রাত্রির ভালবাসা

রাত্রির ভালবাসা

রাত হলে আমরা ঘরে ফিরি।একটু ঘুমানোর জন্য হলেও বিছানা নামের একটা বস্তু আমাদের আছে।

সেখানে শরিলটা কে এলিয়ে দিয়ে সারা দিনের পরিশ্রমের ফলে,যে ক্লান্তি আমাদের পেয়ে বসে সেটা দূর করার জন্য হলেও আমাদের একটা স্থান আছে।

দু বেলা চাল ফুটিয়ে খাওয়ার মতো সাধ্য আছে।কিন্তু যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে, থাকার মতো কোনো ঠিকানা নেই,

রাতে ক্লান্তি দূর করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই।ফুটিয়ে খাবার মতো এক মুঠি চাল নেই। দিনের পর দিন তারা অন্যছাড়া।

আমরা তাদের কথা ভাবি না।এই আমরা বাঙালি।
এ সব ভাবতে ভাবতে কমলাপুর রেলস্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম।খবর পেয়েছি সফিক চাচার মেয়ের নাকি বাচ্ছা হবে।

আর রহিমার ছেলেকে নাকি কেউ ধাক্কা মেরে রাস্তায় ছুড়ে ফেলেছে,কারন খাবারের জন্য টাকা চেয়েছিল কোনো এক সাহেবের কাছে।

তার পায়ে লেগেছে,যার জন্য রক্ত ক্ষরন হয়েছে অনেক।সকাল থেকে না খেয়ে আছে দুজনে।আর এখন রাত ১০টা।
বেশ কিছু টাকা, কিছু ব্যথার টেবলেট আর সাথে ব্যান্ডিস নিয়েছি।

আজ মনে হচ্ছে একা সামাল দিতে বেশ কঠিন হবে তাই মহনা কে ফোন দিয়ে সাথে নিয়েছি,

সফিক চাচার মেয়ের ব্যাপারে আমার থেকে ওকে বেশি প্রয়োজন হবে।মহনা ডাক্তার হলে কি হবে, সে সবার মতো রাগি নয়।

আমার কাজকর্ম সবাই ভাল ভাবে না দেখলেও, মহনার নাকি খুব ভালো লাগে।
মহনা :-: অবস্থা বেশি খারাপ নাকি?
আমি :-: না দেখে আমি কি ভাবে বলবো বলো?
মহনা :-: তোমাকে কিছু বলেনি?
আমি :-: যা জানতে পেরেছি সেটাতো ফোনেই তোমাকে বললাম, এখন তুমি ভেবে দেখো?
মহনা :-: হুম।
আমি :-: তেমন কোনো সমস্যা হবে না মনে হয়।সে ডাক্তারেরর কথা মতোই চলছে।
মহনা :-: তোমাকে অনেক শুকনো দেখাচ্ছে শরিল ঠিক আছে তো।
আমি :-: তেমন কিছু না কয়েক দিন ধরে একটু জ্বর।
মহনা :-: আমাকে কি খবর দেওয়া যেতো না, জ্বরটা মেপে ঔষধ দিয়ে আসতাম।
আমি :-: আমাকে নিয়ে ভাবার কিছু নেই, ব্যাঙের সর্দি কেবল প্রবাদে স্থান পায়।তোমার ডাক্তারি কি রকম চলছে বলো?
মহনা :-: ভালো।
আমি :-: তা হলেতো ভালোই।
.
এই একমাত্র ব্যক্তি যে আমার সব কাজে উৎসাহ দেয়।আমি যখন বলি কোনো এক অসহায় ব্যক্তি অসুস্থ।

তখন ওকে বলতে হয়না তোমার যেতে হবে, নিজ থেকে ও বুঝে নেয়।মহনা কে এই জন্যই আমার ভলো লাগে।

অবশেষে স্টেশনে পৌছিলাম।সামনের বা-পাশের জায়গাটায় রহিমা চাচি থাকেন।

সেখানে আগে গেলাম কারন সফিক মামার মেয়ে কে ডাক্তারের কাছেও নিতে হতে পারে।তখন আবার এর কাছে আসতে পারবো না।
.
আমি :-: কোথায় তোমার ছেলে দেখি?
চাচি :-: এতো দেরি করলা ক্যান বাবা, পোলাডা কহন থেকে কুহায়তাছে।
আমি :-: কাজ ছিলো।সমস্যা নেই আমি যখন আসছি কোনো চিন্তা করো না, সাথে ডাক্তার নিয়ে আসছি।
চাচি :-: সকাল থাইক্যা কিছু খায় নাই, তার পরে আবার অক্ত পরন কমে না।
আমি :-: সব ঠিক হয়ে যাবে।দেখো ব্যাগে কিছু চাল আর ডাল আছে রান্না করো।
আবার ওকে রাস্তায় পাঠালে কেনো? আমার কছে বলবানা ঘরে কিছু নাই?
চাচি :-: তোমারে আর কতো জ্বালামু, তোমার একটা ভবিসত (ভবিষ্যৎ) আছে না।হের পরে……
আমি :-: থাক আর সামনে যেতে হবে না।শুধু মনে রেখো যেকোনো সময়ে আমি আছি।

তোমাদের হয়তো ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো না, উৎসাহ দিতে পারবো।আজ আসি, ভালো থেকো।
.
ছেলের একটা ব্যবস্থা করে, চাচির কাছে ১০০০ টাকার একটা নোট দিয়ে আসলাম।এখন সফিক মামার কাছে যেতে হবে।
সফিক মামা চিন্তিত মুখে বসে আছে।
আমি :-: মামা কি অবস্থা এখন?
মামা :-: আর অবস্থা।তোমার সাথে এইডা কেডা?
আমি :-: ডাক্তার।চলো তোমার মেয়ের কাছে যাই।
মামা :-: চলো।ডাক্তার আইনা বালা করছো।
আমি :-: মহনা তুমি একটু দেখো, আমি আর ভিতরের দিকে যেতে চাচ্ছি না।মামা তুমিও থাকো।
মহনা :-: ঠিক আছে।
আমি :-: মামা মেয়ের স্বামীর আর আর কোনো খোঁজ পেলে না?
মামা :-: না।বিয়া দিবার ৭ মাস পরে যে বাড়ি ছাইরা গেলো আর তারে দেখলাম না।হোনছি হে নাকি আবার আরেক টা বিয়ে করছে।
আমি :-: এই ধরনের লোক গুলো এখনো আছে বলে আজ আমাদের এই অবস্থা।আমার মনে হয় তোমার মেয়ে কে হাসপাতালে নিতে হবে না।
মামা :-: না নিতে হইলে তো বালাই অয়।
আমি :-: চলো আমরা মিষ্টি কিনে নিয়ে আসি।তুমি নানা হবে, আর সকলকে মিষ্টি খাওয়াবে না।
.
মিষ্টি নিয়ে এসে দেখি মহনা বাচ্ছা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
মামা :-: ব্যাটা না ব্যাটি গো মা।
মহনা :-: মেয়ে হয়েছে মামা।
মামা :-: যাইক তাইলে আমার কথাই হাচা হইছে।
আমি :-: তাহলে এবার মিষ্টি গুলো সবাইরে দিয়ে দেন।
মামা :-: আইচ্ছা ঠিক আছে।তাইলে তোমাগরে দিয়া শুরু করি।
আমি :-: দাও।আর এই পেকেট টা রাখো, প্রয়োজন মনে হলে খরচ করবা।আরো লাগলে আমারে জানাবা।আজ আসি, ভালো থেকো সবাই।
মামা :-: কিছু খাইয়া যাও অনেক রাইত হইছে।
মহনা :-: অন্য আরেক দিন।তোমার মেয়ের একটা নাম ঠিক করেছি, ভলো লাগলে রেখো।
মামা :-: কি নাম কউ আমি এহন থাইক্যা ডকমু।
মহনা :-: মায়া।
.
মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী।এদের কখন কি মন চায় এরা নিজেরাও বলতে পারে না।তারা শুধু জানে আমার প্রয়োজন কেনো প্রয়োজন তা জানে না।
রাত্রি ২টা ৪৭ মিনিট।মহনা কে বিদায় দিয়ে, ফিরছি বাড়ির রাস্তা ধরে।কাল সকালে আবার অফিস।

রাতে আবার যেতে হবে আরকটি স্টেশনে।আমার এভাবেই হয়তো চলবে বাকি জীবন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত