এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু

এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু

২০১৪ সাল।প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে শবে মাত্র ক্লাস সিক্সে নতুন ভর্তি হইসি! নতুন স্কুল,নতুন ক্লাস সবই নতুন।

কারো সাথে কোন চেনা নাই জানা নাই শুধু স্কুলে যেতাম আর আসতাম! ওভাবেই চলে যাই ২মাস!তখন পড়ালেখাই ও মোটামোটি ভাল ছিলাম।

রোল ছিল ০৪।এর সুবাদে ৩-৪ জন ভালো বন্ধু জোটল।এরি মধ্য়ে শুরো হল ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচন।হুট করেই দারাই গেলাম নির্বাচনে।
মোট পার্থী ছিলাম ১১ জন।নির্বাচিত হবে ৩ জন।মনে করছিলাম হব না কিন্তু আশ্চর্য ভাবে সবাইকে তাক লাগিয়ে হয়ে গেলাম ১ম।

পুরো ১০৪ জন শিক্ষার্থীর দলনেতা। অনেকেরেই সাথে পরিচিত হলাম।আরো একটা কথা আমাদের ক্লাস টা ছিল ৩ সেকশনে বিভক্ত।A,B ও C।

প্রতি ক্লাসে ১০৪,১০৭ ও ১১০ জন করে শিক্ষার্থী। আমি ছিলাম C সেকশনে।এর কয়েক দিন পর যোগ দিলাম স্কাউটে।

দ্বায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিচয় হয় A সেকশনের একটি মেয়ের সাথে।নাম ছিল তার মারিয়া (কাল্পনিক নাম)।

প্রতিনিয়তই দেখা হত ওর সাথে।বাড়ি ছিল ওর মরিয়ম নগর।আমার নানুর বাড়ির ঠিক পাশেই।

পরে অবশ্য জানতে পারলাম যে ও আমার দূর সম্পর্কের খালাতো বোন।প্রতিনিয়তই দেখা হত ওর সাথে।

দেখলেই জিজ্ঞেস করত কেমন আছি ?বাড়ির সবাই কেমন আছে?।আমিও ফরমালিটি মেনটেইন করার জন্য উত্তর দিতাম।

এরি মাঝে চলে যাই একটি বছর।ক্লাস সেভেনে হয় রোল ৩।মরিয়ার সাথেও আমার ঘনিষ্টতা বাড়ে।আমরা হয়ে ওঠি বেস্ট ফ্রেন্ড।
হিন্দিতে যেটা বলে জিগরি দোস্ত,ঠিক সেরকমই।হঠাৎ মার্চ মাসের এক বৃহস্পতি বার কার এক্সিডেন্টের কারণে আমার পা ভেঙ্গে যায়।

প্রায় ৫ মাস স্কুলে যেতে পারি নাই!অবশেষে ৫ মাস পর যখন স্কুলে যাই সবকিছু কেমন যানি অগোছালো হয়ে যায়।স্কাউট থেকে বাদ পড়ি।

ক্লাসে আরেক জনকে দিয়ে দেয়া হয় আমার ক্ষমতা! সেই দিনেও মারিয়া আমার সাথে ছিল।

আমরা যেভাবে কথা বলতাম অনেকেই মনে করত নিশ্চয় আমাদের মাঝে কিছু আছে।

কিন্তু ওর প্রতি যে আমার কোন খারাপ ইন্টেনশন ছিলনা সেটা আমি ওকে ভালভাবেই বলসিলাম এবং সে ও আমাকে ভাইয়ের মত দেখত।

আমরা নিজেদের সবকিছুই শেয়ার করতাম।ছুটির পর একসাথে যেতাম, ওর বাড়িরকাজ আমি করে দিতাম এবং আমারটা ও….আরও অনেক কিছু!!!

অবশেষে আমরা ক্লাস এইটে ওঠলা।অনেক চেষ্টার পর আমি স্কাউটের ডেপুটি লিডার হিসেবে নির্বাচিত হলাম এবং নতুন ক্লাসে রোল হয় ০৪।

আজও মনে আছে সেদিন আমার থেকে ও বেশি খুশি হয়ছিল।এর কয়েক দিন পর একটি তুচ্ছ কারনে আমাদের মধ্য়ে ঝগড়া হয়।

৩-৪ দিন আমার সাথে কথা বলে নাই।ও আমাকে বলছিল সরি বলার জন্য কিন্তু আমি সরি না বলে তাকেই আগে সরি বলতে বলি।

ইগো নামক বস্তুর কারণে আমাদের কারও সেদিন সরি বলা হয়নি। আস্তে আস্তে আমাদের জে এস সি পরীক্ষাও কাছে আসতে লাগল।
আমাদের কথা বার্তাও কমে গেল আগের থেকে।সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মন দিলাম পরীক্ষায়।পরীক্ষার হলেও মারিয়ার সাথে অনেকবার দেখা হইছিল।

সেখানেও কথা বার্তা ছিল “কেমন আছি?-ভাল আছি ” ওইটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

তখন মনের মধ্যে একটু খটকা লাগলেও ভেবেছিলাম হয়ত পরীক্ষার চাপের জন্যই এসব।অতঃপর পরীক্ষাও ভালো দিলাম।

১ মাস পর রেজাল্ট আসল। পরীক্ষায় ৪.৯৫ পেলাম।একটুর জন্য এ+ মিস।খানিকটা খারাপ লাগল। ক্লাস ৯ এ উঠে সাইন্স নিলাম।

বন্ধুদের থেকে খবর পেলাম সেও সাইন্স নিসে।ভাবলাম একি রুমে যখন ক্লাস করব মারিয়াকে সরি টরি বলে সব ঠিক করে নিব।

যেদিন সরি বলার জন্য দাড়ালাম সেদিন আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়।

আত্নসম্মান নামক জিনিসটার জন্য আমারও আর কোনদিন সরি বলা হয়নি।ইগো জিনিসটার জন্যই হইত আজকে আমাদের এই পরিনতি।

তবুও যখনি ওর কথা মনে পড়ে তখনই কানে হেডফোন গুজে দিয়ে সায়ানের “এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু” গানটা শুনি।

গান শুনতে শুনতেই এক সময় আমার চোখ ভরে ওঠে নোনা জলে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত