইদানিং আবার বিশাল সমস্যা শুরু হইছে!”
এ তো দেখি মহা যন্ত্রণা এই লোকের থামার কোন লক্ষণ নাই !
আমি এই বার অবশ্য একটু ভদ্রতা করলাম ।
“কি সমস্যা?”
“ইদানিং এক টাইপের ডাকাইত বাস আক্রমণ করতাছে!”
“কি টাইপ?” আমিও অবশ্য কিছু কিছু
শুনেছি পুরোটা জানার দরকার আছে। এই সব বাচাঁলরা এইগুলা আবার ভালো জানে । যদিও যা বলে তার অনেকাংশই বানোয়াট । তবে শুনে রাখা ভাল ।
“এরা ড্রাইবারের সাথে চুক্তি কইরা রাখে! একটু সুনসান জায়গা দেইখা বাস সোলো করে । এর পর ডাকাইতরা উঠে ।
কালা কাপড়ে মুখ ঢাকা ডাকাইত। ভাব দেখায় ড্রাইবারগো লগে কোন কিস্যু নাই! আসলে অরাই নাটের গুরু । এর পর
তো সব নিয়া যায় । চোখে …”
“ব্যস ব্যস! আর বলতে হবে না ।
বুঝতে পেরেছি । ”
গপ্পো মারার আর জায়গা পায় না !
তবে কাছা কাছি কিছু একটা আমিও শুনেছি ।
“আসলেই ডরের কথা ।” এই বলে সে পেয়ারা বের করল । খেজুর অলরেডি শেষ করে ফেলেছে । “ভাইজান
পেয়ারা খাইবেন ? আমার মায় দিছে!”
“না ভাই । কিছু মনে করবেন না ।” এই বলে আমি আমার ব্যাগে রাখা জুসের
বোতলটা বের করলাম ।
“যেই কথা বললেন গলা শুকায়া গেছে! ”
লোকটা হে হে করে হাসল ।
“খেজুর খায়া আমার গলাডাও শুকায়া গেছে ।
একটু দিবেন নাকি?”
আমি দিলাম । এতই যখন পরোপকারী স্বভাব তার !
“দুই ঢোক ভাই ।
আমি বাইরের জিনিস খাই না তো ! এই জুসটাই ভরসা ”
“আইচ্ছা আইচ্ছা!” লোকটা এই বলে একটু হেসে বোতলটা নিয়ে খাওয়া শুরু করল । দুই ঢোক ই খেল সে! তবে বেশ বড় বড় ঢোক!
“ধন্যবাদ ভাই ।”
“ওয়েলকাম ” বলে আমি মুখটা আটকালাম । নিজে খেলাম না ।
লোকটা বলল, “পেয়ারাটা নিতে পারতেন ভাই । শুধুই একটা ফল ।” বলে একটু হাসল ।
আমি আবারো বললাম “না ভাই!অনেক ধন্যবাদ !”
লোকটা জানালার দিকে তাকানো শুরু করল । এর পর বলল, “কী ব্যাপার ! এত ঘুম ধরল ক্যান হঠাত কইরা?!!”
=============================
আমি একটু মুচকি হাসলাম ।
লোকটি বুঝতে পেরেছে কি ঘটেছে !
সে কিছু বলার আগেই ঢলে পড়ল । আমি অন্য যাত্রীদের দিকে তাকালাম
কেউ খেয়াল করল কিনা । সবাই ঘুমে ঢলে পড়ছে অথবা গান শুনছে চোখ বন্ধ করে ।
তার পর লোকটার ছোট ব্যাগটি চেক করা শুরু করলাম । ভেতরে দেখি অনেক মানিব্যাগ !
এই লোক দেখি আমার মতই ” শিকারী “!!
এর পেয়ারায় শিওর ঘুমের ঔষধ মেশানো আছে ! যাই হোক চট্টগ্রাম আসার সময় ও দান মারলাম আমি । যাবার সময় ও ! তাও আবার চোরের উপর বাটপারী !
ফুটবল টা পায়ের কাছে ছিল লাথি মেরে ভেতরের দিকে ঠেলে দিলাম । আগের শিকার এর ফুটবল ছিল এটা ।
ছেলেটার জন্য একটু আফসোস হইছিল পরে । কিন্তু এইবার খুব ভালো লাগছে !
গর্বে আমার বুক ফুলে যাচ্ছে । সব রুল ফলো করে শিকার করেছি । জানালার পাশে বসা যাবে না । রাস্তার শুরুতেই কিছু খেতে সাধা যাবে না ।
সাথে এমন কিছু রাখতে হবে যাতে দেখে নির্দোষ মনে হয় (যেমন ফুটবল!)। মাঝপথে সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত তখন ই কাজ করতে হবে !
আমি তো বস ! ভাবতে লাগলাম ।
মানিব্যাগ গুলো থেকে টাকা বের করে আমার ব্যাগে ঢুকাচ্ছিলাম ।
..
.. ..
..
..
হঠাৎ মনে হল গাড়ি স্লো হয়ে গেছে । সামনের দরজা দিয়ে কেউ ঢুকল বলে মনে হল !
লাইট নেভানো ছিল । তবুও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না লোক গুলোর মুখে মুখোশ ছিল । মুখোশটা কি কালো ?

গল্পের বিষয়:
অন্যান্য · ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত