নিম্নমধ্যবিত্ত

নিম্নমধ্যবিত্ত

“বুবকা, তাড়াতাড়ি ওঠ। কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি হরলিক্সটা বানাচ্ছি।ওঠ বুবকা।”

মায়ের ডাকে চোখ মেললো বুবকা।এখনও গতকাল রাতের হ্যাংওভার কাটেনি।সত্যিই বড় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল ও। কে না কে এক পূর্ণিমা! তার জন্যে সে কেন নিজের বাড়িতে এত অশান্তি করতে যাবে? কিন্তু সত্যিই কি সে ‘কে না কে’? যদি আজ পূর্ণিমার জায়গায় বুবকা নিজে থাকতো তাহলে? অন্যমনস্ক হয়ে এসব ভাবতে ভাবতে বিছানায় উঠে বসেছিল ও।

-“কি রে, যা বাথরুমে।” -চমক ভাঙ্গলো ওর মা রূপা বসুর কথায়।

-“হুম যাচ্ছি। আচ্ছা মা, বাবা কোথায়?”

-“কোথায় আবার! বাজারে। তোমার বাবার তো আর তোমার মতো শুয়ে বসে সময় নষ্ট করার সময় নেই। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি। সকাল সকাল কাজে বেরোতে হয়। তারপর সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে এসে যদি মেয়ের কাছ থেকে লম্বা লম্বা লেকচার শুনতে হয় তাহলে তার মনের অবস্থা কেমন হয় সেটা ভাবার সময় আছে তোমার? অবশ্য কি করেই বা ভাববে। যখন যা চাইছ তাই দেওয়ার চেষ্টা চলছে, কিন্তু সেটা কোথা থেকে কিভাবে আসছে তা জানতে চাওনি। নিম্নমধ্যবিত্ত হওয়ার জ্বালা তুমি কি করে বুঝবে।”

-“sorry মা। কিন্তু তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো। একটা মেয়ে যার মাত্র ১৩ বছর বয়স তার কেউ বিয়ে দেয়? তুমি এমনটা করতে পারতে নিজের মেয়ের সাথে?”

-“সেটা পরিস্থিতি বলে দিত। আর তাছাড়া, তুমি গ্রাম্য পরিবেশে মানুষ হওনি বুবকা।ওখানে ছেলে মেয়েদের ছোটো বয়সেই বিয়ে হয়। তোমার ঠাকুমার ই তো ১৪ বছরে বিয়ে হয় ।”

-” মা বোকা বোকা কথা বোলো না । ওটা ৬০-৭০ বছর আগের কথা। এখন সমাজে অনেক পরিবর্তন হয়েছে মা।”

-“গ্রামে একই রয়ে গেছে । তোমার কাকু তো কাল রাতেই বললেন, যে পূর্ণিমার পরিবার যথেষ্ট অভাবী। তারওপর পাঁচ পাঁচটি ছেলেমেয়ে।পূর্ণিমার পর আরও একটা মেয়ে র দুটো ছেলে নাকি।”

-“মানছি। কিন্তু তুমি এটা কেন ভুলে যাচ্ছ যে ওর এখনো ১৮ হয়নি।তাহলে….

-“ওদের কাছে বিয়ের ডেফিনেশন আমাদের মতো নয়। ওদের মতো সংসারে মেয়ের বিয়ে দেওয়া মানে একটা ভাতের থালা কমে যাওয়া।”

-“Stop it মা। এধরনের কথা খুব চিপ লাগে।”

-“চিপ লাগলেও এটাই বাস্তব।”

-“কাকু চাইলে ওখানকার থানাতে একটা খবর দিতে পারতোনা? মানছি যে বিয়েটার কথা সবাই পরে জেনেছে। তবুও…..

-“তবুও কি? কাল রাত থেকে তোর চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনছি। কি মনে করছিস নিজেকে? Revolutionist ? সমাজ বদলাবি তুই?” – আলোময় বসু অর্থাৎ বুবকার বাবা যে কখন বাজার থেকে ফিরে এসে বুবকার ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সেটা মা মেয়ে খেয়াল করেনি।বাবার কথায় বুবকা ঝাঁঝিয়ে উঠলো,

-” আমি শুধু এটাই বলতে চাইছি যে, তোমরা কাগজে যখন নারীশিক্ষার খবর পড়ে বাহবা দিয়ে ওঠো বা নারী নির্যাতনের মুখরোচক খবরটাকে শুধুমাত্র চায়ের আড্ডায় ঝড় তোলার জন্য ব্যবহার করো তখব সেসব দেখতে খুব ভালো লাগে বাবা।কিন্তু যখন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে এগিয়ে আসার সময় আসে তখন তোমরা পিছিয়ে যাও।সেটা দেখতে খুব লজ্জা লাগে।”

-“বুবকা…”
সপাটে একটা চড় এসে পড়লো বুবকার গালে। থরথর করে কাঁপছেন আলোময়।বুবকা বাবার চোখের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে বললো,

-“বাবা, তোমরা বাজার থেকে কেনা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করো বলেই তা একসময় নিভে যায়। কিন্তু যদি এসব দেখে নিজেদের অন্তরটাকে একটু জ্বালাতে তাহলে হয়তো সে আগুন এত সহজে নিভতো না। বাবা মা, তোমরা যদি ভয় পাও তাহলে আমরা সাহস পাবো কি করে?”

আলোময় বা রুপা এর কোনো উত্তর দিতে পারলোনা।হয়তো একটা উত্তর ছিল। হয়তো বলতে পারতো যে, ছোটো মুখে বড় কথা মানায় না। কিন্তু ওদের তো বড় মুখ তাহলে ওরা কেনো এধরনের কথা বলতে সাহস পায় না?কারণ ,শুধু কি ওরা নিম্নমধ্যবিত্ত বলে? ওদের পয়সার জোর নেই বলে? সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিস্তর তফাৎ বলে?
জানেনা। এগুলোর কোনোটার উত্তরই ওরা জানেনা।

রুপা মেয়েকে বোঝালো, “শোন, মাথা গরম করিসনা। মানছি তোর কথা। আজ যদি আমরা এগিয়েও যাই, যদি পুলিশকে খবরও দিই, তাও এই solution হবে কি? কজনের সঙ্গে একা লড়বি? আজ ঘটনাটা আমাদের গ্রামে, আমাদের চেনা পরিবারে ঘটেছে বলে তুই এত কিছু বলছিস। এরকম কত পূর্ণিমা আছে জানিস তুই? তোর কি মনে হয় এগুলো শুনে ওরা ভুলটা বুঝবে? একদমই না। উল্টে তুই বাঁধা দিতে গেলে তাদের পরিবারের লোক তোকে ওদের মেয়ের দায়িত্ব নিতে বলবে। কি করবি তুই?”

মায়ের এই কথার জবাব ছিলোনা ওর কাছে।তাই ও কিছু না বলে বাথরুমে চলে গেল। বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারটা চালিয়ে মায়ের বলা শেষ কথাটা ভাবতে লাগলো।সত্যিই তো, মা তো ঠিকই বলেছে। But is it possible? নাহ, কাজটা impossible নয় কারণ, IMPOSSIBLE নিজেই I AM POSSIBLE.

বাথরুম থেকে বেড়িয়ে চটপট রেডি হয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে বাবাকে বললো,
-“আচ্ছা বাবা, পূর্ণিমার ধরো বিয়ে হয়ে গেছে,এতে আর কিছু করণীয় নেই।কিন্তু অন্য একটা উপায় আছে।”

-“কী উপায়?”

-“ধরো, আমি যদি, ‘আমি’ বলছি ‘আমরা’ নয়,কারণ হয়তো আমরা বলাটা ভুল হবে। ধরো আমি যদি পূর্ণিমার বোন পাখিকে আমাদের এখানে নিয়ে এসে ওকে লেখাপড়া শেখাই? তাহলে?”

-“মানে? তাহলে কি?” আলোময় যেন আকাশ থেকে পড়লো! মেয়েটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে! রূপাও রান্নাঘর থেকে চলে এসছে বুবকার কথা শুনে।

-“তাহলে অন্তত একজন তো শিক্ষার আলো পাবে। পাখি উচ্চশিক্ষিত হয়ে গ্রামে গেলে ওকে দেখে আর পাঁচজন অনুপ্রাণিত হবে। এখানে inspiration টাই must বাবা।”

-“তোমার কি মনে হয় গ্রামের কোনো ছেলে মেয়েই উচ্চশিক্ষিত নয়? অনেকে আছে যারা গ্রামে স্কুল শেষ করে শহরে এসে পড়ছে। তোমার কলেজের বন্ধু ইন্দ্র, উপলা এরাই তো রয়েছে। এখন সরকারি স্কুলে পড়তে টাকা লাগেনা। কিন্তু কিছু মানুষের মানসিকতা তুমি বদলাতে পারবেনা বুবকা। ওদের কাছে এগুলো অপ্রয়োজনীয়। এসব inspiration tation কিস্যু না। আর তাছাড়া একটা মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া কি মুখের কথা!শহরে পড়াশোনার খরচ নেই?আর ওদের বাবা মা তাদের মেয়েকে কেনই বা পাঠাবে ? তুমি কনসা লেডি ডিরোজিও?” ক্ষোভ প্রকাশ পেল আলোময়ের কথায়।

-“তোমাকে কিছু খরচা করতে হবেনা। এখন অনেক NGO আছে যারা গরীব বাচ্চাদের জন্য স্কুল বানিয়েছে। আর বাকি খরচা আমি টিউশন পড়িয়ে যা পাই তাতে চালিয়ে নেবো। আগে স্কুল পাশ করুক।তারপর ও যদি আরও পড়তে চায় তখন কিছুনা কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে। অনেকরকম স্কলারশিপ পাওয়া যায়। আমি কলেজে গিয়ে আমার বন্ধুদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা করবো। শুধু তুমি ওকে থাকতে আর খেতে দিও।”

মানে! ও কি শেষটায় এইসব ‘ফালতু’ কাজের জন্য টাকা নষ্ট করবে! ভাবলো আলোময়।বলল,
-“দেখ বুবকা, তুই বড় হচ্ছিস।ছেলেমানুষের মতো করিসনা।আমি মানছি তোর ভাবনাটা খুব ভালো কিন্তু অন্যের মেয়েকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করাটা খুব risky। বিশেষত শহরে। উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে গেলে তার দায় আমাকেই নিতে হবে। why don’t you understand?

-” I do বাবা। but you don’t want to understand my point of view. সবসময় negetive হয়ো না তো।কিছু হবেনা ওসব।তুমি চিন্তা করো না।আমি আজ রাতেই কাকুর সাথে ফোনে কথা বলে নেবো।আচ্ছা, আমার ক্লাসের এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে । আমি আসি। টাটা।”

-“কিগো ? কি ভাবছো? কিছু একটা করো।” বুবকা চলে যাওয়ার পর আলোময়কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে প্রশ্নটা করলো রুপা।

-“কি করবো? শুনলে না তোমার মেয়ে সব decide করে ফেলেছে।”

-“ও তো ছেলে মানুষ। তাই বলে আমরা তো ওর প্রস্তাবটা মানতে পারিনা।”

-” জানি তো মানতে পারিনা। রুপা, মেয়ে বিপথে গেলে তাকে আটকানো যায়, ছেলে সিগারেট খেলে তা বন্ধ করা যায়।কিন্তু বুবকার এই কাজটা আমি কোন অজুহাতে বন্ধ করবো বলতে পারো?”

রূপা এই প্রথম ওর স্বামীকে এধরনের কথা বলতে শুনলো। বুবকা ঠিক ওর বাবার মতো। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে মানুষটার সব ইমোশন আজ শুকিয়ে গেছে।

-“হুম।কথাটা ঠিক।কিন্তু আমাদের পক্ষে এই কাজ কি করে সম্ভব? একেই বুবকার higher studies এর খরচা চালাতে নাজেহাল অবস্থা, তার ওপর…

-“সেটাই তো রুপা।আজ যদি আমি নিম্নমধ্যবিত্ত না হয়ে উচ্চবিত্ত হতাম তাহলে একবার চেষ্টা করতে পারতাম।কিন্তু আমি তো তা নই।বুবকা যতই বলুক NGO না কিসব থেকে পড়বে, কিন্তু তাতে কি? পড়াশোনার খরচ টাই একমাত্র খরচ? খাতা বই তারপর এখানে থাকা,খাওয়া জামা কাপড় সেসব? সবচেয়ে বড় কথা অন্যের মেয়ের দায়িত্ব। ভগবান না করুক যদি কিছু হয়? শহরের যা অবস্থা, নিজের মেয়েকে নিয়ে টেনশন কি কম ছিল যে তারওপর এসব উটকো টেনশন?”

-“আমি তো তাই বলছি। শোনো তুমি একটা কাজ করো।”
-“কী?”
-“তুমি তোমার ভাইকে একটা ফোন করো। অরুময়কে ব্যাপারটা আগে থেকে জানিয়ে রাখো।”

-“সকাল থেকে এসবই করি আমি। চাকরি বাকরি তো নেই আমার। অরুকে এখন ফোন করা মানেই ঝাড়া ২ ঘন্টা । ধুর আজ আর অফিস যাওয়া হবেনা মনে হচ্ছে।”

আলোময় উঠে টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলো ভাইকে ফোন করতে।

-“এই শোনো…

-“Genetics এর ক্লাসটায় আজ বিশেষ মন লাগাতে পারছিলোনা বুবকা। তাই প্রফেসর ব্যানার্জীর কাছে দুবার বকা খেতে হয়েছে আলোরিনা বসু ওরফে বুবকাকে।
ক্লাসের পর ক্যান্টিনে ওকে চেপে ধরলো ইন্দ্র, মধু, ঋজু আর উপলা মিলে।

-“কি ব্যাপার আলো দেবী? প্রফেসর ব্যানার্জীর প্রিয় ছাত্রী আজ ওনার ক্লাসেই অন্যমনস্ক! কি কেস?” -চোখ মেরে জিজ্ঞেস করলো ঋজু।

-“নাহ রে, কিছু না।”

-“কিছু না বললেই হলো! পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি কপালে ভঙ্গিল পর্বতমালার ভাঁজ। আর বলছিস কিছু না!” – মধু ইয়ার্কি করলো।

-“আহ! তোরা ওকে বিরক্ত করিসনা। কি হয়েছে আলো? Anything serious?” – জিজ্ঞেস করলো ইন্দ্র।

ঘটনাটা খুলে বললো বুবকা। বললো, কাল রাতে খেতে বসার সময়ে ওর কাকু ফোন করে। ওর বাবাই ফোনটা ধরেছিলো। একথা সেকথা বলতে বলতে কাকু বলে যে, ওদের গ্রামের শিবনাথ মন্ডলের ১৩ বছরের মেয়ে পূর্ণিমার নাকি কাল হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে গেছে ।আসলে, পাত্রপক্ষ যে মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আসে সে ছিল তাদের পাশের গ্রামের। কিন্তু বিয়ের ঠিক আগেই মেয়েটি পালায়। তখন নাকি পূর্ণিমার এক পিসেমশাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।তিনিই তখন পাত্রপক্ষকে বলেন, তার চেনাজানার মধ্যে একটি বিবাহযোগ্যা কন্যা আছে এবং পাত্রপক্ষকে সেখান থেকে উঠিয়ে এনে পূর্ণিমার সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।

-“what nonsense? এটা তো criminal offence.
নাবালিকা বিয়ে। এদের তো পুলিশে দেওয়া উচিৎ।” – বলে উঠলো মধু।

-” এ যে ‘উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’। এসব তো সিনেমায় হয় রে।” হেসে বললো ঋজু।

-“হাসিস না ঋজু।মেয়েটার জীবনে ব্যাপারটা কতটা ভয়ংকর সেটা তোর বোঝা উচিৎ।” -বললো ইন্দ্র।

এতক্ষন চুপ করে সব শুনছিলো উপলা। এবার জিজ্ঞেস করলো, “এখন কি করবি আলো? কাকু কাকীমা কিছু বলছেনা?”

উত্তরে বুবকা সকালের ঘটনা সবিস্তারে বললো।

-“দারুন ভেবেছিস। আমরা তোর পাশে আছি।” -রিজু আর মধু একসাথে বলে উঠলো।

-“হম। এইরকম চিন্তা ভাবনা যদি সবাই করতো তাহলে আমাদের দেশটা এত পিছিয়ে থাকতো না রে। T.V তে এত বলে তাও যে মানুষ কেন সচেতন হয়না কে জানে!” -আক্ষেপের সুর ঝরে পড়লো ইন্দ্রর গলায়।

-” অথচ শহরটা দাঁড়িয়ে আছে গ্রামের উপরেই।ভিতে ভাঙ্গন ধরতে শুরু করেছে, কাজেই যে কোনো মুহূর্তে হয়তো শহরটা ভাঙ্গতে পারে।” উপলার বলা কথাটা শুনে চমকে উঠলো সবাই। সত্যিই তো !

রাতে খাবার টেবিলে বুবকার বাবা বললো, -“তুই অরুকে ফোন করেছিলি?”

-“না এখনও করিনি। খেয়ে উঠে করবো। কেন?”

-“আমি তোর একটা কাজ এগিয়ে রেখেছি।অরুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি শিবনাথের সাথে কথা বলে যেন সব ঠিক করে রাখে। আর ওর মেয়ের দায়িত্ব যে আমরা নিচ্ছি এটাও বলে রাখে।”

-” সত্যিই? তুমি সত্যি বলছ?”

-” হ্যাঁ রে। তুই যাওয়ার পর তোর বাবা আর আমি কথা বললাম। তোর কথাটাই ঠিক রে। তারপর তোর বাবাকে বললাম ফোনটা করে নিতে।”

-“thank you বাবা। thank you মা। তোমরা এই পৃথিবীর বেস্ট বাবা মা। লাভ ইউ। আমি এক্ষুনি কাকুকে ফোনে ট্রাই করছি।” বলেই টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।খুশিতে ঝলমল করছে ওর চোখদুটো।

আলোময় ও রূপা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাই করলো।

-“হ্যালো কাকু।আমি বুবকা।”

-“হ্যাঁ বল। কেমন আছিস?”

-“ভালো। শোনো না, বাবা তোমায় যে কাজটা করতে বলেছিল সেটা হয়ে গেছে? কথা হয়েছে? কি বললেন ওরা?

-“ওই শিবনাথের মেয়ের ব্যাপারটা?”

-“হ্যাঁ। ওনারা রাজি তো?”

-“নাহ রে।”

-“কেন?”

-“কিরে কি হলো?” -বুবকাকে গম্ভীর মুখে টেবিলে ফিরে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করল আলোময়।

-“ওর পরিবার রাজি না।”

-“কিন্তু কেন?”

-“ওদের ধারণা শহরের মেয়েরা নাকি অসভ্য। সামাজিক মর্যাদা বোধের অভাব রয়েছে। অশালীন পোষাকে অভ্যস্ত নাকি! তাই ওদের মেয়ে যদি এখানে আসে তাহলে নাকি সে খারাপ হয়ে যাবে।”

-” তাহলে করনীয় কি?”

বাবার প্রশ্নে বললো, -“কি আবার করবো! ওদের জন্য কিছু করবো এই ভাবনাটাই ভুল । আমারই দোষ।” বলেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো ।

-“কাঁদিসনা।দেখ তুই তো চেষ্টা করেছিলি বল।কিন্তু যা হওয়ার তা হয়েছে। এখন তুই হাত মুখ ধুয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পর।” মায়ের কথায় চোখ মুছে হাত ধুয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।

-“হ্যাঁ গো, ব্যাপারটা কি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল?”
নিজেদের ঘরের বিছানায় শুয়ে প্রশ্নটা করলো রূপা।

-“জানিনা। কিন্তু এর বাইরে আর কিছু করার ছিলোনা। তাই তুমি বলার পর আমি আর অন্য কিছু ভাবতে পারিনি।ভেবেছিলাম এটাই ভালো হবে। সাপ ও মরবে আবার লাঠিও ভাঙ্গবে না।তাই বাধ্য হয়েই অরু কে বলে দিই বুবকা ফোন করলে কি কি বলতে হবে।যাক গে, ছাড়ো ওসব।শুয়ে পরো। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ।” বলে night lamp জ্বেলে নিলো আলোময়।

হঠাৎ আলোময় দেখতে পেলো,একটা মেয়ের জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কি! মেয়েটা আলোময়ের দিকে এগিয়ে আসছে কেন? আরে, এ তো বুবকা! চিৎকার করছে ,কাঁদছে, বলছে -“বাবা এটা তুমি কি করলে?”

ঘুম ভেঙ্গে গেল। উফঃ ! কী ভয়ানক স্বপ্ন! এ যেন সত্যি না হয় ভগবান! হায় রে, সত্যিই তো মেয়েটা একটা ভালো কাজ করতে চেয়েছিলো। কেন যে সে বাধা দিলো! মনটা বড় ভারী লাগছে তার। কিন্তু কি বা করবে ও? ওর যে সামর্থ্য নেই। আলতো পায়ে উঠে মেয়ের ঘরের দিকে গেল আলোময়।

বিছানার উপর বুবকা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।গালের দুপাশে শুকিয়ে যাওয়া জলের রেখা। সত্যিই, বড্ড কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। মেয়ের মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বোলাতে লাগলো।ওদিকে দূরে কারোর বাড়ির ঘড়িতে ঢঙ ঢঙ করে চারটে বাজলো।

সত্যিই নিম্নমধ্যবিত্ত হওয়ার বড় জ্বালা… বড় যন্ত্রনা।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত