দত্তক

দত্তক

বিয়ের পরে কেয়াকে নিয়ে যে নতুন বাসায় উঠেছি তার পাশের বাসার ফ্যামিলির সাথে কেয়ার খুব জমে উঠেছিল। কেয়া ছিল খুব মিশুক টাইপের মেয়ে খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে।এই গুনটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃস্ট করে।ওই ফ্যামিলিতে ১বছরের একটা বাচ্চা ছেলে ছিল।ওই বাচ্চার মা যখন খুব ব্যস্ত থাকতো তখন ছেলেকে কেয়ার কাছে রেখে যেত। আজব বেপার ছিল কেয়ার কোলে যখন থাকতো তখন সে একটুও কান্না করতো না মনে হত কেয়াই তার মা।

দেখতে দেখতে ৮মাস পার হয়ে গেল।এক রাতে আমাদের ইনভাইট করা হলো উপলক্ষ বাচ্চার নাম রাখা হবে। আরো অনেক আত্মীয় স্বজন আসলো কেয়াই বাচ্চার নাম রাখে সাজিদ।সেদিন অনেক রাত হয়েছিল বাসায় আসতে।গভীর রাতে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ আসে, দরজা খুলেই দেখি সাজিদের বাবা।সে বলল তার স্ত্রী খুব অসুস্থ বুকে প্রচন্ড ব্যথা করছে। আমি আর কেয়া দেরী না করে গেলাম তার বাসায় দেখি তার স্ত্রী ব্যথায় হাঁটু গেড়ে বসে আছে আর ঘামাচ্ছে আমি বুঝতে পারলাম এটা হার্ট এটাকের লক্ষণ।খুব তাড়াতাড়ি তাকে পাশের একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম কিন্তু তাকে আর বাঁচান গেল না।

সাজিদের বাবা প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় সাজিদকে কেয়ার কাছে রেখে যেত আবার অফিস ছুটির পরে নিয়ে যেত এভাবে চলতে থাকে কয়েক মাস।এক রাতে খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছিলাম কেয়া না খেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছে।

-তুমি খাচ্ছ না।কেন?

-না এমনি।একটা কথা বলি?

– হুম,বল।

-সাজিদের বাবা আবার বিয়ে করবে, জান তুমি?

-না জানি না, তোমার কাছ থেকে শুনলাম।এই জন্য মন খারাপ?

-না,সাজিদের জন্য চিন্তা হচ্ছে।

-ও,সাজিদকে দেখাশোনা করার জন্যই তো বিয়ে করছে এতে মন খারাপের কি আছে?

-আরেকটা কথা বলি?

-হুম,বল।

-সাজিদকে আমরা দত্তক নিতে পারি না?

-তোমার কি মাথা ঠিক আছে? ওকে কেন আমরা দত্তক নিব? ওর তো বাবা আছে।তাছাড়া তুমিও তো অসুস্থ। তুমি যদি মা হতে না পারতে তখন এই বিষয় নিয়ে ভেবে দেখা যেত।

ঐ রাতের পর থেকে এই বিষয় নিয়ে কেয়া আর কোনদিন কথা বলেনি। এদিকে সাজিদের বাবাও আরেকটা বিয়ে করল তাই সাজিদকে এখন ওর নতুন মাই দেখাশোনা করতে থাকে।মাঝে মাঝে সাজিদের কান্নার শব্দ শুনতে পাই বাসা থেকে জানি তখন হয়তো সাজিদের কাছে কেয়ার যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু যেতে পারে না।

একদিন রাতে সাজিদের কান্নার আওয়াজ পেয়ে দুজনের ঘুম ভেঙে গেল।সাথে সৎ মায়ের ধমকের আওয়াজ ও শোনা যাচ্ছিল আমি কেয়াকে যেতে বললাম সাজিদ কে নিয়ে আসার জন্য কিন্তু সে গেল না।

অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাড়িয়ে আছি।কেয়ার সিজার অপারেশন হচ্ছে। ৪৫মিনিট পর এক ডাক্তার এসে বলল মা এবং মেয়ে দুজনের মধ্যে একজনকে আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি এখন আপনি বলুন কাকে বাঁচাবো। এই কথা শুনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।আমি বললাম মেয়েকে বাঁচাতে।সেদিন কেয়া চলে গেল আমাকে ছেড়ে।আমি মেয়ের নাম রাখলাম তরী।

নতুন চাকরী আর তরী কে নিয়ে চলে গেলাম রাজশাহীতে আত্মীয় সম্পর্কের এক বড় ভাইয়ের কাছে। ভাবীর কাছে তরীকে রেখে আমি চলে যেতাম চাকরীতে কিন্তু কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারি এটা ভাবীর কাছে সমস্যা হয়ে দাড়াচ্ছে।

একদিন বড় ভাই এক মহিলাকে নিয়ে আসল আমার কাছে। রাজু ইনি তোমার সাথে একটু কথা বলবেন। অপরিচিতা বলতে লাগলেন।

-আমি কোনদিন মা হতে পারব না।আমি তরীকে দত্তক নিতে চাচ্ছি। আমার স্বামীর সাথে কথা বলেই আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি, আশা করছি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।

আমার ৩বছর আগে কেয়ার কথা মনে পড়ল যখন সে সাজিদ কে দত্তক নিতে চেয়েছিল কি আজব পৃথিবী ৩বছর পরে আবার সেটা আমার কাছেই ফিরে এসেছে। আমি তরীকে তুলে দিলাম তার হাতে তরীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত